শিরোনামঃ হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি রক্ষার্থে ফজলুল হকের ভূমিকা
সুত্রঃ পাকিস্তান প্রস্তাব ও ফজলুল হক – অমলেন্দু দে , পৃষ্ঠা – ২৪৯
তারিখঃ ২০শে জুন, ১৯৪২
২০শে জুন, ১৯৪২ তারিখে কোলকাতায় অনুষ্ঠিত হিন্দু–মুসলিম ঐক্য সম্মেলণ এ গৃহীত সিদ্ধান্তাবলীঃ
১। ভারত, আরও খোলাখুলি বলতে গেলে বাংলা ও আসাম আজ চরমতম বিপদের সম্মুখীণ। বিদেশী আগ্রাসণ কেবল আমাদের নিরাপত্তাকেই নয় বরং তা আমাদের বাড়ী-ঘর, উনুন, আমাদের আশা-আকাঙ্খা, আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক স্থিতিশীলতা, এক কথায় আমাদের সবচেয়ে প্রিয় ও একান্তে ধারণের সব কিছুকেই হুমকি দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক অবস্থার প্রতিনিয়ত অবনতির দৃষ্টি কোণ থেকে হতাশা ও পরাজয়ের মনোভাবকে দুর করার জন্য এবং আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর ভাঙ্গণ প্রতিহত করতে সমস্ত লভ্য শক্তি আহরণ করা অপরিহার্য হয়ে পরেছে। আমাদের জনগণ ও অর্থের, প্রজ্ঞার, চরিত্রের ও শক্তির এই অবস্থায় এবং যে কোন আঘাত প্রতিহতের জন্য আমাদের প্রস্তুত করতে/ রাখতে সর্ব প্রথম শর্ত হচ্ছে পারষ্পরিক সহমর্মিতা ও সহযোগীতার আবহ সৃষ্টির মাধ্যমে উন্নত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা। বাংলার মানুষ ঐক্যের ও সংহতির জন্য এমন তাড়ণা পূর্বে আর কখনই অনুভব করেনি কেননা কেবলমাত্র এই ঐক্যের উপর নির্ভর করে আমরা সর্বগ্রসী বিপদের এই হুমকির বিরুদ্ধে জয়ের আশা করতে পারি।
প্রদেশের জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য সত্বেও আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সংরক্ষণ ও বিতরণ, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে সকল জনগণের চিকিৎসা ও ত্রাণের সুবিধা এবং আত্ম-পরিচয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে নিবিড় প্রপাগান্ডা চালানোর জন্য এই সংকটকালে “শান্তির সৈণিক/ সেবকদল” গঠন যেসমস্ত এলাকায় জাতিগত বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা রয়েছে সেসমস্ত করে সংকটাপন্ন এলাকায় প্রেরণের মত বিষয়গুলিতে মুসলমান ও হিন্দুদের উভয় জাতিগোষ্ঠীর জনগণকে অবশ্যই একত্র হওয়ার মতামত উঠে আসে।
২. এই সম্মেলণে এই মতামত/ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, জাতিগত ঐক্য ও সহযোগীতার পরিবেশ তৈরীর নিমিত্ত একটি দীর্ঘ্য-মেয়াদী ও একটি স্বল্প-মেয়াদী পরিকল্পণা গ্রহণের জন্য অবশ্যই কাজ করতে হবে এবং এর নিমিত্ত বক্তব্য ও প্রচারপত্র জনপ্রিয়করণের জন্য, সাম্প্রদায়িক/ জাতিগত ঐক্যের সাহিত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আবশ্যিকভাবে একটি স্থায়ী ট্রাস্ট তহবিল গঠনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকভাবে/ জাতিগতভাবে আত্মিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সাধারণ অর্জিত জ্ঞান জনগণের মধ্যে বিস্তারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও সহযোগীতার পরিবেশ সৃষ্টির কার্যক্রম অবিরত রাখার নিমিত্ত এবং আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে, খাদ্য ও অন্যান্য জরুরী দ্রব্যাদির মজুত ও বিতরণ রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের একত্রিতকরণের জন্য এবং চিকিৎসা ও অন্যান্য ত্রাণ কার্যাদির ক্ষেত্রে একটি স্থায়ী নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার সংকল্প করা হয় এবং সে উদ্দেশ্যে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের কাঠামো প্রণয়ন এবং কার্যক্রম ও কর্ম পরিকল্পণা প্রণয়নের নির্দেশনা প্রদানের জন্য হিন্দু-মুসলমান ঐক্য সংঘ-এর কাউন্সিল/ পরিষদ গঠন করা হবে।
[দ্যা হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড-এ ২১ জুন, ১৯৪২ তারিখে প্রকাশিত]