You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.17 | ৩০ আশ্বিন ১৩৭৮ রবিবার ১৭ অক্টোবর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

৩০ আশ্বিন ১৩৭৮ রবিবার ১৭ অক্টোবর ১৯৭১

-ভারতে সফররত যুগোশ্লভ প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। নয়াদিল্লীতে এদিন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি শ্রী ভিভি গিরি প্রদত্ত এক ভোজ সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে মার্শাল টিটো বলেন, শরণার্থীরা যাতে তাঁদের ফেলে আশা বাড়ীঘরে ফিরে যেতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সেখানে উপযুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এটাই সমস্যার একমাত্র সম্ভাব্য ও স্থায়ী সমাধান। (সংবাদপত্র)

-রাজশাহী সীমান্তবর্তী গ্রাম বোয়ালিয়ার পাঞ্জাবী বাহিনীর দু’টি ব্যাটিলিয়ান মেজর ইউনুসের নেতৃত্ব প্রত্যুষে বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ করে। আযান দেয়ার জন্য মোহসীন মুন্সী মিনারে আল্লাহ আকবর বলেই প্রথম গুলি হয় তাকে লক্ষ্য করে। তারপর তিন ঘন্টায় ৬৫০ জনকে হত্যা করে বর্বর পাকবাহিনী। ১৬৮০ টি বাড়ী সম্পূর্ণ ধুলিসাৎ হয়। একই দিনে বোয়ালীয়া গ্রাম সংলগ্ন নরশিরা শাহপুর পলাশবোনা দরবারপুর কালোপুর ও ঘাটনগর বঙ্গেশ্বর গ্রামেও হামলা চালায় হানাদাররা সবকটি গ্রামেই অগ্নিসংযোগ করে নারীদের উপর চলে নারকীয় বলাৎকার। নির্ম্মম ভাবে নিহত হল এ সব গ্রামের ১২০০ জন নিরীহ অসহায় গ্রামবাসীকে। শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের অমানবিক অত্যাচার ও নারীরশ্লীলতাহানি মিলে সমস্ত এলাকাটাই বধ্যভূমি হয়ে দাঁড়ায়।

-ময়মনসিংহ সামরিক সরকারের বেসামরিক গভর্ণর ডাঃ মালিক রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের সাথে দেখা করে এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্তিতি নিয়ে আলোচনা করেন। (দৈঃ পাঃ ৭: ৫৮৭)

-আওয়ামীল লীগের এম পি এ মোশাররফ হোসেন (চট্টগ্রাম) মে ৪ তারিখে রামগড়ের পতনের পর ভারতে আশ্রয় নেন। তিনি বিহারের চাকুলিয়া ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিয়ে অক্টোবর-নভেম্বর ২০ পর্যন্ত মীরেশরাই, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত স্পেশাল কমাণ্ডো গুপ নিয়ে অপারেশন করেন। তিনি হরিনা সেক্টর-১ কোয়াটারে থাকতেন। উল্লেখ্য মীরেশ্বরাই থানার করের হাট ও হিংগুলি ইউনিয়ন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিভিন্ন জায়গা থেক ধৃত লোকদের পৈচাশিক কায়দায় জনৈক আজাহারুস সোবাহান জবাই করে হত্যা করতো। আনুমানিক ৫০০ জন লোককে এভাবে হত্যা করা হয়। (১৫ খঃ পৃঃ ৩২৬)

ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রী জগজীবন রাম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ইয়াহিয়ার খানের সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, পূর্ব বাংলার সমস্যা সমাধান ন হওয়া পর্যন্ত ভারত সৈন্য প্রত্যাহার করবে না। কোন বিশ্ব শক্তির কাছে ভারত মাথা নত করবে না। কোন বিশ্বশক্তির কাছে ভারত মাথা নত করবেনা। তিনি বলেন বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিবাহিনীর আর একটি আঘাতের দরকার হবে। জলন্ধরের জনসভায় শ্রীরাম আরো বলেন, শরণার্থীরা শেখ মুজিবের স্বাধীন বাংলাদেশেই ফিরে যাবেন, ইয়াহিয়ার পূর্ব পকিস্তানে নয়।

  পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর (১৩-১৭ অক্টোবর) ছাতকে তুমুল যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাকবাহিনীর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। পাকবাহিনীর করুন অবস্থা মেজর সিদ্দিকি সালিক ‘ ডুইটনেট টু সারেণ্ডার’ বইয়ে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছে। উল্লেখ্য ছাতক অভিযান থেকে ফিরে আশা ক্যাপ্টেন আকবর, ক্যাপ্টেন মহসিন, ক্যাপ্টেন হেলাল এবং তাঁদের সহ যোদ্ধাদের নিয়ে বাঁশতলাস্থ সেলসার সেক্টরের নিকটস্ত মহব্বতপুর, টেংরাটিনা, বেটিরগাও, বেতরা বোগলীবাজার নরসিমপু, লক্ষীপুর, সুলতানপুর, হরিনাপাটি এলাকায় বিজয় দিবস পর্যন্ত যুদ্ধ করেন। (মুঃ যুঃ সুঃ পৃঃ ৬৫)।

Reference: একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী