দ্যা নিউ ইয়র্কার, ১১ ডিসেম্বর, ১৯৭১
পশ্চিম বঙ্গের চিঠি
৩রা ডিসেম্বর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যে ধরণের উস্কানিই দেয়া হোক না কেন, এটা সবার কাছেই বোধগম্য যে এই যুদ্ধের মূল কারণ মার্চ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেয়া ৯ মিলয়ন উদ্বাস্তু- যা বিশ্বের ইতিহাসে একক একটি সেনাবাহিনী দ্বারা জোরপূর্বক উচ্ছেদের সবচেয়ে বড় ঘটনা। কিন্তু এত বড় মানবিক দূর্যোগ বিশ্ববাসীর মধ্যে কোন বিকারের সৃষ্টি করেছে বলে মনে হচ্ছেনা। কেউ যদি এমন একটি সমাজের বাসিন্দা হয়, যেখানে অনাহার, কোন রকমে বেঁচে থাকা এই শব্দগুলো অপরিচিত- যেখানে খাবারের পুষ্টিগুণ, উন্নত জীবনযাত্রা, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, সামাজিক সমতা, মানবিকতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার সময় আছে; সেই ব্যাক্তির পক্ষে একজন শরণার্থীর দুঃখ উপলব্ধি করা আসলেই কঠিন। যদিও এই উদ্বাস্তুদের মধ্যে কেউ কেউ ডাক্তার, আইনজীবী, অধ্যাপক, ছাত্র বা ব্যাবসায়ী ছিল, কিন্তু তাদের বেশীরভাগেরই তেমন কোন সহায়-সম্বল ছিলনা। তারা দরিদ্র অবস্হায় জন্ম নিয়েছিল এবং এবং দরিদ্র অবস্হাতেই মৃত্যুবরণ করা ছিল তাদের ভবিতব্য। পারিবারিক বন্ধন, কিছু সুখ স্মৃতি- এই ছিল পৃথিবীতে তাদের সবকিছু। কিন্তু এখন তাদের বেশিরভাগের পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের সম্মান-মূল্যবোধ কলঙ্কিত করা হয়েছে, তাদের সামান্য সম্বলটুকু কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং তাদের স্মৃতিগুলোকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করা হয়েছে। বাস্তুহারা হবার আগে এই লোকগুলো একটা নির্দিষ্ট জায়গার বাসিন্দা ছিল, হয়তো তাদের বড় কিছু হবার আশা ছিলনা, হয়তোবা বেঁচে থাকারও কোন অনুপ্রেরণা ছিলনা। এখনো তাদের কিছু নেই। তাদের কি কোনভাবে পশুদের থেকে আলাদা করা যায়? গান্ধী একবার বলেছিলেন, ” আমি যতই গ্রামের মানুষদের দেখি, তাদের চোখের শূণ্য দৃষ্টি দেখে আমি ততই অবাক হই। ক্ষেতে কাজ করা ছাড়া তাদের জীবনে আর কিছুই নেই। সারা দিন হালের বলদগুলোর সাথে পাশাপাশি কাজ করতে করতে তারা তাদের মতই হয়ে গিয়েছে। যদি সব শরণার্থীদের একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মারা যায়, সেই ঘটনার মুখোমুখি হওয়া কি বিশ্ববাসীর জন্য অপেক্ষাকৃত সহজ হবে? এই শরণার্থীদের অবস্হা দেখে মনে হচ্ছে বিবর্তন প্রক্রিয়া উল্টোদিকে হাঁটছে। তবে এই মুহূর্তে এটাই সত্য যে সব রাস্তাই এখন কলকাতায় শেষ হয়েছে, যার ব্যাপারে রুডইয়ার্ড কিপলিঙ লিখেছিলেন যে কলকাতায় শুধু কলেরা, সাইক্লোন আর কাকেরা আসে আর যায়। এছাড়াও তিনি কলকাতাকে নর্দমার সাথে তুলনা করেছিলেন। কিপলিঙ কলকাতা নিয়ে লিখেছিলেন আশি বছর আগে, তারপর শহর আরো বিস্তৃত হয়েছে এবং শরণার্থীদের বাদ দিয়েও এই শহরে সাত মিলিয়ন মানুষ থাকে। পূর্বভারতের যে অংশে শরণার্থীরা প্রায় হাজার খানেক শিবির বানিয়ে বসবাস করছে, তারা দেশে ফেরত যেতে না পারলে শরণার্থী শিবিরগুলোর জনসংখ্যা বাড়ার কারণে সেই অঞ্চলের জনসংখ্যা একসময় ৩০ মিলিয়নে পৌছাবে এবং এলাকাগুলো একসময় কলকাতা শহরের অংশে পরিণত হবে। ভারতের এই অংশে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ থাকে, যাদের বেশীরভাগই অত্যন্ত গরীব এবং এই এলাকায় দুর্ভিক্ষ, মহামারী এবং সাইক্লোনের উৎপাত লেগেই থাকে।
