বাংলার বাণী
ঢাকা: ১০ই অক্টোবর, বুধবার, ২৩শে আশ্বিন, ১৩৮০
আদম শুমারী
আগামী বছরের ১০ই ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশব্যাপী আদমশুমারির কাজ শুরু হবে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ কাজ চলবে আদমশুমারি যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় তারই প্রারম্ভিক প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে আয়োজিত ফিল্ড সুপারভাইজার পদের দু’দিনব্যাপী আদমশুমারি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আব্দুল মালেক উকিল আদমশুমারির কাজে রাজনৈতিক দল মত নির্বিশেষে সকলের কাছ থেকে সাহায্য পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আদম শুমারির কাজে সকলেই সহযোগিতা করবেন। জনাব আব্দুল মালেক উকিল বলেন বাংলাদেশে এতদিন পর্যন্ত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রভৃতি সব কাজই অনুমানের ভিত্তিতে করা হয়েছে। আদম শুমারির কাজ সু-সম্পন্ন হলো প্রকৃত তথ্যের উপর ভিত্তি করে সকল কাজ সম্পাদনা করা সম্ভবপর হবে।
নির্ভুল আদম শুমারি যে দেশের প্রকৃত উন্নয়নের সহায়ক এ কথার আর আজকের দিনে বিস্তারিত বিশ্লেষণ এর অপেক্ষা রাখে না কি আছে কি নেই-তা আদম শুমারির মাধ্যমে জানা সম্ভব। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সম্পূর্ণভাবে জনসম্পদের উপর নির্ভরশীল। জনসম্পদের সঠিক তথ্য জানার জন্যেই সে অনুযায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভবপর। অন্যথায় কাগজি পরিকল্পনা প্রণয়ন আর হাওয়ায় গদা ঘুরান একই কথা।
পাকিস্তানি আমলে দেখা গেছে ভুল তথ্য মনগড়া পরিসংখ্যান ইত্যাদি ফলে কাগজের গরু কেতাবেই পাওয়া গেছে, গোয়ালে পাওয়া যায়নি। উনিশ একষট্টি সালে অনুষ্ঠিত আদমশুমারিতে এ কারণে নির্ভুল বলা চলে না। তৎকালীন আদম শুমারি ছিল অসম্পূর্ণ ও অনির্ভরযোগ্য। তাছাড়া বিগত স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক হিসাব এখনও জানা যায়নি।
পূর্বাপর সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে সরকার আদম শুমারির কাজ শুরু করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অত্যন্ত সময়োপযোগী।
আমাদের চারটি মৌলিক আদর্শের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন ও একটি এ দেশের শতকরা নব্বই জন মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে, অশিক্ষা-কুশিক্ষার শিকার হবে এই পচা পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থাকে মেনে নিতে বাংলাদেশের মানুষ রাজি নয়। আমাদের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই ছিল সকল আসামীকে দূরীভূত করা। সুতরাং বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্খা কে বাস্তবায়িত করার জন্য সরকার এগিয়ে এসেছেন। শতকরা আশি ভাগ কলকারখানা, ব্যাংক-বীমা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্যকেই সামনে রেখে। কিন্তু এতো হল প্রাথমিক পদক্ষেপ। ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হলে দেশের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সোজা ভাষায় জনসম্পদের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে আর তাই আমাদের জনসংখ্যা, সম্পদ, চাষাবাদের জন্য জমি সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ সর্বাগ্রে প্রয়োজন। আদম শুমারির কাজ সু-সম্পন্ন হলো তারই সঠিক চিত্রটি আমরা পাব।
প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজনীয় যে, আদমশুমারির কাজকে সুষ্ঠুভাবে সুসম্পন্ন করা একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এ দায়িত্ব আমার, আপনার ও সকলের। তাই সকল দেশপ্রেমিক নাগরিক কে এগিয়ে আসতে হবে সাহায্য সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করতে।
পুরানো সেই সুরে-
মধ্যপ্রাচ্যে আরবদের অগ্রাভিযান এর সামনে হানাদার ইসরাইলের যখন নাভিশ্বাস শুরু হয়েছে, তখন অনেক অঘটন ঘটন পটীয়সী নিক্সন সাহেব যেন ‘পুরনো সেই সুরে কে যেন ডাকে মোরে’ বলে মাঠে নেমেছেন। গত সোমবার তিনি তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের সামনে বেহাল-বেচইনভাবে মুখ গোমরা করে বলেছেন মধ্যপ্রাচ্যে হানাহানি থামাতে তার দেশ সমস্ত রকমের প্রয়াস নিতে ইচ্ছুক। এতেই তিনি ক্ষান্ত হননি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে পরিষদের জরুরি অধিবেশনও আহ্বান করার ব্যবস্থা করেছেন। যদিও মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান দেশগুলোর কেউ এমন আহ্বান জানায়নি। শুধু তাই নয় নিক্সন সাহেব তার প্রধান উপদেষ্টা ডঃ হেনরি কিসিঙ্গারকে দিয়ে আবার সৌদি আরবের বাদশা ফয়সল এর কাছে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান যুদ্ধ কালীন পরিস্থিতি প্রেক্ষিতে নিক্সন সাহেব ও মার্কিন সরকারের এই কূটনৈতিক তৎপরতা আরেকটি কথা মনে করিয়ে দেয়। একাত্তুর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে বর্বর পাকিস্তানীরা যখন এদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা চালাচ্ছিল নিক্সন সাহেব তাঁর সরকার তখন তার বিরুদ্ধে একটি কথাও তো বলেনইনি। পরস্থ সমরাস্ত্র পাঠিয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের মদদ যুগিয়েছিলেন। শেষটায় মিত্র মুক্তি বাহিনীর সম্মিলিত আঘাতের কাছে হানাদার বাহিনী যখন পূর্ণদস্ত হচ্ছিল, তখন তিনি এমনিভাবেই নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন ডেকে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য পুরানো সুরেই ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু সোভিয়েত ভেটোর ফলে তার সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে যায়।
