You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিবাহিনী এবং মুজিববাহিনী

গােলমালটা কোথায় আর্মির দ্বারা সংগঠিত ও প্রশিক্ষিত মুক্তিবাহিনী ছিল এক সাংঘাতিক শক্তি। তাদের সংখ্যা ছিল বহু হাজার। বিদ্রোহে যােগ দেওয়া ঈস্ট বেংগল রাইফেল ব্যাটালিয়ানগুলি আগে থেকে ছিল সংগঠিত ও প্রশিক্ষিত। তারা এক সর্বোপরি পরিকল্পনার মধ্যে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের সমগ্র সীমান্তজুড়ে মুক্তিবাহিনীর লােক ছিল, তারা ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সকে সহায়তা দিত। এই বিএসএফ আগে ঐ মুক্তিবাহিনীর লোকদের প্রশিক্ষণে সাহায্য করেছিল। সীমান্ত রক্ষার কাজে থাকা ছাড়াও সীমান্ত বরাবর তাদের ঘাটির কাছাকাছি পাক শত্রু অবস্থানগুলিতে তারা আক্রমণ করছিল। তবে তাদের সীমিত প্রশিক্ষণের কারণে ভালভাবে প্রস্তুত পাক অবস্থানের বিরুদ্ধে কমান্ডাে আক্রমণের জন্য তারা তেমন সজ্জিত ছিল না এবং প্রায়ই তারা দারুণভাবে হতাহত হচ্ছিল কিন্তু অ্যাকশনের ব্যাপারে তাদের নিজেদের তুমুল আগ্রহ ও উচ্চতর কমান্ডের নিরবচ্ছিন্ন চাপ তাদের বেগমাত্রা বজায় রাখছিল  গেরিলা পদ্ধতি সম্বন্ধে স্বল্প-জ্ঞানসম্পন্ন সামরিক কমান্ড প্রায় ২০০ সদস্যের মুক্তিবাহিনী গ্রুপ গঠন করে গ্রুপগুলিকে বাংলাদেশ অঞ্চলের গভীরে পাঠিয়ে দিত এবং তাদের বলে দিত যত বেশি লম্বা সময় সম্ভব সেখানে থাকতে  উদ্দেশ্য ছিল বেসামরিক জনসাধারণকে সব রকমের সম্ভব পন্থায় শত্রুকে প্রতিরােধ করতে উৎসাহিত করা। প্রায়ই এই কৌশল ঠিক উল্টা ফল অর্জন করত। ছােট ছােট গ্রামের অল্প লােক সামান্য সম্বল নিয়ে দুইশত অতিরিক্ত মানুষের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করে উঠতে পারত না; তাদের সামান্য সম্বল তাদের নিজেদের জন্যই যথেষ্ট ছিল না। পাক সামরিক আইন প্রশাসক সব সময় ও-রকম বড় সংখ্যক আগন্তুকের খবর জেনে ফেলত এবং মুক্তিবাহিনীর দলটি ঐ স্থান ত্যাগ করার পর বাহিনীর ছেলেদের খাদ্য ও আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রচণ্ডভাবে ঐ গ্রামের অধিবাসীদের উপর চড়াও হত। প্রতিশােধ হিশেবে অনেক গ্রামবাসীকে গুলি করা হত এবং বাকিরা তাদের প্রাণ হারানাের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ত এর ফলে মুক্তিবাহিনীই কতগুলি এলাকায় জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছিল। যারা এই নিস্ফল লােকবল হারানাের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করত তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত সামরিক টেকনিক প্রয়ােগ করা হত।

তাদের মধ্য অনেক ভাল লােক প্রভাব হারিয়ে ফেলল এবং তাদের অন্য প্রশংসাযােগ্য কাজের কোনও স্বীকৃতি রইল না। জেনারেল মানেকশ’র আস্থাভাজন লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরােরা, অনেক স্পর্শকাতর ইস্যুকে  কর্কশভাবে মাড়িয়ে যান এবং আমাদের চূড়ান্ত সাফল্য ভারতের জন্য অনেক ক্ষতিকর হয়ে থাকতে পারে এমন অনেক ভুল পদক্ষেপকে বিস্মৃতির মধ্যে ঠেলে দেয়। জনাব তাজউদ্দিন ও শ্রী ডি পি ধর -এর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সংযােগও তাকে অনেক সুবিধা দিয়েছিল। যুবনেতারা বাংলাদেশের ভিতরে তাদের বিস্তৃত সংগঠনের বদৌলতে জানতে পেরেছিলেন যে কিছু মুক্তিবাহিনী ইউনিট কিছু বদ অভ্যাস রপ্ত করেছে, যাদের মধ্যে কতকে সাধারণ জনগণের ওপর লুটতরাজ করেছে এবং তাদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচার চালিয়েছে, অন্যেরা ব্যক্তিগত শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশােধ গ্রহণ করেছে। আগেই যেমন বলা হয়েছে, মুক্তিবাহিনীতে সব রকমের লােককে রিক্রুট করা হয়েছিল এবং যদিও একটি ফোর্স হিশাবে মুক্তিবাহিনী চমৎকার কাজ করেছিল, তবু মুক্তিবাহিনীর মধ্যে কেউ কেউ ছিল নিন্দনীয় এবং তারা গােটা ফোর্সের দুর্নাম সৃষ্টি করেছিল। সুতরাং যুবনেতাদের জোরালাে বিশ্বাস ছিল তাদের ফোর্সের, যার বাছাই করা গেরিলা নেতারা প্রত্যেকে তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত, নাম হওয়া উচিত মুজিববাহিনী যাতে তাকে ‘মুক্তিবাহিনী’ থেকে আলাদা করে চেনা যায়। তাদের আরেকটা যুক্তি ছিল যে বাংলাদেশে “মুজিববাহিনী” নমিটার গ্রহণযােগ্যতা হবে অপরিসীম এবং এটা শুধু তাদের সংগঠন থেকেই সব রকম সহায়তা বয়ে আনবে না, বরং সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও সব রকম সহায়তা বয়ে আনবে। আমি মনে করি শেখ মুজিবের প্রতি তাদের উচ্চতর আনুগত্য তাদের “মুজিববাহিনী” নামটা পছন্দ করার ব্যাপারে কম দায়ী ছিল না। আমরা গেরিলা যুদ্ধের বিভিন্ন কৌশলের ওপরে প্রায় ১০ হাজার মুজিববাহিনী নেতাকে প্রশিক্ষণ দিলাম । কথা ছিল তারা এরপরে তাদের গােটা সংগঠনকে বাংলাদেশের ভিতরে প্রশিক্ষণ দেবে; মােটের উপর এই প্রশিক্ষণার্থীদের সংখ্যা দাঁড়াবে লক্ষ লক্ষ। সেটা ছিল একটি প্রতিষ্ঠিত ও নির্ভরযােগ্য সংগঠন এবং আমরা পরে জেনেছিলাম তার নেতারা শুরুতে শেখ মুজিবের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং এরা তার পূর্ণ আস্থাভাজন ছিলেন এর মানে ছিল যে তারা গােটা জাতির আস্থাভাজন ছিল।

