ওপার বাংলার সংগ্রামের সুযােগ নিচ্ছে এপার বাংলার স্বার্থবাজরা
বাংলাদেশের মুক্তিযোেদ্ধাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সারা ভারতে যে কীভাবে সাড়া পড়েছে তার খবর প্রতিদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে।
স্বভাবতই সীমান্তের এপারে পশ্চিমবঙ্গে এ ব্যাপারে উৎসাহ অনেকটা বেশি। পাক-সামরিক বাহিনীর অত্যন্ত আকস্মিক এবং নৃশংস আক্রমণে বিচলিত হয়ে অনেক মুক্তিযােদ্ধা এপারে ছুটে আসছেন।
কতকটা অভিজ্ঞতা না থাকার দরুণ এবং বাকিটা কেন্দ্রীভূত সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এই সব মুক্তিযােদ্ধা এপার থেকে সর্বপ্রকার সাহায্য চান।
যতদিন বাংলাদেশ সরকারকে ভারত সরকার কূটনৈতিক মর্যাদা না দিচ্ছে ততদিন এপার থেকে সাহায্য করার অবকাশ খুবই কম।
স্বাধীনতার আন্দোলন যে প্রধানতই নিজেদের ত্যাগেই অর্জন করতে হয় এ কথা আমরা সবাই ভুলে গেছি। এর কারণ ইংরেজ শাসক গােষ্ঠীর সঙ্গে আপােষের ফলেই আমাদের দেশ দু-টুকরাে হয়েছিল এবং আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম অনেকটা বিনা রক্তপাতে।
রক্ত অনেক ঝরেছিল। ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ততটা নয় যতটা নিজেদের মধ্যে কলহে।
এ থেকে এ কথা মনে করার কোনাে কারণ নেই যে বাংলাদেশের এই লড়াইয়ে আমরা কোনােরকম সাহায্য করব না। আসলে মনে রাখতে হবে যে ওখানকার মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের উপর আমাদের এখানকার ভবিষ্যৎ অনেকটা নির্ভর করছে। সে জন্য মামুলী নৈতিক সমর্থন ছাড়া আমাদের আরও কিছু করা দরকার।
কিন্তু বেশ দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ করছি এবং বিভিন্ন সূত্রে সংবাদ পাচ্ছি যে, ওপারের সংগ্রামীদের সাহায্য করার ব্যাপারে সরকারি প্রচেষ্টা ছাড়া অন্য যেসব কার্যকলাপ চলছে তা ওখানকার আন্দোলন তাে বটেই এখানকার আন্দোলনকেও বানচাল করে দেবে।
এই প্রসঙ্গে গােড়াতেই বড় বড় সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তথ্য পরিবেশন করার কথা বলতে হয়।
বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা যে একটা টোটাল ওয়ার এই অনুভূতি সকলের নেই। চমক লাগানাে সংবাদ প্রচার করলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে। দেশের আপামর জনসাধারণ এই সগ্রামে অংশীদার। তাদের কাছে সব কথা জানাতে হবে। তার মানে এই নয় যে আমাদের পরবর্তী অভিযানের পরিকল্পনা’ আগেই প্রকাশ করে দেব।
পাকিস্তানি আক্রমণের তীব্রতা বাড়ার পর এখন পিকনিক করতে ইলিশ মাছ, কাঁচাগােল্লা ও ডাব খেতে যাওয়ার যাত্রীর সংখ্যা কমেছে, কিন্তু সুযােগ সন্ধানীর অভাব যে নেই যারা সীমান্ত এলাকার সংবাদ রাখেন তাঁরা জানেন।
ব্ৰিত মানুষের দুস্থতার সুযােগ নিয়ে মুনাফা করার জন্য ব্যবসায়ীদের আনাগােনা দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে রাজ্যসরকারের কর্মীরা সজাগ হলে এটা হতে পারত না।
পুলিশী সূত্রে আমাদের কাছে সংবাদ এসেছে সীমান্তবর্তী কয়েকটা জেলায়, বিশেষ করে পশ্চিম দিনাজপুর, মালদা ও মুর্শিদাবাদে কয়েকজন নামকরা অসামাজিক ব্যক্তি সরকারি কর্তৃপক্ষকে উপেক্ষা করে নব কংগ্রেসী স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ওপারের মুক্তিবাহিনীর উদ্ধার করা অস্ত্রশস্ত্র নিজেরাই। করেছেন। তারা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন অন্তরঙ্গ মহলে যে, বামপন্থীদের মারার জন্য এগুলাে এ দেশে কাজে লাগবে। এ বামপন্থী কারা সেটা বলে দেওয়া কি প্রয়ােজন?
সূত্র: দর্পণ
২৩.০৪.১৯৭১