৩ কার্তিক ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার ২১ অক্টোবর ১৯৭১
দৈনিক পাকিস্তানে প্রকাশঃ ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনী আজ ও কুমিল্লা যশোর রংপুর এবং ময়মনসিংহ জেলার সিমান্তবর্তী গ্রাম সমূহের কোন রকম উস্কানি ছাড়াই গোলাবর্ষন অব্যাহত রাখে। ভারতীয় গোলাবর্ষনে কুমিল্লার ৬টি, যশোরের ৮টি, ময়মনসিংহের ২২টি এবং রংপুরের ২টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মাঝারি কামান, ফিল্ডগান এবং বিভিন্ন ধরনের মর্টার থেকে পনেরো শ’র বেশী গোলা এইসব গ্রামে বর্ষিত হয়।(দৈঃ পাঃ) ৭ঃ১৯২
যুগোশ্নাভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ ব্রজ টিটো ও ভারতের প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী এক যুক্ত বিবৃতিতে পাকিস্তানকে সাবধান করে দিয়ে বলেন, বিগত নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থহীন রায় উপেক্ষা করা হলে সমস্যা জতিলতর হতে বাধ্য। তারা আরো বলেন, সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে অবিলম্বে মুক্তিদান অবশ্য প্রয়োজন। (ডেইলি টেলিগ্রাফ)
কলকাতায় আওয়ামী লীগ কার্যকারী দ্বিতীয় বৈঠকের দ্বিতীয় দিন সভা মূলতবী রাখা হয়। মন্ত্রীসভার সদসসগণ ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলোচনার জন্য দিল্লী যাত্রা।
ইয়াহিয়া খান জাতিসংঘের পর্জবেক্ষক নিয়োগ করে। ভারত পূর্ব পাকিস্তান সীমা থেকে উভয় পক্ষের সৈন্য প্রত্যাহার করার অনুকূলে তড়িৎ সম্মতি জানান। (দি নিউ ইয়র্ক টাইমস অক্টোঃ ২৬’৭১)
৬ নং সেক্টর কমাণ্ডার এম কে বাশারের পরিকল্পনা ও নির্দেশ অনুযায়ী ডুরুঙ্গমারী হাই স্কুলস্থ হানাদার পাকবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। অভিযানে আংশগ্রহঙ্কারী দেড়’শ মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যেকের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের উষ্ণতায় আবেগ্ময় বক্তৃতার ও জয় বাংলা বাংলার জয় এবং মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি গান দু’টি বাজিয়ে শুভসূচনা জানালেন। অপারেশন সমাপ্ত করে মুক্তি যোদ্ধাদের নিরাপদে ফিরে আসা পর্যন্ত কমাণ্ডার এম কে বাশার সার্বক্ষনিকভাবে ওয়্যারলেস সেটের সামনেই থেকেছেন। উল্লেখ্য কমাণ্ডার বাশার বিমান বাহিনীর দক্ষ অফিসার হওয়া সত্ত্বেও স্থল আর্মি ব্যাটিলিয়নে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
রেডিও সুইডেনের প্রতিনিধিমিঃ এরল্যাল্ডসন ঢাকায় তিন দিন সফর শেষে দিল্লীতেব লেন, ঢাকা এখনো মৃতনগরী। সূর্যাস্তের পুর্বেই সব বন্ধ হয়ে যায়।যুবকদের রাস্তায় দেখা যায়না। সব স্থানে সামরিক প্রহারা ও তল্লাসী চালানো হয়। ঢাকার বাহিরে সফর নিষিদ্ধ ছিল। গেরিলাদের মাইন আক্রমণে চট্টগ্রামে বন্দরে জাহাজ ডুবানোর সংবাদ ঢাকায় জেনেছিলাম। বিদেশী ত্রানসামগ্রী পাকবাহিনী সিংহভাগই ভোগ করছে।
-মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার কাছে রেললাইন মুক্তিবাহিনী গেরিলা ইউনিট বিস্ফোরন ঘটায়।
-পূর্ব পাকিস্তান-এর প্রাদেশিক পরিষদের ১০৪ টি শূন্য আসনে ৩১০ জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র পেশ।
-সিলেটের কমলগঞ্জ, ময়মনসিঙ্ঘ, কুমিল্লা, যশোর ও রংপুরে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ।
-পাকিস্তান সরকারের প্রতি ভারত সরকারের কাছে এই অভিযোগ করা হয় যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।
-পাকিস্তান ও ভারত পরস্পরের বিরুদ্ধে সীমান্ত লংঘন অভিযোগ। সীমান্ত উভয় দেশের সেনাবাহিনী মুখোমুখি। ভারত সরকার কর্তৃক রিজাভ সৈন্যদে পরবর্তী নির্দেশের জন্য তৈরী থাকার নির্দেশ। (৭:১৯২)
-চট্টগ্রামের কনভেনশন মুসলিম লীগ নেতা মোজাফফর আহমদ মোখতারকে গুলি মারা হয়।
-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়াকিং কমিটি দ’দিন ব্যাপী আলোচনার পর ঘোষণা দেয়া হয় যে পূর্ণ স্বাধীনতাই বাংলাদেশের একমাত্র সমস্যার সমাধান। ওয়াকিং কমিটির প্রস্তাবে ভারত সহ বিশ্বের যে সমস্ত রাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন, তাদের প্রতি আন্তরিক কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ওয়ার্কিং কমিটি বাংলাদেশ ইয়াহিয়া চক্রের নজীর বিহীন গণহত্যা, নারী নির্যাতন, ও ধ্বংস যজ্ঞের বিরুদ্ধে মানবতার স্বার্থের সক্রিয় জনমত গঠনের জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আকুল আবেদন জানান। জাতিধর্ম নির্বিশেষে ভারতে আশ্রিত ৯০ লক্ষাধিক শরণার্থীকে সসম্মানে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বদ্ধ পরিকর।
–৩ নং সেক্টরের নেতৃত্বধীন মুক্তিবাহিনী হাবিলদার আকমল আলী এক কোম্পানী গেরিলা নিয়ে মনোহরদীতে পাকিস্তানী বেইস অবরোধ করে। এই অবরোধের সময় ইপি আর এর যে সব লোক পাকসেনাদের সঙ্গে ছিল তারা হাবিলদার আকমলের পক্ষে চলে আসে এবং যুদ্ধ শুরু হয়। কয়েক ঘন্টা যুদ্ধ স্থায়ী হয়। অবশেষে পাকবাহিনীর ২৫ জন নিহত হয়। ১১ জন মুক্তিবাহিনীর আছে আত্মসমর্পন করে। আত্ম সমর্পনকারী পাকিস্তানী ক্রুদ্ধ জনতা অনেককে পিটিয়ে মেরে ফেলে এবং ৪ জন পাকবাহিনী হেডকোয়াটারে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। উল্লেখ্য ৩ নং সেক্টরের নিয়ন্ত্রানাধীন গেরিলা ঘাঁটি গুলোছিল সে গুলো হ’ল সিলেটের চুনারুঘাট, হবীগঞ্জ এবং বানিয়াচংগ। ব্রাক্ষণবাড়ীয়া মহকুমাতে নাসির নগর, সরাই, মুকুন্দপুর এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়া। কুমিল্লাতে নবীনগর থানা। ঢাকা জেলার রায়পুরা, শিবপুর নরসিংদী, কাপাসিয়া, কালিয়াকের, মনোদরদী, জয়দেবপুর এবং কালিগঞ্জ। ময়মনসিংহ, গফরগাঁ এবং ভালুকা। কিশোরগঞ্জ মহকুমাতে কিশোরগঞ্জ কুলিয়াচর বাজিতপুর কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া এবং হোসেনপুর।
-করাচী থেকে প্রকাশিত দি ডেইলি নিউজ এর এক সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয় যে,
“Strange indeed are the utterances of the East wing Jammat-e Islami chief of late prof Ghulam Azam is trying to prove Sheik Mujibur Rahman’s
Innocence. What has actually motivated this Short of public campaigning for the defunct Awami League Leader? W heather it is some foreign prompting or purely an election gimmick only time will tell. Why such nonsensical fefence of Mujib has irked us is the fact that the Jammat-e-Islam Maulanas are once again keeping their political interest about national integrity. By saying that Mujib lacked farsightedness and did not give the call for Independence of East Pakistan or the creation of so called’ Bangladesh. Prof Ghulam Azam is trying to rewrite facts…. (BD-2 pp 39)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী