You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.22 | ৪ কার্তিক ১৩৭৮ শুক্রবার ২২ অক্টোবর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

      ৪ কার্তিক ১৩৭৮ শুক্রবার ২২ অক্টোবর ১৯৭১

প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে তার বেতার বানীতে বলেছেন গত বছরের রমজান মাসে বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ এক প্রলয়ঙ্করী প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করেছে আর এবারের রমজান মাসের আমরা সাতমাস আগে সূচিত এক আকস্মিক আক্রমনের বিরুদ্ধে বিরতিহীত পাল্টা আক্রমণ পরিচালনা করছি, যে আক্রমণ আমাদের উপর এসেছে এক পশু প্রকৃতির সামরিক জান্তার থেকে একান্তই অতর্কিতে। একটি স্বাধীন দেশ ও স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্নপ্রতিষ্ঠার জীবন যুদ্ধেই দেশ রণাঙ্গন বাংলার ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারী পুরুষের জন্যে এবারের রমজান মাসের পূণ্যময় শপথ রূপে অভিষিক্ত হয়েছে। (একাত্তুর রণাঙ্গন পৃঃ ৩১৭)

    পাকসরকার আওয়ামী লীগ পরিষদ সদস্যদের অনুপস্থিতিতে উপনির্বাচন আহবান করে। পনের জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এই তথা কথিত নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে ৫ জন পিডিপি ৫ জন জামাতে ইসলামী ২ জন কনভেনশন মুসলীম লীগের ২জন নেজামে ইসলামের ও ১ জন কাইয়ুম লীগের। (পরিশিষ্ট তালিকা)

-পাক বাহিনীর সীমান্ত থেকে ভারতের পাঁচ মাইল অভ্যন্তরে কমলপুর গ্রামের উপর গোলা বর্ষন করে। যুদ্ধের উস্কানি মূলক তৎপরতা বহু সংখ্যক বেসামরিক ভারতীয় নিহত হয়। (১০:২৯)

-মাহে রমজানের শুরু। আকাশ ঘন মেঘাছন্ন, বিদ্যুৎ বজ্র গর্জনে ভয়ালরূপ বাংলা। থমথমে আবহাওয়ায়। (একাত্তুরের ডাইরী সুফিয়া কামাল পৃঃ৯১)

-শত ব্যস্ততার মধ্যেও মুজিব নগরে মুসলিম কর্মকর্তা রোজা পালন করেছেন। মুক্তি যোদ্ধা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গুলো থেকে ও জাতীয়/প্রাদেশিক পরিষদ পরিষদ সদস্য সহ বহু মুক্তিযোদ্ধা রোজা পালন করেন।

-সোভিয়েত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলাই ফিরুবিন দিল্লী পৌঁছেন। ভারত সোভিয়েত পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আলোচনা হয় বলে জানা যায়।

-মেজর খালেদ মোশাররফ কসবায় পাকবাহিনী সঙ্গে তাঁর ‘কে’ ফোর্সের সরাসরি সংঘর্ষে গুরুতরভাবে আহত হন। ‘কে’ ফোর্সের কম্যাণ্ড গ্রহণ করে মেজর সালেহ। উল্লেখ্য ২ নং সেক্টরে ৩৫ হাজার গেরিলা সহ নিয়মিত তিনটি বেঙ্গল ব্যাটেলিয়ন। এই সেক্টরের অধীনে ছিল, ঢাকা,কুমিল্লা, ফরিদপুর ও নোয়াখালী। সেক্টরধীন শালদানদী, গঙ্গা সাগর, ফেনী, মিয়াবাজার, চৌদ্দগ্রাম এবং কসবায় ৩০ মার্চ থেকে সবসময় পাকবাহিনীদের সাথে সংঘর্ষ লেগেই থাকত।

-পাকসেনারা রাজশাহীর গগণবাড়িয়ার অপারেহসন করে। তারা ত্রিমুখী অভিযান চালিয়ে ১০/১২ জন লোককে মাটি চাপা দিয়ে হত্যা করে। শিশুদেরকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে নারীদেরকে সন্তান স্বামীর সামনে শ্লীলতা হানি করে।

-অস্থায়ী রাষ্ট্র প্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহ কমিটি এক জরুরী বৈঠকে ইয়াহিয়া চক্র কর্তৃক পূর্ব বাংলার উপনির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রহসনের ধৃষ্টতাকে সমুচিত জবাব দেয়াড় দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করা হয়। এক প্রস্তাবে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের বিশজন মৃতের প্রতি ধোঁকাবাজি বলে বর্ণনা করা হয়। প্রস্তাবে আরও বলা হয় যে, স্বাধীন সার্বভৌম বংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোন হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। (বিডি- ২ পৃঃ ৫৯)

-রাওয়ালপিণ্ডিতে ভুট্টো ওয়াহিয়া বৈঠক। ঢাকায় পিপলস পার্টির সহ সভাপতি মিয়া মাহমুদ আলী কাসুরী এক সংবাদ সম্মেলনে বলে মুক্তিযোদ্ধারা উপনির্বাচন্ন অংশগ্রহণে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জীবনের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই হুমকি অব্যাহত থাকলে এবং পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে পিপিপি উপ-নির্বাচন বর্জন করবে। তিনি প্রার্থীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রদানের দাবী জানান।

-পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড় সীমান্তে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

-জাতিসংঘ মহাসচিব উত্থান্ট ভারত ও পাকিস্তানের কাছে দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা হ্রাসের জন্য জাতিসংঘকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগের জন্য নতুন প্রস্তাব করেন।

-The Press Trust of India reported (on Oct.22) that Indian Army reservists and certain categories of Navy and Air Force reservists had been called up. In view of the tense situation in the are the Union territory of Tripura was placed under Presidents rule for four months on Nov 1. (KCA pp 24991)

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী