শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
অস্থায়ী সরকার কতৃক মুক্তিবাহিনীর পুনর্গঠন : কর্নেল ওসমানীকে সর্বাধিনায়ক পদে নিয়োগ | এশিয়ান রেকর্ডার- মে, ১৪-২০, ১৯৭১ | ১৪ এপ্রিল, ১৯৭১ |
মুক্তিবাহিনী পুনর্গঠন :
১৪ এপ্রিলে নবগঠিত “অস্থায়ী” সরকার একটি পুরোদস্তুর সক্রিয় ঘাঁটি, অন্তর্বর্তীকালীন রাজধানী স্থাপন ও সুনির্দিষ্টভাবে স্বাধীন অঞ্চলগুলোর জন্য অধিনায়ক নির্ধারণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সেনাবানীকে একটি সংগঠিত শক্তিতে রূপান্তরিত করার কার্যক্রম শুরু করে।
পূর্ব বাংলার এই উত্তপ্ত সময়কালের বেশ আগেই সক্রিয় চাকরি থেকে অবসর নেওয়া বেঙ্গল রেজিমেন্টের কর্ণেল ওসমানিকে ‘মুক্তিফৌজ’-এর সাধারণ কর্মকর্তা সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ আঞ্চলিক অধিনায়কদের নাম ঘোষনা করেন। এরা হলেন : সিলেট-কুমিল্লায় মেজর খালেদ মুশারাফ; চট্টগ্রাম-নোয়াখালীতে মেজর জিয়াউর রহমান; ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইলে মেজর সফিউল্লা; এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে মেজর এম. এ. ওসমান।
Besides the interim capital located in the western zone, a regional unit had been
set in the Sylhet-Comilla zone with full administrative authority for the eastern
region.
পশ্চিমাঞ্চলে অন্তর্বর্তীকালীন রাজধানী ছাড়াও সিলেট-কুমিল্লা অঞ্চলে আরেকটি আঞ্চলিক ইউনিট স্থাপন করা হয় পূর্বাঞ্চলে পূর্ণ প্রশাসনিক কতৃত্বসহ।
তিনি বলেন সিলেট-কুমিল্লা অঞ্চলে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর খালেদ মুশারাফ পাকবাহিনীকে সিলেট ও কুমিল্লার সেনানিবাসে হটিয়ে দেন।
চট্টগ্রাম-নোয়াখালী সেক্টরে মেজর জিয়াউর রহমানের অধীনে মুক্তিবাহিনী পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে ছিল যারা চট্টগ্রামের কিছু ছোট্ট পরিসরে শত্রুদেরকে কোণঠাসা করে রাখে।
পুরো ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল শত্রুমুক্ত করার পর মেজর সফিউল্লা সম্পূর্ণ প্রস্তত ছিলেন ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে।
জনাব আহমেদ বলেন, মেজর ওসমান দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন এবং খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালির অনেকটা এলাকা শত্রুমুক্ত করেছেন। শত্রুপক্ষ যশোর সেনানিবাস ও খুলনা শহরে অংশবিশেষে অবরূদ্ধ ছিল।
উত্তরবঙ্গে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্* ও পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের একটি যৌথবাহিনী রংপুর ও সৈয়দপুরের শত্রুদের গতি অবরোধ করে রাখে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ঘোষিত :
ইপিআর, আনসার আর মুজাহিদদের দলসহ দশ হাজার জনতার ভীড়ে তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে এপ্রিলের ১৭ তারিখে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, যা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা দেন যে সরকারের আদেশাধিকার বহাল থাকবে অঞ্চলটির ৯০ শতাংশ জায়গায়, ব্যতিক্রম কেবলমাত্র সেনাবাহিনীর অধীনে থাকা সেনানিবাস ও কিছু প্রশাসনিক সদর দপ্তর। প্রায় ৫০ জন আন্তর্জাতিক সাংবাদিক কার্যপ্রক্রিয়াটি দেখেন ও লিপিবদ্ধ করেন।
ঘোষণাটিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি উল্লেখ করা হয়, তবে ব্যাখ্যায় বলা হয়, যদি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমান “অনুপস্থিত থাকেন, কিংবা কার্য চালাতে না পারেন, অথবা অক্ষম থাকেন”, তাহলে জনাব ইসলাম রাষ্ট্রপতির দায়িত্বগুলো সম্পাদন করবেন।
নতুন একটি সংবিধান গঠনের আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র শক্তির প্রধান ও আইনপ্রণয়নের একমাত্র ক্ষমতাধারী হিসেবে বহাল থাকবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও তার সহকর্মীদেরকে নিয়োগ দেবেন, কর আদায় ও ব্যয়ের অনুমোদন প্রদান, এবং শাসনতান্ত্রিক সংসদ আহবান কিংবা স্থগিত করবেন।
ঘোষণাটিতে এই পদক্ষেপটির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হয় এবং নিশ্চিত করা হয় যে এটা গত নির্বাচনের ফলাফলে প্রতিফলিত জনগণের দাবির ভিত্তিতেই করা হচ্ছে। এই নতুন রাষ্ট্র ও “জাতির” লক্ষ্য হবে মানুষের মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করা। জনাব ইসলাম বলেন, এটা শান্তিপূর্ণভাবে অর্জনের জন্য রাষ্ট্রটির সাড়ে সাত কোটি মানুষ গত ২৩ বছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু তাদেরকে হতাশ করেছে সামন্ততান্ত্রিক স্পৃহা আর সামরিক জান্তা।
তিনি বলেন, তাদের বর্তমান লড়াইটি বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য ও একই সঙ্গে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যও এবং “জয় আমাদের হবেই, আজ হোক, অথবা কাল, অথবা পরশু।”
মানুষের মুক্তি, মর্যাদারক্ষা ও মূল্যবোধ এবং তার সাথে গণতন্ত্রের স্বার্থে তিনি বিদেশী সাংবাদিকদের এই বার্তাটি নিজ নিজ দেশে পোঁছে দিতে জোরালো আহবান করেন যে বিশ্বের সকল ক্ষুদ্র ও বৃহৎ রাষ্টের উচিত, বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকান দেশগুলোর উচিত, তার সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া ,এবং “এমন কিছু করা যা বাংলাদেশের মানুষের দুর্দশা লাঘবে ইতিবাচক হবে”।
তিনি আরো এক ধাপ এগিয়ে বলেন, অতীতে পাকিস্তান অন্যান্য দেশ থেকে অস্ত্র এনে সংরক্ষণ করে রেখেছে প্রধানত দেশটির প্রতিরক্ষার জন্য এবং তা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নিয়োজিত মানুষের কঠোর পরিশ্রমের বিচারে চড়া দাম দিয়ে। এটা অত্যন্ত মর্মান্তিক যে এই অস্ত্রগুলো এখন ব্যহার করা হচ্ছে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর।
তিনি এই দেশগুলোকে নতুন অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতেই শধু আহবান জানাননি , বরং এই মারাত্মক অস্ত্রগুলো যেন বাংলাদেশের মানুষের ওপর আর ব্যবহার না করা হয়, সেটা নিশ্চিত করতে জোরালো অনুরোধ জানান।