You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ৯ই অক্টোবর, মঙ্গলবার, ২২শে আশ্বিন, ১৩৮০

জাতির মৌলিক পরিচয় তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

একটি সোভিয়েত সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদল সম্প্রতি বাংলাদেশে শুভেচ্ছা সফরে এসেছেন। গত পরশুদিন আমাদের শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী প্রতিনিধি দল কর্তৃক প্রদর্শিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলের আগমনে আমাদের উভয় দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। পরবর্তীকালে উভয় দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় পরস্পরকে আরো ঘনিষ্ঠ করবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের সুমহান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অত্যন্ত প্রজ্ঞার সঙ্গে লালন করছেন। তাদের ভাস্কর্য তারা একটি আদর্শ নিয়ে গড়ে তুলেছে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের শিক্ষা-সংস্কৃতিকেও তেমনি একটি নব প্রত্যয় দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। সে কারণে সোভিয়েত জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হওয়া বাঞ্ছনীয়। দু দেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মধ্য দিয়েই তা সম্ভব। শিল্পমন্ত্রী সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের স্থায়ী নিবিড় বন্ধুত্ব কামনা করেন।
বর্তমান বিশ্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন সমৃদ্ধি, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অন্যতম মহান দেশ। সোভিয়েত ইউনিয়নের সুমহান আদর্শ ও অভিজ্ঞতা আমাদের আজকের নতুন সমাজ গঠনের পাথেয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের কালে সোভিয়েত জনগণ ও সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার কথা এ জাতি কোনদিন ভুলতে পারবে না। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত রাশিয়া আমাদের দুঃখ কষ্টের সাথী। আমাদের দেশ গড়ার সংগ্রামে সে অন্যতম প্রধান বন্ধু। সেই বন্ধু সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে সম্প্রতি যে সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশে এসেছে আমরাও তাকে স্বাগত জানাই। আমরা বিশ্বাস করি সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ায় সুপ্রতিষ্ঠিত যে শিক্ষা ও সংস্কৃতি রয়েছে তার থেকে আমাদের জ্ঞান আহরণ করা প্রয়োজন। বহুকালের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও দীর্ঘদিনের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে তা অনন্য এবং বিশ্বব্যাপী তার আবেদন প্রসারিত। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্বে একটি সাংস্কৃতিক বন্ধুত্বের মধ্যে দিয়ে কালাতিক্রম করেছে। পাকিস্তানি শোষক শ্রেণী তাদের সংস্কৃতি ও শিক্ষাকে এদেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। বহু সংগ্রাম ও রক্তক্ষরণে মধ্য দিয়ে সেই বন্ধ্যাত্ব আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের প্রগতিশীল জনমানসের একটি আদর্শ নির্ভর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গড়ে তুলতে প্রয়াসী। সরকারও এ ব্যাপারে সমপরিমাণ আগ্রহী। আমরা মনে করি একটি আদর্শ জাতির সত্যিকারের পরিচয় তার সংস্কৃতির মধ্যে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হল একটি উন্নত জাতের মৌলিক মূলধন। বাংলাদেশকে নতুন করে নব আদর্শ সমুন্নত করতে হলে অবশ্যই সংস্কৃতি মূল্যায়ন আবশ্যক। সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সংস্কৃতির সঙ্গে তাই আমাদের পরিচয় ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান অপরিহার্য।