শরণার্থীদের হারানোর কিছু নেই, তারা বাঁচার জন্য যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত। পূর্ব ভারতের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রন করা কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে এবং এর প্রভাব সারা দেশের উপরই পড়ছে।
কাজের খাতিরে আমাকে অনেকগুলো শরণার্থী শিবিরে যেতে হয়েছে। শরণার্থীদের বর্ণণাতীত দূর্দশা যেকোন মানুষকেই স্পর্শ না করে পারেনা। কাগজে-কলমে তাদের অবস্হার বিবরণ দেয়ার মত মানসিক অবস্হা আমার নেই। প্রতিটি শিবিরই একটির চেয়ে অন্নটি ভিন্ন। একটিতে ১ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ থাকছে তো আরেকটিতে ১০ হাজার। কোথাও টিউবয়েল আছে, কোথাও পানি সরবরাহের কোন ব্যাবস্হাই নেই। কোন কোনটি তারপুলিন দিয়ে ঢাকা আবার কোন কোনটিতে মানুষ খোলা আকাশের নীচে থাকছে। কোথাও পুরো শিবির হাঁটু পানীর নীচে তো অন্য কোথাও ধূলো-বালি।
এক বর্গ মাইলের মত এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা একটা শরণার্থী শিবিরে আমি গিয়েছিলাম, যেখানে এক লক্ষের বেশী মানুষ থাকে। বৃদ্ধ পুরুষ, মহিলা, শিশুরা কোন রকমে বানানো একটি আশ্রয় কেন্দ্রে থাকছে। তারা অপুষ্ট এবং দূর্বল, আবর্জনা পূর্ণ একটি নর্দমার পাশে অসহায়ভাবে বসে আছে। দূর্গন্ধে সেখানে টেকা দায়।
পাশে থাকা একজনকে আমি বলেছিলাম, ” দেখে মনে হচ্ছে এখানে কোন কম বয়সী পুরুষ বা মহিলা থাকেনা।”
সে উত্তর দিল, ” অল্প বয়সী মেয়েরা প্রায় কোন সময়েই সীমান্ত পেরিয়ে আসতে পারেনা। সেন্যরা প্রথমে তাদের ধর্ষণ করে, এবং পরে আবার ধর্ষনের জন্য সেনা পতিতালয়ে পাঠিয়ে দেয়। আর অল্প বয়সী ছেলেদের আমরা ট্রেনিং দিয়ে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য ফেরত পাঠিয়ে দেই। আমরা নর্দমার পাশে বসে থাকা কিছু বৃদ্ধার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলাম, যাদের স্পষ্টই কোন রকমের আত্মচেতনা নেই। তাদের পাশেই কিছু মহিলা নর্দমার মধ্যেই কাপড় এবং থালা-বাসন ধুচ্ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না যে তারা কি নর্দমার দূষিত জলের ব্যাপারে অজ্ঞ, নাকি এতই দূর্বল যে তারা পরিষ্কার পানির খুঁজতে দূরে যেতে পারছেনা নাকি তাদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে যাবার অনুমতি নেই। এই ব্যাপারে তাদের প্রশ্ন করা হলে তারা কোন উত্তর না দিয়ে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। ক্যাম্প কর্মরাতাও এই প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেলেন।
সামনে হাঁটতে হাঁটতে তিনি বললেন, “এদের সবারই আমাশয় হয়েছে।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ” তাদের কিছু ল্যাট্রিন খুঁড়তে দেয়া হচ্ছেনা কেন?”
তিনি বললেন, “তাহলে রায়ট লেগে যাবে। উদ্বাস্তুদের হাতে কোদাল দেখলে এলাকার মানুষেরা মনে করবে তাদের কাজ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”
” টিউবয়েল?”
” আমরা ঠিকাদারদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা যেকোন সময় কাজ শুরু করে দেবে।”
আমরা বিক্ষিপ্তভাবে বসে থাকা কিছু শিশুর পাশ দিয়ে হেঁটে গেলাম। তাদের মধ্যে শিশুদের স্বাভাবিক চাঞ্চল্যের লেশ মাত্র নেই। বাইরের মানুষ দেখলে শিশুরা সাধারণত তাদের ঘিরে ধরে, আমাদের দেখেও এই শিশুদের মধ্যে কোন বিকার দেখা গেলনা।
আমি আরেকটি ক্যাম্প দেখেছি, যেটি কোলাহলে পরিপূর্ণ ছিল। সেখানকার জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার এবং সেটি নিরাপত্তারক্ষী ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। আমি যখন গাড়ি চালিয়ে ক্যাম্পে গেলাম, এক দল শিশু আমার গাড়ির পিছন পিছন আসতে থাকল। ক্যাম্পের ভেতর কিছু ব্যাবসায়ী ঝুড়ি ভর্তি পঁচা ফল ও শাকসবজি নিয়ে নিয়ে বসে ছিল। একজন নিরাপত্তারক্ষী আমাকে ক্যাম্প সদর দপ্তরে নিয়ে গেল, যেটি মূলত তারপুলিন আচ্ছাদিত একটি ঘর। হাত মুঠিবদ্ধ করে চিৎকার করতে থাকা একদল লোক সেই ঘরটা ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল। নিরাপত্তারক্ষী সাবধানতার সাথে তাদের মধ্যে দিয়ে পথ করে নিয়ে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেল। ভেতরে ক্যাম্পের কমানডেন্ট একটি খালি ডেস্কের সামনে চুপ করে বসে ছিলেন। আমাদের দেখে চিৎকার থেমে গেল।
আমি কমানডেন্টকে কি সমস্যা সেটা জিজ্ঞেস করলাম।
” রেশন আসতে একদিন দেরী হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই। শরণার্থীরাও এটা জানে। কিন্তু আজ সকালে নকশালীরা এসেছিল। তারা যেখানেই আসে, সেখানেই সমস্যা সৃষ্টি করে। নকশাল মাওবাদী সন্ত্রাসীদের একটা সংগঠন। তাদের কারণে শরণার্থীরা এখন মনে করছে যে ত্রাণ তাদের প্রাপ্য অধিকার, অনেক কষ্ট করে সংগ্রহ করে আনা ভারত সরকারের দেয়া কোন উপহার নয়।
” আপনি কি সাধারণত রাজনৈতিক কর্মীদের ক্যাম্পে আসতে দেন?”
” আমি কি করতে পারি? আমার বড়কর্তা নকশালীদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল। তিনি আমাকে নকশালীদের কর্মকান্ডে কোন বাঁধা দিতে বারণ করেছেন। কিন্তু আমি তাদের দয়া করে ক্যাম্প থেকে চলে যেতে হাত জোড় করে অনুরোধ করেছি। আমি সরে না গেলে তারা আমাকে মেরেই ফেলত। পুলিশ, প্রশাসন এবং সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরই অবস্হা এখন ছন্নছাড়া, কে ক্ষমতায় আসবে সেটা কিছুতেই বলা যাচ্ছেনা। সুতরাং কেউ ঝুঁকি নিয়ে কোন দলের বিরাগভাজন হতে চাইছেনা। নকশালীরা এখন পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় শক্তি। তারা সন্ত্রাস ও অরাজকতায় বিশ্বাস করে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই উদ্বাস্তুরা পশ্চিমবঙ্গে আসছে। সংখ্যালঘু হিসাবে নির্যাতিত হবার ভয়ে মুসলমানেরা নিজেদের জন্য আলাদা একটি আবাসভূমির দাবী তুলে। সেই দাবী পূরণের জন্যই হাজার মাইল দূরে আবস্হিত দুটি ভুখন্ড, পশ্চিম পান্জাব এবং পূর্ব বাংলাকে এক করে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠন করা হয়। এসময় সংগঠিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুধু এক মিলিয়নের বেশী মানুষের জীবনই নেয়নি, হিন্দু-মুসলমান দুটি রাষ্ট্রের বাইরে দেশবিহীন আরেকটি জনগোষ্ঠীও সৃষ্টি করেছে। স্বাধীনতার পর প্রথম দুই-তিন বছরে প্রায় ৬ মিলিয়ন হিন্দু এবং শিখ ভারতে পালিয়ে এসেছে এবং প্রায় সমপরিমাণ মুসলমান পাকিস্তানে চলে গিয়েছে। কিন্তু এর পরেও, পাকিস্তানে প্রায় ১০ মিলিয়ন হিন্দু, যার বেশীরভাগই পূর্ব পাকিস্তানে এবং কয়েকগুণ বেশী মুসলমান ভারতে রয়ে যায়। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লেই এই সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে। এর ফলে সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ অব্যাহত থাকে, যদিও ৫০ এবং ৬০ এর দশকে মূলত ভারতে আসার হারই অনেক বেশী। ভারতে আসা আনুমানিক তিন থেকে চার মিলিয়ন হিন্দু মূলত পশ্চিমবঙ্গেই আবাস গাঁড়ে, যাদের অনেকেই বেকার এবং আত্নীয়-স্বজনের দয়ার উপর নির্ভরশীল। এখন আবার নতুন করে ৯ মিলিয়ন উদ্বাস্তু এসে এদের সাথে যোগ হয়েছে। এখনো প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ হাজার করে নতুন শরণার্থী আসছে। পূর্ব পাকিস্তানে এখনো দুই থেকে তিন মিলিয়ন হিন্দু রয়ে গিয়েছে। ভারতে এখন অন্ততপক্ষে সাত মিলিয়ন মুসলমান বাস করে। এদের মধ্যে এখন হয়তো অনেকেই পাকিস্তান চলে যেতে চাইবে, কারণ তাদের হিন্দু প্রতিরোধের টার্গেট হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের সতর্কতার কারণে এখনো ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে যায়নি, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু নির্যাতন এবং উদ্বাস্তু সমস্যা যদি চলতে থাকে, তাহলে তাহলে তার ঝাঁঝ নিরপরাধ ভারতীয় মুসলমানদের উপর পড়তেই পারে। এরকম কিছু হলে পাকিস্তানকে ভারত অপেক্ষা অনেক বড় আকারের শরণার্থী সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে।
যেহেতু দীর্ঘমেয়াদে পাকিস্তানেরই পাওয়ার চেয়ে হারানোর আশঙ্কা বেশী, পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন তুলছেন যে পাকিস্তান কি এই পরিস্হিতি এড়াতে পারতোনা, বিশেষত এটা যেহেতু এটা পাকিস্তানের পূর্ব-পশ্চিম দুই অংশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ধের ফলাফল। পশ্চিম পাকিস্তানের পান্জাবী এবং পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের মধ্যে অমিল অনেক বেশী। তারা শুধু ভৌগলিক দিক দিয়েই আলাদা নয়, তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-আশাক সবই ভিন্ন। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে একমাত্র মিল হচ্ছে ইসলাম ধর্ম- কিন্তু এটা অন্যান্য অনেক মুসলিম দেশও বুঝতে পারছে যে শুধু ধর্ম দিয়ে রাজনৈতিক বিভেদ আড়াল করে রাখা সম্ভব নয়। পান্জাবীরা বাঙালীদের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশী অগ্রসর এবং তারা সামরিক বাহিনী, গণপ্রসাশন, শিল্প সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। তারা সামরিক ঘাঁটি থেকে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের জান-মাল ধ্বংস করতে পারে, কিন্তু এগুলো দখল করে শাসন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তার উপর গেরিলা যোদ্ধারা সহজেই ভারতে প্রবেশ করে অনির্দিষ্ট কালের জন্য লুকিয়ে থাকতে পারে।
এই যুদ্ধে ভারতের জড়িত হওয়া সময়ের ব্যাপার ছিল। কারণ বাঙালীর উপর পাকিস্তানের আক্রমণ শেষ পর্যায়ে যেয়ে হিন্দু নিধনযজ্ঞে পরিণত হয়েছিল। ভারতে আসা ৯ মিলিয়ন মানুষের ৯০ ভাগই হিন্দু ( চেহারা দেখে বাঙালী হিন্দু-মুসলমানের পার্থক্য করা কঠিন, পাকিস্তানী সেনারা তাই মানুষের কাপড় খুলে তার খৎনা আছে কিনা তা পরিক্ষা করে দেখত। কিছু হিন্দুদের সহযেই চেনা যেত, তারা ব্যাবসায়ী অথবা জমির মালিক ছিল এবং ইহুদিদের মত সহযেই তাদের বলির পাঁঠাতে পরিণত করা হয়েছিল।)। ভারতের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩৫০ মাইল ব্যাপী বিশাল সীমান্ত, পলায়নরত হিন্দুদের জন্য যেটা ছিল একটি বিশাল সুবিধা। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে এই শরণার্থীদের একটা অংশকে যদি বন্দুকের মুখে সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দেয়া হত, তাহলে শরণার্থী সমস্যা এত প্রকট আকার ধারণ করতোনা। অন্য দেশের নাগরিকদের গ্রহণ করার জন্য ভারতের কোন আইনী বাধ্যবাধকতা নেই।
কেউ কেউ মনে করেন প্রধাণনমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর উচিত ছিল শুরুতেই পাকিস্তানের উপর আচমকা হামলা চালানো। এর ফলে শরণার্থী আসা বন্ধ হত। আরো আগে যুদ্ধ শুরু না করা সরকারের ব্যার্থতা এবং প্রথম থেকেই শরণার্থী ঢুকতে দিয়ে আরো শরণার্থী আসাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে সাহায্যের জন্য অনুপ্রেরণা মানবিক ছিল, কিন্তু অনেকেই মনে করেন যে ভারতের রাজনৈতিক হিসাবের মধ্যে পাকিস্তানকে ভাঙা- এমনকি ভারত-পাকিস্তান পুন:সংযুক্ত করাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাদের কথা অনুসারে পাকিস্তানে হিন্দুদের ভবিষ্যৎ সবসময়ই অনিশ্চিত ছিল এবং কোন না কোন সময় ভারত সরকারকে এদের দায়িত্ব নিতেই হত। ভারত পাকিস্তানের অস্তিত্ব কখনো মেনে নেয়নি, এখন শরণার্থীদের সামনে রেখে পাকিস্তানের উপর প্রচন্ড রকমের অন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করার সুযোগ এসেছে। ( পাকিস্তান সবসময় দাবী করে এসেছে যে ভারত শরণার্থীদের সংখ্যা বাড়িয়ে বলছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সব ত্রাণ সংস্হাই ভারতের হিসাবই সঠিক বলে মেনে নিয়েছে।)
ভারতের উদ্দেশ্য যাই হোকনা কেন, শরণার্থীদের দূর্দশা সবার বিবেচনায়ই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু আমেরিকা, রাশিয়া, চীন- বড় শক্তি গুলোর রাজনীতিতে সেটা হয়নি। আমেরিকা তাদের পুরোনো নীতি অনুযায়ী তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক সরকারের চেয়ে সামরিক জান্তাদের সমর্থন করছে। তারা কখনোই ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে কিছু বলেনি এবং মিসেস গান্ধীর সফরের আগ পর্যন্ত তারা পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছিল। সরবরাহকৃত অস্ত্রের দাম হয়তো খুব বেশী নয়, কিন্তু এই অস্ত্র ও খুচরা যন্ত্রাংশ পাক সামরিক বাহিনীর জন্য অপরিহার্য এবং এই ঘটনা ভারতীয় জনগণের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তীব্র অবিশ্বাসের সৃষ্টি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি, যদি সেটা বিশ্বাসযোগ্য হয়- তা হচ্ছে নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে ইয়াহিয়া খানের পাশে থেকে তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা। তীব্র আমেরিকা বিরোধী মনোভাবের ভেতর দিয়ে ভারত-রাশিয়ার মদ্ধ্যে যে চুক্তি অনুমোদিত হয়েছে, সেটি মূলত সামরিক গুরুত্ব বহন করে।চুক্তি সাক্ষরের পেছনে রাশিয়ার উদ্দেশ্য ছিল নিরপেক্ষ বলয় থেকে ভারতকে বের করে নিজের দিকে টেনে নেয়া এবং রাশিয়ার আশা ছিল যে ভারত আগ বাড়িয়ে যুদ্ধ শুরু করে এর মধ্যে রাশিয়াকে টেনে আনবেনা। চীন পাকিস্তানকে কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেটা কেউ জানেনা, গত গ্রীষ্মে কিসিন্জারের চীন সফরের মাধ্যমে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, নিশ্চিত করে কিছু বলার মত তথ্য পাওয়া যায়নি। আসছে শরতে ভুট্টো চীন সফর করবেন, আর জাতিসংঘে চীন ভারতকে হুমকি-ধামকি দিয়েই যাচ্ছে।
যদিও ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, আমেরিকা, চীন – সবাই শরণার্থীদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন, কিন্তু তাদের দুঃখ-দূর্দশা দিনে দিনে বেড়েই চলছে। বাস্তবিকভাবে রাজনীতি এবং কূটনীতির জালে তাদের দুঃখ-কষ্ট অনেকটাই আড়াল হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় সরকার বলেছে যে উদ্বাস্তুদের জন্য সহানুভূতি, সাহায্য ঠিক আছে, কিন্তু কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান। এবং এই সমাধানের পথ হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা। ভারত মনে করে যে ইয়াহিয়া বাহিনীর অত্যাচারের ফলে শরণার্থীরা আর তার অধীনে ঘরে ফিরে যেতে নিরাপদ বোধ করবেনা। শেখ মুজিব, ধারণা করা হচ্ছে যাকে বন্দী করে রেখে গোপনে দেশদ্রোহীতার অভিযোগে অভিযুক্ত করার চক্রান্ত চলছে, তাকে মুক্ত করে দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত সমস্যার সমাধান নেই। মুজিবকে মুক্তি দিলেও তাঁর পক্ষে এখন একা অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবেনা। যুদ্ধের এই কয়েক মাসে বাংলাদেশে আরো কয়েকজন নেতার আবির্ভাব ঘটেছে, তাদের বাদ দিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া মুজিবের পক্ষে সম্ভব হবেনা। এটাও অনেকের আশঙ্কা যে বাংলাদেশ আদৌ এই শরণার্থীদের ফেরত নেবে কিনা। বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও হিন্দুরা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সংখ্যালঘু হিসাবে থাকবে- পুনরায় উছ্ছেদ অথবা নিশ্চিন্হ হয়ে যাবার অপেক্ষায়। শরণার্থীরা যদি ফিরেও যায়, বাংলাদেশ কি পশ্চিম বঙ্গের বাঙালীদের জন্য একটি আকর্ষণ হয়ে থাকবেনা? বাঙালী জাতী কি এক তৃতীয়াংশ বাঙালীকে ভারতে রেখে পরিপূর্ণ হবে? শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধান আসলে এবং ভারত কিছু জায়গা শরণার্থীদের রাখার জন্য দখল করে নিলে ( এমনকি পুরো বাংলাদেশকে ভারতের অংশ বানিয়ে নিলে) সেটা ভবিষ্যৎে খন্ডিত পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে বাঁধা হয়ে দাড়াবে। এ সমস্ত জল্পনা-কল্নার কিছু অংশ ভারতীয় সরকারের অন্দর মহলেও প্রবেশ করেছে এবং সেটা আরো নতুন নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। কেন ভারতীয় সরকার শরণার্থী সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মত জটিল সমাধানের পথ বেছে নিচ্ছে? এর যুক্তি সঙ্গত উত্তর হচ্ছে ৯ মিলিয়ন শরণার্থীদের ভরণ-পোষনের ব্যায় বিশ্ব ব্যাঙ্কের হিসাব অনুযায়ী বছরে ৭০০ মিলিয়ন ডলার-যা ভারতের বার্সিক বাজেটের ছয় ভাগের এক ভাগ। এই বিপুল ব্যায় বহন করা ভারতের জন্য অসম্ভব এবং বিকল্প কোন সমাধানের রাস্তা না পেয়ে ভারত মনে করছে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে এই শরণার্থীদের ভরন-পোষণের ভার তাকে আর নিতে হবেনা।
শরণার্থী শিবিরে যাবার আগে আমার আশা ছিল যে সেখানকার অবস্হা কলকাতার চেয়ে খারাপ হবেনা। আমার ধারণা ছিল যে মানুষের দুঃখ-দূর্দশার একটা সীমা থাকে, একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের পর মানুষ আর বেঁচে থাকতে পারেনা। আমার ধারণা ভুল ছিল। কলকাতার গরীবেরা কিছুটা হলেও ভাল আগামী দিনের আশায় থাকতে পারে। কলকাতার একজন কুষ্ঠরোগী মৃত্যুশয্যায় বসে ব্যাথায় কাঁতরাতে পারে। শরণার্থী শিবিরে মানুষের সেই অবস্হাও নেই। পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি সম্পূর্ণরুপে ভারতের সাথে বাণিজ্য এবং পশ্চিমের দয়ার উপর নির্ভরশীল। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্বেও পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ নানা রকম ভাবে বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছিল। এই অবস্হার অবসানে আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের দৃশ্যত কিছু চেষ্টা ছিল। পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ রাখার স্বার্থে তিনি ৬৯ সালে সিদ্ধান্ত নেন যে সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে এবং ১৯৭০ সালে ২৩ বছর পর পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী প্রচারের সময় শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধিনন আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যেই অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে প্রচারণা চালায় এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব আসনেই জয় লাভ করে। অন্য দিকে পান্জাবী ভুট্টোর নেতৃত্বে পাকিস্তান পিপলস পার্টি কোন রকমে পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। নির্বাচনের পর পরই এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে আওয়ামী লীগ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এবং তার ভিত্তিতে সরকার গঠন করবে। ভুট্টো সরাসরি জানিয়ে দেন যে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ এবং পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তান এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির সমান অংশিদারিত্ব না থাকলে তার দল সংসদ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেনা। শেখ মুজিব ভুট্টোর এই বক্তব্যকে পূর্ব পাকিস্তানে ঔপনিবেশিক শাসন চালুর প্রচেষ্টা হিসাবে অভিহিত করেন। ইয়াহিয়া খান গণতান্ত্রিক শক্তির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চাইলেও এটা আশা করেননি যে গণতান্ত্রিক দলগুলো এত শক্তিশালী হয়ে উঠবে। নির্বাচনে দেশ স্পষ্টতই স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে মত দেয় এবং ইয়াহিয়া খান উপলব্ধি করেন যে জনরায় মেনে নিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালীর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। পশ্চিম পাকিস্তানী হিসাবে ভুট্টোর মত তার পক্ষেও বাঙালীর হাতে ক্ষমতা চলে যাবে এটা মেনে নেয়া কঠিন ছিল, কারণ তিনি বুঝতে পারছিলেন এর ফলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ঐক্যে ফাটল ধরবে। সাধারণ পরিষদের অধিবেশন স্হগিত করে তাই তিনি অবস্হান নরম করার জন্য মুজিবের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ দেখা দেয়। বিক্ষোভ দমনে ইয়াহিয়া সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেন এবং তাদের মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালানোর অনুমতি দেন। প্রতিবাদে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং ফলশ্রুতিতে কয়েক মাসের মধ্যে দুই লক্ষ হিন্দু-মুসলমান প্রাণ হারায় এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুৎ হয়।
এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে যেতে যেতে আমি আমি শুনছিলাম এবং পড়ছিলাম যে কেন এবং কিভাবে ইয়াহিয়া খান রাজনৈতিক সমস্যার সামরিক সমাধানের পথ বেছে নিলেন। কেউ কেউ ভুট্টো এবং তার সহযোগীদের নিষ্ঠুরতাকে এর জন্য দায়ী করেন, সেনাবাহিনীতে ভুট্টোর ব্যাপক সমর্থন ছিল। অন্যরা মুজিব এবং তার সহযোগীদের ধৈর্যের অভাবকে দায়ী করেন, যারা একটি রাষ্ট্রের শক্তিকে যথেষ্ঠ গুরুত্ব না দিয়ে স্বাধীনতার দাবীতে রাস্তায় নেমে গিয়েছিল।অনেকেই এটা মনে করেন যে পশ্চিম পাকিস্তান বিনা প্রতিরোধে নিজেদের ক্ষমতা ছেড়ে দেবে, এরকম চিন্তা করাটাই ছিল অবাস্তব।আরেকটি মতবাদ হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ক্ষোভ এতই বেশী ছিল যে ৭০ সালে প্রলয়ঙ্করী একটি সাইক্লোনে ২,৫০,০০০ মানুষ মারা যাবার পরেও তারা নির্বাচন থেকে পিছনে হটার কথা চিন্তা করেনি। তারপরেও অনেকেই ইয়াহিয়াকে পরিস্হিতির গুরুত্ব অনুধাবণ করতে না পারার জন্য এবং বাঙালীদের সাথে স্বায়ত্বশাসনের রুপরেখা নিয়ে আরো আলোচনা চালানোর চেষ্টা না করে সরাসরি তাদের উপর আক্রমণ চালানোর জন্য দায়ী করেন। যদিও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার পর সেনাবাহিনীর কাছে ফেরত যাওয়া ছাড়া ইয়াহিয়ার আর কোন উপায় ছিলনা। সামরিক অভিযান চালানোর পেছনে যেই কারণই থাকুক না কেন ভারত মনে করে এর কারণে পাকিস্তানের ভেঙে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে। সামরিক অভিযানের কারনেই বাঙালীর স্বায়ত্বশাসনের দাবী স্বাধীনতার দাবীতে রুপান্তরিত হয়েছে এবং বাঙালী গেরিলাদের বিজয় এখন মাত্র সময়ের ব্যাপার।
—————-