You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ৩রা অক্টোবর, বুধবার, ১৬ই আশ্বিন, ১৩৮০

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে

রাজশাহী জেলার দামনাস পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণের ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপ নিদারুণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘটনা পরিক্রমায় মনে হচ্ছে চরম পন্থীদের এই নাশকতা মূলক কার্যকলাপ দেশের সরকারের প্রতি একটি মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। ওই এলাকার ঘটনা গুলো যেমন ফাঁড়ি আক্রমণ ও কয়েকজন পুলিশের নিহত হওয়ার পর মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেলবাড়িহাট পুলিশ ফাঁড়ি থেকে চারজন পুলিশকে চরমপন্থীরা অপহরণ করেছে। উল্লেখযোগ্য, গত পরশুদিন আমাদের স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী রাজশাহীর দামনাস পুলিশ ফাঁড়ি পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। মন্ত্রীদের সঙ্গে পুলিশের আই,জি ও অন্যান্য অফিসারও ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব আব্দুল মালেক উকিল দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি গত পরশুদিন এক কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশে তিনি বলেছেন, ‘সকল শক্তি প্রয়োগ করে সমাজবিরোধী সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী অদৃশ্য দুষ্কৃতিকারীদেরকে নির্মূল করুন।’ বস্তুতপক্ষে আমাদের সরকার এবং বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বহুবার দুষ্কৃতিকারীদেরকে খতম করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন হয়নি। থানা ও ফাঁড়ি আক্রমণের ঘটনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার অধীন দামনাস ফাঁড়ি আক্রমণ ও পুলিশ নিহতের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এবং এর চাইতেও উদ্বেগজনক হলো ফাঁড়ি আক্রমণের ঘটনা চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে অন্য আর একটি ফাঁড়ির চার জন পুলিশকে অপহরণ। এটা কতৃপক্ষের ‘নির্মূল করার’ সিদ্ধান্তের মুখে একটি চপেটাঘাতস্বরূপ। এ ধরনের ঘটনার আশঙ্কা করেই বহুবার আমরা সরকারকে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছি। সমাজ বিরোধী শক্তিকে মোকাবেলার জন্য একটি সর্বাত্মক চ্যালেঞ্জ গ্রহণের বার বার আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেননি। কোন স্থানে কোন ঘটনা ঘটে যাবার পর তারা একটি প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ঢাক ঢোল পিটিয়ে জানিয়েছেন। আমরা ইতিপূর্বে বহুবার বলেছি শুধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দিয়ে দেশের এই বিপর্যয় এড়ানো যাবে না। আমরা পূর্বেও বলেছি এবং এখনও বলবো রাজনৈতিক পদক্ষেপ ছাড়া দেশের এই শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। যারা ব্যাংক ডাকাতি করছে, যারা থানা লুট করছে, যারা সাম্প্রদায়িক অনাসৃষ্টি করার প্রয়াস চালাচ্ছে, যারা ডাকাতি করছে তারা সবাই শুধু ডাকাত আর চোর নয় এদের পশ্চাতে একটি শক্তিশালী সন্ত্রাসী রাজনৈতিক মতবাদ কাজ করছে। কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক দলের আনুকূল্যে এরা এই তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। অনতিবিলম্বে তাই প্রয়োজন দেশে ব্যাপক রাজনৈতিক আন্দোলনের। একদিকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এই আভ্যন্তরীণ পশু শক্তির মোকাবেলায় রাজনীতির অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে অন্যদিকে সরকার তার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আমরা আজও সন্দিহান যে শুধু মান্ধাতার আমলের পুলিশ বি.ডি.আর দিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা রোধ করা যাবে কিনা। আমরা আশা করব সরকার আমাদের স্বদিচ্ছা পর্যালোচনা করবেন এবং প্রতিটি থানা ও ফাঁড়িতে মজবুত করে গড়ে তুলবেন। একটি সর্বাত্মক চ্যালেঞ্জ ছাড়া দুষ্কৃতিকারীদের নির্মূল করা মোটেই সম্ভব নয়। জানিনা আমাদের কর্তৃপক্ষ এ সকল সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোকে আপাতত বিচ্ছিন্নভাবে রোধ করার কথা ভাবছেন কিনা। অবশ্য আমরা এখনো আশাবাদী সরকার তার নিজের ভালোর জন্য কোন সিদ্ধান্তই অস্থায়ীভাবে গ্রহণ করবেন না বরং স্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী চিন্তা নিয়ে এগোবেন।

শেষ রক্ষা হবে কি!