আমি যখন এই বিশেষ ফোর্সের নাম “মুজিববাহিনী” দেওয়ার কথা বললাম, উচ্চতর কমান্ড তা গ্রহণ করলেন না। তাঁদের মতে এটা বাংলাদেশের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে এবং সম্ভবত মুজিববাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে একটা ক্ষতিকর ভাঙন সৃষ্টি করবে। আমি যুবনেতাদেরকে এ সিদ্ধান্ত কবুল করাতে পারলাম না। তারা বলে দিলেন- যে যাই বলুক না কেন এই ছেলেরা বাংলাদেশের মধ্যে মুজিববাহিনী নামেই পরিচিত হবে। এতে আমার তরফ থেকে আর যুক্তিতর্কের অবকাশ রইল না। কিন্তু আর্মির উচ্চতর কমান্ড একটা আলাদা সংগঠনের অস্তিত্ব স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিল না, তা সে সংগঠনের অভীষ্ট যা-ই হােক না কেন। শুধু তার নাম নয়, তার আলাদা অস্তিত্বই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়ল । লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরােরা বললেন জনাব তাজুউদ্দীন জানতে চাচ্ছেন কারা কারা কিসের লক্ষ্যে এই সংগঠন খাড়া করছে। সে হচ্ছে অতিশয় নিবেদিতপ্রাণ যুব-নেতৃত্ব যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আওয়ামী লীগের যুব সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ও দেশটির মধ্যে গেরিলা কার্যক্রম চালাতে চাচ্ছে। আমার এই ব্যাখ্যা তাকে সন্তুষ্ট করল না। তার মনে বদ্ধমূল ছিল সবকিছু নিজের কমান্ডের অধীনে রাখার ইচ্ছা, সুতরাং সকল যুক্তি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ল। চীফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল মানেকশ’ স্বাভাবিকভাবেই তার উপদেশ গ্রহণ করে চলতেন এবং একবার কলকাতায় তিনি আমার সঙ্গে খুবই কাটখােট্টা রকমের ব্যবহার করেছিলেন। আমি বুঝতে পারছি কেউ তাকে বলেছিল আমি উদ্দেশ্যমূলকভাবে যুবনেতাদের ব্যবহার করে আমার ব্যক্তিগত কমান্ডের অধীনে একটা আর্মি খাড়া করছি । সংশি-ষ্ট সকলের দ্বারা অনেকগুলি চেষ্টা হয়েছিল যুবনেতাদেরকে চাপ দিয়ে তাদের পরিচিতি মুক্তিবাহিনীর মধ্যে মিলিয়ে দিতে অথবা অন্ততপক্ষে আদেশ নির্দেশ আমার মাধ্যমে না নিয়ে সরাসরি আর্মি হাই কমান্ডের কাছ থেকে তা নিতে। তারা তাতে সােজাসুজি না করে দিলেন। এ ধরনের চাপের প্রতিক্রিয়ায় তাদের দৃঢ় ও বিরূপ মনােভাব নিশ্চয়ই এই লক্ষ্য আরও কোনও প্রচেষ্টার মুখে ছাই দিয়ে দিয়েছিল। তবে আমার ওপর নিরবচ্ছিন্ন চাপ প্রয়ােগ হতে লাগল কারণ আমি সার্ভিসে ছিলাম । এ বিরােধ বন্ধের চুড়ান্ত চেষ্টায় আমি লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরােরার সঙ্গে দেখা করলাম মুক্তিবাহিনী ও মুজিববাহিনীর দায়িত্বের ভাগাভাগি চূড়ান্ত করার জন্য।

তিনি বললেন সীমান্তের ২০ মাইলের মধ্যে সব রকমের হানার ব্যাপারে দায়িত্ব মুক্তিবাহিনীর আর অভ্যন্তরের গভীরের দায়িত্ব মুজিববাহিনীর। যুবনেতারা এটাই চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি চাইলেন তারা তার কমান্ডের অধীনে কাজ করবেন যা তাদের কাছে গ্রহণযােগ্য ছিল না। আরেকটা ব্যাপার ঠিক করা দরকার ছিল- আর্মির সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিবাহিনী যে সীমান্ত রেখাজুড়ে ছিল তা পাড়ি দেওয়ার পদ্ধতি কী হবে। আমরা কতগুলি বিস্তৃত করিডাের গড়ে তুলেছিলাম সারা বাংলাদেশ জুড়ে অনেক নিরাপদ বাড়ি ছিল অবস্থানের জন্য, আর মুজিববাহিনীর ছেলেদের তাদের পুরনাে সংগঠনের মাধ্যমে চমৎকার যােগাযােগ ছিল একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত। তারা ইচ্ছামতাে যেতে ও আসতে পারত। লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরােরা আমাদের ছেলেদের সীমান্ত অতিক্রমণের জায়গাগুলি, তারা কোন পথে আসা যাওয়া করে, তাদের নিরাপদ বাড়িগুলি ও তাদের গন্তব্য সম্বন্ধে জানার জন্য জেদ ধরলেন। যুবনেতাদের কোনও অসুবিধা ছিল না সীমান্ত অতিক্রমণের স্থানগুলির কথা বলতে, যাতে আর্মি ইউনিটগুলিকে সীমান্ত অতিক্রমণের ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া যায়। কিন্তু তারা তাদের করিডোেরসমূহ, নিরাপদ বাড়িগুলি এবং গন্তব্যগুলির কথা বলে দিতে প্রস্তুত ছিলেন না। কারণ তাঁরা অনেক মুক্তিবাহিনী নেতার বিশ্বাসযােগ্যতা সম্বন্ধে নিশ্চিত ছিলেন না এবং তাদের মধ্যে অনেকে তাদের রাজনৈতিক শত্রু ছিল। সে সব কথা আর্মি ফর্মেশনগুলিকেও জানানাে যেত না কারণ মুক্তিবাহিনী ছিল তাদের কমান্ডে এবং তারা নিশ্চয়ই পুরা জিনিশটা মুক্তিবাহিনীর কাছে প্রকাশ করে দিত। সাংঘাতিক কষ্টে এই আপশ -ঐীমাংসায় সম্মত হওয়া গেল যে মুজিববাহিনীর নেতারা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের জায়গাটা প্রকাশ করবে স্থানীয় আর্মি ইউনিট কমান্ডারদের কাছে, যারা তাদেরকে প্রবেশ করতে দেবে। এই ব্যবস্থার কথা কমান্ড সদর দফতর সকল আর্মি ইউনিটকে জানিয়ে দেবে। আমরা কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করলাম যাতে সকল আর্মি ইউনিট এই ব্যবস্থার কথা জানতে পারে । ইতিমধ্যে আমরা লিয়ার্যে স্থাপন করলাম লােকাল ফর্মেশন এবং ইউনিট কমান্ডারদের সাথে এসএফএফ -এর আর্মি অফিসারদের মাধ্যমে, যারা লিয়াযে অফিসার নিযুক্ত হয়েছিলেন। এসএফএফ -এর লেফটেন্যান্ট-কর্নেলরা সীমান্ত বরাবর স্থিত হয়েছিল ভারতীয় আর্মির সঙ্গে লিয়াযে সহজতর করার জন্য।

যখন আমি রিপাের্ট পেলাম যে লিয়াযে স্থাপিত হয়েছে কিন্তু তখনও আর্মি কমান্ড তাদের ইউনিটগুলিকে কোনও নির্দেশাবলি তখনও জারি করেনি, তখন আমি ব্যাপারটা আবার চীফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল মানেকশ’র কাছে পাঠালাম। যখন জেনারেল মানেকশ’ লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরােরার কাছে জানতে চাইলেন তিনি আদেশ জারি করেছেন কি না এবং লিয়াযে ঠিকমতাে স্থাপিত হয়েছে কি না, তিনি বললেন যে আমার কোনও অফিসার তার কমান্ডারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেনি এবং তিনি তাঁর কমান্ডের অধীন সমস্ত ফর্মেশনকে ইতিমধ্যে আদেশ। জারি করেছেন। আমি যখন জেনারেল মানেকশ’কে আমার অফিসারদের লিয়াযে সফরের ঠিক ঠিক তারিখ ও সময় জানালাম, আর্মি চীফ বেশ বিস্মিত হলেন এবং লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরােরাকে আবার জিজ্ঞেস করে নিশ্চিতি পেলেন যে আমার অফিসাররা তার কমান্ডারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন কিন্তু তাকে তা জানানাে হয়েছিল না। এ একটা ছােট্ট সামান্য ঘটনা এবং আমি এটা উল্লেখ করতাম না কিন্তু উলে-খ করলাম এই জন্য যে পরে আমরা আবিষ্কার করেছিলাম কমান্ড সদর দফতরের স্টাফ ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা নিয়েছিল মুজিববাহিনী সম্পর্কিত ঘটনাবলি আর্মি চীফের কাছে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করতে। এর ফলে আমার বহুবার আর্মি চীফের ডিরেক্টর অব মিলিটারি অপারেশনস এবং স্বয়ং আর্মি চীফের সঙ্গে মুজিববাহিনী সম্পর্কে সমগ্র সত্য ব্যাখ্যা করার জন্য সাক্ষাৎ করতে হয়েছিল। মেজর জেনারেল কেকে সিং, (পরে লেফটেন্যান্টজেনারেল এবং আর্মি কমান্ডার) তিনি ডিরেক্টর অব মিলিটারি অপারেশনস (ডিএমও) হিশাবে কাজ করছিলেন।

তিনি একজন অতিশয় মেধাবী অফিসার ছিলেন। তিনি মুজিববাহিনী কার্যক্রমের রাজনৈতিক সংশে-ষ এবং তাদের উচ্চ সম্ভাবনা বুঝলেন। তিনি ওখানে থেকে অনেক কাজে এসেছিলেন। পরে মেজর জেনারেল গিল তার জায়গায় আসেন জেনারেল কেকে সিং যুদ্ধে একটা আর্মারড ডিভিশন কমান্ড করার দায়িত্ব পাওয়ার পর, যেখানে তিনি অজস্র সম্মানসূচক পদক লাভ করেন। নতুন ডিএমও একজন দুঃসাহসী প্যারাট্রপার ছিলেন। তিনি তার নতুন অফিসের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য বেশি সময় নেননি এবং দু’একটা ঘটনা ছাড়া আমাদের মধ্যে বােঝাপড়া বেশ ভালই ছিল। আমার ফোর্স যুদ্ধে সম্মানজনক জয় লাভ করার পরে তার সঙ্গে বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। জেনারেল কেকে সিং আর্মি চীফের পক্ষ থেকে লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরােরাকে অত্যন্ত প্রাঞ্জল নােট পাঠিয়ে মুজিববাহিনীর কমান্ড ও কন্ট্রোল কী হবে এবং এই ফোর্স। -এর ওপর কী কাজের দায়িত্ব দেওয়া যাবে তা বিশদ জানিয়ে দিয়েছিলেন। এই নােট সত্ত্বেও কলহ-বিবাদ সব সময় লেগে ছিল এবং এড়ানাে যেত এমন হৃদয়-যন্ত্রণা ভুগতে হয়েছিল। যে কোনও যুদ্ধে আর্মি কমান্ডারদের এমন সব এজেন্সির সহযােগিতামূলক কাজের সদ্ব্যবহার করতে হয় যারা তাদের সরাসরি কমান্ডের অধীনে নয় কিন্তু নিজ নিজ নেতৃত্বের অধীনে পূর্ণ সহযােগিতা দিয়ে যায় সাধারণ লক্ষ্যকে সামনে রেখে  আর্মি কমান্ডারের যা থাকা দরকার তা হচ্ছে বিস্তৃত দৃষ্টিকোণ আর এমন এক অন্তর্গত আকর্ষণী শক্তি যা এসব আমি-বহির্ভূত লােকদের কাছ থেকে সবচেয়ে ভাল কাজ বের করে নিয়ে আসতে পারে। একথা বললে যথাযথ সুবিচার করা হবে যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরােরার সাথে বিভিন্ন সময়ে আলােচনায় আমি দেখেছি একমাত্র এই মুজিববাহিনীর কমান্ড ও কন্ট্রোল -এর ইস্যু ছাড়া আর সব ব্যাপারে তিনি ছিলেন বেশ যুক্তিপূর্ণ । তাঁর চীফ অব স্টাফ জেনারেল জ্যাকব একজন অত্যন্ত দক্ষ ব্যক্তি এবং আমার একজন বন্ধু । যে সব গােলমালের কথা বলা হল তার উৎপত্তি আমার কাছে রাজনৈতিক বলেই মনে হয়েছিল। এ সবের জন্য এ দুজন অফিসারকে দোষ দেওয়া যায় না। 

 

সূত্র : ফ্যান্টমস অব চিটাগং-দি ফিফথ আর্মি ইন বাংলাদেশ – মেজর জেনারেল (অব.) এস এস উবান

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!