You dont have javascript enabled! Please enable it!

শরণার্থীদের বঞ্চিত করে দৈনিক এক কোটি টাকা চুরি
(দর্পণের সংবাদদাতা)

সেই পুরনাে গল্প- এবারে একটু বৃহদাকারে এই যা, আর মৃত্যু ক্ষয় ক্ষতি তারও পরিমাণ ভয়াবহ। আর্ত শরণার্থী মানুষের ত্রাণের নামে এরা মৃত্যুর ব্যবসা চালাচ্ছে। পাপচক্রে আছে সরকারি আমলাদের ঘুঘু অংশ, কন্ট্রাক্টর, আর শরণার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ এবং নব কংগ্রেসের নয়া ভলান্টিয়ার বাহিনীর নেতারাও ছিটেফোঁটা পায়।
পূর্ববঙ্গের প্রায় এক কোটি লােক আজ ভারতে শরণার্থী। এদের পঁচাত্তর ভাগই পশ্চিমবঙ্গে। রেশন, ওষুধ, মাথা গোঁজার ব্যবস্থা পরণের কাপড়, শীতে কম্বল ইত্যাদি যাবতীয় বন্দোবস্ত করা দরকার এদের জন্যে। বিরাট কর্তব্য, ত্রুটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
কিন্তু যা হচ্ছে তাতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি মহলের অনেকে চিন্তিত। মাথা পিছু শরণার্থীদের দৈনিক তিনশ গ্রাম চাল আর ডাল, চিনি তেল প্রভৃতি খাবার জিনিস পাওয়ার কথা। খালি চাল পায় ওরা, তাও দুশ গ্রামের বেশি নয়। খাতাপত্রে কিন্তু তিনশ গ্রামই দেখানাে হচ্ছে।
অন্যান্য জিনিসের ব্যাপারেও ঐ একই অবস্থা। সব কিছুই খাতায় দেখানাে হচ্ছে, কিন্তু শরণার্থীর হাতে জিনিস পৌচুচ্ছে না একদমই, অথবা দু-একটা জিনিস খুব কম পরিমাণে কোনাে সময় হয়ত ছিটকে এসে পড়ছে।
দৈনিক প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ এই শরণার্থীদের জন্য, অন্তত সরকারি হিসাব তাই। সন্দেহের ভিত্তি আছে যে, এর মধ্যে কম করে এক কোটি টাকা চুরি হয়ে যায়।
চালের ব্যাপারেই ধরা যাক। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থীকে দৈনিক তিনশ গ্রাম হিসেবে চাল দেয়ার কথা। বেশির ভাগ শরণার্থী শিবির থেকে খবর এসেছে যে, চাল কম দেয়া হয়। শরণার্থীরা আপত্তি করলে বেদম প্রহার করা হয়।
এই চাল বিতরণের ভার কন্ট্রাকটরদের হাতে দেয়া হয়েছে। এরা ক্যাম্প ইউনিটের সাহায্যে চাল বিতরণ করে। বিভিন্ন শিবিরে মােট পনেরাে হাজার নতুন লােক নিয়ােগ করা হয়েছে ক্যাম্প এ্যাসিস্টান্ট হিসেবে। শাসক কংগ্রেসের জেলা শাখার অনুমােদনে এরা নিয়ােগ পত্র পেয়েছে সেই কোয়ালিশন সরকারের আমকলে। এদের অনেকেই স্থানীয় মাস্তান।
এই মাস্তানরা, কন্ট্রাকটররা, পুলিশের ও আমলাদের একাংশ যাদের পাপ চক্রের কথা এই রাজ্যে বহুদিন ধরে শােনা যাচ্ছে তারা আজ প্রকাশ্যেই সবকিছু চালাচ্ছে।
লাখ লাখ টাকা তছরূপ হচ্ছে আর শরণার্থীরা কলেরায় অজীর্ণতায় আরও অনেক অনেক রােগে বিনা ওষুধে হাজারে হাজারে মরছে।
মেঘালয়ে এক শিবিরের একটি ঘটনা। ওখানে থাকে তিন লাখ শরণার্থী। মহামারী আকারে কলেরা দেখা দেয়। রােজ প্রায় দুশ লােক মরতে থাকে। চিকিৎসার জন্য স্যালাইন পাঠানাে হয়। কিন্তু দেখা গেল প্রতি বােতল ক্যাম্পের বাইরে তিন টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। শরণার্থীদের কেউ কেউ নিজেদের শেষ সম্বল কিছু টাকা অথবা গহনা এনেছিল। এই গহনা কনট্রাকটরদের কাছে জলের দামে বেচে চার আনার স্যালাইন ওরা তিন টাকা বােতল পিছু কিনেছে। যাদের ওই সম্বল ছিল না তারা বিনা চিকিৎসায় মরেছে।
সেদিন ভারত সেবাশ্রম সংঘের একজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। স্বামীজী বহু শিবিরে কাজ করেছেন। উনি এসেছিলেন রাইটার্স বিল্ডিং-এ অভিযােগ করতে। বীভৎস ছবি তিনি তুলে ধরলেন এই চুরি বাটপাড়ির। ‘কোনাে মনুষ্যত্ব এদের আছে বলে মনে হয় না, জম্ভদেরও কেউ এই ভাবে রাখার ব্যবস্থা করে না আর ওদের মুখের খাবার নিয়ে এই ব্যবসা চলে না।

সূত্র: দর্পণ
০৫.১২.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!