You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.28 | ১০ কার্তিক ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার ২৮ অক্টোবর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

১০ কার্তিক ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার ২৮ অক্টোবর ১৯৭১

-শ্রীমতি গান্ধী ভিয়েতনায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলে ভারত সীমান্ত জাতিসংঘ পরিদর্শক দলে সৈন্য প্রত্যাহার পরিদর্শনের প্রস্তাবে একমত নয়। জাতিসংঘ প্রথমে কেন এ ব্যবস্থা নেয়নি যখন পাকিস্তান এককভাবে সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন করেছিল। যখন ভারত সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন করেছে তখন উদ্বেগ দেখানো হচ্ছে। পাকিস্তান জঘন্যতম গণহত্যা চালিয়েছে যাতে ১০ লক্ষ লোককে হত্যা করা হয়েছে।

শ্রীমতি গান্ধী টেলিভিশনে অন্য এক সাক্ষাৎকারে বলেন ভারত সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে যদি তাতে এই সমস্যার সমাধান হয় তবে সেটাই করব। “India would have to consider recognizing an independent Bangladesh if that would contribute towards a soulton” (KCA,pp 24993)

মিঃ ফিরুবিনের সফরে ভারতীয় মহল থেকে বলা হয়, পরিস্থিতির গুরুত্ব সম্পর্কে রাশিয়া সচেতন রয়েছে। ভারত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চায় না বলে তারা জানায়। তবে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হলে ভারত হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না বলে রাশিয়ে বিশ্বাস করে। (ইন্টাঃ হেরাল্ড ট্রিবিউন)

পাকিস্তান সরকার সীমান্ত আচরণ  বিধি লংঘণ করে মর্টার অ ভারী ফিল্ডগানের সাহায্যে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক পাকিস্তানী এলাকায় বিনা উস্কানিতে অনবরত গোলাবর্ষন অব্যাহত রাখার বিরুদ্ধে ভারত সরকারের কাছে একটি কড়া প্রতিবাদ লিপিতে ৬-১২ অক্টোবর যশোর, নোয়াখালী দিনাজপুর, ডোমরা, খুলনা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, সিলেট, বেনাপোল বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের উল্লেখ করা হয়। (দৈঃ পাঃ) প্রকৃত অর্থে মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে পাক বাহিনী ক্যান্টনমেন্ট মুখি হয়।

কলকাতা আওয়ামী লীগ কার্যকারী কমিটির মুলতবী বৈঠক হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের বক্তব্য এবং তাদের পরিবেশিত তথ্যাদি মুক্তিযুদ্ধের ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করার পক্ষে সহায়ক। (মূলধারা’ ৭১, পৃঃ ১৫০)

ডি আই টি ভবনের ৬ষ্ঠ তলার একটি কক্ষে বিস্ফোরণ ঘটানো হ্য। (দৈঃ পা) পিটিভি ঢাকার (ডিআই টি ভবনের দোতালা অ টাওয়ার) ক্ষতি গ্রস্থ হয়। গেরিলা দল সন্তপর্নে সড়ে পড়ে। উল্লেখ্য পিটি ভির বেশ ক’জন কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে মুজিবনগরে যোগদান করেন। তন্মধ্যে সর্ব জনাব জামিল চৌধুরী, মোস্তফা মনোয়ার রয়েছেন।

এ সময়ে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর তৎপরতা সম্বন্ধে  D.R Manekekar লিখেছেন, ‘By the end October the actual operational plan was ready.’ (p-36)

ঢাকায় জনৈক সামরিক মুখপাত্র জানান, রাজাকাররা দুষ্কৃতিকারীদের আক্রমণ নস্যাৎ করে দিচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সেতু রক্ষা করছে। রাজাকারদের সাফল্যে দেশবাসী গর্বিত।

-ঢাকার গেরিলাদল খিলগাঁ-রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটায়। ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত ও ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে।

-মুক্তিবাহিনীর অকুতভয় মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লার দৌলতপুর, চৌদ্দগ্রাম, নোয়াখালীর পরশুরাম, চট্টগ্রামের বিলোনিয়া, ময়মনসিংহের নকলা, দিনাজপুরের হিলি প্রভৃতি স্থানে পাক সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করে এবং তুমুল লড়াই হয়।

-‘জেড’ ফোর্সের প্রথম বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘এ’ ‘বি’ এনং ডী কোম্পানী সিলেট জেলার ধালাই এলাকা পাকবাহিনীর অবস্থানের উপর আক্রমণ চালায়। তীব্র সংঘর্ষ ৫ দিন চলছিল। ক্যাপ্টেন আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বেশ কিছু সংখ্যক সৈন্য হতাহত হয়েছিল, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী শৌর্যবীর্যের পরিচয় দিয়েছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ হামিদুর রহমান। এই যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনবরত পাঁচদিন যুদ্ধের পর আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। তাদের এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য নিশিহ্ন হয়ে যায়। (১০ খঃ পৃঃ৭০৬) উল্লেখ্য ২৯ অক্টোবর ভারতীয় সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় জাঠ ব্যাটালিয়ন যোগ দেয়। পরে এ ব্রিগেড ভারতীয় সৈন্য এক ডিভিশন আর্টিলারী নিয়ে এইযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সাথে লড়াই করে। এই যুদ্ধে ভারতীয় ব্রিগেড কমাণ্ডার এবং দ্বিতীয় জাঠ ব্যাটালিয়নের কমাণ্ডিং অফিসার আহত হন। (১০খঃ পৃঃ৭০৬)

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী