দ্যা ওয়াশিংটিন পোস্ট, ৫ জুলাই ১৯৭১
পাকিস্তানের জন্য মার্কিন অস্ত্র – একটি গ্লানির ইতিহাস
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫ শে মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনকে চূর্ণবিচূর্ণ করতে নেমেছিল। সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও স্বতঃস্ফূর্ত হত্যাকাণ্ড শুরু হওয়ার পর থেকেই ওয়াশিংটনে প্রশ্ন করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোন অস্ত্র বিক্রি বা দেওয়া হচ্ছে কিনা। এবং, আরও অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত আছে কিনা। এখানে ওয়াশিংটনের দেওয়া উত্তর লিপিবদ্ধ হল।
২ এপ্রিল: যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে যে আমেরিকান সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে এমন রিপোর্ট তারা প্রত্যাখ্যান বা নিশ্চিত করতে পারে না।
২০ শে এপ্রিল, এটা কোন ভাবেই অগ্রাহ্য করা যায় না – সেনেটর কেনেডি জানান যে, “পূর্ব পাকিস্তানে আমেরিকান অস্ত্র ব্যবহারের উপর আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছি”; তিনি আরও বলেন যে “চীন, ইউএসএসআর এবং ইউ কে সহ অনেক দেশ থেকে প্রয়োজনীয় অস্ত্রগুলি ব্যবহার করা হয়েছে।”
তিন দিন পরে: বিভাগটি সরকারিভাবে তা স্বীকার করে। সেনেটর ফুলব্রাইটকে বলেন যে “কিছু এম -৪ ট্যাংক এবং এফ-৮৬ বিমান সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে পূর্ব পাকিস্তান ব্যবহার করতে দেখেছে”। তবে তিনি এটা স্বীকার করে না যে এই ট্যাংক এবং প্লেনগুলি নিপীড়িত মানুষদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করা হচ্ছে কণা যাদের কাছে হয়ত রাইফেলের মত কিছু থাকতে পরে।
৬ এপ্রিল: জনাব ফুলব্রাইট সচিব স্টিল রজার্সকে “বর্তমান জাহাজের চালানের অবস্থা” সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে এগুলোর কোনটিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য সামরিক সরঞ্জাম আছে কিনা। পরের সপ্তাহে বিভাগের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বৃহৎ সামরিক সহায়তা কর্মসূচী রয়েছে” এবং ঘোষণা করে, “পাইপলাইনে কোনও পুনরাবৃত্তি নেই- কোনও সরঞ্জাম নেই এবং এগুলোর কোনটি এখনো ডেলিভারি দেয়া হয়নি।’ এটা অক্টোবর, ১৯৭০ এর অস্ত্র চুক্তি অনুযায়ী মানা হচ্ছে। তিনি কিছু হাল্কা “অ-প্রাণঘাতী সামরিক সরঞ্জামএবং কিছু গোলাবারুদ ও সরঞ্জামের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ” -এর কথা বলেন যা ১৯৬৭ সাল থেকে চলে আসছে। এগুলোর বেশিরভাগ এখন পাকিস্তানীদের হাতে আছে। তিনি বলেন: “এই চুক্তির অধীনে যেসব চালান রয়েছে সেগুলো আবার বিবেচনা করা হচ্ছে।’
১৪ ই এপ্রিল: ওয়াশিংটন পোস্টে একটি বেসরকারি সূত্র থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে অস্ত্র সরবরাহ চলছে কিন্তু সর্বনিম্ন প্রচারের সাথে। পরের দিন, বিভাগের মুখপাত্র এই বিষয়ে একটি পর্যালোচনা প্রকাশ করেছেন: “সংক্ষেপে বলা যায়, এই সঙ্কটের শুরু থেকেই পাকিস্তান সরকারকে কোন অস্ত্র সরবরাহ করা হয়নি এবং ডেলিভারির প্রশ্নটি পর্যালোচনায় রাখা হবে।’’
এপ্রিল ২০: সিনেটর কেনেডি বলেছিলেন: “পূর্ব পাকিস্তানে মার্চ মাসে ২৫-২৬ তারিখে যুদ্ধের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে পাকিস্তান সরকার বা তার এজেন্টদের কাছে এই আইটেমগুলির (গোয়েন্দা সহ ১৯৬৭ ‘অ-প্রাণঘাতী’ তালিকায়) কোনটিই দেওয়া হয়নি। আর কোন চালান শিডিউলে নেই।
