২ কার্তিক ১৩৭৮ বুধবার ২০ অক্টোবর ১৯৭১
বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকারের বারটি মন্ত্রণালয়/দফতর এবং পাঁচটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মের অগ্রগতি সম্বন্ধে মন্ত্রী পরিষদ এক প্রতিবেদনে প্রণয়ন করেন। এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সচিব ও কর্মকর্তাদের নিরলস কর্মের অগ্রগতি ও সাফল্যের লেখ চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। (৩ খঃ পৃঃ ১৭৬)
ফরাসী পত্রিকা ‘লা মুদে’ সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইয়াহিয়া কাহ্ন বলেন, আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ নেব। ভারত দুস্কৃতি কারীদের আশ্রয় না দিলে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন ও অর্থনীতি পঙ্গু করার জন্য ক্রমাগত ভাবে অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ না করলে এপ্রিল মাস থেকে স্বাভাবিক অবস্থা শরণার্থী প্রত্যার্বতন সম্পূর্ণ হতো। (ইত্তেফাক)
কলকাতায় আওয়ামী লীগের কার্যকারী কমিটির বৈঠক শুরু হয়। জুলাই মাসে শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কার্যকারী কমিটির প্রথম বৈঠকের প্রায় সাড়ে তিন মাস ব্যবধানে এই দ্বিতীয় বৈঠক।
জাতি সংঘের মহাসচিব উথান্ট ভারত ও পাকিস্তানের কাছে এক পত্রে পূর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘ পরিদর্শক প্রেরণের জন্য প্রশ্ন উথাপন করেন। জেনারেল ইয়াহিয়া এই উদ্যোগের স্বাগত জানায়।
মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল ঢাকা ষ্টেটব্যাংকের ‘ হায়র ট্রেইন্ড কমাণ্ডো’ দের ওপর হামলা চালায়। দু’জন কমাণ্ডো নিহত হয়। এটা গেরিলাদের ষ্টেটব্যাংকে দ্বিতীয় অপারেশন ছিল।
সামরিক শাসকের বেসামরিক খাদ্য মন্ত্রী নওয়াজেশ আহমেদ আলম ডাঙ্গায় বলেন, সীমান্তের ওপারের অসৎ উদ্দেশ্য প্রনোদিত প্রচারণায় কর্ণপাত না করার উপদেশ দেন। (দৈঃ পাঃ)
প্রাদেশিক মন্ত্রী ও কে এস পি নেতা এ এস সোলায়মান বলেন, বিশ্বের কোন জাতিই পাকিস্তানকে ভাঙ্গাতে পারবে না। (দৈঃ পাঃ)
প্রতিরাতে বরিশালে পাকবাহিনী অসংখ্য লোককে হত্যা করেছে। দিনের বেলায় ট্রাক ভর্তি করে লোক ধরে আনতো। প্রথম দিকে গুলি করে হত্যা করতো পরের দিকে জবাই করেছে। অসংখ্য লাশ নদীতে ভাসাতে দেখা যায়। ইমদাদুল হক মজুমদার (অধ্যক্ষ, ব্রজমোহন কলেজ) বলেছেন, আমার ধারণা ৭৫০০০ শত লোককে পাক-বাহিনী হত্যা করেছে। অসংখ্য মেয়ে ধর্ষিতা হয়েছে বরিশাল শহরে।
সামরিক শাসকের বেসামরিক তথ্যমন্ত্রী মুজিবুর রহমান বুদ্ধিজীবীদের বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জনমত গঠন করে ভারতীয় হামলার মুখে মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবার আহ্বান জানিয়েছেন। (দৈঃ পাঃ)
পাকসেনারা লঞ্চ নিয়ে আরিচাঘাট থেকে নাজিরগঞ্জ বাজার (পাবনা) আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পাকসেনাদের এই অপারেশন রাজাকারদের ভূমিকা ছিল প্রধান। উল্লেখ গণপরিষদ সদস্য তফিজুদ্দিন আহমদ মাষ্টারের নেতৃত্ব শুরু থেকে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। তিনি কচুয়াডাঙ্গা যুব অভ্যর্থনার শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক করেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব উথাণ্ট তার সদর দফতরের ভারতের রাষ্ট্রদূত সমর সেন ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আগার শাহীর সাথে পৃথক বৈঠকে বাংলাদেশ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা হয়।
হিলি সীমান্ত মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলে।
কাজলায় রাতে একটি শিল্পকারখানা প্রহরারত রাজাকারদের সাথে মুক্তিবাহিনীর গুলি বিনিময়।
‘পুর্ব পাকিস্তান’-এর জাতীয় পরিষদের ৭৮ টি শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনে ১৯২ জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র দাখিল।
বাংলাদেশের খ্যাতনামা সাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ মৃত্যুতে মুজিব নগরে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের এক শোক সভা অনুস্থিত হয়। সভাপতিত্ব করেন শওকত ওস্মান। মরহুমের জীবনী ও সাহিত্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন জনাব আব্দুল গাফফার চৌধুরী, শ্রী সন্তোষ গুপ্ত ও জনাব ফজলুর রহমান। সভায় বাংলাদেশ সরকার, বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে প্রস্তাব গৃহিত হয়। (সাপ্তাহিক জয় বাংলা ২৯,১০৭১) যুগোশ্লোভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোর ভারত সফর শেষে প্রকাশিত এক যুক্ত ইশতেহারে ঘোষণা করা হয় যে, দু’দেশেই মতৈক্যে পৌছেছে যে, জনগণের ভোট নির্বাচিত বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা রাজনৈতিক সমাধানই এ এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ মুজিবের মুক্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের শর্তহীন মুক্তির কথা পুনরায় উল্লেখ করেন। (বিডি-১ পৃঃ ১৬৬)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী