শিরোনামঃ হাজং বিদ্রোহের ওপর সংবাদপত্রের প্রতিবেদন ও সরকারী প্রেস নোট
সুত্রঃ পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতিঃ বদরুদ্দীন উমর
তারিখঃ ফেব্রুয়ারী-মার্চ, ১৯৪৯
৪ঠা ফেব্রুয়ারীতে লেঙ্গুরা হাটের সামনে যে কৃষক-সিপাহী সংঘর্ষ হয় সে বিষয়ে ময়মনসিংহ থেকে ১০ই ফেব্রুয়ারী প্রেরিত দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত নিম্নলিখিত বিবরণটি এদিক থেকে উল্লেখযোগ্যঃ জানা গিয়াছে যে, গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারী মোমেনশাহী জেলার আসাম-পূৰ্ব্ববঙ্গ সীমান্তবর্তী এলাকাবাসী হাজং ও আদিবাসীগণ লাঠি, তীর, ধনুক, বর্শা ও রামদা লইয়া লেঙ্গুরাস্থিত পুলিশ ক্যাম্প আক্রমণ করে। হাজংদের মধ্যে কমু্যনিষ্ট প্রভাব বলিয়া প্রকাশ। তাহারা দুই দলে বিভক্ত হইয়া পুলিশদিগকে আক্রমণ করে, কিন্তু পুলিশের পাল্টা আক্রমণ ও গুলি চালনার ফলে হটিয়া যায়। গুলিবর্ষণের ফলে ১০ জন হাজং নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হইয়াছে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী প্রেরণ করা হয় এবং অবস্থা আয়ত্তাধীন আসিয়াছে বলিয়া প্রকাশ। পুলিশ হাজংদের কয়েকটি গ্রামে হানা দিয়া ২৮ জনকে গ্রেফতার করিয়াছে এবং বহু তীর, ধনুক ও বর্শা উদ্ধার করিয়াছে। জানা গিয়াছে যে, হাজংরা কিছুকাল যাবৎ সরকারের টঙ্ক ও কর সংগ্রহ পরিচালনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিয়া আসিতেছে। টঙ্ক ব্যবস্থা অনুসারে নগদ টাকার পরিবৰ্ত্তে উৎপন্ন শস্যের একটি নিদিষ্ট অংশ জমিদারগণকে দিতে হয়। প্রকাশ যে, গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ঘটনার পূর্বে উক্ত একই এলাকার অন্তর্গত বালিগঞ্জে সীমান্ত বাহিনীর একজন সৈন্য নিহত হয়। ময়মনসিংহ থেকে ১২ই ফেব্রুয়ারী প্রেরিত এবং দৈনিক আজাদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট ৯ই ফেব্রুয়ারী দুটি ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়ঃ জানা গিয়াছে, গত ৯ই ফেব্রুয়ারী মোমেনশাহী জেলার পূর্ব পাক-আসাম সীমান্তবর্তী উত্তর এলাকার গারো হাজং কমিউনিষ্টগণ লাঠি, তীর, ধনুক, বর্শা ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত হইয়া দুর্গাপুর থানার নিকটস্থ ‘সেঙ্গু এবং হালুয়াঘাট থানার উপকণ্ঠস্থ পুলিশ ক্যাম্প আক্রমণ করিলে, পুলিশ বাহিনী পাল্টা আক্রমণ করিয়া গুলি চালায়। ফলে, হালুয়াঘাট থানার নিকটস্থ ঘটনা কেন্দ্রে কমিউনিষ্ট পক্ষের ১ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে। লেঙ্গুরাস্থ ঘটনা কেন্দ্রের হতাহতের খবর এখনও পাওয়া যায় নাই। প্রকাশ, পূর্ব প্রকাশিত সরকারের টঙ্ক ও খাদ্য সংগ্রহনীতির বিরুদ্ধাচারনই এই সমস্ত সংঘর্ষের মূল কারণ। আর এক খবরে প্রকাশ, জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হালুয়াঘাট, নলিতাবাড়ী এবং শ্রীবর্দী থানাত্রয়ে ১৪৪ ধারা জারী করিয়াছেন। আরও প্রকাশ, অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী এবং ই, বি, রেজিমেন্ট রাইফেলস উক্ত অঞ্চলে প্রেরণ করা হইয়াছে। বর্তমান অবস্থা কিয়ৎ পরিমাণে শান্ত। ময়মনসিংহের হাজং অঞ্চলে কৃষক-সিপাহী সংঘর্ষ এবং সিপাহীদের কৃষক নির্যাতন সম্পর্কে এই সময় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই সব সংবাদের প্রতিবাদ করে পূর্ব বাঙলা সরকার ১৬ই ফেব্রুয়ারী ময়মনসিংহের উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিম্নলিখিত প্রেসনোট জারী করেনঃ গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ ও ‘হিন্দুস্তান ষ্ট্যান্ডার্ড’-এ প্রকাশিত ইউনাইটেড প্রেস অব ইন্ডিয়ার একটি খবরের প্রতি পূর্ববঙ্গ সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হইয়াছে। মোমেনশাহী জেলার আংশিক বহির্ভূত এলাকায় সাম্প্রতিক গোলযোগ সম্পর্কে উক্ত সংবাদ মিথ্যা বিবরণ দেওয়া হইয়াছে। উহাতে বলা হইয়াছে ।
যে, বাধ্যতামূলক ধান্য সংগ্রহ পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান দিতে অস্বীকার করায় প্রায় একশত জনেরও অধিক কৃষককে গুলি করিয়া নিহত করা হইয়াছে। প্রকৃত ঘটনাটি এইরূপঃ উক্ত এলাকার হাজংদের আন্দোলন প্রায় স্থানীয় বৈশিষ্ট্যস্বরূপ : ১৯৪৬ সালে একবার তাহাদের আন্দোলন এত ব্যাপক এবং দীর্ঘস্থায়ী হইয়াছিল যে, অবস্থা আয়ত্তাধীনে আনিতে বাংলা সরকারকে পুলিশ প্রেরণ করিতে হইয়াছিল। জনসাধারণের অনুন্নত অবস্থার সুযোগে টঙ্ক প্রথার বিরুদ্ধে পুরাতন আন্দোলন পুনরায় আরম্ভ করা হইয়াছে। কমু্যনিষ্টদের নেতৃত্বে হাজংরা কয়েকটি সভা ও শোভাযাত্রায় টঙ্ক প্রথা, খাজনা ও ধান্য সংগ্রহের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। তাহারা বর্শা, দাও প্রভৃতি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। কয়েকবার তাহারা ধানও লুট করে। ২৮শে জানুয়ারী সীমান্ত পুলিশ দলের জনৈক নায়েক তাহদের হস্তে নিহত হয়। একজন পুলিশ কনষ্টেবলকেও হাজংরা বেদম প্রহার করে। গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারী কমু্যনিষ্ট হাজংদের এক বিরাট জনতা বর্শা ও দাও প্রভৃতি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া লেঙ্গুরা থানার পুলিশ ক্যাম্পটি পরিবেষ্টন করিয়া ফেলে। পুলিশ তাহাদিগকে ছত্রভঙ্গ করিতে অসমর্থ হইয়া গুলি চালায়। দুই ঘন্টা পর অপেক্ষাকৃত বৃহৎ আরেকটি জনতা ঐ স্থানে জমায়েত হয়। পুলিশ তাহাদিগকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য আবার গুলি চালায়। ৯ই ফেব্রুয়ারী দুর্গাপুর ও হালুয়াঘাট থানায় দুইটি স্থানেও অনুরূপ ঘটনা ঘটে। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ বারবার সাবধান করে। জনতা যখন ভীতি প্রদর্শন করে এবং অবস্থা যখন আয়ত্তের বাহিরে চলিয়া যাওয়ার উপক্রম হয়, তখনই পুলিশ গুলি করে। এ পর্য্যন্ত মোট ১৩ জন নিহত হইয়াছে। বর্তমানে অবস্থা শান্ত। ১৪ই ফেব্রুয়ারী ছাত্র ফেডারেশনের* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ময়মনসিংহের হাজং কৃষকদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণ ও কৃষক হত্যার প্রতিবাদে ১৬ই ফেব্রুয়ারী তারিখ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি ছাত্রসভা আহবান করে। মোহাম্মদ বাহাউদ্দীনের সভাপতিত্বে সভার কাজ শুরু হওয়ার পরই দেখা যায় একদল ছাত্র জোরপূর্বক সভা ভেঙ্গে দিতে বদ্ধপরিকর। এদের মধ্যে একজন সভা কে আহবান করেছে সেটা জানতে চায় এবং সভাপতির হাত ধরে টেনে তাঁকে চেয়ার থেকে ফেলে দেয় এবং অন্য একজন সভাপতির চেয়ারটি পার্শ্ববর্তী পুকুরে নিক্ষেপ করে। এরপর সেই গুন্ডা ছাত্রদল সভাটির উদ্যোক্তাদের উপর ইচ্ছেমত কিল, চড়, ঘুষি ইত্যাদি চালাতে থাকে। ফলে সভাস্থলে এক দারণ হট্টগোল গন্ডগোলের সৃষ্টি হয় এবং সভার কাজ চালানো আর সম্ভব হয় না। এই গুন্ডামির বিরুদ্ধে অবশ্য সভাস্থলেই একদল ছাত্র তীব্র প্রতিবাদ জানান। এদের একজনের একটি পত্র নওবেলালে প্রকাশিত হয় এবং তাতে তিনি বলেনঃ সবাই বুঝিতে পারেন, যাহারা গুন্ডামি করিয়া সভা ভাঙ্গিয়া দেন তাহারা শুধু ছাত্র ফেডারেশনেরই শক্ৰ নন, তাহারা প্রত্যেকটি গণতন্ত্রকামী ছাত্র আন্দোলনেরই দুষমন। এরাই বাংলা ভাষা আন্দোলনে সরকারের দালাল সাজিয়েছিলন। এরাই জমিদারী উচ্ছেদ ব্যাপারে সরকারের জমিদার পোষণ নীতির সমর্থন করেন। সর্বোপরি এরা হাজং চাষীদের উপর গুলিবর্ষণ নীতির দিক দিয়া সমর্থন করেন।***
দেশ বিভাগের পূর্বে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিষ্ট প্রভাবাধীন একটি ছাত্র প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারী ও বেসরকরী প্রতিক্রিয়াশীলদের আক্রমণে এমই বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে যে, তার অস্তিত্ব রক্ষা করা আর সম্ভব হয় না এবং অল্পকাল পরেই তার বিলুপ্তি ঘটে। বউ।
এই ধরনের ছাত্র প্রতিষ্ঠান তখন ঢাকাতে একটিই ছিল। তার নাম নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ সরকার ও মুসলিম লীগের পৃষ্ঠপোষকতার এই সংগঠনের ছাত্ররাই বিরোধী দলের সভাগুলিতে সুপরিকল্পিতভাবে গুন্ডামি করতো। এদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেই
লীগ’ নামে একটি নতুন ছাত্র প্রতিষ্ঠান গঠন করেন।
সিলেট ও ময়মনসিংহ এলাকার হাজং আন্দোলনের সূত্রপাত হয় জমিদারীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এই হাজংদের আন্দোলন আবার নতুন করে দানা বেঁধে ওঠে ধানের ওপর সরকারী লেভী ও টঙ্ক (ধানের মাধ্যমে খাজনা) প্রথার বিরোধিতার মাধ্যমে। এটি সর্বশেষে সশস্ত্র আন্দোলনের রূপ নেয় এবং হাজংদের ওপর ব্যাপক অত্যাচারের ফলে এই আন্দোলনের বিলুপ্তি ঘটে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন কমিউনিষ্ট পার্টি সর্মথিত কৃষক সমিতি।
পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ জুন, ১৯৪৯ রাজনৈতিক বক্তব্য সম্বলিত লিফলেট অতি বামপন্থী বিভেদকারীদের সম্পর্কে হুশিয়ারী ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ জন ছাত্র-ছাত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অবলম্বনের প্রতিবাদে ঢাকা- তথা পূৰ্ব্ব-পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ ১৭ই এপ্রিল থেকে যে আন্দোলন শুরু করেছেন, বৰ্ত্তমানে তা এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। সংগ্রাম পরিষদ বরাবরই এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান চেয়েছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষের ভ্রান্তনীতি ও অপরিণামদশী পদক্ষেপের জন্যে সমাধানের দুয়ার বারবার রুদ্ধ হয়েছে। কর্তৃপক্ষের রাইফেলের গুলিতে আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন; তারা ভেবেছিলেন যে ছাত্র নেতাদের কারাপ্রাচীরের অন্তরালে আবদ্ধ করে রাখলেই সংগ্রাম থেকে যাবে। কিন্তু সংগ্রামী ছাত্রসমাজ কোন জুলুমের মোকাবেলায়ই স্তব্ধ হয়ে যায়নি- বরঞ্চ নাগরিকদের স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন ও সহযোগিতায় তাদের আন্দোলন শতগুণ শক্তিশালী হয়েছে। চরম প্রতিকূল পরিবেমের মধ্যেও ছাত্রসমাজ মাথা উচু করে রেখেছে- তারা কোনক্রমেই আত্মসমর্পণ করেনি। সংগ্রাম পরিষদে লক্ষ্য ছিল- সমস্ত ছাত্রসমাজকে সমবেত করে শৃঙ্খলার সঙ্গে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। এ ব্যাপারে সংগ্রাম পরিষদ সফল হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দালালরা ছাত্র সংহতির মধ্যে ভাঙ্গন ধরাতে বহু চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা ছাত্রসমাজের ঐক্য এতটুকু ক্ষুন্ন করতে পারেনি। বরঞ্চ জনগণের সম্মুখে ঐ দালালদের স্বরূপ সুস্পষ্টভাবেই উদঘাটিত হয়েছে। কিন্তু আজ এক নতুন আপদ এসে জুটেছে। এটা হচ্ছে কমু্যনিষ্ট অধুষিত ছাত্র ফেডারেশন। আলস সংগ্রামের সময় গা ঢাকা দেওয়া এবং সুযোগ বুঝে মাটির তলা থেকে গলাটা