You dont have javascript enabled! Please enable it!

গণতন্ত্র ও জামায়াত

জামায়াতে ইসলামী বর্তমানে বেশ বড় গলায় গণতন্ত্রের কথা বলছে। এক কথায় বলতে হয় তারা গণতন্ত্রের প্রবক্তা সেজেছে। গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাবান মাত্র অন্তত তাদের এ ভূমিকার নিন্দা করবেন না। কিন্তু  জামায়াত কবে থেকে গণতন্ত্রের ভক্তে পরিণত হলাে, এটাই হলাে ভাববার বিষয়। ১৯৫৫ সালের প্রথমার্ধে মওলানা মওদুদীর মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ সময় তিনি তাঁর সুদীর্ঘ কর্মজীবনের চিন্তাধারা থেকে অনেকটা সরে পড়েন এতদিন যে গণতন্ত্রকে তিনি তাঁর বিশেষ ইসলামের দৃষ্টিতে অবাস্তব, অবৈধ, অভিশপ্ত ইত্যাকার বলেছেন, এ সময় সে গণতন্ত্রকে তিনি বৈধ, ইসলামের সারমর্ম, সমগ্র জাতির  অনুসরণীয় বলে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিতে আরম্ভ করেন। এ সময় থেকে  তিনি গণতন্ত্রের চরম ভক্তে পরিণত হন। সুদীর্ঘ কর্মজীবনে এ সম্পর্কে  যেসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়েছিলেন সেগুলাে বেমালুম ভুলে যান তিনি তাঁর বিশেষ প্রকাশভঙ্গিতে গণতন্ত্রের মাহাত্ম প্রচারে আত্মনিয়ােগ করেন। ১৯৫৫ সালে তরজমানুল কোরআনের আগস্ট সংখ্যায় গণতন্ত্র সম্পর্কে আলােচনা প্রসঙ্গে মওলানা মওদুদী লিখেছেন, “দ্বিতীয় ভিত্তি, যার উপর একমত হওয়া যায় তা হলাে ‘গণতন্ত্র। কোরআন ও সুন্নাহর সারমর্ম এবং দেশের অধিবাসীদের ইচ্ছাও তাই এর সরল অর্থ এই যে, দেশ কোনাে বিশেষ শ্রেণী বা গােষ্ঠির নয়। বরং এদেশে যারা বসবাস করছে তাদের সবার সুতরাং এর ব্যবস্থাপনা তাদের সবার কিংবা ন্যূনতম সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছানুযায়ী চলতে হবে। তাদের নীতিগতভাবে এই  অধিকার ও কার্যত এ সুযােগ থাকতে হবে যে, নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী শাসক নির্বাচন ও পরিবর্তন করতে পারবে।” মওলানা মওদুদী উল্লিখিত উদ্ধৃতিতে গণতন্ত্রের কল্যাণকর দিকগুলাের যে সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং ইসলামের সাথে এর সাযুজ্যতার যে বিশ্লেষণ করেছেন, তা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁর এ গণতন্ত্রপ্রিয়তা বেশিদিনের নয়। ১৯৩৩ সাল থেকে আরম্ভ করে ১৯৫৩ সালে জেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সুদীর্ঘ কর্মজীবনে মওলানা তাঁর লেখনী ও বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে সব সময়ই গণতন্ত্রের বিরােধিতা করে এসেছেন।

ইসলাম ও গণতন্ত্র দু’টো সম্পূর্ণ পরস্পরবিরােধী বলে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “বর্তমান যুগে যতগুলাে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রণীত হয়েছে, এগুলাে ইসলামী আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত।” (তরজমানুল কোরআন, ডিসেম্বর ১৯৩৫)। “তাদের (মুসলমানদের উদ্দেশে আমি পরিষ্কার বলছি, বর্তমান যুগের ধর্মহীন (ধর্মনিরপেক্ষ) জাতীয় গণতন্ত্র তােমাদের ধর্ম ও ঈমানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তােমরা যদি এর সামনে মাথা নত করাে তবে কোরআনের প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে। তার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণে অংশগ্রহণ করলে নিজের রাসুলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে এর পতাকা উত্তোলনের জন্য দাঁড়ালে নিজের খােদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করা হবে।” (জামায়াতে ইসলামী কি দাওয়াত-মওদুদী) “যেসব জামায়াত কোনাে শক্তিশালী আদর্শ ও সজীব সামগ্রিক (ইজতেমায়ী) দর্শন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে তারা সব সময়ই লঘিষ্ঠ হয় । সংখ্যালঘিষ্ঠতা সত্ত্বেও বিরাট বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠকে শাসন করে থাকে। মুসােলিনীর ফ্যাসী পার্টির সদস্য হলাে মাত্র চার লাখ এবং রােমে মার্চ করার সময় ছিলাে মাত্র তিন লাখ। কিন্তু এই সংখ্যালঘিষ্ঠরা সাড়ে চার কোটি ইটালীয়ের উপর ছেয়ে গেছে এই অবস্থা জার্মানীর নাজি পার্টিরও একটি মজবুত সুসংহত দল শুধু বিশ্বাস ও শৃংখলার জোরে ক্ষমতায় আসতে পারে। তার সদস্য সংখ্যা দেশের অধিবাসীদের মধ্যে প্রতি হাজারে একজন হােক না কেন।” (সিয়াসী কাশমকাশ-মওদুদী) “জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য-এ মতাদর্শের . আমি সমর্থক নই।” (সিয়াসী কাশমকাশ-মওদুদী) “এজন্যই আমি বলি, যেসব পরিষদ কিংবা পার্লামেন্ট বর্তমান যুগের গণতান্ত্রিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত সেসবের সদস্য হওয়া হারাম এবং তার জন্য ভােট দেয়াও হারাম। (রাসায়েল ও মাসায়েল-মওদুদী) মওলানা একদিকে বলেছেন, কোরআন ও সুন্নাহর সারমর্মই হলাে। গণতন্ত্র অপরদিকে বলেছেন, গণতন্ত্র ইসলামী আদর্শের সম্পূর্ণ। 

গণতন্ত্র প্রিয়তা বেশি দিনের নয়। ১৯৩৩ সাল থেকে আরম্ভ করে ১৯৫৩ সালে জেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সুদীর্ঘ কর্মজীবনে মওলানা তাঁর লেখনী ও বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে সব সময়ই গণতন্ত্রের বিরােধিতা করে এসেছেন। ইসলাম ও গণতন্ত্র দু’টো সম্পূর্ণ পরস্পরবিরােধী বলে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “বর্তমান যুগে যতগুলাে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রণীত হয়েছে, এগুলাে ইসলামী আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত।” (তরজমানুল কোরআন, ডিসেম্বর ১৯৩৫)। “তাদের (মুসলমানদের) উদ্দেশে আমি পরিষ্কার বলছি, বর্তমান যুগের ধর্মহীন (ধর্মনিরপেক্ষ) জাতীয় গণতন্ত্র তােমাদের ধর্ম ও ঈমানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তােমরা যদি এর সামনে মাথা নত করাে তবে কোরআনের প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে। তার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণে অংশগ্রহণ করলে নিজের রাসুলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। এর পতাকা উত্তোলনের জন্য দাঁড়ালে নিজের খােদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করা হবে।” (জামায়াতে ইসলামী কি দাওয়াত-মওদুদী)। “যেসব জামায়াত কোনাে শক্তিশালী আদর্শ ও সজীব সামগ্রিক (ইজতেমায়ী) দর্শন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে তারা সবসময়ই লঘিষ্ঠ হয়  সংখ্যালঘিষ্ঠতা সত্ত্বেও বিরাট বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠকে শাসন করে থাকে মুসােলিনীর ফ্যাসী পার্টির সদস্য হলাে মাত্র চার লাখ এবং রােমে মার্চ করার সময় ছিলাে মাত্র তিন লাখ কিন্তু এই সংখ্যালঘিষ্ঠরা সাড়ে চার কোটি ইটালীয়ের উপর ছেয়ে গেছে। এই অবস্থা জার্মানীর নাজি পার্টিরও। একটি মজবুত সুসংহত দল শুধু বিশ্বাস ও শৃংখলার জোরে ক্ষমতায় আসতে পারে। তার সদস্য সংখ্যা দেশের অধিবাসীদের মধ্যে প্রতি হাজারে একজন হােক না কেন।” (সিয়াসী কাশমকাশ-মওদুদী) “জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য-এ মতাদর্শের আমি সমর্থক নই।” (সিয়াসী কাশমকাশ-মওদুদী)। “এজন্যই আমি বলি, যেসব পরিষদ কিংবা পার্লামেন্ট বর্তমান যুগের গণতান্ত্রিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত সেসবের সদস্য হওয়া হারাম এবং তার জন্য ভােট দেয়াও হারাম। (রাসায়েল ও মাসায়েল-মওদুদী)। মওলানা একদিকে বলেছেন, কোরআন ও সুন্নাহর সারমর্মই হলাে গণতন্ত্র অপরদিকে বলেছেন, গণতন্ত্র ইসলামী আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত।

গণতন্ত্র মুসলমানদের ধর্ম ও ঈমানের পরিপন্থী। গণতন্ত্রের সামনে মাথা নত করা কোরআনের প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শনের নামান্তর। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণে অংশগ্রহণ করা রাসুলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা। খােদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করা। ইসলামের সারমর্ম গণতন্ত্রের সারমর্মের সাথে সব সময়ই সংগ্রাম মুখর ইসলাম ও গণতন্ত্র পরস্পর কোথাও সমঝােতা করতে পারে না। মওলানা একদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের প্রতি সর্বাধিক জোর দিয়েছেন, অন্যদিকে বলেছেন, জনসাধারণ অজ্ঞ তাদের মতামতের মূল্য দিলে বিপথগামিতার সম্ভাবনা রয়েছে তিনি আরাে বলেছেন, আদর্শবান দলের অনুসারীরা সংখ্যায় কমই হয়ে থাকে। তাদের সংখ্যা প্রতি হাজারে একজন হােক না কেন, তারাই শাসনক্ষমতা পরিচালনা করে থাকে এজন্য তিনি মুসােলিনী ও হিটলারের অনুসারীদের দৃষ্টান্ত। ও তুলে ধরেছেন এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মওলানা মওদুদীর কোন্ উক্তিকে সঠিক বলে ধরে নেয়া যাবে। অথচ গণতন্ত্রের সপক্ষ-বিপক্ষ উভয় ক্ষেত্রেই তিনি ইসলামের দোহাই পেড়েছেন। ইসলামকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার এর চাইতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আর কি হতে পারে! বস্তুত ইসলামের মুখােশ পরে যখন যেমন তখন তেমন কথা বলাই মওলানা মওদুদী ও তাঁর দল জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কৌশল। বাংলাদেশেও জামায়াতে ইসলামী এই কৌশলই অনুসরণ করে চলেছে। 

সূত্র : মুখোশের অন্তরালে জামাত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!