You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.07 | বাংলাদেশের সশস্ত্র আন্দোলন পরিচালনার প্রশ্নে মতান্তর | দর্পণ - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের সশস্ত্র আন্দোলন পরিচালনার প্রশ্নে মতান্তর

বাংলাদেশে সশস্ত্র আন্দোলন নিয়ে নানা গােলমাল দেখা দিয়েছে বলে শােনা যাচ্ছে। বামপন্থীরা বলছেন যে, আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে হবে এর নেতৃত্বকে ব্যাপক করে, সংগঠনকে সংগ্রাম কায়দায় মজবুত করে। আর আওয়ামী লীগের যারা কলকাতায় বা অন্যান্য ভারতীয় এলাকায় ঘােরাফেরা করছেন তারা নেতৃত্বের প্রশ্নে বা সংগ্রামের প্রয়ােজনে কোনাে যুক্ত মাের্চার ব্যাপারে কথা বলতে রাজি নন।
ভারতে এবং অন্যান্য দেশেও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, সশস্ত্র সংগ্রাম দীর্ঘস্থায়ী হলে নরমপন্থী গণতন্ত্রপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতারা নেতৃত্ব থেকে হটে যাবেন এবং উগ্রপন্থী ছােকরার দল সংগ্রামের পুরােভাগে চলে আসবে।
নরমপন্থী এবং উগ্রপন্থীদের মাঝে জোরালাে একদল মধ্যপন্থী আছেন। তাদের বক্তব্য যে নেতৃত্বের প্রশ্নে শ্রেণী চরিত্র বা অতীত কাহিনী ইত্যাদি কথা তুলে এখন আর আন্দোলনে ভাঙন ধরানাের দরকার নেই। আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য : সশস্ত্র সংগ্রাম চলবে। এই বক্তব্যের ভিত্তিতে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। যে সমস্ত নেতা ভারতীয় নিরাপত্তার আড়ালে গা বাঁচাতে চান তাদের সংগ্রাম ফ্রন্টে জোর করে ঠেলে না দিয়ে এখানে যা কিছু করা দরকার তাই করুন। যারা লড়তে চায় তাদের তাে ফ্রন্টে যেতে বাধা নেই।
মােট কথা, শত্রু যখন নির্দিষ্ট, সংগ্রামের বর্তমান স্তরের লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে যখন কোনাে দ্বিমত নেই তখন চুলচেরা তাত্ত্বিক আলােচনায় নেমে নানা ফ্যাকড়া ভােলা পলায়নবাদের সামিল।
মধ্যপন্থীরা ক্রমশ নিজেদের যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারছেন এবং এই মধ্যপন্থীরা বাংলাদেশের ছােটবড় সবদলেই আছেন। তারা এখন ভাবছেন যে, সরকার যেমন আছে থাক আর ফ্রন্টে লড়াই চালাবার জন্য আর দৈনন্দিন নেতৃত্বের প্রয়ােজনে এবং বিভিন্ন এলাকার নেতৃত্বের মধ্যে কৌশলগত সমন্বয়ের জন্য একটি কেন্দ্রীয় বিপ্লবী কাউন্সিল গঠিত হওয়া দরকার। কাউন্সিল অবশ্য সরকারেরই অংশ হবে। বিভিন্ন কাউন্সিল ইউনিটের মধ্যে যােগাযােগ ও সরবরাহ ব্যবস্থা, অস্ত্র আমদানি ইত্যাদি সরকার ও বিপ্লবী কাউন্সিল যুক্তভাবে করতে পারে।

সূত্র: দর্পণ
০৭.০৫.১৯৭১