You dont have javascript enabled! Please enable it!

সেকেন্ড বেঙ্গলের অস্ত্রমােচন প্রচেষ্টা ও ব্রিগেডিয়ার ইসহাক

একদিন রাওয়ালপিণ্ডিতে আমার ঝিলাম রােডের বাসায় বসে আছি। সন্ধ্যা সাতটা। বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। এমন সময় গেট খুলে এক ভদ্রলােক প্রবেশ করলেন। আমার অ্যালসেশিয়ান কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে লাগলাে। কুকুরটিকে আমার এক বন্ধু মিলিটারি ডগ সেন্টার থেকে খানদান দেখে সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন। যে কারণেই হােক, কুকুরটি ছিল বুদ্ধিমতি। আগন্তুকের চেহারা দেখে বুঝে নিতে পারতাে হালচাল। অতএব, ঘেউ ঘেউ করেই আমার বারান্দার দিকে তাকে নিয়ে এলাে। লােকটিও সাহসী। পাহারাদার কুকুরকে ভয় পান না। সিভিল পােশাক পরিহিত, মাথায় পাঠান টুপি। কাছে এলে চিনতে পারলাম আমাদের অনেক সিনিয়র ও অনেক শ্রদ্ধেয় দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের পুরনাে দিনের অধিনায়ক (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার) ইসহাক। সেকেন্ড বেঙ্গলকে সামরিক দক্ষতার দিক দিয়ে পাকিস্তানের একটি শ্রেষ্ঠ ব্যাটালিয়নে পরিণত করার জন্য অধিনায়ক ইসহাকের অবদান হয়তাে সর্বাধিক। স্বভাবতই নিজের হাতে-গড়া প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যেক সৈনিকই তাঁর কাছে পুত্রতুল্য।  আমি চট করে দাঁড়িয়ে অভিবাদন করে সানন্দে অতিথিকে স্বাগত জানালাম। এদিকে ইসহাক এসেই বকুনি, ইয়ারা খলিল তু ক্যায়সা আদমি হ্যায়? গেট কা সামনে রাখা হুয়া এক বেওকুফ পাঞ্জাবি সিকিউরিটি। উসকা সওয়াল, ‘ম্যায় কোন হুঁ’। ম্যায়নে ভি জওয়াব দিয়া ‘ম্যায় তেরা বাপ হু’। উসকা বাদ গেট কা আন্দর তেরা কুত্তা। লেকিন তেরা কুত্তা বেতমিজ নেহি হ্যায়। হামলা নেহি কিয়া।’  আমি যেমনি সম্মানিত বােধ করছি তেমনি অভিভূত, কী করে এই অতিথিকে আপ্যায়ন করা যায়। জিগ্যেস করলাম তিনি কি জন্য আমার প্রতি এতােটা দয়াপরবশ এবং কি করে আমার বাসার সন্ধান পেলেন? পরিচারককে বললাম চা দিতে। ব্রিগেডিয়ার ইসহাক বসলেন। কুশল বিনিময়ের পর বললেন, তিনি।

এসেছেন আমাকে একটি প্রশ্ন জিগ্যেস করতে। প্রশ্নটি করার জন্য তার গ্রামের। বাড়ি ঝিলাম জেলা থেকে ছুটে এসেছেন, তাই প্রশ্নটি তিনি আমাকে শুরুতে সরাসরি করবেন। আরও বললেন যে, তিনি প্রশ্নটির সােজাসুজি সঠিক উত্তর আমার কাছে চান। আবারও সাবধান করে দিলেন যে উত্তরটা যেন সঠিক হয়। ততােক্ষণে চা এসে গেছে। চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললেন, ‘খলিল সঠিক বল যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কি আমার গড়া পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ ব্যাটালিয়ন সেকেন্ড বেঙ্গলের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদেরকে নিরস্ত্র করতে গিয়েছিল? সােজাসুজি বলাে, হ্যা কি না।’ বললাম, ‘অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি উত্তর হলাে, হ্যা। তারা আপনার সেকেন্ড বেঙ্গলকে নিরস্ত্র করতে গিয়েছিল।’ জবাব শুনে ব্রিগেডিয়ার ইসহাক যেন থ খেয়ে গেলেন। বললেন, “হারামজাজেঁ, আমি তাইতাে বলি আমার সেকেন্ড বেঙ্গল বিদ্রোহ করতে পারে না। নিশ্চয়ই এমন কিছু করা হয়েছে যাতে তারা বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়েছে। জান তাে একজন সৈনিককে নিরস্ত্র করা এবং একজন মহিলাকে বিবস্ত্র করা একই কথা। এরপরও তার কাছ থেকে তুমি কীভাবে আনুগত্য আশা করাে?’ আমি জানতাম এ প্রশ্নটি ব্রিগেডিয়ার ইসহাক আমাকে করেন নি এবং এর উত্তরও তিনি আমার কাছে চান নি। তাই চুপ করেই থাকলাম। কিছুক্ষণ নীরবতার পর তিনি জিগ্যেস করলেন, “আচ্ছা খলিল তু বাতা, আমাদের সুবেদার আইয়ুবের (পাঞ্জাবি) পরিবারকে হত্যা করেছে কে? আমাদের জওয়ানরা?’ ঘটনাটি আমি শুনেছিলাম। ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জাহানযেব আরবাব ১৯ মার্চ ঢাকা থেকে ২০ মাইল দূরে জয়দেবপুরে অবস্থিত সেকেন্ড বেঙ্গলকে নিরস্ত্র করতে যান। তার সঙ্গে ছিল ঢাকার আর্টিলারি ফিল্ড রেজিমেন্টের প্রায় শ’দুয়েক সৈন্য ও তার ব্রিগেড সদর দফতরের অফিসারগণ এবং যথেষ্ট পরিমাণ ভারি অস্ত্রশস্ত্র । তখনকার রাজনৈতিক হাওয়া ছিল অত্যন্ত। উত্তপ্ত। সেনাবাহিনীর প্রতিটি পদক্ষেপই আশপাশের গ্রামের লােক এবং রাজনৈতিক কর্মীরা অনুসরণ করতে ও জানতাে। তারা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধও ছিল। বাঙালি সৈনিকদের নিরস্ত্র করা হবে এ কথাটা বাঙালি গ্রামবাসী যেমন জানতাে তেমনি বাঙালি সৈন্যরাও অনেকটা অনুমান করতাে। এদিকে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি মােকাবিলা করার জন্য কর্তৃপক্ষের হুকুম অনুযায়ী সব সৈনিক তাদের অস্ত্রগুলাে, অস্ত্রখানায় না রেখে হাতে নিয়ে সর্বদাই প্রস্তুত থাকতাে। তাদেরকে তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র করা সহজ ছিল না।  আরবাব দেখলেন দ্বিতীয় বেঙ্গলেরও অনুরূপ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। দেখে জাহানযেব আরবাব আর দ্বিতীয় বেঙ্গলকে নিরস্ত্র করতে সাহস না পেয়ে ফিরে আসেন।

তাদের ফেরার পথে স্টেশনের কাছে গ্রামবাসী রেল ক্রসিংয়ে দুটি খালি মালবাহী বগি ঠেলে এনে রােড ব্লক তৈরি করে। দ্বিতীয় বেঙ্গলের অধিনায়ক ছিলেন বাঙালি, কর্নেল মাসুদুল হােসেন খান। তাকে হুকুম দিলে তিনি বাঙালি সৈনিকদের দ্বারাই ধাক্কা দিয়ে এই রােড ব্লকটি পরিষ্কার করিয়ে দিতে পারতেন। বস্তুত কর্নেল মাসুদ সেটা করার জন্য প্রস্তুতও হচ্ছিলেন। এমন সময় আরবাব গর্জে উঠলেন, এদের ওপর গুলি চালাও, মাসুদ শুনতে পাচ্ছাে ? গুলি চালাও।’ মাসুদ তবুও আরবাবকে বােঝাবার চেষ্টা করছিলেন যে, এই তুচ্ছ কারণে গুলি চালানাের প্রয়ােজন নেই। এতে হিতে বিপরীতও হতে পারে; কিন্তু আরবাবের তর্জন-গর্জন থামে না। অগত্যা গুলি চালানাে হলাে, কতিপয় গ্রামবাসী নিহত হলেন, পালটা গুলিও আসতে লাগলাে। অবশেষে এই মােটা বুদ্ধি ও চরম বাঙালি-বিদ্বেষী আরবাব নানাভাবে হেনস্তা হয়ে ঢাকা ফেরেন। কিন্তু নিজের নির্বুদ্ধিতার কারণে ঘটা অঘটনের সমস্ত দায়দায়িত্ব তিনি দ্বিতীয় বেঙ্গলের অধিনায়ক কর্নেল মাসুদুল হােসেন খানের ওপর চাপিয়ে তাকে কৌশলে ঢাকা সদর দফতরে ডেকে নিয়ে বন্দি করেন। অতএব, দ্বিতীয় বেঙ্গলের সৈনিকদের ব্রিগেডিয়ার আরবাব তথা পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষের ওপর কোনাে আস্থা ছিল না। তাই যখন তারা শুনতে পেল যে পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় নিরস্ত্র জনতার ওপর ইতিহাসের ঘৃণ্যতম ও কাপুরুষােচিত ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তখন তারা অনেকটা একত্রে টাঙ্গাইল হয়ে ময়মনসিংহের দিকে যাত্রা করে এবং পাকিস্তানি ঘাতকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ছাড়া অন্য কোনাে উপায় খুঁজে পায় নি। সুবেদার আইয়ুবের পরিবার দ্বিতীয় বেঙ্গলের আবাস থেকে বাইরে সংলগ্ন গ্রামের কোনাে বাসায় থাকতাে। ঐ পঁচিশে মার্চের রাতে চরমভাবে উত্তেজিত গ্রামবাসীদের দ্বারা ঘেরাও বাসা থেকে আইয়ুব নিজে পালিয়ে বেঁচেছেন; কিন্তু তার পরিবার বাঁচতে পারে নি। এটা খুবই সম্ভব যে, চরমভাবে উত্তেজিত গ্রামের লােকেরা এদেরকে হত্যা করেছে। এইসব ঘটনা বিস্তারিতভাবে ব্রিগেডিয়ার ইসহাককে বললাম। বিদায় নেয়ার সময় অতীব বিমর্ষভাবে মাথা নেড়ে নেড়ে অনেকটা স্বগতােক্তির মতাে করে তিনি বলতে লাগলেন, “হারামজার্দোনে হামারা পাকিস্তানকে খতম কর দিয়া, খতম কর দিয়া।’  কোনাে পাঞ্জাবির মুখে আমি এই প্রথম শুনলাম যে, পাকিস্তান শেষ হয়ে গেছে। আর এই ‘শেষ’ করার কাজের জন্য দায়ীও পশ্চিম পাকিস্তানিরা। ব্রিগেডিয়ার ইসহাক তাঁর প্রিয় পাকিস্তানকে ভাঙার জন্য যেসব পাকিস্তানিকে দায়ী করেছেন এবং তাদেরকে (তার ভাষায়) ‘বেজন্মা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এদের অনেকেই পরে পাকিস্তানে পদোন্নতি লাভ করেছে।

আসেন। তাদের ফেরার পথে স্টেশনের কাছে গ্রামবাসী রেল ক্রসিংয়ে দুটি খালি মালবাহী বগি ঠেলে এনে রােড ব্লক তৈরি করে। দ্বিতীয় বেঙ্গলের অধিনায়ক ছিলেন বাঙালি, কর্নেল মাসুদুল হােসেন খান। তাকে হুকুম দিলে তিনি বাঙালি সৈনিকদের দ্বারাই ধাক্কা দিয়ে এই রােড ব্লকটি পরিষ্কার করিয়ে দিতে পারতেন। বস্তুত কর্নেল মাসুদ সেটা করার জন্য প্রস্তুতও হচ্ছিলেন। এমন সময় আরবাব গর্জে উঠলেন, ‘এদের ওপর গুলি চালাও, মাসুদ শুনতে পাচ্ছাে না? গুলি চালাও।’ মাসুদ তবুও আরবাবকে বােঝাবার চেষ্টা করছিলেন যে, এই তুচ্ছ কারণে গুলি চালানাের প্রয়ােজন নেই। এতে হিতে বিপরীতও হতে পারে; কিন্তু আরবাবের তর্জন-গর্জন থামে না। অগত্যা গুলি চালানাে হলাে, কতিপয় গ্রামবাসী নিহত হলেন, পালটা গুলিও আসতে লাগলাে। অবশেষে এই মােটা বুদ্ধি ও চরম বাঙালি-বিদ্বেষী আরবাব নানাভাবে হেনস্তা হয়ে ঢাকা ফেরেন। কিন্তু নিজের নির্বুদ্ধিতার কারণে ঘটা অঘটনের সমস্ত দায়দায়িত্ব তিনি দ্বিতীয় বেঙ্গলের অধিনায়ক কর্নেল মাসুদুল হােসেন খানের ওপর চাপিয়ে তাকে কৌশলে ঢাকা সদর দফতরে ডেকে নিয়ে বন্দি করেন। অতএব, দ্বিতীয় বেঙ্গলের সৈনিকদের ব্রিগেডিয়ার আরবাব তথা পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষের ওপর কোনাে আস্থা ছিল না।  তাই যখন তারা শুনতে পেল যে পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় নিরস্ত্র জনতার ওপর ইতিহাসের ঘৃণ্যতম ও কাপুরুষােচিত ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তখন তারা অনেকটা একত্রে টাঙ্গাইল হয়ে ময়মনসিংহের দিকে যাত্রা করে এবং পাকিস্তানি ঘাতকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ছাড়া অন্য কোনাে উপায় খুঁজে পায় নি। সুবেদার আইয়ুবের পরিবার দ্বিতীয় বেঙ্গলের আবাস থেকে বাইরে সংলগ্ন গ্রামের কোনাে বাসায় থাকতাে।

