টেলিগ্রাফ, ৫ জুন ১৯৭১
কলেরা ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’
কলকাতায় ফ্যান ওয়ার্ড
গতকাল রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ মিরা হরিলাল সাহা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের কলেরা মহামারী “সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে”।
আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য জরুরী ভিত্তিতে অনুরোধ চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কলেরা-বিরোধী ভ্যাকসিন দরকার, র্যাপিড ইনজেকশন মেশিন, অ্যান্টিবায়োটিক, গুড়াদুধ – ইত্যাদি প্রয়োজন – এক কথায় যে কোন কিছু যা যা আপনারা দান করতে পারেন।’
ডাঃ সাহা জানান পূর্ব পাকিস্তানের ৮০০ মাইল বর্ডার দিয়ে প্রায় দশ বারো হাজার কলেরা রোগী রয়েছেন।
ভ্যাক্সিন দেবার পরেও প্রায় ২৫৫০ জন মারা গেছে।
ডঃ সাহা কলকাতায় স্বাধীন ত্রাণ সংস্থায় এসে রিপোর্ট করেন যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় এক মিলিয়ন শরনার্থি ভারতীয় সীমান্তের ভিতরে বন্যার মত প্রবেশ করেছেন।
ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে এখন মোট প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডাঃ সাহা বলেন কলেরা আক্রান্ত রোগী উত্তরে দিনাজপুর থেকে মালদা, মুরশিদাবাদ, নদীয়া হয়ে কোলকাতা পর্যন্ত বিস্তৃতিলাভ করেছে।
সমস্যা বাড়ার পাশাপাশি আরও বেশী গৃহহীন মানুষ প্রবেশ করছে। তাদের অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অন্যায় ক্রমেই বাড়ার জন্য এমনটা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেন কলেরা ক্রমাগত বাড়ছে এবং “সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। মৃতের সংখ্যা ৫০০০ ছাড়িয়ে যাবে।
তবুও সবচেয়ে খারাপ অবস্থাসম্পর্ন এলাকা নদীয়ার প্রধান মেডিকেল অফিসার বলেছেন, প্রায় ৬০০০ রোগী আছে যার ফলে এটি মহামারীর আকার ধারণ করেছে কিন্তু পরিস্থিতি ‘নিরাপত্তাহীন হলেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়।’
কর্মকর্তা ডাঃ এস চক্রবর্তী গতকাল বলেন, “এটা বলা অসম্ভব যে কলেরা বা অস্ত্রপ্রদাহের মত অনুরূপ রোগ সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার ঘটাচ্ছে কিনা।’’
মহামারীর আকার সম্পর্কে ধারনা করা যাচ্ছে না কারণ পর্যাপ্ত পরীক্ষাগার সুবিধা নাই। ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগ হচ্ছে নারী ও শিশু।
ডাঃ চক্রবর্তী বলেন, তার বিভাগে ভ্যাকসিন, ড্রিপ, স্যালাইন, গ্লুকোজ এবং এন্টিবায়োটিক স্বল্পতা আছে। নার্সিং কর্মীও দরকার।
স্থানীয় ভারতীয়রা রোগে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন আছেন।
নিহতদের লাশ রাস্তার পাশে সীমান্ত দিয়ে পরে আছে, এবং কিছু কিছু স্থানীয় জালাঙ্গি নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে যার ফলে গুরুতর দূষণের হুমকি দেখা দিয়েছে। মানুষ যাতে দুষিত নদীর পানি ব্যাবহার না করে সেজন্য পাহারা বসানো হয়েছে।
শরণার্থী সংকট নয়া দিল্লি কেন্দ্রীয় সরকার এবং পাঁচটি পৃথক রাজ্য কর্তৃপক্ষের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে – কারণ ওইসব রাজ্যে লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু প্রবেশ করছে যাদের জন্য তাদের কোন প্রস্তুতি ছিলোনা।