You dont have javascript enabled! Please enable it! পাকিস্তানের উপর একটি প্রস্তাব, ওয়াশিংটন পোস্ট, ৩০শে জুলাই , ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

সম্পাদকীয়ঃ পাকিস্তানের উপর একটি প্রস্তাব
সুত্রঃ ওয়াশিংটন পোস্ট
তারিখঃ ৩০শে জুলাই , ১৯৭১ ।

পাকিস্তানে হিটলারের পরে সংগঠিত হওয়া সবচেয়ে বড় হত্যাকান্ডের সাক্ষী হচ্ছে আজকের বিশ্ব ।হ্যালোকাস্ট এর ফলে যখন শত সহস্র লোক মারা গেছে এবং কোটি লোক পালিয়ে গেছে, তখন পৃথিবী এইসব আতঙ্কের দিকে শুধু তাকিয়েই দেখেছে প্রতিবন্ধীদের মতো কিন্তু তাদের জন্য করেছে সামান্যই । এই বেদনাদায়ক ঘটনাট সমুহের প্রতি অসঙ্গতিপূর্ণ আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গীকে উন্নত করার জন্য কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তারা নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ এবং বেঁচে থাকা লোকদেরকে জন্য ভিক্ষাবৃত্তি প্রদান করতে চেয়েছে পাশাপাশি তারা পাকিস্তানে হামলা চালানোর জন্য ভারতীয় বাহিনীকেও দায়ী করেছে । নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধের বিপর্যয়ের পর, একজন হয়তো আশা করেছিলেন যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো যে কোনও উপায়ে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকবে, কিন্তু তা হয়নি ।

উপমহাদেশের দেশগুলোর জাতীয় স্বার্থের জন্য স্বার্থে বৃহৎ রাষ্ট্রগুলি সাধারন মানুষের দুঃখের পরিণতি হ্রাসের জন্য তাদের নিজস্ব স্বার্থ হাসিল করা বন্ধ করতে অনিচ্ছুক ছিল। রাশিয়ানদের সম্ভবত, দোষারোপ করা এভাবে যে ; তাদের পাকিস্তানে কোন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ছিল না এবং তারা ভারতে তাদের অবস্থান সুসংহত করার জন্য পাকিস্তানের প্রতি তাদের ঐ বিদ্বেষকে ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে চীনারা এ ব্যাপারে পুরোপুরি পাগলের মতো নীতি গ্রহণ করেছে। তারা বাঙালিদের প্রত্যাখ্যান করেছে কারণ তাদের আন্দোলন হলো বিপথগামী অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে একটি জনপ্রিয় বিপ্লব, এবং তারা পাকিস্তানি সরকার দ্বারা বাঙালিদের নিপীড়নকে উৎসাহিত করেছে এমনকি বাইরের বাহিনীর (ভারতীয় অর্থে) হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কে রক্ষা করার প্রস্তাবও দিয়েছে।

আমেরিকার নীতি আমেরিকানদের জন্য “কৌশলগত” এবং এর কারণগুলি আরও দুঃখজনক, যার ফলে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে তাদের পেশাগত কর্মকাণ্ড থেকে আরো নীচে নামিয়ে আনে এবং তারা মার্কিন অস্ত্রও বহন করে এবং কংগ্রেস তাদের নতুন অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করেছে (যা এ পর্যন্ত অস্বীকার করা হয়েছে) এবং এই সবই পাকিস্তানী বাহিনীকে একটি মধ্যপন্থী অবস্থানে থাকতে প্রলুব্ধ করে।

এসব অভিযোগ প্রমানের জন্য একবিন্দু প্রমাণও নেই। যাইহোক, পাকিস্তানিরা আমেরিকান যে সকল প্রস্তাবের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোপনভাবে প্রকাশ করা হতে পারে। বিপরীতে বহির্বিশ্বে উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বেড়েই চলছে যার সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজারের বেশী এবং যুক্তরাষ্ট্রে কে এজন্য ব্যাপকভাবে দোষারোপ করা হয়।

এর বিকল্প কি হতে পারে? একটি হলো ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ, দুই দেশের সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ অসম্ভব কিছু নয়। পাকিস্তান সীমান্তে তার নাগরিকদের বহিষ্কারের নীতি এবং বাংলার বিদ্রোহের আন্দোলনকে সহায়তা করার জন্য ভারতের নীতিটি যেকোনো মুহূর্তে একটি বিস্তৃত যুদ্ধের স্ফুলিঙ্গ প্রদান করতে পারে। এই যুদ্ধ উপমহাদেশে হতাশার নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং এটি মস্কো পিকিং-ওয়াশিংটন ত্রিভুজে রাজনৈতিক খেলা তীব্রতর করবে।

একটি যুদ্ধ উ থান্ট এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাদের তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন , পাকিস্তানের মৌলিক সমস্যা ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে মোকাবেলা করার একটি দ্বার উন্মোচন করবে। সবাই অনাহারে বা কলেরা দ্বারা যে কোন সংখ্যার মৃত্যুর মিছিল দেখতে পাবে, এবং সম্ভবত আধুনিক ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক আন্তঃ সীমান্ত অভিবাসনের এবং যুদ্ধের আসন্ন হুমকি দেখতে পারছে। এইসব সমস্যার সসম্ভাবনাও উ থান্ট ও জাতিসংঘের তৎপরতা জোরদার করার জন্য পর্যাপ্ত নয়, কিন্তু যদি এক জাতির কয়েকজনকে অন্য জাতির কয়েকজন সৈনিকের দ্বারা গুলিবিদ্ধ করা হয়, তবে নিরাপত্তা পরিষদ সম্ভাব্যভাবে বৈঠকে বসবে সেই সাথে সংঘাত নিরসনে আন্তর্জাতিক তৎপরতার গতি বৃদ্ধি পাবে।

এর বিকল্প হিসেবে, আমরা যা দেখতে পাই, কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়নের এবং চীনের জনগণের কাছ থেকে তাত্ক্ষণিক আবেদন অথবা এই তিনজনের কাছ থেকে পৃথক কিন্তু সমান্তরাল আবেদন আসতে পারে। পাকিস্তানকে সমস্যাগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় পুনরুদ্ধারে তাদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য বলা যেতে পারে, যা এখন কঠিন কাজ বলে মনে হয়। তবে আমেরিকান-সোভিয়েত চীনের চাপের কৌশলগুলি বাইরের মানুষের কল্পনা করা কঠিন। তবুও এটি স্পষ্ট যে তিনটি দেশ একত্রে কাজ করলে পাকিস্তানক অবশ্যই তার নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে এবং সমস্যাটি হলো এটি করার জন্য একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

সেখানে. অবশ্যই, এক ডজন কারণ কূটনীতিক এবং রাজনীতিবিদ আপনাকে ব্যখ্যা করবেন কেন এই প্রস্তাব অবাস্তব অসমর্থনীয় বা অকার্যকর। মূলত, এখানে তিনটি অত্যন্ত সতর্ক পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বীর সহযোগিতার প্রয়োজন হবে, যেমন তারা কখনো করেনি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গাকে সহযোগিতা করার জন্য। যদিও প্রস্তাবটি নেহাতই চেষ্টা করার কন্য, তবে এটি বেশ সহজঃ এটা না হলে ১০, ২০ বা ৮০ মিলিয়ন মানুষ কে ভয়ানক অতিরিক্ত কষ্ট বহন করতে হবে, তাদের অনেকের জীবনও বিপন্ন হতে পারে। পাকিস্তান ট্র্যাজেডির প্রভাব সীমিত করার এই সম্ভাবনাকে হাতছাড়া করা উচিৎ হবে বলে মনে হয় না। এবং যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি একটি বাস্তব এবং ইতিবাচক ভূমিকা না রাখেতে পারে, তাদের উচিত হবে কমপক্ষে পাকিস্তানের জন্য বর্তমান সাহায্য নীতি কে সীমিত করা।