ঐ পঁচিশে মার্চের রাতে চরমভাবে উত্তেজিত গ্রামবাসীদের দ্বারা ঘেরাও বাসা থেকে আইয়ুব নিজে পালিয়ে বেঁচেছেন; কিন্তু তার পরিবার বাঁচতে পারে নি। এটা খুবই সম্ভব যে, চরমভাবে উত্তেজিত গ্রামের লােকেরা এদেরকে হত্যা করেছে। এইসব ঘটনা বিস্তারিতভাবে ব্রিগেডিয়ার ইসহাককে বললাম। বিদায় নেয়ার সময় অতীব বিমর্ষভাবে মাথা নেড়ে নেড়ে অনেকটা স্বগতােক্তির মতাে করে তিনি বলতে লাগলেন, “হারামজার্দোনে হামারা পাকিস্তানকে খতম কর দিয়া, খতম কর দিয়া।’ কোনাে পাঞ্জাবির মুখে আমি এই প্রথম শুনলাম যে, পাকিস্তান শেষ হয়ে | গেছে। আর এই ‘শেষ করার কাজের জন্য দায়ীও পশ্চিম পাকিস্তানিরা। ব্রিগেডিয়ার ইসহাক তাঁর প্রিয় পাকিস্তানকে ভাঙার জন্য যেসব পাকিস্তানিকে দায়ী করেছেন এবং তাদেরকে (তার ভাষায়) “বেজন্ম’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এদের অনেকেই পরে পাকিস্তানে পদোন্নতি লাভ করেছে। ব্রিগেডিয়ার জাহানাযেব আরবাব, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর কমান্ডে, ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা শহরকে শ্মশানে পরিণত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। এরা দুজন ও টিক্কা খান ঢাকার কসাই’ বলে কুখ্যাত। অথচ এদের তিনজনকেই ঢাকার হাজার হাজার নিরস্ত্র মুসলমান অধিবাসীকে কামান। দাগিয়ে দোজখে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান। পরবর্তীকালে পুরস্কৃত করেছে। টিক্কা হয়েছে সেনাবাহিনী প্রধান, আরবাব হয়েছে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর ফরমান আলী বন্দিশিবির থেকে ফিরে গিয়ে সমরবাহিনীতে উচ্চপদস্থ বেসামরিক চাকরি নিয়ে নিজেকে পূর্ব পাকিস্তানের পরম বন্ধু ঘােষণা করে বই লিখেছেন। জে, এন, দীক্ষিতের লেখা বইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী এই ফরমান আলী ভারতে যাওয়ার সময় বিমানে উঠেছে এই বলে যে, বাঙালি জাতি হিসেবে অকৃতজ্ঞ। অথচ এই রাও ফরমান আলীই আমাদের গােলাম আজম ও বিহারিদের দ্বারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করিয়েছে। অপরদিকে এই নৃশংসতা ও দেশ ভাঙার জন্য দায়ী প্রধান ব্যক্তি জুলফিকার আলী ভুট্টো ইসলামিক পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

সূত্র : পূর্বাপর ১৯৭১ – পাকিস্তানি সেনা-গহবর থেকে দেখা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!