জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস
জামায়াত দয়ামায়াহীন একটি ফ্যাসিস্ট চক্র জামায়াতের ৬৩ বছরের ইতিহাসে ফ্যাসিজমের অজস্র প্রমাণ রয়েছে। ইসলামই দলটির আদর্শ’-একথা প্রচার করা হলেও, মহান শান্তির ধর্ম ইসলামের উদারতা, বিশালতা ও সহনশীলতার বিন্দুমাত্র চিহ্ন এদের কার্যকলাপে পাওয়া যায় না, বিশেষ করে যখন তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মােকাবিলা করে বিরােধী শক্তি মুসলিম-অমুসলিম যাই হােক না কেন, তারা জামায়াতের ভাষায় ‘কাফের অধ্যাপক গােলাম আযম বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম নায়ক হিসেবে পরিচিত ৭১ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথমদিকে রাও ফরমান আলীর সঙ্গে এক বৈঠকে গােলাম আযম বুদ্ধিজীবী নিধনের একটা নীলনকশা পেশ করেন। সে নীলনকশা অনুযায়ী পরবর্তীকালে ডিসেম্বর মাসে বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর বুদ্ধিজীবী হত্যা সম্পর্কিত যে দলিলপত্র পাওয়া যায় তাতে স্পষ্ট করে নির্দেশ ছিল, “পূর্ব পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখা হয়ত সম্ভব হবে না। তবে একটি কাজ করতে হবে, এখানকার সব বুদ্ধিজীবী, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, বিজ্ঞানীকে চিরতরে ‘শেষ করে দিতে হবে যাতে পাকিস্তানকে হারালেও তারা দেশ চালাতে না পারে অধ্যাপক গােলাম আযম এই নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য তার দলীয় ক্যাডার, রাজাকার, আলবদর ও আলশামসকে নির্দেশ দেন। এলাকাও ভাগ করে দেয়া হয়। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে মিলে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলােতে জামায়াতের রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা বহু বাঙ্গালীকে হত্যা করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার পৃষ্ঠপােষকতায় এক পর্যায়ে জামায়াত আত্ম প্রকাশ করে কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশেও তাদের ফ্যাসিবাদী ধ্বংসাত্মক তৎপরতার এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। তারা প্রতিপক্ষের হাত-পায়ের রগ কাটছে, হত্যা করছে বিগত বছরগুলােতে তারা সারাদেশে বহু লােককে হত্যা করেছে। ২০০০ সালের ১২ জুলাই জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রামে ব্রাশ ফায়ার করে ৬ জন ছাত্রলীগ নেতাসহ ৮ জনকে হত্যা করেছে।
২০০০ সালের প্রথমদিকে কক্সবাজার জেলার জামায়াত-শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার ডালিম পুলিশের হাতে ধরা পড়ে রিমাণ্ডে ডালিম পুলিশকে বলেছে, কোটি কোটি টাকা। অবৈধভাবে কামাই করে সে জামায়াত-শিবিরের সংগঠনে ব্যয় করছে। জামায়াত-শিবির তাকে অস্ত্রের ট্রেনিং ও ক্যাডার বাহিনী গড়ে তােলার জন্য সক্রিয় সহযােগিতা প্রদান করেছে। ডালিম বাহিনীর সবাই অস্ত্র চালানাের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা র্যাংগস নামে গড়ে তুলেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। (আজকের কাগজ, ১৮ নভেম্বর, ২০০০) ২০০০ সালের ২৭ নভেম্বর জনকণ্ঠে জামায়াত-শিবির সম্পর্কে একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়েছে মৌলবাদী জামায়াতের আর্মড ক্যাডার সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের গােপন কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে এক চাঞ্চল্যকর রিপাের্ট পেশ করা হয়েছে। রিপাের্টে তুলে ধরা হয়েছে, শিবির ক্যাডারদের অস্ত্র প্রশিক্ষণের আস্তানা, সরকারী অস্ত্র ব্যবহার, অস্ত্রপ্রাপ্তির কানেকশন এবং বিদেশী সশস্ত্র গ্রুপের সাথে প্রত্যক্ষ যােগাযােগসহ নানা উদ্বেগজনক চিত্র রিপাের্টে প্রতিটি ঘটনার জন্য তথ্যপ্রমাণও সরবরাহ করা হয়েছে। দীর্ঘ এ রিপাের্টে তুলে ধরা হয়েছে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলােতে জামায়াতের ক্যাডার নিয়ােগের বর্তমান ও ভবিষ্যত পরিকল্পনাসমূহ। আট পৃষ্ঠাব্যাপী এ রিপাের্টটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে তৈরি করেছে সরকারী একটি সংস্থার বিশেষ একটি বিভাগ সে রিপাের্টে পেশকৃত প্রতিটি ঘটনার প্রমাণও সংযুক্ত করা হয়েছে। রিপাের্টে বলা হয়েছে, শিবিরের বৃহত্তম ঘাটি চট্টগ্রাম এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম জুড়ে এর গােপন কার্যক্রম বিস্তৃত মিয়ানমারের আরএসও বা রােহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন নামের একটি সংগঠনের সাথে শিবিরের রয়েছে গভীর যােগাযােগ আর এই আরএসও’র সাথে যােগাযােগ রয়েছে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি নামের একটি সশস্ত্র গ্রুপের চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সােয়াবিল পাহাড়ে শিবির ক্যাডারদের ইনফ্যান্ট্রি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
