You dont have javascript enabled! Please enable it! মওদুদীর ইসলাম প্রচার নিয়ে আলেম সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি - সংগ্রামের নোটবুক

আলেম সমাজের অভিমত

জামায়াত দাবি করছে তাদের সব কর্মকাণ্ডই নাকি ইসলাম রক্ষা করার জন্য। কিন্তু আমরা মনে করি জামায়াত ইসলামের মুখােশধারী একটি ফ্যাসিস্ট চক্র। চল্লিশের দশকের শুরুতে মওদুদী সাহেবের উদ্ভট ধ্যানধারণার ফলশ্রুতি হিসেবে জামায়াতের অভ্যুদয় ঘটে। একটি বিশেষ কৌশল হিসেবে মওদুদী সাহেব তার দলের নামে পবিত্র ইসলাম শব্দটি সংযােজন করেন। উপমহাদেশের ধর্মপরায়ণ মুসলমানদের জামায়াতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য এই কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। তাছাড়া যারা জামায়াতের বিরােধিতা করবে তাদেরকে সহজে ‘ইসলামবিরােধী হিসেবে চিত্রিত করা যাবে। বস্তুত দলমত নির্বিশেষে উপমহাদেশের কোনাে খাটি আলেমই এসব কর্মকাণ্ড সমর্থন করেন না। শুধু সমর্থন করেন না বললেই ঠিক হবে না, তারা এসবের চরম বিরােধিতা করে থাকেন। বিভিন্ন সংবাদপত্র, সাময়িকী ও বই-পুস্তকের মাধ্যমে তারা জামায়াত ও মওদুদী সম্পর্কে তাদের অভিমত প্রকাশ করে থাকেন। এখানে জামায়াত ও মওদুদী সম্পর্কে উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় এবং সর্বজনবরেণ্য কয়েকজন আলেমের অভিমত সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করব। দেওবন্দের ওলামা কেরামের একটি ফতােয়ায় বলা হয়েছে, “মওদুদী জামায়াত ও তাদের বই-পুস্তক সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ইমামদের অনুসরণ থেকে মানুষকে সম্পর্কহীন করে ফেলে। আর এটা জনসাধারণের জন্য ধ্বংস ও পথভ্রষ্টতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধর্মের সাথে সঠিক সম্পৃক্ততা রাখার জন্য সাহাবা কেরাম ও ইমাম-মুজতাহিদদের সাথে যে সম্পর্ক থাকা দরকার জামায়াতের বই-পুস্তক তাতে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। আর এটা নিঃসন্দেহে মুসলমানদের ধর্মের জন্য ক্ষতিকর ব্যাপার। এজন্য মওদুদীর বই-পুস্তক ও সেসবের উপর ভিত্তি করে গঠিত আন্দোলন জামায়াতকে আমরা ভ্রান্ত এবং মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকর মনে করি। এজন্য আমরা এসবের সাথে সম্পর্কহীনতার কথা ঘােষণা করছি। (দু’মাসআলে, ১৬ পৃঃ)।

অপর একটি ফতােয়ায় মওদুদীর বই-পুস্তক ও তার সংগঠন জামায়াত সম্পর্কে বলা হয়েছে, “মওদুদী জামায়াত ও এই দলের বই-পুস্তকের দ্বারা সাধারণ মানুষের মধ্যে ইমামদের অনুসরণের প্রতি অনীহা ও সম্পর্কহীনতার সৃষ্টি হয়। আর এটা সাধারণ মানুষের ধ্বংস ও পথভ্রষ্টতা | ডেকে আনে।’ -স্বাক্ষর মওলানা মুফতি কেফায়েত উল্লাহ্, মওলানা | হােসাইন আহমদ মাদানী, মােহাম্মদ তৈয়ব, মুহতামিম, দারুল উলুম। দেওবন্দ, মওলানা আবদুল লতিফ, মুহতামিম, মাজাহেরুল উলুম, সাহারানপুর, প্রমুখ।” (আল জমিয়ত, ৩০ আগস্ট, ১৯৫১) দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতি হযরত মওলানা সৈয়দ মাহদী। হাসান প্রদত্ত অপর একটি ফতােয়ায় মওদুদী জামায়াত সম্পর্কে বলা হয়েছে, “এই আন্দোলনে মুসলমানদের শরীক হওয়া কখনাে উচিত হবে না। এটা তাদের জন্য জীবন সংহারক বিষ। মানুষকে এই আন্দোলনে শরীক হওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। নতুবা তারা। গােমরাহ হয়ে যাবে। এটা তাদের জন্য কল্যাণের পরিবর্তে ক্ষতিকর। শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ মােটেও জায়েজ নয়। যে ব্যক্তি এই জামায়াতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রচার-প্রসার করে সে কল্যাণের পরিবর্তে পাপ কাজ করে। সে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারে না। এবং মানুষকে পাপের দিকে আহ্বান জানিয়ে থাকে। যদি কোনাে মসজিদের ইমাম মওদুদী জামায়াতের সদস্য হয়, তাহলে তার পেছনে নামাজ পড়া মাকরূহ।” (জামায়াতে ইসলামী- কা রুখে কেরদার, ১৬৮ পৃঃ)। তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মওলানা ইলিয়াস সাহেবের উত্তরসুরি তাঁর পুত্র হযরত মওলানা মােঃ ইউসুফ মওদুদী জামায়াতের কয়েকজন সদস্যের সাথে আলােচনা প্রসঙ্গে বলেছেন, “মওদুদী জামায়াত একটি রাজনৈতিক ও ক্ষমতালােভী দল। তারা এমন জিনিসের প্রত্যাশী যা শরীয়তের দৃষ্টিতে পরিত্যাজ্য।” (জামায়াতে ইসলামী- কা রুখে কেরদার, ৪১-৪২ পৃঃ) বেরেলবী চিন্তাধারার বিশিষ্ট আলেম হযরত মওলানা মােস্তফা খান সাহেব বেরেলবী ও মওলানা সাইয়েদ আফজাল হােসাইন, মুফতি, দারুল উলুম মানজারুল ইসলাম বেরেলবী মওদুদী জামায়াত ও তার ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে একটি ফতােয়া প্রদান করেন। তাতে তারা বলেন, “কিছুদিন আগে এক ব্যক্তি মওদুদীর ভাষণের প্রথম খণ্ডটি আমাদের নিকট নিয়ে আসেন। আমরা তা গভীরভাবে দেখি। তাতে আমরা এই।

সিদ্ধান্তে পৌছি যে, তিনি ইসলামের প্রচার-প্রসার ও উন্নতি বিধানের দাবি করে থাকেন। কিন্তু মূলত তার আন্দোলন ইসলামের ছিদ্র অন্বেষণ মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি এবং কুফরী ও কাফেরী ছাড়া কিছু নয় ।  তিনি ইসলামের ভিন্ন অর্থ করে থাকেন। সাধারণ মুসলমানদের তিনি মুসলমান মনে করেন না। (ফেতনায়ে মুদুদিয়াত, ৫৮ পৃঃ)।  বেরেলবী চিন্তাধারার অপর একজন বিশিষ্ট আলেম মওলানা সাইয়েদ।  মােঃ রেজওয়ান মওদুদী সম্পর্কে বলেছেন, “মওলবী মওদুদী সাহেবের বিভিন্ন উদ্ধৃতি পাঠ করে আমি এই সিদ্ধান্তে পৌছেছি যে, তার মস্তিষ্ক। সর্বজনমান্য মনীষীবৃন্দ ও আম্বিয়া কেরামের প্রতি বেয়াদবি ও ধৃষ্টতায় পরিপূর্ণ। বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আমার অনুরােধ, তার বিশ্বাস ও ধ্যানধারণা থেকে সতর্ক থাকুন। তাঁকে গােলাম আহমদ কাদিয়ানী ও গােলাম আহমদ পারভেজদের মতাে ইসলামের চরম শত্রু গণ্য করুন। কেউ তার প্রতারণার শিকার হবেন না। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, “আসল দাজ্জাল আত্মপ্রকাশের আগে তার পথ পরিষ্কার করার জন্য আরাে তিরিশজন দাজ্জাল আসবে। আমার মতে মওদুদী তাদের একজন।’ (মওদুদিয়াত কা পােস্ট মর্টাম, ৭ পৃঃ)। অল ইন্ডিয়া আহলে হাদীস কনফারেন্সের সভাপতি বিশিষ্ট মুহাদ্দিস মওলানা আবদুল ওহাব বলেছেন, “আমি আহলে হাদীস ভাইদের অনুরােধ করছি, তারা যেন নিজেদেরকে এই সংক্রামক ব্যাধি থেকে রক্ষা করে। নতুবা এই ব্যাধি শুধু তাদেরকে নয়, পুরাে আহলে হাদীস জামায়াতকে ধ্বংস করে ফেলবে। শুধু জোরে ‘আমিন’ বলা, “রাফে ইয়াদাইন করাই আহলে হাদীসের কাজ নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেদের। আকায়েদ বা বিশ্বাস সংশােধন না করবে এবং পূর্ববর্তী মনীষী ও বুজুর্গদের দ্বীনের পথ আঁকড়ে না ধরবে ততক্ষণ দ্বীন ও নাজাত লাভ করা কঠিন হবে। সুতরাং বীরত্বের সাথে জামায়াতে ইসলামীর মােকাবিলা করতে হবে এবং তার শক্তি নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে।” (মওদুদী জামায়াতের স্বরূপ, ৩৬৫ পৃঃ)। চট্টগ্রাম হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসার মুফতী হযরত মওলানা ফয়জুল্লাহ্ সাহেব মওদুদী জামায়াত সম্পর্কে একটি ফতােয়া প্রদান করেন। তাতে তিনি বলেছেন, “মওলানা মওদুদী আহলে সুন্নাত ওয়াজামায়াতের নীতি ও মতবাদ বিরােধী বিভ্রান্তিকর ও ত্রুটিপূর্ণ ধ্যান ধারণা পােষণকারী। তার অধিকাংশ লেখায় বিগত মনীষী, সাহা কেরাম, তাবেয়ীন, ইমাম মুজতাহিদ ও আওলিয়া কেরামের প্রতি বেআদবি প্রকাশ পেয়েছে। তার ধৃষ্টতামূলক আক্রমণ থেকে মহান নবীরাও রেহাই পাননি। সুতরাং এই দলের সাথে ওঠাবাসা করা, সংশ্রব রাখা মুসলমানদের জন্য কোনাে অবস্থাতেই জায়েজ নয়।” (পূর্ববৎ, ৩৪৫ পৃঃ)। তাঁর এ ফতােয়ার প্রতি অভিন্ন মত প্রকাশ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্ত পনের ১৭ জন শীর্ষস্থানীয় আলেম স্বাক্ষর করেন।

এই ফতােয়ায় স্বাক্ষরদান প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হযরত মওলানা তাজুল ইসলাম লিখেছেন, “আমি মুফতি ফয়জুল্লাহ সাহেবের অভিমত সমর্থন করি। বস্তুত মওদুদী ফেতনা কাদিয়ানী ফেতনার চেয়ে কম নয়।” বিশিষ্ট মুহাদ্দিস হযরত মওলানা জাকারিয়া (রঃ) মওদুদী জামায়াত সম্পর্কে “ ফিয়ে মওদুদীয়াত” শীর্ষক একটি তথ্যসমৃদ্ধ পুস্তক লিখেছেন। তিনি তাঁর এই পুস্তকে মওদুদী জামায়াতের ইসলামবিরােধী বিষয়গুলাে পবিত্র কোরআন-হাদীসের আলােকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি তার বইয়ের এক জায়গায় মওদুদী জামায়াত সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, “আমি এই ভ্রান্ত দলে যােগদান করা হারাম মনে করি। তাদের বই-পুস্তক পাঠ করা অত্যন্ত ক্ষতিকর।” লালবাগ জামেয়া কোরআনিয়ার প্রিন্সিপাল হযরত মওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ‘ভুল সংশােধন’ শীর্ষক একখানা পুস্তক লিখে জামায়াতের ইসলাম বিরােধী ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে দেন। তিনি তাঁর পুস্তকের এক জায়গায় লিখেছেন, “যাবৎ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর মূলনীতিতে এই ঘােষণা দিয়া না দিবেন যে, আমরা মওদুদী সাহেবের এ ভুলসমূহ সম্পূর্ণ বর্জন করিয়াছি, তাবৎ পর্যন্ত জামায়াতে যােগদান করা, কাজ করা কোনাে মুসলমানের জন্য জায়েজ হইবে না। যাহারা সাহাবায়ে কেরামের দোষ চর্চায় লিপ্ত তাহারা যে কেহই হােন না কেনজ্জতাহাদিগকে ইমাম বানাইয়া পিছনে নামাজ পড়া কিছুতেই জায়েজ হইবে না। কারণ তাহারা সাহাবায়ে কেরামের দোষ চর্চার কারণে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত হইতে খারিজ হইয়া গিয়াছে।” খেলাফত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মওলানা মােহাম্মদউল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর মওদুদী জামায়াত সম্পর্কে সতর্কবাণী’ শিরােনামে একটি পুস্তক লেখেন। তাতে তিনি মওদুদীর ভ্রান্ত মতবাদ ও জামায়াতে ইসলামীকে মুসলমানদের ঈমান ও ধর্মবিশ্বাস ধ্বংসকারী ফিতনা। হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি মুসলমানদেরকে ইসলামের মুখােশধারী এই দল থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান। হাফেজ্জী হুজুরের এই পুস্তকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় চার শতাধিক আলেম অভিন্ন মত প্রকাশ করে স্বাক্ষর করেন। তাদের মধ্যে শেখুল হাদীস মওলানা আজিজুল হকও রয়েছেন।

এ ছাড়া তিনি তার বােখারী শরীফ অনুবাদ গ্রন্থের শেষে জামায়াতের সমালােচানা করে শতাধিক পঠা লিখেছেন। তাতে তিনি মওদুদী ও জামায়াতে ইসলামীর ভ্রান্ত ধ্যানধারণা সম্পর্কে কোরআন-হাদিস এবং উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামাদের অভিমত উল্লেখ করে সারগর্ভ আলােচনা করেছেন। কিন্তু অপ্রিয় হলেও বলতে হয়, এই শেখুল হাদীস মওলানা আজিজুল হক বিগত নির্বাচনে সেই জামায়াতের সাথেই ঐক্যজোট করেছেন। এর চেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার আর কি হতে পারে! মওদুদী ও বাংলাদেশে তার দল জামায়াতে ইসলামীর বাতিল ধ্যানধারণা সম্পর্কে লালবাগ জামেয়া কোরানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন, “যে মওদুদীবাদের উপর ভিত্তি করে জামায়াতের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত সেই মওদুদী আকীদাকে আমাদের বুজুর্গানে দ্বীন ও অলি-আল্লাহরা ভ্রান্ত মতবাদ বলে মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বিগত নির্বাচনে এই মুফতি আমিনীও জামায়াতের সাথে ঐক্যজোট করেছেন। জামায়াতের সাথে মুফতি আমিনীর এই গাঁটছড়া বাঁধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের হাক্কানী আলেম-ওলামাদের পক্ষ থেকে আপত্তি উঠলে তিনি ইদানীং বলতে শুরু করেছেন, ‘আমরা। জামায়াতের সাথে রাজনৈতিক ঐক্য করেছি। আদর্শগত ঐক্য করিনি।’ রাজনৈতক ঐক্য বলতে মুফতি আমিনী কি বােঝাতে চাইছেন? ভাল হােক খারাপ হােক, আদর্শ ছাড়া কি কোন্ রাজনীতি আছে? তাছাড়া আমিনীরাই এতাে দিন বলে আসছেন, ধর্ম থেকে রাজনীতি আলাদা নয়। আধুনিক রাজনৈতিক দলগুলাের বিরুদ্ধে হুংকার দিয়ে আসছিলেন, তারা ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করছে। ধর্ম ও রাজনীতি অভিন্ন সত্তা। কিন্তু জামায়াতের সাথে ঐক্যজোট করতে গিয়ে রাজনৈতিক ঐক্য করে তার ধর্মীয় আদর্শটা তিনি রাখলেন কোথায়? কেন রাখলেন, কিসের লােভে রাখলেন? আলেম সমাজ মুফতি আমিনীর এসব স্বার্থান্ধ ও অর্থহীন কথাবার্তার ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। বায়তুল মােকাররম মসজিদের খতিব হযরত মওলানা ওবায়দুল হক মওদুদী জামায়াত সম্পর্কে অভিমত দান প্রসঙ্গে বলেছেন, তার প্রতি পূর্ণ পুস্তিকাদি দ্বারা সাধারণ ও নব্যশিক্ষিত লােকদের মধ্যে গােমরাহ। বিস্তার লাভ করছে।” (মওদুদী ফিতনা, ৩৫-৩৬ পৃঃ) 

জালালাবাদ ইমাম সমিতির ৬৭ জন ইমাম ও বিশিষ্ট আলেম মওলানা মওদুদী ও তার অনুসারী জামায়াতিদের সম্পর্কে একটি ফতােয়া প্রদান করেন। উক্ত ফতােয়ায় তারা বলেন, “মওদুদী সাহেব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের পরিপন্থী এক নতুন ধর্ম প্রবর্তন করতে চান। তাই উপমহাদেশের সকল দলমতের হাজার হাজার ওলামা, মাশায়েখ ও মুফতী সাহেবান মওদুদী সাহেবকে পথভ্রষ্ট, তার দলে যােগদান করা হারাম এবং মওদুদী আকীদায় বিশ্বাসী ইমামদের পেছনে নামায আদায় মাকরূহে তাহরিমী বলে ফতােয়া দিয়েছেন। (জালালাবাদ ইমাম সমিতি কর্তৃক ১-৫-৮৮ তারিখে প্রকাশিত ফতােয়া)। এ ছাড়াও উপমহাদেশের যেসব শীর্ষস্থানীয় আলেম মওদুদী ও তার জামায়াতের পবিত্র ধর্মের নামে রাজনৈতিক ব্যবসায় ও ভ্রান্ত ধ্যানধারণার বিরুদ্ধে বই লিখেছেন কিংবা ফতােয়া প্রদান করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট তফসীরকার মওলানা আবদুল মজিদ দরিয়াবাদী, জামায়াতের প্রাক্তন নেতা মওলানা আমীন ইসলাহী, হযরত মওলানা গােলাম গাউস হাজারবী, হযরত মওলানা মুফতী মােঃ শফী, হযরত মওলানা জাফর আহমদ ওসমানী, হযরত মওলানা আতাহার আলী, মওলানা সােলায়মান নদবী প্রমুখ। উপমহাদেশের সকল মত ও পথের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের উল্লিখিত ভাষ্যগুলাে অত্যন্ত স্পষ্ট। এগুলাে ব্যাখ্যা করার কোনাে প্রয়ােজন নেই। তারা অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় মওদুদী ও তার ধ্যান-ধারণার বাস্তব রূপ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে তাদের সুচিন্তিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইসলামের মুখােশধারী জামায়াতের আসল রূপটি এসব দেশবরেণ্য আলেমদের নিকট অস্পষ্ট নয়। তাই তারা জামায়াতকে মুসলমানদের ঈমান-আকীদার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। শুধু উল্লিখিত আলেমগণই নন, উপমহাদেশের খুঁটি আলেমরা সবাই জামায়াতের বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিমত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা অনেকে বিভিন্ন ভাষায় জামায়াতের বিরুদ্ধে পুস্তক লিখেছেন। এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে সেসব উল্লেখ করা সম্ভব নয়। 

সূত্র : মুখোশের অন্তরালে জামাত