বেলুচিস্তানের সাধারণ মানুষ ও তাদের জনপ্রিয় নেতাদের উপর হিংস্র ছোবল হেনেই পাকিস্তানের ভুট্টো সরকার ক্ষান্ত হননি-এবার তিনি আঘাত হেনেছেন সীমান্তের পাঠানদের ওপরও। লোক লেলিয়ে দিয়ে পাঠান নেতা খান আব্দুল ওয়ালী খানকে হত্যা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে যখন ব্যর্থ হলেন, তখন সেই ব্যর্থতার প্রতিশোধ নিতে যেন কসুর করলেন না। গত রোববার পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রবীণ রাজনীতিক বিপ্লবের জনকনায়ক অশীতিপরা বয়স্ক সাবেক লালকোর্তা নেতা এবং আব্দুল আলী খানের পিতা আব্দুল গফফার খানকে কারারুদ্ধ করলেন।
খান আবদুল গাফফার খান দীর্ঘদিন থেকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সংস্রবহিন জীবন যাপন করলেও তিনি হচ্ছেন পাঠান জাতির জীবন্ত গৌরব। মোহাম্মদ আলী জিন্নারা যখন দ্বিজাতিতত্ত্বের গোঁজামিল দিয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিলেন, খান গাফফার খান তাঁর বহু আগে থেকেই পাঠানদের জন্য আলাদা আবাসভূমি পাখতুনিস্তান গঠনের দাবি ও আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। বস্তুত পাখতুনিস্তান পাঠান জাতির হৃদয়ের আশা, বাঁচার স্বপ্ন। বিগত ২৫ বৎসর যাবৎ পাঞ্জাবি চক্রের প্রভাবাধীন পাকিস্তান সরকার এই দাবি নস্যাৎ করার জন্য পাঠান জাতির উপর চালিয়েছিল নির্মম নিষ্পেষণ। মোহাম্মদ আলী জিন্নার আমল থেকে এ যাবৎ কয়েকবারই এই বৃদ্ধ বিপ্লবের জননায়রক কারারুদ্ধ হয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি শেষ পর্যায়ের কারামুক্ত হন এবং তারপরেই দীর্ঘ ৮ বছর কিছুকাল ভারতে ও কাবুলে কাটান। ভারত সরকার তাঁকে গান্ধী শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর সমসাময়িক অন্যতম সুহৃদ এই প্রবীণ বিপ্লবী সংগ্রামী জীবন বহুবিচিত্র অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। পাঠানদের ইংরেজ খেদা আন্দোলনে গাফফার খান এর নেতৃত্ব দান ও অবদান অপরিসীম। দশ মাস আগে তার পুত্র ওয়ালী খানের নেতৃত্বে সীমান্তে সরকার গঠিত হবার পর তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন। ভুট্টো চক্রের কারসাজিতে সীমান্তের মন্ত্রিসভার পতনের পরও গাফফার দেশেই ছিলেন। তবে তার সম্পর্কে তেমন কোনো কথা শোনা যেত না। কাজেই তার গ্রেফতারের কারণটা ওয়াজ অজ্ঞাত বিশ্ববাসীর কাছে ।
তবে সীমান্তের সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের নতুন প্রজাতন্ত্রী সরকারের আবির্ভাব এবং ওই সরকার কর্তৃক পাখতুনিস্তান দাবির প্রতি ও বাস্তব সমর্থনের প্রেক্ষিতে ইরানের মার্কিন লেজুর শাহের ইঙ্গিতে যে ভুট্টো সরকার গাফফার খানকে গ্রেফতার করেছেন সে কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যেতে পারে। কিন্তু এত করেও ভুট্টো সাহেব শেষ রক্ষা করতে পারবেন কি? অন্তত ইতিহাস কিন্তু তা বলে না।

চোরাই মালের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে

সম্প্রতি রাজধানীর ঢাকা শহরের বেশ কিছু দোকানেই ‘মেইড ইন পাকিস্তান’ লেখা ছোট সাইজের ম্যাকলিন্স টুথপেস্ট বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তানের যার হ্রাসকৃত মূল্য ২৫০ পয়সা বাংলাদেশের বাজারে তার দাম সাড়ে নয় টাকা। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে, পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিলেও পাকিস্তানি দ্রব্য বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায় এবং চড়া দামে বিক্রিও হয়।
সংবাদসূত্র থেকে আরো জানা গেছে যে, টুথপেস্ট গুলো হংকং থেকে ঢাকার বাজারে এসেছে। এবং একশ্রেণীর চোরাকারবারি নানা ফিকির করে এসব দ্রব্য চোরাপথে নিয়ে এসে এদেশে বাজারে ছাড়ছে এবং বিপুল মুনাফা লুটছে।
শুধু তাই নয় সংবাদসূত্র আরও জানাচ্ছে যে, টুথপেস্ট ছাড়াও পাকিস্তানি কাপড়, চান্দা ব্যাটারি প্রভৃতিও প্রচুর আসছে এসব দ্রব্য চড়া দামেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, এই সঙ্গে চীনা মাল আসছে। নিঃসন্দেহে খবরটি সংকেত সূচক। এই সংবাদের প্রেক্ষিতে বহু কিছু ভাবার ও করবার আছে। প্রথমতঃ একশ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি চোরাপথে দ্রব্যাদি এনে বাংলাদেশের বাজারে টলায়মান স্থিতিশীলতাকে আরো সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়তঃ দেশের চোরাকারবারি ও চোরাচালানীদের চেয়ে এদের ভূমিকা অধিকতর মারাত্মক ক্ষতিজনক।
তৃতীয়তঃ পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের গোপন সূত্র ধরে এরা দেশের যেকোনো অনর্থও ডেকে আনতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের দিনেও এই যে এক শ্রেণীর দুঃসাহসী মুনাফাখোর অর্থ রোজগারের লীলায় মেতেছে, এরা কারা? জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থের জন্য সবার চোখে ধুলো দিয়ে অশরীরী আত্মার মত উদ্ধত প্রকাশে এরা হংকং, চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ চোষে বেড়াচ্ছে এবং টাকা ডুকছে এটা কেমন করে সম্ভব হচ্ছে?
একথা নিঃসন্দেহে বলা চলে এরা সাধারণ লোক নয়। আমরা জানতে চাই এরা কি পাকিস্তানের চর, না আর কিছু?
পরিশেষে গুটি কয়েক অমানুষের স্বার্থে যেন দেশের অর্থ কোনমতেই বাইরে চলে না যায় সেদিকে সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। চোরাকারবার বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে কার্যকরী পন্থা নিয়ে এই আন্তর্জাতিক চোরাকারবারীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!