You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.11 | বাঙলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম প্রথম থেকে সমর্থন করেছি- উইলিয়ম ওয়েনরাইট | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম প্রথম থেকে সমর্থন করেছি- উইলিয়ম ওয়েনরাইট

কলকাতা, ১০ অক্টোবর- “বাঙলাদেশের মানুষ যে লড়াই লড়ছেন তা নিঃসন্দেহে জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম। আমরা যারা স্বদেশে সাম্রাজ্যবাদের কার্যকলাপ প্রতিনিয়ত অনুধাবনকার তারা প্রথম থেকে এই ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থণ জ্ঞাপন করে এসেছি, কারণ এর মূল লক্ষ্য কী তা বুঝতে কোনাে অসুবিধা আমাদের হয় নি।” গ্রেট বৃটেনের কমিউনিস্ট পার্টির বিশিষ্ট নেতা কমরেড উইলিয়ম ওয়েনরাইট আজ এখানে কালান্তর-এর সঙ্গে সাক্ষাতকারে উপরােক্ত বক্তব্য তুলে ধরেন। কমরেড ওয়েনরাইট কোচিনে অনুষ্ঠিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নবম কংগ্রেসে গ্রেট বৃটেনের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে ভ্রাতৃ প্রতীম প্রতিনিধি হিসেবে যােগ দিয়েছিলেন। ফেরার পথে তিন দিন কাটিয়ে গেলেন। উদ্দেশ্য ছিল বাঙলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম, শরণার্থীদের সমস্যা প্রভৃতি বিষয়ে সারেজমিন পর্যবেক্ষণ করে বিশদ সংবাদ সংগ্রহ। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য, কমরেড ওয়েনরাইট গ্রেট বৃটেন কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক সদস্য এবং পার্টির মুখপত্র ‘মর্ণিং স্টার’- এর সহযােগী সম্পাদক। কমরেড ওয়েনরাইট বলেন, “বাঙলাদেশের মানুষ একটি স্বতন্ত্র জাতি। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ভৌগলিক অবস্থান, অর্থনীতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়, সামাজিক মনােবিজ্ঞান পশ্চিম পকিস্তান থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ১৯৪৭ সাল থেকে তাদের উপর বারংবার দমন পীড়ন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙ্খ স্বৈরাচারী ও সামরিক উপায়ে চুরমার করা হয়েছে। তারা কেবল দুর্বার তাঁদের মতামত স্বাধীনভাবে ব্যালেট প্রকাশ করার সুযােগ পেয়েছিলেন। দুবারই তারা সুস্পষ্টভাবে তাদের অভিলাষ প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক সমাধানের উপর ভারত, সােভিয়েত ইউনিয়ন যে অধিকতর গুরুত্ব অরােপ করছেন সে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে তিনি বলেন, “বাঙলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আশা-আকাঙ্খ অনুসারেই রাজনৈতিক সমাধানের দাবি তােলা হচ্ছে। বৃটেনের শ্রমিকদলও এ কথা বলে।
আমাদের পার্টির বক্তব্য এ ব্যাপারে অভিন্ন।” কমরেড ওয়েনবাইট জানান, “ইয়াহিয়া যা করেছে তাতে প্রতিটি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বৃটিশ নাগরিক আতঙ্কিত।”

এই সফরের তৎপর্য
কমরেড ওয়েনরাইট বার এই সফরের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে কালান্তর এর কাছে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেছেন, “জাতীয় অধিকারের জন্য বাঙলাদেশের জনগণের ন্যায় সঙ্গত সংগ্রাম সারেজমিন সংগ্রহের জন্য গ্রেট বৃটেনের কমিনুনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি ও তার দৈনিক পত্রিকা মর্ণিং স্টার এর পক্ষ থেকে আমি কলকাতায় এসেছিলাম। এখানে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃস্থানীয় সদস্য ছাড়াও বাঙলাদেশের জনগণের সংগ্রামের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমার আলােচনা ও সাক্ষাতকার হয়েছে। বাঙলাদেশের সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ,এইচ,এম কামরুজ্জামান, বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম ও অন্যান্য নেতৃবর্গ, বাঙলাদেশ জাতীয় আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলতাফ হােসেন, প্রাদেশিক কমিটির সদস্যা মতিয়া চৌধুরী ও অন্যান্য নেতৃস্থানীয় সদস্য, বাঙলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মালিকের সঙ্গে আলােচনা করেছি। দুটি শরণার্থী শিবির এবং বাঙলাদেশ যুব শিবির পরিদর্শন করেছি।

অস্ত্র চাই-সােচ্চারিত দাবি
“তৃতীয়তঃ ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে সামরিক প্রতিরােধ সংগঠিত করার জন্য বীরত্বপূর্ণ প্রয়াসের কিছুটা চিত্র দেখেছি। আমাকে একটি যুব শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে বলা হয়েছিল ঐ শিবিরটি বাঙলাদেশের কোন এক স্থানে অবস্থিত। সেখানে দেখলাম ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ চালানাের জন্য বহু তরুণ প্রস্তুত হচ্ছেন। তাদের দৃঢ়তা ও মনােবল অনুপ্রেরণা সঞ্চার করে। তাদের বৃটিশ অতিথিকে অভিনন্দন জানাবার জন্য এ সকল তরুণরা সমবেত হলে তাদের প্রশ্ন করা হলাে-তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়ােজন কি এবং তারা এক যােগে সােচ্চারিত উত্তর দিলেন, অস্ত্র ও গােলাবারুদ। কমরেড ওয়েনরাইট তার সঙ্গে যে সকল বস্তুসামগ্রী এনেছিলেন তার অধিকাংশই শরণার্থীদের জন্য দান করেছেন।

সূত্র: কালান্তর, ১১.১০.১৯৭১