বের করে দু’টারটি “অতিবিপ্লবী” বুলি কপচানই যাদের পেশা। “অতিবিপ্লব” যে “প্রতিবিপ্লব”-এরই সামিল তা অবশ্য এরা নিজেরাও জানেন। এই অদলীয় ফেডারেশন নেতারা প্রতিটি বলিষ্ঠ ছাত্র আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করতে চেষ্টা করেন এবং ঘোড়ার আগে গাড়ীজুড়ে বরাবরই আন্দোলনকে সাবোটাশ করেন। বলিষ্ঠ আন্দোলনের চেয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই যাদের কাম্য, তারাই সাবোটাশ নীতি গ্রহণ করেন। গতবার রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনেও এই “অতিবিপ্লবী” অদলীয় নেতারা উড়ে এসে জুড়ে বসে আন্দোলনটিকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু ছাত্রসমাজের দৃঢ়তা ও সতর্কতায় তাদের অপচেষ্টা সফল হয়নি। এবারকার আন্দোলনেও এরা অনুপ্রবেশ করতে চেষ্টা করেছিলেন- কিন্তু সংগ্রাম পরিষদের সতর্কতায় এর সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। তাই এই অৰ্ব্বাচীন বামপন্থীরা এবার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ এবং পূৰ্ব্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযান শুরু করেছেন। সম্প্রতি এক ইশতাহারে এরা বলেছেন“পূৰ্ব্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ বারে বারে ছাত্রসমাজের সংগ্রামী জোয়ারে রাশ টেনেছে, নিখিল পূৰ্ব্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগের সঙ্গে এক সারিতে এসে দাঁড়িয়েছে এবং বস্তুতঃপক্ষে পূৰ্ব্ব-পাকিস্তান মুসলিম মিলাতে চান” ইত্যাদি। যে পূৰ্ব্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের উদ্যোগে এবং নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক সাধারণ ধৰ্ম্মঘট পরিচালিত হয়েছে, দমননীতির চক্রতলে নিষ্পেষিত প্রায় জনমতকে যারা পূৰ্ব্ব পাকিস্তানে এখনও জিয়ায়ে রেখেছ, প্রতিটি সংগ্রামের পুরোভাগে থেকে যারা পুলিশের লাঠি, গুলি এবং কাঁদুনে গ্যাসের মোকাবেলা করেছে, যারা দলে দলে
অকাতরে কারাবরণ করেছে (কিন্তু পেছন দুয়ার দিয়ে পালিয়ে গিয়ে মাটির তলায় আত্মগোপন করেনি) তাদের বিরুদ্ধে এই সব অপপ্রচার যে কতখানি হীন এবং উদ্দেশ্যমূলক তা বলাই বাহুল্য। যে সবার আগে কারাবরণ করেছে এবং আজও যে কারাপ্রাচীরের অন্তরালে আবদ্ধ আছে সেই মুজিবুর রহমান নিখিল পূৰ্ব্ব-পাক মুসলিম ছাত্রলীগের মত ভূইফোঁড়, প্রতিক্রিয়াশীল, দালাল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হাত মেলাতে ব্যস্ত এরূপ প্রলাপোক্তি ফেডারেশনের “আত্ম-প্রতারিত মুখরাই” করতে পারেন এবং তারাই এটা বিশ্বাস করতে পারেন। ফেডারেশনী চমুবা এমনি ধরনের অনেক প্রলাপোক্তিই করেছেন। আমরা জানি ছাত্রসমাজ সেগুলোকে উপেক্ষাই করবেন। কিন্তু এই সব অপপ্রচারের মধ্যে ফেডারেশনের যে বিভেদ সৃষ্টিকারী রূপ প্রকাশিত হয়েছে তার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজকে আমরা সতর্ক করে দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করছি। এই বিভেদ সৃষ্টিকারীদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ হুশিয়ার হউন। বিশৃঙ্খলাকামী তথাকথিক বামপন্থীদের স্বরূপ উদঘাটিত করে বলিষ্ঠ আন্দোলনকে চালু রাখুন। সমবেত কষ্ঠে ছাত্র বন্দীদের মুক্তি এবং শাস্তিমূলক আদেশ প্রত্যাহারের দাবী করুন। জুলুম, অনাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করুন। সুশৃঙ্খল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পূৰ্ব্ব পাকিস্তানকে গড়ে তোলার শক্তি সঞ্চয় করুন। পাকিস্তান- জিন্দাবাদ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ- জিন্দাবাদ।