৭ কার্তিক ১৩৭৮ সোমবার ২৫ অক্টোবর ১৯৭১
-সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিনে সংবাদদাতা ডান কলিন লিখেছেন, একটি বিভৎস ঘটনা হল, ঢাকার মোরাং সামরিক ক্যান্টনমেন্টে আটকে রাখা হয়েছে ৫৬৩ জন বাঙ্গালী যুবতীকে। এরা সকলেই এখন গর্ভবতী। তাদের গর্ভপাত ঘটান সম্ভব নয়। মিঃ কলিন আরও লিখেছে ৬০ হাজারের উপর বাঙ্গালী গেরিলারা এখন যুদ্ধ করছে বাংলাদেশ নানা স্থানে। তিনি গোপালগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী আস্তানা নৌকা যোগে দেখে এসেছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই কলেজের ছাত্র কয়েকজন প্রাক্তন সেনাবাহিনীর সদস্য, পুলিশ ও ইপিআর সদস্য। তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ কোন অভাব নেই। পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া আর কোন সমাধান মেনে নিতে বাঙালীরা রাজি নয় বলে মন্তব্য করা হয়।
-জাতিসংঘে চীনের অর্ন্তভুক্তির প্রশ্নে সাধারণ পরিষদে ভোট গ্রহণ কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুপস্থিত থাকে এবং চীন ৭৬-৩৫ ভোটে জয়যুক্ত হয়। তাইওয়ানকে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ এবং সাধারণ পরিষদের আসন থেকে বহিস্কৃত করে গণ প্রজাতন্ত্রী চীনকে তাঁর স্থলভিষিক্ত করা হয়।
-গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জাতিসংঘ সদস্যপদ লাভের বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম নিয়ে কলকাতার বুদ্ধিজীবিমহলে নানা জিজ্ঞাসার উদয় ঘটে। বামঘেষা বুদ্ধিজীবিদের অনেকেই বলতে শোনা যায়। ভারত এক যুগ আগে থেকেই চীনের জাতিসংঘ অর্ন্তভুক্তির চেষ্টা করেছেন।
বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবীগণ চীনের বাংলাদেশ সম্বন্ধে ভূমিকা বিব্রত হলেও স্বাগত জানায়।
-পাবনা নাজিরপুর গ্রামে শান্তি কমিটির লোকদের সরবরাহকৃত তথ্যের ভিত্তিতে পাক বাহিনী কম্বিং অপারেশন করে ৫৭ জন লোককে হত্যা করে। অসহায় নিরীহ নারীদের ওপর শ্লীলতাহানী করে।
-নারায়ণগঞ্জ কালীর বাজারে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা ইউনিট বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। (দৈঃ পাঃ)
-নারায়ণগঞ্জে সদর পোষ্টে অফিসের সামনে এক বোমা বিস্ফোরণে সাত জন নিহত হয়। কাজলায় একটি কারখানায় বোমা বিস্ফোরণে কয়েকজন রাজাকার আহত হয়।
-ময়মনসিংহের কমলপুর সীমান্ত ফাঁড়ি আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে।
-মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর ভিয়না যাত্রা।
-কুষ্টিয়া ও দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক যথাক্রমে মোঃশামসুল হক ও ফারাউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণার প্রধান সামরিক প্রশাসক কর্তৃক বরখাস্ত।
-নেপালে পাকিস্তান দূতাবাসের কূটনীতিক মোস্তাফিজুর রহমানের স্বপক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা।
-জাতিসংঘের পাকিস্তানী প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য শাহ আজিজুর রহমান গতকাল নিউইয়র্কে বলেন, জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্য অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ থেকে ভারত বিরত থাকলে পাকিস্তান ভারতীয় সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের যে আশ্বাস দিয়েছেন, এজন্য বিশেষভাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন।… সেনা বাহিনীর কথিত নির্যাতন সম্পর্কে ভারতের উদ্দেশ্য প্রনোদিত প্রচারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন বিদেশে বসবাসকারী বহু সংখ্যক বাঙালী যারা ভারতীয় প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়েছিলেন তারা এখন পাকিস্তান সরকারের গৃহীত ব্যবস্থায় যৌক্তিকতা অনুধাবন করতে পেরেছেন। তিনি বলেন এ মূহুর্তে সর্বাধিক প্রয়োজন হচ্ছে ভারতীয় মিথ্যা প্রচারণাকে প্রকৃত ঘটনার আলোকে অত্যন্ত নিপুনভাবে খন্ডনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে সুদক্ষ পাকিস্তানীদের প্রেরণ করা। (দৈঃ পাঃ ৭; ৬৯৩)
-ব্রাসেলসে রয়েল ইনষ্টিটিউট অব ইন্টার ন্যাশনাল এফেএয়ার্স এ এক ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন যে পূর্ব বাংলার নব্বই লক্ষের ও বেশী লোক সামরিক সরকারের অমানুষিক নির্যাতনে টিকতে না পেরে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।…। যারা গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোট দিয়েছিল সামরিক জান্তা তাদের উপর গনহত্যা চালাচ্ছে। ভারতের জনগণ ও সরকার চরম ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিয়েছে। এই সংকটের মূল কারণ বের করতে হবে। বাংলাদশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে গ্রহণ যোগ্য একটা রাজনৈতিক সমাধান সমস্যার মূলকারণ দূরীভূত করতে পারবে বলে ভারতের বিশ্বাস। যারা বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাস করে তাদের উচিত শরণার্থীরা যেন তাদের দেশে নিরাপদে এবং সুসম্মানে বসবাস করতে পারে সে ব্যাপারে চেষ্টা চালানো। (বিডি-২, পৃঃ২৫৩)।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী