You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.11 | সানডে টাইমস, ১১ এপ্রিল,১৯৭১ হত্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। - সংগ্রামের নোটবুক

সানডে টাইমস, ১১ এপ্রিল,১৯৭১
হত্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঢাকার পর যশোর, চট্টগ্রাম…
নিকলাস টোমালিনের প্রতিবেদন,
পূর্ব পাকিস্তানের শহর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে।

যে সময়ের মাঝে এই কথাগুলো ছাপানো হবে যে “মুক্ত বাংলাদেশ” তার মাঝেই দিনাজপুর শহরটি অব্যশই নিশ্চিতভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্য বাহিনী দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে যাবে এবং সার্জেন্ট-মেজর আব্দুর রব যিনি এর প্রধান প্রতিরক্ষক সম্ভবত তিনি এর মাঝে মৃত।

পূর্ব পাকিস্তানের দূরবর্তী প্রদেশ উত্তর-পশ্চিমাঞ্ছলীয় অঞ্চল ছিল বাংলাদেশ প্রতিরোধের কেন্দ্র যা মাত্র ৩৫০ জন স্বল্প-অস্ত্রের সৈন্যদের দ্বারা শহরের চারপাশ খনন করে রেখেছিল। শক্রবার যখন আমি সেস্থান থেকে চলে আসি তখন অধিকাংশ যুদ্ধই অনভিজ্ঞ ছিল এবং তাদের গোলাবারুদের সরবরাহ যা দিনাজপুরের পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের অস্তাগার থেকে এসেছিল তার অর্ধেক ডজন মর্টার শেল, রকেট এবং মেশিনগানের বুলেটের বাক্স প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছিল।

পশ্চিম পাকিস্তানী সীমান্তের শক্তিশালী সৈন্যদলের প্রায় কয়েকশত শক্তিশালী সৈন্যদল সৈয়দপুরের নিকটবর্তী এলাকায় ছিল এবং আরও কয়েক শতের বেশি সৈন্যবাহিনী ছিল রংপুরে। তারা প্রচণ্ড ভাবে সশস্ত্র এবং পাক-ভারত যুদ্ধের দ্বারা অভিজ্ঞ ছিল। তাদের কাছে চীনের তৈরি হালকা ট্যাংক ও ছিল। এই ট্যাংকগুলি সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছিল একটি নির্ধারিত বলপূর্বক প্রবেশের জন্য এবং তা এক ঘণ্টার মাঝেই দিনাজপুরে থাকতে পারে।

সার্জেন্ট-মেজর রব এবং তার বাহিনী কোন ধরনের বিভ্রান্তিতেই ছিল না যে যখন শত্রু আক্রমন হবে তখন কি ঘটতে পারে। তারা ইতিমধ্যে হাই কমান্ড রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করার জন্য নির্বিচারে হত্যা, নির্বিচারে ধ্বংস এবং সর্বোপরি সামরিক, নাগরিক এবং বুদ্ধিজীবী নেতাদের হত্যার ঘটনা শুনেছিল। “এটি একটি গণহত্যা হতে পারে”- যা সার্জেন্ট-মেজর বলেছিলেন। এটা হিটলার যা করেছিল তার থেকেও খারাপ কিছু হবে। “এটা ইচ্ছাকৃত গণহত্যা।”

গণহত্যা একটি অতি ব্যবহৃত শব্দ। কিন্তু সুস্পষ্ট সামরিক আদেশের আলোকে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাদলের পক্ষে আমার স্বতন্ত্র কারনে মনে হয় সার্জেন্ট- মেজর রবের নির্ভুল প্রতিবেদনটি সমর্থনযোগ্য। আমার গত কয়েকদিনের পূর্ব পাকিস্তান পরিদর্শনের আলোকে এটা যথাযথ মনে হয়েছে। সেখান থেকে খুব দ্রুত প্রচুর বাঙ্গালী হত্যা ছাড়া ইয়াহিয়া খানের আর কোন নীতি দেখতে পাওয়াটা খুবই কষ্টসাধ্য। এবং হত্যার মাধ্যমে পরবর্তী ১৫ বছরের মাঝে বাংলাদেশ সমর্থকারীদের প্রতিরোধ বিলুপ্ত করা হবে। গণহত্যা আমারা আমাদের নিজের চোখেই দেখেছি এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তা প্রমান করার জন্য রেডিও বার্তায় তা প্রদর্শিত হচ্ছে।

শুধু মাত্র একটি রহস্য ছিল কেন পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অগ্রগতি ছিল না। যখন আমাদের দুই দিন দিনাজপুরে অবস্থান ছিল তখন সম্মুখ অবস্থান থেকে দুইবার তারা সার্জেন্ট-মেজরকে আক্রমন করে। এবং তারা খুব সহজেই তাদের পুরো প্রতিরক্ষা গুড়িয়ে দিতে পারত কিন্তু তারা তা থেকে প্রতিসংহৃত থাকে।

সম্ভবত তারা তাদের নিজস্ব প্রচারনা বিশ্বাস করে যে ভারতের সেনাবাহিনী এবং তাদের গোলাবারুদ বাঙ্গালীদের রক্ষায় দিনাজপুরে তাদের সাহায্য করছে যা ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র ১০ মাইল দূরে অবস্থিত।

যদি আমরা সাক্ষী হতে পারি যে তারা অন্যায় করছে। সীমান্তের গাড়ির চাকার দাগযুক্ত লেজ কার্যত নির্জন রয়েছে। অস্বাভাবিক ভাবে বাংলাদেশকে ভারতে যোগদানের দিকে ধাবিত করেছে ডাকের পেট্রোল সংগ্রহের জন্য এবং হয়তবা একটি অথবা দুটি পিস্তল সীমান্তবর্তী শহর সহানুভূতিশীল গঙ্গারামপুর থেকে আসবে। সর্বোপরি এটা একটা ঐতিহ্যগত পাচারকারীদের পথ। স্বাভাবিক সময়ে তা নামমাত্র সুরক্ষিত থাকতো। কিন্তু ভারতের পুলিশ এবং সেনাদলের সতর্ক প্রচারনাময় আক্রমনের চিন্তায় তাই এখন সেখানে মনুষ্যবাহী পোস্ট আছে যে কোন ধরনের আন্দোলন রোধ করার জন্য। বিবিসির পরিদৃশ্য দল এবং আমি সাময়িকভাবে ভারতের সৈন্যদল দ্বারা গ্রেফতার হয়েছিলাম যেখান থেকে আমরা বের হই।

পাকিস্তানী প্রতিবেদ অনুযায়ী ভারতের ছয়টি বিভাগ সীমান্তের জন্য হুমকি স্বরূপ। এইগুলি অর্থহীন এবং পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সীমান্ত বন্ধ করতে অগ্রসর হচ্ছে । সেখান থেকে নামমাত্র কোন সেনাদল অথবা সাংবাদিকের চলাচল হবে।

এদিকে “মুক্ত দিনাজপুর” হল পাকিস্তানের নাগরিকের দৃষ্টিভঙ্গিতে উৎসাহিত হওয়ার স্থান পরিদর্শনের জন্য। আঞ্চলিক বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী হল ১০০ শতাংশ বাংলাদেশের ।এবং যারা পাঞ্জাব অথবা অন্য অ-বাঙ্গালি তারা হয় পলায়ন করেছে অথবা তাদের জবাই করা হয়েছে। এবং অসদৃশ দক্ষিণের যশোর যা আমরা ১০দিন আগে পরিদর্শন করেছি। দিনাজপুর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সংগঠিত। নতুন পাওয়া পাওয়া দেশপ্রেম এবং সামরিক উদ্দিপনা যা বাঙ্গালীর চরিত্রগত ঐতিহ্যবাহী মশলা যা হলো সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী।

৬০০০০ অধিবাসী যারা তাদের পার্শ্ববর্তী গ্রাম ছেড়ে এসেছে, তারা শান্ত। সেখানে সকল ব্যাংক এবং প্রায় অর্ধেক দোকান স্বাভাবিক ভাবে কাজ করছে, মানুষ রেশন বইয়ের জন্য সু শৃঙ্খল লাইন ধরছে ( যদিও দিনাজপুরের বিতরণ এলাকা হলো ধানের কেন্দ্র যেখানে এখনো খাবারের অভাব দেখা দেয়নি) যা কঠোর নিষ্প্রদীপ আইন দ্বারা পরিচালনা করা হচ্ছে।