পরিচালিত হয় রিফ্রেশার কোর্সও। সশস্ত্র ক্যাডার তৈরির আগে শিবির সদস্যদের সুকৌশলে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরে (বিএনসিসি) ঢােকানাে হয় ব্যবস্থা হয় বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠানাের রিপাের্টে উল্লেখ করা হয়েছে, অস্ত্র চেনা ও ব্যবহারের প্রথম সুযােগ হিসেবে সরকারী অস্ত্র ব্যবহারের এ সুযােগ করে নেয়া হয়। রিপাের্টে বলা হয়েছে, শিবির মনে করে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ইসলাম পছন্দ করে এবং এদেশে ভারতবিরােধী মনােভাব প্রবল তবে আন্দোলন গতিলাভ না করার কারণ হিসেবে শিবির এও মনে করে ‘৭১ সালে জামায়াতের নীতি এবং সেকুলার ব্যক্তিদের হাতে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব থাকা। আবার শিবির এ ধারণাও পােষণ করে, ভারতের অধিকাংশ মুসলমান কংগ্রেস রাজনীতিতে বিশ্বাসী বিধায় সে দেশে মুসলমানদের কোনাে ভবিষ্যত নেই। অন্যদিকে পাকিস্তান বরাবরই ইসলামী কোন্দল নিয়ে থাকবে শিবিরকর্মী ও ক্যাডাররা মামলায় জড়িয়ে পড়লে ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন লিগ্যাল এইড কমিটি থেকে জনকল্যাণের নামে আর্থিক সহযােগিতা প্রদান করা হয়। আবার কর্মীদের থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে বায়তুলমাল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জরুরীভিত্তিতে কোনাে সদস্যের রক্তের প্রয়ােজন হলে নির্দিষ্ট করা আছে। রক্তদানকারী গ্রুপ এদের নাম, ঠিকানা, অবস্থান ও রক্তের গ্রুপ চিহ্নিত করে লিস্ট করা আছে রিপাের্টে এ ধরনের লিস্টেড রক্তদানকারীদের নামের তালিকা পেশ করা হয়েছে। রিপাের্টে তুলে ধরা হয়েছে বিএমএ লং কোর্স, পুলিশ এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পেশায় শিবির সমর্থকদের ঢােকানাের তৎপরতার নানাবিধ প্রচেষ্টার চিত্র সাম্প্রতিক সময়ে শিবিরের উদ্যোগে দি ফোরাম অব ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যান্ড আর্কিটেক্টস নামের একটি সংগঠন গড়ে তােলা হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ সংগঠনের কর্মকর্তার পদসমূহ দখলে আনা রিপাের্টে দি ফোরাম অব ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যান্ড আর্কিটেক্টস চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ২১ প্রকৌশলী নিয়ে পরিচালনা পরিষদের তালিকা তুলে ধরা হয়েছে রিপাের্টে আরও তুলে ধরা হয়েছে সদস্য সংগ্রহ, মসজিদ দখল, মেসকোচিং সেন্টার সৃষ্টি, প্রতি বছর গাইড প্রকাশ, নিজস্ব গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করার বিশদ চিত্র সর্বশেষ শিবির ভারতের বিজেপি স্টাইলে অমুসলিমদের মধ্যে সংগঠন গড়ে তােলার প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
প্রদত্ত এ রিপাের্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শিবির দলের জন্য প্র; শুভাকাঙ্ক্ষী, সক্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষী, সমর্থক, সক্রিয় সমর্থক, কর্মী, সক্রিয় কর্মী, সাথী, সক্রিয় সাথী এবং সবশেষে সদস্য পদে নির্বাচিত করে সক্রিয় সাথীদের নিয়ে সাথী পরিচালনা কমিটি তৈরি করা হয় এই সাথী পরিচালনা কমিটির বৈঠক চলাকালে সর্বদা নিজস্ব সেন্ট্রি মােতায়েন থাকে শিবিরের একটি তালিম-তরবিয়ত গ্রুপও আছে, যারা কর্মীদের রাজনৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকে। শিবির ইদানিং এনজিও কার্যক্রমও বৃদ্ধি করেছে সাধারণ মানুষদের বাগে আনতে শিবির দেশী-বিদেশী নামে এনজিও পরিচালনা করে রিপাের্টে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত ২৮ জনের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে যারা শিবির কর্মীদের নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করে এ ছাড়া দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজ শিবিরের সাথীদের তালিকা এবং মহানগরী শিবির সদস্যদের ৬৬ জনের দীর্ঘ এক তালিকা রিপাের্ট প্রদানকারী সংস্থার পক্ষে জানানাে হয়, শিবিরের প্রতিটি গােপন তৎপরতার ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে তারা এ রিপাের্ট পেশ করেছে। এর পরও কি কেউ বলতে পারেন, এই দলটি ইসলাম ও মুসলমানদের কল্যাণে কাজ করছে? জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস সম্পর্কে উপরে যে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া হয়েছে তা ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেকার বর্তমানে তারা চার দলীয় জোটের শরিক দল হিসেবে ক্ষমতাসীন। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ প্রশাসন তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে রিপাের্ট দিতে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে ব্রিত বােধ করছে তারপরও দেখা গেছে দেশের বিভিন্নস্থানে ধৃত জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের মধ্যে অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। এ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন এই পুস্তিকার শেষাংশে উল্লেখ করা হবে।
সূত্র : মুখোশের অন্তরালে জামাত