You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.09 | দি ডেইলি টেলিগ্রাফ, ৯ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সংসদে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই বিমানঘাঁটির পতন - সংগ্রামের নোটবুক

দি ডেইলি টেলিগ্রাফ, ৯ই ডিসেম্বর, ১৯৭১
সংসদে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই বিমানঘাঁটির পতন
প্রতিরোধ স্পৃহা নিয়ে সন্দেহ যেখানে ভারতীয়রা ঢাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে
কোলকাতা থেকে পিটার গিল কর্তৃক

গত সপ্তাহে ভারতীয় সৈন্যরা যেখানে পূর্ব বাংলার কেন্দ্রবিন্দুর দিকে তাদের অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে, সেখানে সন্দেহ রয়ে যায় যে কোলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে যতটা দাবী করা হয়েছিল পাকিস্তানীদের প্রতিরোধ আসলেই ততটা শক্ত হবে কি না।

এই ধারণা আরো ঘনীভূত হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান, “স্যাম” মানেকশ-এর বক্তৃতার তর্জনগর্জনে, যেটি পূর্ব বাংলায় অবস্থানরত পাকিস্তানী সৈন্যদের উদ্দেশ্যে গতকাল রাতে প্রচারিত হয়।

তাঁর পূর্বোক্ত বক্তৃতাগুলোর চেয়ে ভিন্নভাবে, এই বক্তব্যটি ইংরেজীসহ উর্দু, হিন্দি এবং পাঠান ভাষায়ও প্রচারিত হয় এবং এথেকে পরিস্কার বোঝা যায় যে এটি অফিসারদের উদ্দেশ্যেই প্রচারিত।

“আমি জানি যে আপনারা নারায়ণগঞ্জ (ঢাকা থেকে ৮ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে) এবং বরিশাল (ঢাকা থেকে ৭০ মাইল দক্ষিণে) এলাকায় জড়ো হচ্ছেন”, জেনারেল বলেন। “এবং আমি জানি যে আপনারা আশা করছেন আপনারা পালাতে সক্ষম হবেন বা আপনাদেরকে উদ্ধার করা হবে”।

“আপনারা যদি আত্মসমর্পণের আহ্বান গ্রাহ্য না করেন এবং পালানোর চেষ্টায় থাকেন, আমি আশ্বাস দিচ্ছি যে নিশ্চিত মৃত্যু অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্য। আমাকে পরবর্তীতে বলবেন না যে আমি আপনাদের হুঁশিয়ারি দেইনি”।

অগ্রসরমান বাহিনী

কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমা সেনানিবাস শহর যশোর অতিক্রম করার পর, যেটি গত মঙ্গলবার দখল করা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুইটি বাহিনী গতকাল পাকিস্তানী সৈন্যদের ধাওয়া করে খুলনা এবং ফরিদপুরের দিকে আসছিল।

যেসব সাংবাদিক সাম্প্রতিককালে যশোর শহর পরিদর্শন করেছেন তারা বলেন যে এমনকি মাঝারি ধরণের প্রতিরোধের মাধ্যমেও, ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে শহরটি যে ২৪ ঘণ্টা আসলেই টিকে ছিল তারচেয়ে অনেক বেশী সময় এটি টিকে থাকতে পারতো।

এটি বিতর্কিত বিষয় যে প্রতিরোধের “শক্ত খোলস” যদিও ভেঙে ফেলা গেছে, কিন্তু “কোমল অন্তর্ভাগ” ভারতীয় পূর্বাঞ্চলের সেনাবাহিনী যতটা ধারণা করছে ততটা সহজে ভারতীয়দের মুঠোয় আসবে না।

গতকাল ভারতীয় সৈন্যদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা হচ্ছে কুমিল্লার সীমান্তের কয়েক মাইলের মধ্যে পৌঁছানো, পাকিস্তানের এই প্রদেশটির পূর্ব অংশে। ময়নামতি সেনানিবাস, যেটি কয়েক মাইল পশ্চিমে অবস্থিত, কিছুদিন আগেও বিভাগীয় সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিলো উত্তরে আরো ভেতর দিকে আশুগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত।

বিমানঘাঁটির পতন

যদিও সেনানিবাসটি ভারতীয় আক্রমণ প্রতিরোধ করে চলছিল, এর সৈন্য সংখ্যা একেবারেই “কমে” গেছে, পূর্বাঞ্চলের বাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, এবং এর চূড়ান্ত পতন আসন্ন।

ভারতীয় সেনাবাহিনী গতকাল কুমিল্লার বিমানঘাঁটি দখল করে নেয়, যেটি শহর এবং সেনানিবাসের মাঝখানে অবস্থিত। শহরটি ইতিমধ্যেই ভারতের দখলে রয়েছে।

বিমানঘাঁটি দখলের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, লেঃ-জেন. জে. এস. অরোরা, পূর্বাঞ্চলের জেওসি, বিমানে করে সেখানে আসেন আগরতলা, পূর্ব ভারতীয় প্রদেশ ত্রিপুরার দুর্গম রাজধানী থেকে। উদ্দ্যাম হর্ষধ্বনিরত “মুক্তিপ্রাপ্ত” জনতা তাঁকে স্বাগত জানায় বলে জানানো হয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে।

জেন. অরোরা ভারতীয় সৈন্যদের পরিদর্শন করেন যারা ইতিমধ্যেই কুমিল্লা থেকে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ঢাকার ২৫ মাইলের মধ্যে পৌঁছে গেছে। পূর্বাঞ্চলের বাহিনী এই পরিদর্শন কে “মনোবল বর্ধক” হিসেবে বর্ণনা করে, যা আরো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে পূর্ব বাংলার যুদ্ধ শেষ হতে আরো অনেক বাকি আছে।

গতকাল রাতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের দেয়া হিসেব অনুযায়ী গত চারদিনের যুদ্ধে পাকিস্তানীদের ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে একজন অফিসার ও ৩৩১ জন সৈন্য নিহত এবং ১৮১ জন আহত হয়েছে। ২১ জন জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার এবং অন্যান্য পদমর্যাদার ২৮৫ জন সহ ৯ জন অফিসারকে আটক করা হয়েছে।

গোনার সময় নেই

কিন্তু যশোরে গত ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধে পাকিস্তানের নিহত এবং আহতের কোন সংখ্যা পূর্বাঞ্চল থেকে ঘোষণা করা হয়নি। মেজর জেন. জে. এফ. আর. জ্যাকব, যিনি পূর্বাঞ্চলের চীফ অব স্টাফ, বলেন যে তাঁর সৈন্যদের “গোনার সময় ছিল না”।

পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে চমৎকার ভাবে তাদের যশোর দখল করার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ক্ষয়ক্ষতির বিশাল সংখ্যা প্রকাশের অপারগতা এই ইঙ্গিতই দেয় যে এই সেনানিবাস শহরটি তারা যতটা স্বীকার করতে চায় তারচেয়ে অনেক সহজেই তারা দখল করতে পেরেছে।

পূর্বাঞ্চলের বাহিনী অটলভাবে পূর্ব বঙ্গে ভারতীয় ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে, শুধুমাত্র এই বলে যে “তারা সবসময়ই কম ক্ষতির সম্মুখীন হয়, এবং কখনই বেশী নয়”।

ধারাভাষ্যকাররা বলেন যে যশোরের পতনের পেছনে চমৎকার ভারতীয় রণকৌশলের চেয়ে পাকিস্তানীদের দেশের অভ্যন্তরভাগে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আকাঙ্খার অবদানই বেশী কেননা পূর্ব বঙ্গে অবস্থানকারী তার ৮০,০০০ সৈন্য নৈরাশ্যজনকভাবে সংখ্যালঘু হয়ে আছে।