কানে তুলো পিঠে কুলো

কানে তুলো আর পিঠে কুলো বাঁধলে নাকি মানুষ সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে যান। শ্রবণশক্তি ও চেতনা শক্তির দুয়ের বিলুপ্তিতে তিনি তখন মহানন্দে কালাতিপাত করতে পারেন। রাজধানীর বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ অন্তত এদিক দিয়ে নির্বিকার ও নিশ্চিন্ত আছেন। কেননা কানে তুলো আর পিঠে কুলো দিয়ে সমালোচনা আলোচনার বাইরের জগতে বর্তমানে বিচরণ করছেন। তাই যদি না হবে তাহলে পত্র-পত্রিকায় এত লেখালেখি সত্ত্বেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সুরাহা হচ্ছে না কেন? বিদ্যুৎ নিয়ে বর্তমানে যে অনিয়ম চলছে সেই অনিয়মকে নিয়ম ধরেই কতৃপক্ষ এগুচ্ছেন না কেন? তারা তো দয়া করে এটা বলতে পারেন যে কোন এলাকায় কোন সময় বিদ্যুৎ থাকবে না। সেইমতো নাগরিকরাও তৈরি হতে পারেন। কিন্তু তা তো হচ্ছে না। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ বিদ্যুৎ মুহূর্তের ঝিলিক মেরে বিলীন হয়ে যাবে তারপর কখন আসবে আসবে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই।। আল্লাহ ভরসা করে গালে হাত দিয়ে বসে থাকা ছাড়া তখন আর কোন উপায় থাকে না।
একথা সকলেই জানি যে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বৈদ্যুতিক মাল-সামানা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক। বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় মেশিন বা যন্ত্রাংশ আমদানি করে তা এখনো পূরণ করা সম্ভব হয়নি। প্রশ্ন হলো সমস্যা যেমন আছে তেমনি তার সমাধানও আছে। কথায় বলে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। আসল কথা হল শুধুমাত্র সাধ থাকলেই তো হবে না তার সঙ্গে সাধনাও চাই। এ শেষের জিনিসটির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
রাজধানীর বাসিন্দাদের বসতবাড়িতে যেমন অন্ধকার ডিগবাজি খায় তেমনি রাস্তাগুলো অন্ধকারে ডুবে থাকে। দুষ্টু লোকে বলে থাকেন, ওয়াবদা কতৃপক্ষের নাকি রাজধানীর রাতের গুন্ডা, চোর, বদমাশ, ছিনতাইকারী আর হাইজ্যাকারদের সঙ্গে একটা গোপন আঁতাত আছে। তাই যদি না হবে তাহলে কতৃপক্ষ নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা বিধানের জন্য অন্তত রাস্তার বাতি গুলো জ্বালাবার ব্যবস্থা করতেন। নতুন ঢাকা আর পুরানো ঢাকা সর্বত্র একই অবস্থা। তবে এ ব্যাপারে পুরানো ঢাকার অবস্থায় সবচেয়ে করুণ। ঘরেও বাতি নেই রাস্তায়ও নেই। নেই-এর কারণ যদি জানতে চান তাহলে কোন সদুত্তর পাওয়া যাবেনা। ওটা ‘টপ সিক্রেট’ এর মতোই ওয়াবদা কর্তৃপক্ষের মনের নিভৃত গহীন কন্দরেই থাকে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে নাগরিক জীবনে যেহেতু দুঃসহ দুর্বিসহ যন্ত্রনা সৃষ্টি হয়েছে তার অবসান কবে হবে বা কিভাবে; এবং বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কানে তুলো পিঠে কুলো বাধার নীতিটি পরিত্যাগ করে বর্তমান অচলাবস্থার অবসান করতে এগিয়ে আসবেন কি? রাজধানীর নিরীহ-নিরপরাধ ও বিদ্যুৎ সংকটে জর্জরিত নাগরিক বৃন্দের মনে এই একটিমাত্র প্রশ্নই আজকের দিনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা চোরাচালানীদের অশুভ তৎপরতা

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত লন্ডন প্রবাসী বাঙ্গালীদের প্রেরিত ৮২ কোটি টাকার মধ্যে ৬০ কোটি টাকায় চোরাপথে এসেছে। গত পরশু বাংলার বাণীতে খবর বেরিয়েছে। কিছুদিন আগে স্থানীয় আরেকটি দৈনিকেও এ ধরনের খবর বেরিয়েছিল।
প্রকাশিত খবর অনুসারে জানা যায়, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রাপকের কাছে টাকা প্রেরণে বিলম্ব, কালোবাজারে পাউন্ডের অত্যাধিক মূল্যবৃদ্ধি ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের গরিমশি এবং কতিপয় ব্যাংক কর্মচারীর দুর্নীতি এবং একই সাথে বেআইনি মুদ্রা চোরাকারবারীদের বর্ধিত তৎপরতার দরুন লন্ডন প্রবাসী বাঙ্গালীদের অনেকেই বর্তমানে সরকারিভাবে স্বদেশের টাকা না পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা চোরাকারবারীদের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের লাভজনক মনে করছেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা চোরাকারবারি নতুন নয়। বিশেষ বিশেষ কতগুলো জায়গায় এদের ক্রিয়াকর্ম সীমিত। অথচ এদেরকে দমন করা যায় না কেন? প্রকাশিত খবর অনুসারেই জানাজায় প্রবাসীরা সরকার প্রবর্তিত ব্যবস্থার অধীনে টাকা পাঠানোর চাইতে চোরাচালানীদের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর অধিক সহজ এবং লাভ ও সুবিধাজনক মনে করছেন। এর কারণ ব্যাংকের কর্মচারীদের গরিমশি, কাজে গাফিলতি, দুর্নীতি ইতাদি।
অর্থনৈতিক ক্রিয়া কর্মের চাবিকাঠি হচ্ছে ব্যাংক। সেই ব্যাংকেই যদি ত্রুটি ঘটে তাহলে তার প্রতিক্রিয়া বাইরের প্রতিফলিত হয় নিতান্তই স্বাভাবিক। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সামান্যতম ত্রুটি আন্তর্জাতিক চোরাচালানিদের আন্তরিক কাম্য। কাজেই তারা সর্বদা সে সুযোগ এর সন্ধানে ওঁৎ পেতে থাকে।
স্বাধীনতার পর থেকেই এ পর্যন্ত যেখানে ৮২ কোটি টাকায় সরকারি ব্যবস্থাধীনে আসা উচিত ছিল সেখানে মাত্র ২২ কোটি টাকা এসেছে। এবং বাকি সবই চোরাপথে এসেছে। এ থেকেই নির্ণয় করা যায় চোরাকারবারীদের তৎপরতা কিরূপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সরকার যে কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সে কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা চোরাচালানীরা বিশেষ কতগুলো স্থানে তাদের অশুভ তৎপরতা চালিয়ে থাকে এবং সরকারের তা অজানা নয়। সুতরাং আমরা মনে করি যে সমস্ত স্থানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা চোরাচালান হয়ে থাকে যেমন বিমান ও সমুদ্র বন্দর, এলাকা বড় বড় হোটেল, সীমান্ত এলাকায় ইত্যাদিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাদের কর্মতৎপরতা কমতে পারে। তাছাড়া বিশেষ করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ ও কঠোর হতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে যারা মুদ্রা বিদেশ থেকে এদেশে পাঠান তাদেরকেও কেবল ব্যক্তিস্বার্থ সুবিধার কথা চিন্তা না করে দেশের অবস্থার কথা স্মরণ রেখে যাতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মুদ্রাদোষে পাঠানো হয় সে বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। সর্বশেষে আমরা আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করি আন্তর্জাতিক মুদ্রা চোরাচালানীদের অশুভ তৎপরতা বন্ধ করার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও সরকার অবিলম্বে কার্যকর ও কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।
নি পাকিস্তান এনেছেন না আয়ুব খাঁ এনেছেন? কোথায় ছিলেন তিনি? তাঁর নাম কেউ তখন শুনেছিলেন? আমি জানি পাকিস্তান হওয়ার পরে তিনি একজন কর্ণেল ছিলেন—এই হল অদৃষ্টের পরিহাস। তাকে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী বলেন নাই? আমার বিরুদ্ধে ৩টা রাষ্ট্র দ্রোহীতার মামলা চলছে, আরও কিছু করার জন্য তৈরী হচ্ছে। আমিও রাজী আছি।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!