বাংলাদেশ বিরােধী অপপ্রচার
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জামায়াত, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও পাক হানাদার বাহিনীর অন্যান্য সহযােগীরা গা ঢাকা দেয়। অনেকে দেশের বাইরে চলে যায়। শুধু দেশের ভেতরেই নয়, বাইরেও তারা বাংলাদেশ বিরােধী অপপ্রচার অব্যাহতভাবে চালিয়ে যায়। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসেই জামায়াত নেতা অধ্যাপক গােলাম আযমের নেতৃত্বে লাহােরে “পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি” গঠিত হয়। পুরাে এক সপ্তাহব্যাপী মিছিল, সমাবেশ ও অন্যান্য কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে এই কমিটি তথাকথিত পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলন পরিচালনা করে। বাংলাদেশকে স্বীকৃতির ব্যাপারে গােলাম আযম পাকিস্তান সরকারের তীব্র বিরােধিতা করেন। ‘৭২ সালের নভেম্বরে গােলাম আযম বাংলাদেশ বিরােধী আন্দোলনকে ব্যাপকতা দেয়ার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানী পাসপাের্ট নিয়ে দেশত্যাগ করেন। ‘৭৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়কালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটির নেতা হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলােতে বাংলাদেশ বিরােধী প্রবল মনােভাব গড়ে তােলেন। “হিন্দুরা পূর্ব পাকিস্তান দখল করে নিয়েছে। সেখানে মুসলমানদের হত্যা ও নির্যাতন করা হচ্ছে। মসজিদগুলাে মন্দিরে রূপান্তরিত করা হচ্ছে।”- এ ধরনের উদ্ভট এবং ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টিকারী বক্তব্য তুলে ধরে তিনি সাহায্যের আবেদন জানান। এই প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ এবং সংগৃহীত অর্থের বিরাট অংশ আত্মসাতের অভিযােগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ১৯৭৩ সালের ২২ এপ্রিল নাগরিকত্ব বাতিল হওয়ার পর ক্ষিপ্ত গােলাম আযমের এই তৎপরতা আরাে ব্যাপকতা পেয়েছিলাে। সে মাসেই তিনি লন্ডনে চলে যান। সেই সাথে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটির সদর দফতরও প্রতিষ্ঠিত হয় লন্ডনে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তার এই তৎপরতা অব্যাহত থাকে। জানা গেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে বিধ্বস্ত মসজিদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে গােলাম আযম ৪৫ লাখ রিয়াল সংগ্রহ করেন। এ টাকার একটি অংশ দিয়ে গােলাম আযম যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে একটি বাড়ি কেনেন।
সূত্র : মুখোশের অন্তরালে জামাত