সার্জেন্ট – মেজর রবের অধীনে তরুন লোকটি লোকাল স্টেডিয়ামে দৈনিক অন্যান্য সামরিক নেতাদের সঠিক ভাবে বালুময় বনানীতে আচ্ছাদিত রাইফেল এবং চীনে তৈরি স্টেনগান দ্বারা অনুশীলন করাচ্ছে। মার্চের জন্য ইতস্তত সামরিক কণ্ঠে উৎসাহিত করছে যাতে তাদের একদম সৈনিকের মতো লাগে- মাথা উচু, চিবুক ভিতরে এবং বুক সম্মুখে এগিয়ে তারা নতুন নির্মিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত প্রফুল্লতার সাথে সমর্থনের জন্য গাচ্ছে এবং এমনকি বৃহৎ সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মিটিং ধরে রাখা হয়েছে তাদের পুরো উত্তর পশ্চিমীয় অঞ্চল কে বলা হচ্ছে তারা কোন ধরনের চাপে যুদ্ধ করচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের এই অংশটি ঐতিহ্যগতভাবে বামপন্থি মূলস্থ নেতা মাওলানা ভাসানী দ্বারা প্রভাবিত যে কার্যতই পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান কমিউনিস্ট নেতা শেখ মুজিবকে অদ্ভুত অবস্থায় ধরে রেখেছিল। কিন্তু আজ রাজনৈতিক ঐক্য আশ্চর্যজনকভাবে নয় বরং সম্পূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ।

দুই সপ্তাহ আগে যখন পাকিস্তানী গৃহ যুদ্ধ শুরু হয় দিনাজপুর সে সময় খুবই ভিন্ন অবস্তায় ছিল। শহরটির সৈন্য সরবরাহকৃত এবং নিয়ন্ত্রিত ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তের শক্তিশালী রেজিমেন্ট চাঙ্গা হয় পূর্ব পাকিস্তানী রাইফেলসের পাঞ্জাবী অফিসার দ্বারা।

যে দিন ইয়াহিয়ার সৈন্যরা ঢাকা আক্রমন করে- ২৫শে মার্চ, বৃহস্পতিবার ঐ দিন স্থানীয় সৈন্যরা শহরটিতে আধিপত্য করার জন্য পদক্ষেপ নেয়। পদক্ষেপটি পরিস্কারভাবেই পরিকল্পিত ছিল দেশব্যাপি সামরিক অভ্যুথান সমশ্রেণী ভুক্ত করার জন্য।

প্রথমে পদক্ষেপটি কৌতুকপ্রদ ভাবে যথেষ্ট যা একটি দলের আমন্ত্রন ছিল। পাঞ্জাবী কমান্ডিং অফিসার বিনীতভাবে দিনাজপুরের বাঙ্গালী সৈন্যবাহিনীকে তাদের ঐতিহ্যগত কথক এবং লুথি নৃত্য দেখার জন্য অসামরিক পোশাকে আসার জন্য আমন্ত্রন করেছিল।

কিন্তু সার্জেন্ট- মেজর রব, বাঙ্গালী ফোরসের সিনিয়র কর্মকর্তা হঠাৎ খেয়াল করেন সহকর্মী অতিথিরা সশস্ত্র হয়ে এসেছে। এটা পরিস্কার ভাবেই সকল স্থানীয় বাঙ্গালী সৈন্যদের হত্যা অথবা গ্রেফতার করার পরিকল্পনা ছিল। আমন্ত্রণটি বিনীত ভাবে অস্বীকার করে বলা হয়েছিল যে পাঞ্জাবী সৈন্যরা দর্শকবৃন্দ ছাড়াই নেচেছিল।

সেই রাতে পাঞ্জাবী সৈন্যরা দিনাজপুরের রাস্তার মাঝে দিয়ে ধাবিত হয়েছিল। তারা সতর্কতার সাথে সামরিক যোগাযোগ ব্যতীত শহরের গুরুত্বপূর্ণ টেলিফোন আদান প্রদান বিচ্ছিন্ন করে। আর গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় বাঙ্গালী নেতাদের পরিদর্শন করে এবং তাদের বলা হয়ে ছিল তাদের গুলি অথবা কারারুদ্ধ করতে। দুই দিন যাবত সেখানে স্নায়ুবিক সন্ধি ছিল। উভয় পক্ষই অর্থাৎ পাঞ্জাবী অফিসার এবং সৈন্যরা তাদের বন্ধুভাবাপন্নতা রণকৌশলের সাথে ধরে রেখেছিল।“যদি আমি পূর্ব পাকিস্তানী রাইফেল তুলে না ধরতাম তুমি হয়ত আমাকে মেরে ফেলতে পারতে।” বলেন কমান্ডিং অফিসার লেফটানেন্ত কর্নেল তারেক কোরেশী এবং পরবর্তীতে প্রকৃত পক্ষেই তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েহিল।

২৭শে মার্চ, শনিবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। ঢাকার গণহত্যার কানাঘুষো ছড়িয়ে পরলে পাঞ্জাবী সৈন্যরা ঘাবড়ে ব্যারাকে পূর্ব পাকিস্তানী রাইফেল তুলে ধরেছিল এবং কমান্ডিং অফিসারদের বাসভবনের তালিকা করেছিল। সার্কিট হাউজ যেখানে পুরনো দিনের রাজ বিচারকের আবাসস্থল ছিল সেখানে তারা পরিখা খনন করে এবং রাইফেল ব্যারেকে তাদের বন্দুক সারিবদ্ধ করে। যার ফলে বাঙ্গালিরা প্রথমে আঘাত করে এবং পরবর্তী তিন দিন প্রচণ্ড ক্রোধে যুদ্ধ হয়েছিল। উভয় পক্ষ থেকেই গোলাগুলি শহরের মাঝে পরছিল যার ফলে অনেকে হতাহত হয়েছিল।

সার্জেন্ট- মেজর রব তার বাহিনীকে হুকুম করতে পারেননি কারন তিনি তার বাড়িতে দাবানলের মাঝে গ্রেফতার ছিলেন। রবিবার ছয়জন রাইফেলধারী সৈনিক ব্যারেকে হানা দেয় এবং প্রতিরক্ষামূলক তোপের মাঝে তিনি তাদের সাথে পিছিয়ে যান। বিশেষ সৌভাগ্যের সাথে তা ঘটেছিল যে এই রাইফেল ইউনিট যদিও তা শুধুমাত্র একটি পুলিশ বাহিনী যাদের মাঝে তিনজন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান সৈন্য রয়েছিল। আব্দুর রব হলো তাদের মাঝে একজন এবং বাকি দুইজন অত্যন্ত দক্ষ কামান চালনাকারী।

দুই দিনের জন্য তাদের গুলি বর্ষণ সার্কিট হাউজে দৃঢ়ভাব অবতরণ করে। অবশেষে পাঞ্জাবীদের তেজের সাথে আঘাত করে। তারা প্রথমে পার্শ্ববর্তী বাঙ্গালী কমিশনারের বাড়িতে পলায়ন করে। “যদি তোমার বন্ধুরা আমাদের উপর গুলিবর্ষণ করে তাহলে তা বাঙ্গালিদেরও হত্যা করবে।”

তারপর তাদের আতঙ্কের মাঝে তারা হঠাৎ করে সিধান্ত নিয়েছিল যে গোলাগুলি শুধুমাত্র বাঙ্গালী পুলিশ থেকে আসতে পারে না। ডেপুটি কমিশনার আহমেদ বলেন, “তারা আমাকে বলেছিল যে তারা জানে অব্যশই তারা ভারতীয় সৈন্যবাহিনী দ্বারা বেষ্টিত। যা কিনা তারা চিন্তা করেছিল সীমান্ত অতিক্রান্ত হস্তক্ষেপ হিসাবে। তারপর তারা নিজেদের সেনাপতিকে গুলি করে যে বাঙ্গালী ছিল এবং তারপর সৈয়দপুর শহর থেকে তারা পশ্চাদপদ হয়।

সুতরাং, ৩৫ পূর্ব পাকিস্তানী রাইফেলসের একটি শক্তি দিনাজপুর শহরে পাঞ্জাবীদেরকে পরবর্তী ১০ দিনের জন্য দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রনে রেখেছিল। তথ্য অনুযায়ী তা বাঙ্গালীর অধীনে রয়েছে। আমরা তাই অসতর্ক সীমান্ত পার হয়ে গত বুধবার তা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। এমনকি তারপরও শহরটি একটি মিশ্র আবহাওয়ায় স্বাধীনতা উদযাপন করছিল কিন্তু এর সাথে দুর্যোগের আশঙ্কাও করছিল। সার্জেন্ট- মেজর রব যিনি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিরক্ষা শক্তির সেনাপতি তিনি পরিসীমার লাইনের মাঝে সর্বোত্তম পাহারা নির্গত করেছিলেন।

এতদূর পর্যন্ত স্থানীয় পাঞ্জাবী সেনাবাহিনী কাপুরুষের মতো অভিনয় করেছে কিন্তু গত সপ্তাহে তারা তাদের ট্যাংক সম্মুখে অগ্রসর করে। তারা অব্যশই শহরটিতে ধ্বংসের জন্য ফিরে আসছে। আমরা দেখেছিলাম অর্ধ ডজন র‍্যাব সৈন্য “দশ মাইল জংশন” এ বিস্তার করেছিল যেখানে সৈয়দপুর রোডে। দিনাজপুরের উত্তর দিক থেকে সৈয়দপুর রোডে মিলিত হচ্ছিল। যা শহর থেকে পাঁচ মাইল দূরে অবস্থিত। তাদের একটি বিরোধী ট্যাংক বন্দুক ছিল ( তাদের অবশিষ্ট শেষ কামান ) দুইটি রকেট চালিত গ্রেনেড লঞ্ছাচার এবং চারজন রাইফেল চালক।

শরণার্থীরা তাদের সাথে ছাগল এবং বাছুরকে সাথে নিয়ে কদমের চালে চালে পিছনে ফেলে চলছে এবং মাথায় অতীতের সকল বাস্প সাথে নিয়ে যাত্রা করেছে। তারা বলে যে পাঞ্জাবিরা তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। সব শস্য ধ্বংস করেছে, পাইকারি হারে লুটপাট করেছে এবং ধর্ষণ করেছে। যদিও গৃহ যুদ্ধের মাঝে এমনকি সব যুদ্ধের মাঝেই অবিরত অতিরঞ্জন থাকে। তারা তাদের দণ্ডের হিসাব বহন করছে। সৈন্যরা শান্ত, নিঃশব্দ এবং দুঃখিত ছিল। তারা জানত তারা শুধুমাত্র সেখানে স্বল্প সময়ের জন্য জয়ী।

তারপর আমরা অন্য একটি প্রতিরক্ষা অবস্থান পরিদর্শন করি যা গভীর বাঁশের উপবনের মাঝে অবস্থিত। এখানে সৈন্যরা অনন্য উজ্জ্বল এবং অনেক আশাবাদী ছিল। স্থানীয় জনগন বিশাল বালতিতে চাল নিয়ে এসেছিল। “ডাল” এবং পপাদম সৈন্যদের জন্য দুপুরের খাবার। সম্ভবত ইতিহাসে কোন সৈন্য বাহিনী স্থানীয় জনগণের সম্পূর্ণ অকপট সমর্থন পেয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ এবং সন্ত্রাসীদের গণহত্যার কারনে তারা উভয় পক্ষ থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছে।

এটা ছিল একটি সর্বোত্তম গেরিলা যুদ্ধের বিস্তার। এক ডজন লোক কাছাকাছি জঙ্গলের মাঝে লুকিয়ে তৈরি হচ্ছিল সর্বাধিক ধ্বংসের জন্য এবং তারপর সেখান থেকে পালানোর।

এটা হলো সার্জেন্ট- মেজর রবের মৌলিক কৌশল। প্রথমে গতানুগতিক প্রতিরক্ষা সময় জয়ের জন্য। তারপর পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলের মাঝে একটি ছত্রভঙ্গ যা দিনাজপুরে পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য আত্মতুষ্টমূলক টোপ ছিল। তারপর একটি দীর্ঘ সময়ের জন্য হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা। আমরা স্থানীয় রাজনীতিবিদের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলাম যারা সাড়ম্বরে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ বাংলাদেশের নকশা করছে। কিন্তু কেউই গুরুত্তের সাথে ভান করছে না যে তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবে। যশোর ইতিমধ্যে আক্রান্ত, দিনাজপুরও লাঞ্ছনার মাঝে আছে। ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো যে সার্জেন্ট- মেজর রবের এই গেরিলা সংগ্রামের কৌশল সঠিক ভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে ধরে রাখতে হবে।

তাদের পক্ষে স্থানীয় জনগণের অভিভূত সমর্থন এবং বিশ্বের মতামতের চাপ এখন ইয়াহিয়া খানের উপর। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে না-সামরিক বাঙ্গালীদের চরিত্র এবং তাদের হতাশাজনক রকমের গোলাবারুদের ঘাটতি।

দিনাজপুর এখন পর্যন্ত তুলনামুলকভাবে অক্ষত। কিন্তু এখন এটা অন্যান্য কেন্দ্রীয় শহর ঢাকা চিটাগাংএর মত যন্ত্রণা ভোগ করবে।

এদিকে সার্জেন্ট- মেজর রব যদি সামনের দিকে নিহত না হন আমরা তাহলে বাঁশের উপবন থেকে পালাবো ছোট গ্রামগুলোতে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। তার খাস্তা পুলিশ ইউনিফরম এবং তার ব্রিটিশ রাজের উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া রীতিনীতি তাকে বাংলাদেশের অভাবনীয় চে গুয়েভারা বানাবে। কিন্তু যদিও তার মত অনেকে পূর্ব পাকিস্তানে আছে ,যা পূর্ব পাকিস্তানের গৃহ যুদ্ধকে একটি দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে নিয়ে যাবে।