You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.14 | ‘আর সময় নাই’ শিরোনামে ইত্তেফাক ও পাকিস্তান অবজার্ভার প্রকাশিত যৌথ সম্পাদকীয় - সংগ্রামের নোটবুক

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান সম্বলিত ঢাকার বিভিন্ন দৈনিক ‘আর সময় নাই’ শিরোনামে প্রকাশিত যৌথ সম্পাদকীয় ইত্তেফাক ও পাকিস্তান অবজার্ভার ১৪ মার্চ, ১৯৭১

আর সময় নাই            

                                                                        ইত্তেফাক, ১৪ মার্চ ১৯৭১

            আমরা ঢাকার সংবাদপত্র সমূহ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আজ সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিন আসিয়াছে এবং এই মুহুর্তে একবাক্যে একসুরে কয়েকটি কথা বলা আমাদের অবশ্য কর্তব্য হইয়া দাঁড়াইয়াছে। তেইশ বৎসরের ইতিহাসে জাতি আজ চরমতম সংকটে নিপতিত। দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক জীবনপদ্ধতি কায়েমের আশায় সমগ্র দেশ জীবনের সর্বপ্রথম সাধারণ নির্বাচনে শরিক হওয়ার পর দেশের আজ এই অবস্থা জনগণই দেশের সার্বভৌম্য ক্ষমতার অধিকারী; দেশের প্রশাসনিক কাঠামো কি হইবে, কি ধরনের সরকারই বা কায়েম হইবে তা নির্ধারণের ক্ষমতার অধিকারী  কেবল তাঁদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই। গণতন্ত্রে যদি বিশ্বাস থাকে, তাহা হইলে দেশের আইন-কানুন প্রণয়ন বা রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে জনগণের প্রতিনিধিদের এই অধিকার কেহ অস্বীকার করিতে পারেন না। এটা একটি মৌলিক রাজনৈতিক প্রতিপাধ্য বটে। ক্ষমতায় যাহারা আজ সমাসীন আর ক্ষমতাসীনদের সহির কানাকানি করার সুযোগ যাহাদের আছে তাঁহাদের ব্যর্থতাই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কারণ। বহিরাক্রমণ হইতে দেশের সীমান্ত রক্ষাই হইল সামরিক বাহিনীর কাজ। রাজনৈতিক বিতর্কে হস্তক্ষেপ বা পক্ষ গ্রহণ করা তাঁহাদের কোন দায়িত্বের আওতায় আসে না।

            জনগণের সংগ্রাম যাতে অহিংসা পথেই পরিচালিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখিতে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর দল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁহাদের হস্ত শক্তিশালী করাই আজ প্রয়োজন।

            দেশের দুই অংশের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কি হইবে, তা নির্ধারণের দায়িত্ব দেশবাসী জনসাধারণ ও তাঁহাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের।

            আমরা মনে করি আজ সমউ আসিয়াছে যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে রাজনৈতিক জীবনের এই বাস্তব সত্যগুলি স্বীকার করিয়া লইতে হইবে। আমাদের বিচারে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উচিত দেশের বুক হইতে সামরিক আইন তুলিয়া লইয়া অবিলম্বে দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সহিত একটি মীমাংসায় উপনীত হওয়া যাহার ফনশ্রুতিতে জনগণের প্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়।

দ্য পাকিস্থান অবজার্ভার, মার্চ ১৪, ১৯৭১।

 আমরা, ঢাকার দৈনিক পত্রিকা, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এটাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সেই সময় এবং এই মুহূর্তে সবার মনের কথা তুলে ধরার জন্য আমরা দায়িত্ববদ্ধ।

  আমরা আমাদের ২৩ বছরের ইতিহাসে সবচাইতে সবচাইতে বড় সংকটের মধ্যে আছি। আর এটা সাধারণ নির্বাচনের পর, প্রথম যাতে পুরো দেশ তাঁদের প্রত্যাশার পূর্ণতা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দাবী মেটাতে অংশগ্রহণ করেছিল। জনতা অবিচ্ছিন্ন এবং তাঁদের প্রতিনিধিরা সরকার ব্যবস্থায় আছে। এটা স্বীকার করতেই হবে যে,যদি কেউ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হয়, তবে জনপ্রতিনিধিদের আইন ও দেশ শাসন করার অধিকার আছে। এটার মৌলিক রাজনৈতিক প্রশ্ন। পরিস্থিতি অস্বাভাবাবিক হয়ে গিয়েছে সেই অংশে যারা ক্ষমতার আছে এবং যাদের ক্ষমতার উপর সক্ষমতা আছে।

            সশস্ত্র বাহিনী বহিরাক্রমণের বিরুদ্ধের দেশের সীমানা রক্ষা করার জন্য। রাজনৈতিক বিতর্কে হস্তক্ষেপ করা বা পক্ষ নেওয়া তাঁদের কার্যক্রমের অংশ নয়। শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার দল জনতার সংগ্রামক অহিংস অবস্থানে দেখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাঁদের অংগ-সংগঠন শক্তিশালী করা হয়েছে।

            জনগণের জন্য ভবিষ্যতে দেশের দুই অংশের সম্পর্ক ভবিষ্যত কেমন হবে তা তাঁদের প্রতিনিধিদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

            আমরা বিশ্বাস করি যে সেই সময় এসেছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসন তুলে নিবেন এবং শেখ মুজিবুর রহমান, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার সঙ্গে অবিলম্বে একটি নিষ্পত্তিতে পৌঁছাবেন, যাতে ক্ষমতা জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

————————–