You dont have javascript enabled! Please enable it! বেতিয়ারা স্মৃতিসৌধ - সংগ্রামের নোটবুক

বেতিয়ারা স্মৃতিসৌধ

একাত্তর সালের ১১ নভেম্বর ঐতিহাসিক বেতিয়ারা শহীদ দিবস বাঙালির ইতিহাসে ঐতিহ্যবাহী গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা পালন করে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী। ১৯৭১ সালের এই দিনে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের প্রশিক্ষিত গেরিলা বাহিনীর একটি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রবেশের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বেতিয়ারা নামক স্থানে শহীদ হন নয়জন বীর মুক্তিযোদ্ধা : শহীদ নিজামউদ্দিন আজাদ, শহীদ সিরাজুম মুনীর জাহাঙ্গীর, শহীদ বশির মাস্টার, শহীদ শহীদুল্লাহ্ সাউদ, শহীদ আবদুল কাইউম, শহীদ আওলাদ হোসেন, শহীদ আবদুল কাদের, শহীদ মোহাম্মদ শফিউল্লাহ।

এই সম্মুখ যুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর হতাহতের পাশাপশি পাকিস্তানি বাহিনীর অনেকে মৃত্যুবরণ করে ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। যা আজও আমাদের মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। এমনই অসংখ্য গেরিলা যুদ্ধ, সম্মুখ যুদ্ধ, মিত্র বাহিনীর সঙ্গে সম্মিলিত যুদ্ধের মধ্য দিয়েই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর আত্নসমর্পন ও ঐতিহাসিক সশস্ত্র বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

স্থানীয় মানুষ ধানক্ষেত থেকে শহীদদের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সমাহিত করেন। ২৮ নভেম্বর ১৯৭১ চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথদীঘি অঞ্চল শত্রুমুক্ত হওয়ার পর এই বীরদের গণকবরের ওপর স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং পাশেই নির্মিত হয় শহীদ স্মৃতিসৌধ। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহাসড়ক পুনর্নির্মাণকালে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে আধুনিক শৈলীতে গণকবরটি পাকা করে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।

প্রতি বছর ১১ নভেম্বর শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে বেতিয়ার দিবস পালন করা হয়। বেতিয়ারা প্রান্তরে সেই রাতে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার কাছে দিনটির গুরুত্ব বিশেষ আবেগ ও অনুভূতির। বেতিয়ারা দিবস স্মৃতি চিরন্তন হয়ে আমাদের উজ্জীবিত করে যাবে অনন্তকাল।

এই দিনটি সব মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সহযোদ্ধারা রণাঙ্গনের স্মৃতিচারণের পাশাপাশি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বেতিয়ারার বর্তমান অনন্য শিল্পসৌন্দর্যময় স্মৃতি সৌধটির কিয়দংশের ক্ষতিগ্রস্ত নির্মাণটুকু যতদ্রুত সংস্কার করা সম্ভব হয় শহীদ স্মৃতি ততই অমস্নান থাকবে।