দ্যা টেলিগ্রাফ, ৪ এপ্রিল, ১৯৭১
পাকিস্তান’স পাথ টু ব্লডশেড
পৈশাচিক দক্ষতার সাথে পশ্চিম পাকিস্তানী আর্মি গত সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার সংগ্রামকে নিষ্প্রাণ করে দিয়েছে যারা স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ চায়েছিল। পাকিস্তানী জেনারেল এবং কলোনিয়ালদের গত দুই বছরের নিবিড় পরিকল্পনার মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে। তাদের অনেকেই বৃটিশ আমলে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং অনেকেই বাহ্যিক ভাবে বৃটিশদের থেকেও বেশী বৃটিশ হলেও মেধা ও মননে বৃটিশ হতে পারেনি।
এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা পাকিস্তানের কট্টর সমাজ ব্যাবস্থার এলিট শ্রেণী এবং সামরিক নেতৃত্বের কেদ্রিয় নিয়ন্ত্রক যারা গত দুই বছরে আগে আর্মি কমান্ডার ইন চীফ জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে জোরপূর্বক প্রেসিডেট বানিয়েছিল। ইয়াহিয়ার সূচনা করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এদের কোন রকম আস্থা ছিলনা।
তারা গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় আস্থা রাখেননি কারণ স্বভাবগত বা পারিবারিক বা বিশ্বাসের দিক থেকে তারা কখনও গণতান্ত্রিক ছিলেন না। তারা ছিলেন দাম্ভিক শাসক, পিতৃপ্রধান এবং অভিজাত শ্রেণী যারা ‘নিম্ন শ্রেণীর’(সাধারণ মানুষের) ঘৃণার পাত্র ছিলেন অনেকটা ১৮শতকের সমাজ ব্যাবস্থার মত।
তারা বিশ্বাস রাখেননি কারণ তারা দেখেছেন কীভাবে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সে বছর মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের পতন ঘটিয়েছিল। তারা তখন এটা বুঝতে পেরেছিল- যদি এই প্রবল জাতীয়তাবাদী মহিরুহুকে বন্দী করা না যায় তবে অচিরেই তা তাদেরও ঠেলে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিবে।
তারা অনুধাবন করেছিল পাকিস্তানের ডমিন্যান্ট গ্রুপ হিসেবে তাদের ভবিষ্যৎ অচিরেই হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে, গতমাসের আরেক গণঅভ্যুত্থান বা শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে (যা কখনও সম্ভব হয়নি)।
তাদের কাছে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এবং তার সিভিলিয়ান ক্যাবিনেটের গঠনকরা প্রক্রিয়া মূলত পাকিস্তানের প্রকৃত খমতার কাঠামো ঢেকে রাখার জন্য একটা ছদ্মবেশ ছাড়া কিছু ছিলনা।
তারা গত ডিসেম্বর নির্বাচনের দিকে একটা অমীমাংসিত ফলাফলের আশায় তাকিয়ে ছিল। সামরিক শাসন দির্ঘায়িত করার এটাই সবথেকে সম্ভাব্য এবং গ্রহণযোগ্য কারণ হতেপারে।
তা না হয়ে, এটা একজন ব্যাক্তি পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পার্টি আওয়ামী লীগকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনেদেয়। ৬ ডিসেম্বরের সেই দিন থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের এলিট সমাজ এবং জেনারেলরা জানতো যে খমতা টিকিয়ে রাখতে তাদের এখন কি করতে হবে।
এরপর থেকে এটা ছিল শুধু উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা।
যদিও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শেখ মুজিবের সাথে সংলাপে বসেছিলেন তবুও নিশ্চিত ভাবেই তিনি সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতেন। ঘটনা প্রবাহের প্রমাণাদির উপর নির্ভর করে চরম বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ থেকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে নির্দোষ প্রমাণ করা কষ্ট সাধ্য হয়ে যাচ্ছে।