অনুরূপভাবেই ইসরাইল যখন দীর্ঘ ৬টি বছর অন্যায় ভাবে আরব এলাকা দখলে রাখে, নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবও কার্যকরী করতে অসম্মতি জানায় নিক্সন সাহেব বা তার সরকার সে ব্যাপারে ইসরাইলকে তো কোন কথাই বলেননি-অধিকৃত গাজা সিনারিও গোলাম এলাকার আরবদের উপর ইসরাইলের নির্মম নির্যাতনে আত্মমানবতার হাহাকারে যখন দিগন্ত প্রকৃত হচ্ছিল, তখন ইসরাইলকে সে কাজ থেকে বিরত করার কোন চেষ্টাই তো তারা করেননি-আর আরবরা যখন হানাদার ইসরাইলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পর্যুদস্ত করছে হৃত এলাকা পুনরুদ্ধার করছে, তখন যেন নিক্সন সাহেবের আঁতে ঘা লেগেছে। ছুটে গেছেন নিরাপত্তা পরিষদের কাছে ইসরাইলকে বাঁচাতে। শুরু করেছেন কূটনৈতিক চক্রান্ত। কিন্তু কি লাভ এতে নিক্সন সাহেবের। তেলের রাজনীতির পিচ্ছিল পথে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এখন নিম্নগামী। এখনো সময় আছে সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতা আর আগ্রাসী নীতি ত্যাগ করে বিশ্ব মানবতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন।
দেশগড়ার সংগ্রামে মহিলা সমাজ
গত রোববার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা শাখা সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নবনির্বাচিত দু’জন মহিলা প্রতিমন্ত্রী শিক্ষা ও সংস্কৃতি দপ্তর এর বেগম বদরুন্নেসা আহমদ, সমাজকল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বেগম মুর্শেদ এবং আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের হুইপ বেগম রাফিয়া আখতার ডলির দলের সম্মানে সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয় সেখানে একটি ব্যাপারে সকলেই একমত ছিলেন যে এই নবজাত দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য সন্তানদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা ও তাদের মনে দেশপ্রেম’ জাগ্রত করার ক্ষেত্রে মহিলাদের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
বাস্তব দৃষ্টি নিয়ে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হলে অধুনা যে সকল যুব সমস্যা দেখা দিচ্ছে তার প্রেক্ষিতে নারী সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য অন্যদের চেয়ে কোন অংশেই কম বলে গণ্য করা উচিত নয়। সুষ্ঠুভাবে সন্তানকে গড়ে তুলে জাতীয় বিপর্যয় প্রতিরোধ করা এবং ভবিষ্যতের সুখী ও সমৃদ্ধ জাতি গঠন করার উদ্দেশ্যে পুরুষ সাথীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আজ মহিলাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয় এই সভায়।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, দেশের জনসংখ্যার অর্ধাংশই। নারী তাই সমাজে যদি জ্ঞানের ও সমৃদ্ধির আলো বিতরণ করতে হয়, তাহলে জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের সম্মান অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশেষ করে দেশে এখন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে এগুচ্ছে সেই দিক থেকে মহিলাদের মধ্যে প্রেরণা ও সকল প্রকার সংস্কার মুক্তি অনলস সংগ্রামে আজ মহিলা কর্মী ও নেত্রীর বিশেষ প্রয়োজন আছে।
দেশে আজ সার্বিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। যারা এই অঘটনগুলোর নায়ক তারাও। মায়ের সন্তান কাজেই এখানেও মহিলাদের গুরু দায়িত্ব আছে। অর্থাৎ শিক্ষা-দীক্ষা, নৈতিক আচার-আচরণ ও নাগরিকতা বোধন ঘটানোর সামগ্রিক আয়োজনে নারী সমাজকে আজ যথার্থই বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না।
আমাদের সৌভাগ্য যে, বাংলাদেশের নারী সমাজের সংগ্রামী ভূমিকা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পূর্ণ সচেতন। দু’জন মহিলা প্রতিমন্ত্রী নিযুক্তির মধ্য দিয়ে তাই প্রতিফলিত হয়েছে। প্রথমতঃ উচ্চপদে মহিলা নিয়োগ করে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নব ঐতিহ্যের সূচনা করলেন, দ্বিতীয়তঃ দেশের নারী সমাজের জন্য এদের অবাধ সুযোগ দিয়েও মহিলা সমাজের প্রতি অপরিসীম সহানুভূতি রাখলেন।
পরিশেষে আমরা তাই বলব, অধিকার পাওয়া টা বড় কথা নয়-অধিকারের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করাটাই আসল কথা। আমরা আশা করি দেশকে সামগ্রিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার সংগ্রামে মহিলা সমাজে তাদের দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করে যাবেন।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক