You dont have javascript enabled! Please enable it!

নেহাই প্রস্তুতকরণ

একে আক্ষরিক ভাবে সামরিক অর্থে গ্রহণ করা উচিত হবে না। সামরিক ভাষায় অ্যানভিল বলা হয় প্রচুর সৈন্য-সামন্ত দিয়ে শক্তিশালীভাবে সুরক্ষিত প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানকে, যার দিকে শত্রুবাহিনীকে ঠেলে দিয়ে শে-জ-হ্যামারের আঘাতে চূর্ণ করা হয়। আমাদের তৈরি অ্যানভিল ছিল শত্রুর মনে একটা ধারণা সৃষ্টির জন্য যে আমরা বড় ধরনের আক্রমণ এবং প্রচেষ্টা কেন্দ্রীভূত করতে যাচ্ছি শক্রর যােগাযােগ রেখার কেন্দ্রের ওপর, যার ব্যাপারে সে স্বাভাবিকভাবেই সংবেদনশীল। সেটা ছিল বৰ্কলসুভলং এলাকা যা কর্ণফুলি নদীর গতিপথ বরাবর গিরিসংকটকে নিয়ন্ত্রণ করছিল। এই সংবেদনশীল এলাকায় ও তার আশেপাশে এসএফএফ -এর জোরদার হানা চলতে থাকলে তা শক্রর প্রধান ঘাটি রাঙামাটি থেকে অতিরিক্ত শক্তি টেনে আনবেই। আর রাঙামাটিই হচ্ছে আমাদের প্রথম লক্ষ্যস্থল। একই সঙ্গে আমাদের উত্তরের কলামগুলির দ্রুততার সাথে আঘাত হানার কথা শত্রুর উত্তর দিককার কিছু পিছু-হটা আউটপােস্টকে এই অবস্থানের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য আর যেগুলি আমাদেরকে বাধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে সেগুলিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। শত্রুর বড় রকমের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানের সঙ্গে লাগতে যাওয়ার মতাে অস্ত্রসজ্জা বা প্রশিক্ষণ কোনওটাই আমাদের গেরিলা ফোর্সের ছিল না। আমরা আমাদের সশস্ত্র ক্যাডারদেরকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে হাত মেলানাের জন্য শক্রর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি রাঙামাটি ও চট্টগ্রামে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। আমাদের কলামগুলি যখন আঘাত হানবে তখন একই সময়ে তারাও আক্রমণ চালাবে, যাতে একই সাথে ভিতর থেকে এবং বাইরে থেকে আক্রান্ত হওয়ায় শত্রুর মনে ভীতি ও নৈরাশ্যের সঞ্চার করে তাকে জীবন রক্ষার জন্য পলায়নে প্রবুদ্ধ করে, অথবা সে মারা পড়ে বিরাট সংখ্যক গেরিলা মােতায়েন ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকাটিকে ভিতর থেকে সারাক্ষণ গুলি চালনার মধ্যে রাখার জন্য, অ্যামবুশ করার জন্য, শত্রুর টহলগুলিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এবং তাদের যােগাযােগ ও সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার জন্য, যাতে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এটা হলে শক্রর প্রতিরক্ষা দল রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম থেকে বলবৃদ্ধির জন্য উপকরণ ও লােক চাইতে বাধ্য হবে। আমরা চাচ্ছিলাম এমনটাই যেন হয় । মেজর সুরত সিং ভিএসএস -এর অধীনে এই কাজে নিয়ােজিত কেন্দ্রীয় কলামটি দুটি সাব-কলামে বিভক্ত হয়ে বর্কলের দিকে সাড়াশির আকারে এগিয়ে গেল। সাব-কলাম দুটি পালাক্রমে মেজর সুরত সিং, মেজর এসআর ভাটিয়া, মেজর বিএস থাপা এবং মেজর এডিএস সানিয়াল কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল ধানুবাক,  দিঘলছড়ি ও বরাইল শত্রুমুক্ত করে দক্ষিণে বৰ্কলের দিকে অগ্রসর হওয়া।

মেজর এইচসি শর্মার জোগাড় করা কতগুলি স্থানীয় নৌকা নদী দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল যাতে এই কলাম নদী ধরে দক্ষিণে যাওয়ার জন্য বা বল পাহাড়ের ওপরকার পােস্টগুলিকে উৎখাত করতে নদী পার হওয়ার জন্য নৌকাগুলি পেতে পারে। যে এনসিও এই নৌবহরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি ভয়শূন্যমনে সর্বোচ্চ গতিতে এগিয়ে পূর্ব নির্ধারিত স্থান পার হয়ে গেলেন এবং রাতের বেলায় একটা শত্রু অবস্থানের ঠিক বিপরীত দিকে পৌছলে তাকে চ্যালেঞ্জ করা হল, তিনি গুলিবিদ্ধ হলেন, গুরুতর আহত হওয়া সত্ত্বেও তিনি নৌকাগুলি ঘুরিয়ে দ্রুত গতিতে পূর্ব নির্ধারিত স্থানের দিকে এগিয়ে গেলেন। নৌকাগুলি নিরাপদে সেখানে পৌছল। এই বীর এনসিও কাজ শেষ করার পর ঢলে পড়লেন এবং নদীর মধ্যে পড়ে গেলেন। কয়েকদিন পরে তার মৃতদেহ একটা খাড়ির মধ্যে আবিষ্কৃত হল এবং অতীব সম্মানের সাথে দাহ করা হল। এই ফোর্স ধানুবাক, দিঘলছড়ি এবং বরাইতালে হিংস্র আক্রমণ চালিয়ে এই পােস্টগুলি দখল করল। একই ঘটনায় তারা কতগুলি এলএমজি, রাইফেল এবং কিছু গ্রেনেডও হস্তগত করল। এবার তারা প্রচণ্ড গােলাগুলির সম্মুখীন হল প্রথমে নদীর অপর পার থেকে এবং পরে কাছাকাছি থেকে। একজন জ্যেষ্ঠ বীর লীডার সাহসের সাথে দাঁড়িয়ে তার লােকদের নির্দেশ দিচ্ছিলেন। তাঁর পেটে গুলি লাগল। সেই সাহসী লীডারের আহত হওয়াতে এবং অপ্রত্যাশিত পরিমাণ মর্টার ও মেশিনগান -এর গােলাগুলির সম্মুখীন হওয়াতে হালকা অস্ত্রধারী অফিসার ও জওয়ানগণ সম্পূর্ণরূপে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার সপ্রতি দখল করা সকল পােস্ট ছেড়ে সরে আসার জন্য এবং প্রচলিত মিলিটারি কায়দায় সাইফার ডকুমেন্টগুলি পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমার কাছে অনুমতি চাইলেন। তিনি ছিলেন নতুন এবং গেরিলা যুদ্ধের মৌলিক নীতিগুলি তখন পর্যন্ত আত্মস্থ করেননি। একজন গেরিলা হিসাবে আপনি কখনও ভূমি দখল করে রাখবেন না অথবা প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নেবেন না।

আপনি শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করে বা আগুন জ্বালিয়ে তাদের অবস্থান ধ্বংস করবেন। কিন্তু আপনি কখনও স্থিতিশীল হবেন না। আপনাকে হতে হবে অতিশয় চলমান। পরিস্থিতি দাবি করলে আপনি সরে পড়বেন বা পিছিয়ে আসবেন, তাতে লজ্জার কোনও ব্যাপার নেই। কেবলমাত্র একজন বােকাই নিহত হওয়ার জন্য বসে থাকবে। কিন্তু এখানে সবচেয়ে খারাপ যা ঘটেছিল তা হচ্ছে অফিসাররা বাহিনীকে তাড়াহুড়া করে অপরিকল্পিতভাবে পশ্চাদপসরণ করাল, যাতে সকলে মনােবল হারিয়ে ফেলেছিল। আহত হয়েছিল মাত্র সাতজন। তাদের সবাইকে তুলে আনা হয়েছিল। মেডিকেল অফিসার মেজর রমেশ চন্দ্রকে আহতদের চিকিৎসার জন্য যতদূর সম্ভব সামনে এগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত ঐ আহত লীডার মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাঁকে যথাযােগ্য সম্মানের সাথে ডেমাগিরিতে ফোর্সের সদর দফতরে দাহ করা হয়েছিল। অন্য আহতরা আমাদের হাসপাতালে শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠেছিল। নদীর যে পারে শত্রু, সে পার থেকে সকল আদেশ বুঝিয়ে দিয়ে ফিরে আসার সময় আমি নিশ্চিত ছিলাম সকলেই চমৎকার ঝরঝরে। কিন্তু এটা ছিল তাদের প্রথম অ্যাকশন। বেশির ভাগ অফিসার এই ফোর্সে নতুন পােস্টেড ছিলেন এবং জওয়ানদের তারা চিনতেন না। মনে মনে তারা সেই সাধারণ রণকৌশল দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করছিলেন যা একজন সৈনিককে শেখানাে হয়ে থাকে। গেরিলা যুদ্ধ ছিল তাদের কাছে মােটামুটি নতুন কিছু এবং তা সহজে বােঝার মতাে ধারণা নয় যখন কিনা এভাবে মাত্র প্রায়-মিলিটারি কায়দায় হালকা অস্ত্রের সাহায্যে শত্রুর শক্ত ঘাঁটি কজা করার ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করা হয়। আমার সন্দেহ ছিল এবং যখন আমি দিঘলছড়িতে তাদের জবর অ্যাকশনের খবর পেলাম তখন থেকেই শুরু করে যখন শুনলাম চাপের মুখে পশ্চাদপসরণ করে শুরুর স্থানে ফিরে এসেছে ততক্ষণই আমি উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম।

একটা ক্ষুদ্র এসকর্ট নিয়ে একটা ছােট্ট নৌকায় আমি আবার নদী পাড়ি দিলাম। যেখান থেকে শুরু করেছিল সেই সেতুবন্ধের স্থানে গােটা সাব-কলামটার ফিরে আসা দেখে। বড় আঘাত পেলাম। আমি ক্ষিপ্ত হলাম, যুবক অফিসারদের ও লীডারদের একটা মনােবল হারানাে শত্রুর সামনে তাদের কাপুরুষােচিত আচরণের জন্য প্রচণ্ড বকাঝকা করলাম। আমি অফিসারদের সঙ্গে, লীডারদের সঙ্গে ও জওয়ানদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলে গেরিলা কৌশলে তাদের নিজ নিজ সম্ভাবনা সম্বন্ধে তাদের ধারণা উন্নত করে তারপর তাদেরকে ছাড়লাম। তারা তাদের ভুলগুলি বুঝতে পারল, সেগুলির পুনরাবৃত্তি করার প্রতিশ্রুতি দিল। তারা পরে আমাকে বলেছিল যে লড়াই -এর ভূমিতে এই তেজ-পূৰ্ণ কথাবার্তায় তাদের অপরিসীম উপকার হয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল এই যুদ্ধে আমাদের ভূমিকার ক্ষেত্রে এটা ছিল এক চরম নির্ণায়ক মুহূর্ত। এখানে পরিস্থিতিকে ঠিকমতাে বাগে আনতে না পারলে আমাদের সকল সম্ভাবনা গােল-য়ি যেত, স্রেফ ঝামেলা সৃষ্টি করা ছাড়া আমাদের কাজের আর কোনও মূল্যই থাকত না, যেমনটা কর্তৃপক্ষ আমাদের থেকে আশা করছিল । আমাদের সামর্থ্য সমন্ধে আমি নিজের মধ্যে একটা। সম্পূর্ণ অন্য রকম ধারণা গড়ে তুলেছিলাম এবং এই হীনকারী অবস্থা মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলাম না। আমি জানতাম এই ফোর্সে আমার অফিসাররা ও লীডাররাও একই রকমের উদ্দীপনায় ভরপুর ছিল। এই জওয়ানরাই পরে একই লীডারদের কমান্ডের অধীনে বিস্ময়কর কাজ দেখিয়েছিল কিন্তু এই সময়টা আমার জন্য ছিল এক সাংঘাতিক যন্ত্রণাকর ও হতাশাজনক মুহূর্ত। এই পরীক্ষায় পরে যখন সফলতা এল তখন তা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে হর্ষোফুল- করল। এই গ্রুপটা পুবের শৈলশিরা জুড়ে উত্তমরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল এবং পশ্চিম তীরের শত্রুসেনাদের জন্য এমন ভয়ের কারণ হয়ে উঠল যে তারা সাহায্যের জন্য চিৎকার তুলল এবং তাদের উর্ধ্বতন সদর দফতরকে বলল যে তারা হাজার হাজার সৈন্যের সম্মুখীন হয়েছে। এটা ছিল তাদের বিরাটভাবে অতিরঞ্জিত মূল্যায়ন । আমি তাদের (পাকিস্তানিদের) বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে টিউন করে তাদের বিলাপ শুনতাম। জবাবে সদর দফতর থেকে তাদেরকে জেহাদির মতাে খাড়া থাকতে তাগিদ দেওয়া হত এবং বলবৃদ্ধির জন্য লােকজন ও সরঞ্জামাদি তাদের দিকে। এগুচ্ছে বলে নিশ্চয়তা দেওয়া হত।

তার কিছু কিছু কখনও গন্তব্য পৌছেনি কারণ তা পথে আক্রান্ত হয়েছে এবং ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য কলামটি লেফটেন্যান্ট-কর্নেল বিকে নারায়ণের কমান্ডের অধীনে বর্কলের সকল শত্রুকে ফাঁদে আটকানাের লক্ষ্যে চারদিক থেকে বল ঘিরে ফেলার জন্য অগ্রসর হল। লেফটেন্যান্ট-কর্নেল নারায়ণ ভালরকম সাহস ও কল্পনা শক্তিসম্পন্ন অফিসার ছিলেন। তার কথা ছিল নিরাকপাড়া ও জাইলানপাড়ার শত্রু পােস্টগুলি উৎখাত করে বর্কলের দক্ষিণ পাহাড় ১১৮৩ -এর দিকে অগ্রসর হওয়া। এই কলামটি অত্যন্ত সাহসের সাথে। যুদ্ধ করে পােস্টগুলি শত্রুমুক্ত করল । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কাছেই চারদিকে নালায় বেষ্টিত একটি স্থানে তারা লুকাতে চাইল  ভুলক্রমে তারা ভেবেছিল যে ঐ নালাগুলি তাদের নিরাপত্তা দেবে । আমার মনে হয় তারা পরবর্তী দুঃসাহসিক অভিযানের জন্য ওখানে একটা ঘাটি করতে চেয়েছিল। শত্রু শিগগিরই তাদের এই মনােভাব ধরে ফেলল এবং তাদেরকে উত্ত্যক্ত করতে এবং তাদের চারদিকে বুবি ট্র্যাপ পাততে শুরু করল। আমার জরুরি বার্তা সত্ত্বেও তারা তাদের লক্ষ্যস্থল বর্কলের দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হল না। তা করলে কলামের কেন্দ্র ভাগে চাপ কমত এবং শত্ৰু বৰ্কল থেকে হটে যেতে বাধ্য হত। এর মধ্যে বর্কলের দক্ষিণে ১১৮৩ পয়েন্টের শক্ত অবস্থানকে বলবৃদ্ধির মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা হয়ে গিয়েছে। আমি লেফটেন্যান্ট-কর্নেল নারায়ণকে তাঁর অবস্থানের মধ্যখানে আমার হেলিকপ্টার নামিয়ে ঐ ফাঁদ থেকে বের করে আনতে সক্ষম হলাম যদিও তিনি তাতে। জোর প্রতিবাদ করেছিলেন কারণ জায়গায়টায় গােলাগুলি চলছিল, সেখানে হেলিকপ্টার নামানাে খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এই পর্যায়ে আমাদের বিমানবাহিনী আমার অনুরােধ গ্রহণ করল এবং শক্রর এই শক্ত বিন্দুতে রকেট হামলা চালাল। আমি এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএস আসসার এই রকেট হামলা খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করলাম তা মারাত্মক রকমের লক্ষ্যভেদী ছিল। আমি এই দুর্দান্ত বৈমানিকদেরকে অভিনন্দন বার্তা পাঠালাম এবং লেফটেন্যান্ট-কর্নেল আসসারকে বর্কল শত্রুমুক্ত করে সেখানে প্রবেশ করতে বললাম। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসসার, তখনও শত্রুর মতলব সম্বন্ধে অনিশ্চিত, তাজ্জব হয়ে দেখলেন যে বৰ্কলের বেসামরিক জনগণ অপর পার থেকে তাদের সাজগােজ করার নৌকা নিয়ে বেরিয়ে এল। ঘটা করে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শত্ৰু বৰ্কল ছেড়ে গিয়েছিল কিছু অস্ত্র ও গােলাগুলি পিছে ফেলে রেখে, যা যথারীতি হস্তগত করা হল । বৰ্কলের দখল আমাদের সকলের জন্য দারুণ মনােবল বৃদ্ধির ব্যাপার হয়েছিল।

আমাদের আকাশ-যুদ্ধ জাহাজ  হয়তাে এটাই একমাত্র সুযােগ যখন বিমানবাহিনী আমাদের কিছু উপকারে আসবে এমনটা বুঝতে পেরে আমি আদেশ দিলাম আমাদের একটি এবং একমাত্র এমই-৪ হেলিকপ্টারটিকে আকাশের ব্যাটলশিপ হিশাবে প্রস্তুত করা হােক এর পিছনের ও সামনের কিছু অংশ বাদ দিয়ে এবং পিছনের দিকে বালির বস্তার আড়ালে একটা হালকা মেশিন গান চড়িয়ে। আমাদের জবরজং ব্যাটলশিপ যখন ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়ে গেল, দেখে আমি সন্তুষ্ট তাে হলামই, এমনকি তার চেয়ে বেশি। আমরা গুলি চালাতে ও গ্রেনেড ছুড়তে পারলাম, এমনকি পেট্রোলভর্তি পিপা গড়িয়ে দিতে পারলাম যা ঠিক ঠিক জায়গায় নিয়ন্ত্রণহীন আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারত। আমার আকাশের ব্যাটলশিপকে শত্রু এমনই ঘৃণা করত যে যা কিছু তার হাতে ছিল তাই এর দিকে ছুড়ে মারত, যার মধ্যে মর্টার বােমাও ছিল। আসলে যতবার আমি এতে চড়ে বিচরণ করতাম, যা প্রায় প্রতিদিনই করতাম, আমি শুনতাম এর নিচে গুলির আঘাতের শব্দ, উপরের ঘুরক পাতেও গুলি লাগত। তাতে কম্পনের সৃষ্টি হত; এই নারকীয় মেশিনটার ঘনঘাের গোঙানিতে তা তলিয়ে যেত, এবং সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ও নির্বিকারভাবে এর ভ্রমণ চলতে থাকত যুদ্ধের শেষে এই হেলিকপ্টারটা একটা ভাল জাদুঘরের বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। আমাদের বেসামরিক এয়ার চীফ -এর তাে এর দশা দেখে প্রায় বেহুশ হয়ে পড়ার মতাে অবস্থা এবং তখন তিনি এই ঐতিহাসিক ঘােষণাটি করেছিলেন- “মাই গড! একটা ভাল বিমানকে কেমন বেরহমের মতাে বরবাদ করা হয়েছে।

সূত্র : ফ্যান্টমস অব চিটাগং-দি ফিফথ আর্মি ইন বাংলাদেশ – মেজর জেনারেল (অব.) এস এস উবান

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!