৬ মে: সেনেটর ফুলব্রাইট বলেন: “সংক্ষেপে, সঙ্কটের শুরুর দিক থেকে কোনও অস্ত্র সরবরাহ করা হয়নি এবং বিতরণের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হয়েছে।”
৮ মে: সুন্দরবন নামে পাকিস্তানে অস্ত্র বহনকারী একটি পাকিস্তানী জাহাজ নিউইয়র্ক থেকে যাত্রা করে যা জনসাধারণের ঘোষণা বা জনসাধারণের জ্ঞ্যাতের বাইরে ছিল।
১৭ জুন: পররাষ্ট্র দপ্তর সাংবাদিকদের বলেন যা পরের দিন এই সংবাদপত্রে এসেছে- তিনি বলেন যে, “যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২৫ মার্চের থেকে কোনও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়নি।”
২২ জুন: নিউইয়র্ক টাইমসের একটি রিপোর্টেত প্রতিক্রিয়া জানাতে বিভাগটি স্বীকার করেছে যে অস্ত্রের দুটি শিপমেন্ট পাকিস্তানে চলে যাচ্ছে এবং ব্যাখ্যা করে যে তাদের লাইসেন্স ২৫ মার্চের আগে করা হয়েছে। একই দিনে দ্বিতীয় জাহাজ পদ্মা রওনা করে।
ছয় দিন পরে: প্রশাসন বলেছে যে ২৫ মার্চের আগে যদি আরও কোন লাইসেন্স করা শিপমেন্ট থাকে তাহলে সেগুলো সরবরাহ করা হবে। কারণ হিসেবে বলা হয় (১) পাকিস্তান সরকারকে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য “লিভারেজ” প্রদান করতে হবে (এটি এখনো আছে) এবং (২) ছয় মিলিয়ন শরণার্থী যারা ভারতে পালিয়ে গিয়েছে (প্রতিবেদনের মতে যা চলমান আছে এবং প্রতিদিন ৪০০০০ মানুষ চলে যাচ্ছে বলে যানা যায়) তাদের ফিরে আসার জন্য। দ্বিতীয় কারণের সাথে প্রশাসন যে আগে বলেছিল যে আমেরিকার পাশাপাশি সোভিয়েত, চীন ও ব্রিটিশ অস্ত্র সেখানে ব্যাবহ্রিত হয়েছে – এটি বলা হিয়েছে পাকিস্তানকে অন্যদের থেকে অস্ত্র কিনতে নিরুৎসাহিত করার উদ্যেশ্যে।
২৯ শে জুনঃ এটি প্রকাশ করা হয়েছিল যে চার বা পাঁচটি অস্ত্র জাহাজের চালান নির্ধারিত ছিল। কাপ্তাই নামক জাহাজ ২ জুলাই যাত্রা শুরু করে।
আমরা এই একটি বিস্ময়কর এবং লজ্জাজনক রেকর্ড প্রকাশ করলাম যার দুইটি অর্থ আছে। প্রথমটি হলো, রাজনৈতিক উদাসীনতার কারণে ইউনাইটেড স্টেট একটি নৃশংস শাসককে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে যা প্রায় ২ লাখ নাগরিককে হত্যা করেছে এবং তাদের ছয় লাখেরও বেশি লোককে তাদের দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। দ্বিতীয় কারণটি বুঝতে হলে পেন্টাগনের কাগজপত্র নিয়ে বর্তমান বিতর্কের প্রেক্ষিতে দেখতে হবে – যা জানার অধিকার জনসাধারণের আছে এবং গোপন করার অধিকার সরকারের ওপর বর্তায়। এখানে আমরা একটি ক্লাসিক সিস্টেম দেখালাম যা সত্যিই কাজ করে; সরকারি তদন্ত থেকে গোপন রেখে, প্রশাসন কর্মকর্তারা পাকিস্তানে অস্ত্র
সরবরাহ করছেন, এবং স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে জনসাধারণকে বলছে যে এই ধরণের সরবরাহগুলি বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। আমরা অনুমান করি যে এই প্রতারণা সাংগঠনিক বিভ্রান্তি এবং আমলাতান্ত্রিক বিচ্ছিন্নতার সংমিশ্রণ এবং ঘটনাকে আড়াল করার প্রয়াসমাত্র। আসল বিষয় হল: অস্ত্রের জাহাজ এখনো চলছে। এটা রাষ্ট্রপতির ব্যাপার যে তিনি তার সরকার ঘোষিত নীতিমালা অনুসারে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে তা থামাবেন কিনা।