৮ কার্তিক ১৩৭৮ মঙ্গলবার ২৬ অক্টোবর ১৯৭১
-মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের কাছে মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর বাণী নিয়ে বিশেষ দূতের কায়রো উপস্থিত।
-কসবায় মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে দখল প্রতিষ্ঠা তুমুল সংঘর্ষ কুমিল্লার সীমান্তে কসবা ছাড়াও কায়েমপুর, আলদা নদী নয়নপুর, চৌদ্দগ্রাম এলাকায় উভয় দলের মুখোমুখি যুদ্ধ। সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, বগুড়া ও যশোর সীমান্তেও সারাদিন যুদ্ধে চলে।
-ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরাগান্ধী ব্রাসলেসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সমঝোতার কোন ভিত্তি নেই। বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কেননা পূর্ববাংলা এমন কিছু ঘটেছে যার জন্য আমাদেরকে তাঁর খেয়ারৎ দিতে হচ্ছে। আমরা এসবের সাথে সরাসরি জড়িত নই। সেহেতু এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটা কিছু করতেই হবে। (কে সি এ, পৃঃ ২৪৯৯৩)
-শ্রীমতি গান্ধী ঐ দিনেই বেলজিয়াম থেকে অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় পৌঁছান। তিনি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক জোনাস (Franz Jonas)এবং চ্যান্সেলর ডঃ ব্রুনোক্রাকী (Dr Bruno kreisky) সাথে আলোচনা করেন।
-ঢাকা রেলষ্টেশনের অদূরে গেরিলা বাহিনী রেললাইন উড়িয়ে দেয়। (দৈঃপাঃ)
-চট্টগ্রামে গেরিলাদের হাতে উপনির্বাচন অংশ গ্রহণকারী প্রার্থী মুসলিম লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ বখতিয়ার নিহত হয়।
-বিলম্বে প্রকাশিত মইদুল হাসানের মন্তব্যঃ কোলকাতায় ৮ থিয়েটার রোড সংলগ্ন লর্ড সিনহা রোডস্থ বি এস এফ ভবনে এক বিশেষ জরুরী ব্রিফিং এ ডি পি ধর প্রধামন্ত্রী তাজউদ্দিন ও আমাদকে মোশতাক চক্র ও মার্কিন প্রতিনিধি মধ্যে গোপন দেন-দরবারের প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে যে বিবরণ দান করেন, তাতে অনেক বিষয়ের মধ্যে একথাও সুস্পষ্ট হয় যে, মোশতাকের উপস্থিতিতে মুক্তি সংগ্রামের উচ্চতর পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত জন্য মন্ত্রীসভা আদৌ কোন নিরাপদ ফোরাম নয়। (মূলধার’ ৭১ পৃঃ ১৭৪)
-অষ্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ব্রুনো ক্রিসকি এক বিবৃতিতে বলেন যে, বাংলাদেশ সংকটের ওপর তাঁর নিজস্ব মতামত তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে জানাবেন। তিনি বলেন, ভারত আগত শরণার্থীদের তাদের নিজেদের দেশে নিরাপদে ফিরে যাবার নিশ্চয়তা থাকা উচিত।
-মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রামে কুমিল্লা, রংপুরে ও যশোর সীমানে পাকিস্তান বাহিনীর ঘাটিতে গোলাবর্ষন করছে। পাকিস্তান ভারতের কাছে এই গোলাবর্ষনের প্রতিবাদ জানিয়েছে।
-পিপিপি চেয়ারম্যান জেড এ ভুট্টো কায়রোতে প্রেসিডেন্ট সাদাতের সাথে বৈঠক শেষে জেনেভা পৌঁছান। জনাব ভুট্টো পাশ্চাত্য দেশগুলো সফরে বের হয়েছে। এ যাত্রা তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিশেষ দূতের দু’তালী পেয়েছেন।
-ভারতের চারদিন আলোচনার পর সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলা ফিরুবিন নয়াদিল্লী ত্যাগ করে। এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয় সোভিয়েত ভারত মৈত্রী চুক্তির ৯ ধারা অনুযায়ী এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। মিঃ ফিরুবিন মস্কো যাত্রার প্রাক্কালে ঘোষণা করা সোভিয়েত ভারত মৈত্রীচুক্তি ৯ ধারা কার্যকর করা হয়েছে। এই ধারা মতে ভারত কিংবা সোভিয়েত ইউনিয়ন তৃতীয় দেশ কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার পর উভয় দেশ পরস্পর সাহায্য দানের জন্য এগিয়ে আসবে। উল্লেখ্য এ ঘোষণার পর জানা যায় যে সোভিয়েত বিমান বাহিনীর কমাণ্ডার-ইন-চীফ এয়ার মার্শাল পাভেল কাটুখর একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে শীঘ্রই নয়া দিল্লী পৌঁছাবেন। (দি টাইমস ২৮/১০/৭১
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী