কমান্ডার ইস্টার্ন কমান্ড
সামরিক অভিযান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সন্তোষজনক ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়। ইয়াকুবের অসময়ােচিত পদত্যাগ এবং লক্ষ্য অর্জনে টিক্কার অদক্ষতা ছিল একটি অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়। পূর্ব পাকিস্তান গ্যারিসন থেকে টিক্কাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমি তখন লাহােরে অবস্থিত ১০ ডিভিশনের কমান্ড দিচ্ছিলাম। ১৯৭১ সালের ২ এপ্রিল সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবদুল হামিদ খান আমাকে জেনারেল হেড কোয়ার্টার্সে ডেকে পাঠান। পরদিন আমি জেনারেল হেড কোয়ার্টার্সে পৌছি এবং সােজা জেনারেল হামিদের অফিসে ঢুকে পড়ি। তিনি আমাকে জানান যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ইস্টার্ন গ্যারিসনের কমান্ডার টিক্কা খানের সামরিক অভিযান পরিচালনায় সন্তুষ্ট নন। তিনি আমাকে আরাে জানান যে, কতিপয় জেনারেলের চেয়ে আমি জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও সংকটকালে আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বিবেচনা করে প্রেসিডেন্ট আমাকে ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার হিসেবে নিয়োেগ দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর কোনাে প্রশ্ন?’ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি। আমি উত্তর দিলাম, একজন সৈনিকের কর্তব্য হচ্ছে নির্দেশ পালন করা। প্রশ্ন করা অথবা আপত্তি পেশ করা নয়। প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন এবং সেনা কমান্ডার সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করবেন।’ আমি আরাে বললাম যে, আমি প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করব, তারপর আমার ওপর এ গুরুদায়িত্ব অর্পণ করায় আমি ধন্যবাদ জানালাম তাকে। তিনি আমার সাফল্য কামনা করে বিদায় জানান। সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে মিটিংয়ের একদিন পর ১৯৭১-এর ৪ এপ্রিল ঢাকা পৌছালাম। এ পরিবর্তনের কথা শুনে টিক্কা বােকা বনে যান। সক্রিয় অপারেশনকালে একজন কমান্ডারকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ অথবা কমান্ডে রদবদল ঘটানাে সংশ্লিষ্ট কমান্ডারের জন্য খুবই অসম্মানজনক। টিক্কা কমান্ড হস্তান্তর স্থগিত রাখার জন্য সম্ভাব্য সব চেষ্টা করেন। তিনি আমাকে তাঁর অধঃস্তন কমান্ডার হিসেবে নিয়ােগ করারও অনুরােধ করেছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনী প্রধান এ অনুরােধ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি তাকে বললেন, ‘আপনাকে একটা সুযােগ দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু সেই সুযােগ হারিয়েছেন আপনি।’ ঢাকা পৌঁছানাের এক সপ্তাহ পর ১০ এপ্রিল টিক্কা অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমার কাছে কমান্ড হস্তান্তর করেন। ১১ এপ্রিল পুরােপুরি পুনর্গঠন সম্পন্ন হয়। জেনারেল টিক্কা খান গভর্নর হন। তিনি সামরিক আইন প্রশাসকও ছিলেন। তাই তিনি পূর্ব পাকিস্তানে বেসামরিক প্রশাসন ও সামরিক আইনের দায়িত্ব পালন উভয়ের জন্য দায়ী ছিলেন। তাঁর | নির্দেশেই সকল গ্রেফতার, শাস্তি ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতাে। শফিকুর রহমান ছিলেন চিফ সেক্রেটারি, রাও ফরমান আলী গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা ও ব্রিগেডিয়ার ফকির মােহাম্মদ ছিলেন ব্রিগেডিয়ার মার্শাল ল’। ব্রিগেডিয়ার জিলানি (পরে লে. জেনারেল ও গভর্নর) আমার সিওএস (চিফ অভ স্টাফ)। মেজর জেনারেল শওকত রিজা ছিলেন ৯ম ডিভিশনের নেতৃত্বে। মেজর জেনারেল খাদিম রাজার স্থলে মেজর জেনারেল রহিম ১৪ ডিভিশনের জিওসি হন। মেজর জেনারেল নজর হােসেন শাহ। ছিলেন ১৬ ডিভিশনের জিওসি। ব্রিগেডিয়ার নিসারের স্থলে মেজর জেনারেল জামশেদকে সিএএফ (সিভিল আর্মড ফোর্সেস)-এর প্রধান পদে নিযুক্তি দেয়া হয়। রিয়ার অ্যাডমিরাল শরীফ নৌবাহিনী ও এয়ার কমােডর ইনাম বিমান বাহিনীর। দায়িত্বে ছিলেন। ভুট্টোর আমলে টিক্কা খান সেনাবাহিনী প্রধান হয়ে এমন একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেন যে, আমি তার কমান্ডে কাজ করেছি। যা মােটেও সঠিক ছিল না। আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি ছিলাম সামরিক কমান্ডার এবং কেবলমাত্র সামরিক অপারেশনের জন্য দায়ী। আমি সরাসরি সেনাবাহিনী প্রধানের অধীনে কাজ করেছি। পক্ষান্তরে টিক্কা ছিলেন গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসক। এবং তিনি প্রেসিডেন্টের অধীনে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা দুজনে স্বাধীনভাবে। এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করেছি।
টিক্কাকে সাহায্য করার জন্য মেজর জেনারেল মিঠাকে পাঠানাে হয়, তিনি অতিরিক্ত সৈন্য চেয়ে জেনারেল হেড কোয়ার্টার্সে একটি বার্তা পাঠান। বার্তাটি নিচে। দেয়া হলাে ‘এ অপারেশন এখন রূপ নিয়েছে একটি গৃহযুদ্ধে দূরে যাওয়া যাচ্ছে না, রেলগাড়িও ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনাে ফেরি অথবা নৌকা পাওয়া যাচ্ছে । বস্তুত সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে চলাচল একটি প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এ অবস্থা চলবে আরাে কিছু দিন। সুতরাং সশস্ত্র বাহিনীকে সব ক্ষেত্রে নিজস্ব সামর্থ্যের ওপর চলতে হবে। এ জন্য আমি নিম্নোক্ত ইউনিট গঠন ও পাঠানাের জন্য প্রস্তাব করছি। আলফা-চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য নেভির পাের্ট অপারেটিং ব্যাটালিয়ন, ব্র্যাভাে- আর্মি বা নেভি অথবা ইঞ্জিনিয়ার রিভার ট্রান্সপাের্ট ব্যাটালিয়ন ও রিভার মেরিন ব্যাটালিয়ন এবং আমি ইঞ্জিনিয়ারিয়ারের রেল অপারেটিং ব্যাটালিয়ন। চার্লিনেভির কার্গো ও ট্যাংকার ফ্লোটিলা। রসদ ও সৈন্য চলাচলের জন্য আরাে হেলিকপ্টার অপরিহার্য। মিঠা খান যেসব ইউনিট গঠন ও পাঠানাের জন্য প্রস্তাব করেছিলেন সেগুলাের একটিও গঠন অথবা পাঠানাে হয়নি। শুধু তাই নয়, পূর্ব পাকিস্তানে লড়াইরত পুরনাে ইউনিটগুলাের ঘাটতি পূরণ করা হয়নি। অথবা পুরনাে ইউনিটের জায়গায় নতুন ইউনিটও পাঠানাে হয়নি। হাই কমান্ড শুধু আশ্বাসই দিচ্ছিল। কিন্তু তারা তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি। আমি যখন ইস্টার্ন কমান্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন মিঠা খানকে জেনারেল হেড কোয়ার্টার্সে পাঠিয়ে দেয়া হয়। টিক্কা সামরিক কমান্ডারের বাসভবন ছাড়ছিলেন না। লে. জেনারেল গুল হাসান প্রায়ই সে সময় ঢাকা অবস্থান করতেন। তিনি টিক্কাকে ফ্লাগ স্টাফ হাউস ছেড়ে দিয়ে গভর্নর হাউসে উঠতে রাজি করান। দায়িত্ব গ্রহণ করে একটি পদ ছাড়া আমি আর কোথাও কোনাে রদবদল ঘটাইনি। আমি রদবদল ঘটালাম আমার চিফ অভ স্টাফ ব্রিগেডিয়ার এল-ইসকে। যতদূর মনে পড়ে তিনি ছিলেন হায়দারাবাদ স্টেট ফোর্সের শেষ কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল ইদ্রসের ছেলে। ব্রিগেডিয়ার এল-ইদ্রস স্মার্ট ও মার্জিত হলেও তাকে কেন যেন বিমর্ষ মনে হচ্ছিল।
তাকে আমার কাছে ক্লান্ত ও অসুস্থ মনে হলাে। এ জন্য আমি তার স্থলে ব্রিগেডিয়ার গােলাম জিলানি লে. জেনারেল (অবসর প্রাপ্ত), পাঞ্জাবের ভূতপূর্ব গভর্নর-কে নিয়ােগ দান করি। তিনি ঢাকায় সামরিক আইন সদরদপ্তরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মেজর জেনারেল মােহাম্মদ আকবর (ডাইরেক্টর জেনারেল, ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স) আমাকে বললেন যে, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় অবসর গ্রহণের জন্য জিলানিকে পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত পাঠানাে হচ্ছে। জিলানি আমার অধীনে দু’বার কাজ করেছে। একবার আমি যখন মালিরে ৫১তম ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলাম তখন সিন্ধুতে একজন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার হিসেবে এবং আবার আমি যখন লাহােরে ১০তম ডিভিশনের জিওসি তখন একজন ব্রিগেডিয়ার হিসেবে। তাকে আমি অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী ও যােগ্য বলে জানতাম। তাই আমি তাকে সেনাবাহিনীতে রেখে দিতে চেয়েছিলাম। আমি তাকে ব্রিগেডিয়ার এল-ইসের জায়গায় চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিযুক্ত করি। জেনারেল টিক্কা ব্রিগেডিয়ার রহিম দুররানী, ব্রিগেডিয়ার জুলফিকার ও ব্রিগেডিয়ার খুশি মােহাম্মদ খালিদ ও লে. কর্নেল শাফকাত বালুচকে অদক্ষতা ও শত্রুর বিরুদ্ধে সাহস প্রদর্শনে ব্যর্থতার জন্য সৈন্যদের কমান্ড থেকে অপসারণ। করেছিলেন। আমার নেতৃত্বকালে ১৪ ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল রহিমের সুপারিশে লুটতরাজ ও চুরির অভিযােগে ব্রিগেডিয়ার আরবাবকে কমান্ড থেকে অপসারণ করা হয়। তদন্ত আদালতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সামরিক আদালতে বিচার করার জন্য তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত পাঠানাে হয়। জিলানি কঠোর পরিশ্রম করেন এবং আমার অধীনে তার দায়িত্ব পালনকালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা সম্পন্ন করেন। তিনি বেশ কিছুদিন পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থান করেন এবং পরে মহাপরিচালক হিসেবে আইএসআই অধিদপ্তরে বদলি হন। ব্রিগেডিয়ার বাকির সিদ্দিকী তার স্থলাভিষিক্ত হন। তাকে আমি আগে চিনতাম না। তবে শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আমার সঙ্গে ছিলেন।
পূর্ব পাকিস্তানের ভূ-প্রকৃতি, পরিবেশ ও আবহাওয়া আমার কাছে নতুন ছিল না। আমি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাচি ও টেকনাফে (বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তান) জঙ্গল যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছি এবং বার্মা, সিঙ্গাপুর, মালয় (বর্তমানে মালয়েশিয়া) এবং ডাচ ইস্ট ইন্ডিস (বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া), ও বার্মায় যুদ্ধ করেছি। এসব দেশের ভূ-প্রকৃতি ও আবহাওয়া কম-বেশি পূর্ব পাকিস্তানের মতাে। ব্রিটিশ-ভারত বিভক্তির পর আমি ঢাকায় ১/১৪ পাঞ্জাব রেজিমেন্টও কমান্ড করেছি। আমার নামানুসারে ঢাকা। ক্যান্টনমেন্টের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয় ‘টাইগার রােড’। সুতরাং ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার হিসেবে আমি পূর্ব পাকিস্তানে স্বাচ্ছন্দ্যবােধ করছিলাম। দায়িত্ব গ্রহণকালে আমি দেখতে পেলাম যে, প্রাদেশিক সরকার অকার্যকর। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও প্রশাসন ছিল জনগণ ও বাঙালি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পুরােপুরিভাবে বিচ্ছিন্ন। বাঙালিরা ঘৃণিত পশ্চিম পাকিস্তানিদের কোনােরূপ সহায়তা না করতে ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা আমাদের নিজেদের দেশে অবাঞ্ছিত বিদেশি হয়ে পড়লাম হাট-বাজার ছিল কম-বেশি বন্ধ এবং জীবন ব্যবস্থা অচল। উর্দুভাষীদের ঢাকা বিমান বন্দরে থামিয়ে মারধর করা হতাে। সৈন্যদের জন্য কোনাে নিয়মিত সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল না। সারা দেশেই চলছিল বিদ্রোহ। | পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্ট ও ক্যাম্পের আশপাশে যুদ্ধ করছিল এবং ক্যান্টনমেন্ট ও ক্যাম্পগুলাে তাদের দুর্গে পরিণত হয়। ঢাকা ও অন্যান্য এলাকায় বিমান ছাড়া যােগাযােগের আর কোনাে উপায় ছিল না। যােগাযােগের সব সুযােগগুলাে বিচ্ছিন্ন অথবা অকেজো করে দেয়া হয়। বাদবাকি দেশ ছিল। মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। তাদের মনােবল ছিল আকাশচুম্বী। অধিকাংশ ফেরি ও ফেরি এলাকাগুলােতে আমাদের কোনাে নিয়ন্ত্রণ ছিল না। পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত ও আন্তর্জাতিক সীমানার চিহ্ন ছিল না কোনাে। ভারত থেকে বিপুল সংখ্যক হিন্দু পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা দুষ্কৃতকারীতে ছেয়ে যায় । গােয়েন্দা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং সর্বশেষ তথ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। আমাদের বিপক্ষে চলে যায় আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। তারা অতিরঞ্জিত ও কাল্পনিক সংবাদ প্রচার করতে থাকে। সরকার এসব অপ্রপ্রচার বন্ধের চেষ্টা করেনি।
একসঙ্গে বহুসংখ্যক সৈন্য ছাড়া বাইরে বেরুনাে যেত না। দু’একজন করে অথবা ক্ষুদ্র দলে বের হলেই আক্রান্ত হতে হতাে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে সর্বত্র মৃত্যুর ফাঁদ। এ জন্য প্রতিটি সৈনিক ধর্মভীরু ও সৎ হয়ে ওঠে। সৈন্যদেরকে প্লটুন (৩৬ জন সৈন্য) ও কোম্পানিতে (১২০ জন সৈন্য) তাদের নিজ নিজ অফিসারের আওতায় অবস্থানের নির্দেশ দেয়া হয় এবং সেনাবাহিনী যে ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত হয় সে ধরনের কর্মকাণ্ডে কেউ লিপ্ত হওয়ার সাহস দেখাতে পারতাে না। কেউ একা একা বের হওয়ার দুঃসাহস দেখালে সে জীবিত ফিরে আসতে পারতাে না। এক কথায়। সামরিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পর্যায়ে বিশৃংখলা ছিল চরমে এবং সর্বত্র বিরাজ করছিল বিভ্রান্তি। আমাদের আগে অনেক দুঃসাধ্য সমস্যা ছিল। কোনাে কিছুই মসৃণ ছিল না। বুঝতে পারলাম যে, দুটি জিনিস করতে হবে। এক. হারানাে এলাকা পুনর্দখলে একটি ব্যাপক ও শক্তিশালী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান বিজয়ের একটি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। দুই. এটা কোনাে সুশৃংখল অভিযান হবে না। এ অভিযান হবে টিকে থাকার জন্য এক নির্মম লড়াই। | আমার অধীনে তিনটি অপূর্ণাঙ্গ ও অর্ধসজ্জিত ডিভিশন ছিল। দুটি ডিভিশনকে বিমান যােগে ঢাকা পাঠানাে হয়, এ জন্য তারা তাদের ট্যাংক, কামান, প্রকৌশল সামগ্রী, সাজ-সরঞ্জাম, পরিবহন এবং প্রতিরক্ষা সামগ্রী যেমন- মাইন, কাঁটাতার প্রভৃতি সঙ্গে নিয়ে আসতে পারেনি। আমার কমান্ডে মােট ৪৫ হাজার সৈন্য ছিলএদের মধ্যে ৩৪ হাজার ছিল সেনাবাহিনীর এবং অবশিষ্ট ১১ হাজার ছিল সেনাবাহিনীর বাইরের লোেক, এদের মধ্যে ছিল সিএএফ, পশ্চিম পাকিস্তান পুলিশ ও সশস্ত্র বেসামরিক লােকজন। ৩৪ হাজার নিয়মিত সৈন্যের মধ্যে ১১ হাজার ছিল সাজোয়া, গােলন্দাজ, প্রকৌশল, সিগনাল ও সহায়তাদানকারী ইউনিটের সদস্য। মাত্র ২৩ হাজার পদাতিক সৈন্যকে এফডিএল (ফরােয়ার্ড ডিফেন্ডেড লােকালিটিজ) এর ট্রেঞ্চ ও রণাঙ্গনে পাঠানাে সম্ভব ছিল। সর্বোচ্চ ৪০ হাজার লােককে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাতে পারতাম আমি। আবার এদের অনেকেরই না ছিল পর্যাপ্ত অস্ত্র না ছিল নিয়মিত যুদ্ধের প্রশিক্ষণ। আমি ভারতীয়দের চোখে ধুলাে দিই যে, আমার তিনটি অসম্পূর্ণ ডিভিশন নয়; বরং ৪টি পূর্ণাঙ্গ ডিভিশন রয়েছে। আমাদের শক্তি সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না থাকায় ভারতীয়রা আমাদের সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ বলে অনুমান।
করতাে এবং তারা তাদের পৃষ্ঠপােষকদের সেভাবে লড়াই করার জন্য নির্দেশ দিত আজকের দিনে বিমান বাহিনীর সহায়তা ছাড়া কোনাে সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ। করা সম্ভব নয়। আমাদের ছিল মাত্র এক স্কোয়াড্রন পুরনাে জঙ্গীবিমান বিমান ঘাঁটি ছিল মাত্র একটি। উল্লেখ করার মতাে কোনাে রাডার ব্যবস্থাও ছিল না। ৫শ’ মাইল সমুদ্র উপকূল এবং তিনটি বড় নদী রক্ষায় আমার হাতে ছিল মাত্র ৪টি নেভাল গানবােট। আমার ডিভিশনগুলাে অপারেশনাল এলাকা অথবা ভারতের সঙ্গে প্রকাশ্য যুদ্ধ করার জন্য যথাযথভাবে সুসজ্জিত ছিল না। ট্যাংক, কামান, ট্যাংক-বিধ্বংসী গান ও বিমান-বিধ্বংসী কামানের ঘাটতি ছিল মারাত্মক। আমাকে চার জন অর্টিলারি ব্রিগেডিয়ারের বদলে দেয়া হয়েছিল মাত্র একজন। ব্যাটালিয়নে কোনাে আর্টিলারি উপদেষ্টা ছিল না। সুতরাং মাত্র একজন আর্টিলারি ব্রিগেডিয়ারকে গােটা পূর্ব পাকিস্তানে আর্টিলারি সহায়তা নিয়ন্ত্রণ ও সংগঠন করতে হতাে শত্রুর ১৩০ মিলিমিটার কামানের পাল্লা ছিল যেখানে ৩০ হাজার গজ সেখানে আমাদের কামানের পাল্লা ছিল মাত্র ১১ হাজার। সহায়ক অস্ত্রশস্ত্রের ঘাটতি ছাড়াও আমার আরেকটি সমস্যা ছিল আমাদের ক্ষুদ্র অস্ত্রগুলাে ছিল জার্মান, ব্রিটিশ, আমেরিকান ও চীনা। এগুলাে ছিল আবার বিভিন্ন ক্যালিভারের এ জন্য গােলাবারুদের সরবরাহ এবং এক সেক্টর থেকে আরেক সেক্টরে ইউনিটের বদলির সময় সমস্যা হতাে খুব। এসব বিষয় খুব সামান্য ও তুচ্ছ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এগুলাের সমন্বয় সাধন খুবই জরুরি, নয়তাে যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রতিকূলতায় পড়তে হয়। | আমার জন্য বরাদ্দ করা হয় তিনটি মাঝারি ট্যাংক রেজিমেন্ট ও আরেকটি হালকা ট্যাংক রেজিমেন্ট। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি পেয়েছিলাম মাত্র একটি ট্যাংক। রেজিমেন্ট এবং এম-২৪ লাইট চ্যাফে ট্যাংকসহ এক স্কোয়াড্রন ট্যাংক। এগুলাে ছিল কোরীয় যুদ্ধে ব্যবহৃত ট্যাংক।
১৯৪৪ সালে এ ট্যাংক যুদ্ধ ক্ষেত্রে নামানাে হয়। এতে ৭৫ মিলিমিটার ব্যাসের একটি কামান বসানাে থাকে। এসব ট্যাংক ভারতের আধুনিক ট্যাংকের বিরুদ্ধে অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়। কিন্তু ট্যাংকে ফ্যান বেল্টের বদলে ছিল দড়ি এবং আরাে কিছু ট্যাংক ছিল যেগুলােকে অন্যান্য ট্যাংক দিয়ে টেনে টেনে স্টার্ট করাতে হতাে। আমার জন্য ৪টি মাঝারি ও একটি ভারী গােলন্দাজ রেজিমেন্ট বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু আমার একটিও ভারী অথবা মাঝারি। কামান ছিল না। আমার জন্য যতগুলাে ফিল্ড গানের অনুমােদন দেয়া হয় তার মধ্যে। পেয়েছিলাম বড়জোর অর্ধেক। | সৈন্যদের স্বাস্থ্য রক্ষা করা ছিল আরেকটি বড় সমস্যা। জলবায়ু ছিল আর্দ্র, এ ধরনের জলবায়ুতে পশ্চিম পাকিস্তানের লােকজনের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। পূর্ব। পাকিস্তানের আর্দ্র জলবায়ুর কারণে সৈন্যদের পায়ে ঘা ও ছত্রাক দেখা দেয়। হাসপাতাল ছিল খুবই কম। এছাড়া, ওষুধ ও ডাক্তার বিশেষ করে বিশেষজ্ঞের অভাব ছিল প্রকট। সামরিক সরঞ্জাম ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে মেডিকেল ইউনিটগুলাে কাজের উপযােগী ছিল না। সন্তোষজনক ব্যবস্থা ছিল না হতাহতদের সরিয়ে আনার। অনেকেই পথে মারা যেত নয়তাে পঙ্গু হয়ে যেত যথাযথ চিকিৎসা পেয়ে আহত সৈন্যদের ড্রেসিং করার অথবা তাদের মরফিন ইনজেকশন দেয়ার কোনাে সুযােগ ছিল না। আমার সৈন্যরা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শুষ্ক অঞ্চলের লােক। তাদের অনেকেই জীবনে বড় নদী দেখেনি। কোমর পানির চেয়ে বেশি পানিতে কিভাবে সাঁতার দিয়ে পাড়ি দিতে হয় তাও তারা জানতাে না। পূর্ব পাকিস্তানে প্রতি পাঁচ থেকে ছয় মাইলের মধ্যে অন্তত একটি নদী অথবা খাল। বড় বড় নদীগুলাে আমাদের কাছে সমুদ্র বলে মনে হতাে। অপারেশনকালে সাঁতার, দাঁড় টানা ও ডুব দেয়া শেখানাে হতাে। এ কারণে বর্ষাকালে প্রদেশব্যাপী সৈন্য চলাচল ব্যাহত হয়।
যুদ্ধ-বহির্ভূত কিছু উপদ্রব ছিল যেগুলাে যুদ্ধ সংক্রান্ত ভীতির চেয়েও ছিল বিপজ্জনক। এগুলাের মধ্যে ছিল মশা ও ম্যালেরিয়া, মাছি, ছারপােকা, জোক এবং আরাে অনেক প্রাণী। বর্ষাকাল কয়েক মাস স্থায়ী হয়। তখন গ্রামাঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। গাড়ির বদলে নৌকা। এসব ঘটনা সৈন্যদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। এমন একটি প্রতিকূল পরিবেশে আমাকে প্রদেশে আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশ সরকার গঠনে বাঙালিদের প্রচেষ্টা নস্যাৎ এবং ভারতীয় আগ্রাসন হলে সে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আমাকে প্রদেশে এক ঝা-বিক্ষুব্ধ সমুদ্র পাড়ি দেয়ার জন্য ভাঙা মাস্তুল সম্বলিত একটি প্রাচীনকালের জাহাজ দেয়া হয়েছিল। আমার গন্তব্য নির্ধারণে কোনাে বাতিঘর ছিল না। আমার মিশন ও দায়িত্বের কোনাে লিখিত দিক-নির্দেশনাও আমাকে দেয়া হয়নি। ব্রিগেডিয়ার চৌধুরী তারই বই সেপ্টেম্বর ১৯৫৭ বিফোর এন্ড আফটার’-তে লিখেছেন, ‘জেনারেল ইয়াহিয়া ও তার উপদেষ্টারা পুরাে বিষয়টিকে এত হালকাভাবে দেখেছেন যে, তারা লে. জেনারেল নিয়াজিকে কোনাে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দানের প্রয়ােজন বােধ করেননি। আমি নিশ্চিত যে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন কারণ ইয়াহিয়া বুঝতে পেরেছিলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের পতন বেশিদিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। তাই তিনি এ ঘটনার দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে না নিয়ে লে. জেনারেল নিয়াজির কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।’ আমাদের ঘাটতি, সমস্যা ও বাধা-বিপত্তি যেমন ছিল তেমনি কিছু সুবিধাও ছিল। সৈন্য পরিচালনায় আমার ছিল ব্যাপক অভিজ্ঞতা। আমার অধীনস্থ সৈন্যরা ছিল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সৈন্য। আমরা ছিলাম নিয়মিত বাহিনীর সৈন্য। এছাড়া আমাদের সামরিক ঐতিহ্য ও পটভূমি ছিল। আমার অধীনস্থ অধিকাংশ ইউনিট পাকিস্তানের প্রতিটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। আবার কিছু কিছু ইউনিট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও লড়াই করেছে। আমার সিনিয়র অফিসারগণ বিশেষ করে জেনারেলগণ পাকিস্তানের প্রতিটি যুদ্ধে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।
শান্তি ও যুদ্ধকালে তাদের সৈন্য পরিচালনায় ছিল বিস্তর অভিজ্ঞতা। আমি লে. কর্নেল থেকে ওপরের দিকে প্রতিটি অফিসার এবং অনেক জুনিয়র কমিশন্ড ও নন-কমিশন্ড সিনিয়র অফিসারদের চিনতাম। ব্রিটিশরা আমাদের প্রতিপক্ষ বাঙালিদের কখনাে একটি যােদ্ধা জাতি হিসেবে বিবেচনা করেনি। তাদের কোনাে সামরিক ঐতিহ্য, পটভূমি অথবা যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ছিল না। তাদেরকে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বিশেষ করে লড়াকু ইউনিটে তালিকাভুক্ত করা হতাে না। তারা কোনাে সুসংবদ্ধ টিম ছিল না, তারা ছিল বিভিন্ন ইউনিট, গ্রুপ বা ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি মাত্র। তাদের কমান্ডার কর্নেল ওসমানী সে ধরনের লােক ছিলেন না যিনি তার অধঃস্তনদের মাঝে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে পারেন। তিনি ছিলেন মূলত রয়াল ইন্ডিয়ান আর্মি সার্ভিস কোরের লােক এবং ব্রিটিশ-ভারত বিভক্তির পর তিনি পদাতিক বাহিনীতে বদলি হন। অফিসের কাজকর্মে তার অভিজ্ঞতা ছিল, তবে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য পরিচালনায় তার কোনাে অভিজ্ঞতা ছিল না। সার্ভিসে তিনি ছিলেন আমার সিনিয়র। রাওয়ালপিন্ডিতে যখনি তিনি আমাকে টেলিফোন করতেন তখনি বলতেন, ‘টাইগার, সিনিয়র টাইগার বলছি। কারণ তিনি ছিলেন বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিনিয়র অফিসার যার ব্যাজ ছিল। টাইগার। আমার সুশৃংখল ও অভিজ্ঞ সৈন্যদের বিরুদ্ধে কর্নেল ওসমানী ও বাঙালিদের লড়াই করে টিকে থাকার সম্ভাবনা ছিল খুবই সামান্য।
আমি আশাবাদী ছিলাম যে, বাঙালিরা সংখ্যায় বেশি এবং ভারতও তাদেরকে দৈহিক, অস্ত্রগত ও আর্থিক সহায়তা এবং রাশিয়া তাদেরকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেয়া সত্ত্বেও আমরা সফল হব। ভারতীয়রা তখনাে ইউনিট অথবা ফরমেশনের আকারে পূর্ব পাকিস্তানে ছিল না। বিশেষ ক্ষেত্রে ভারতীয় অফিসার ও অন্যান্য পর্যায়ের লােকজনের উপস্থিতি ছিল। যেমন-সেতু ও রাস্তাঘাট ধ্বংস ইত্যাদি এবং বাঙালিদের শক্তি ও নৈতিক মনােবল বৃদ্ধিসহ কয়েকটি। ভারত সরকার জয়লাভের ব্যাপারে ১শ’ ভাগ নিশ্চিত না হয়ে অথবা যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া বিশৃঙ্খলভাবে সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ অথবা প্রকাশ্য যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে না। পূর্ব পাকিস্তানে পৌঁছানাের পর আমি এলাকা এবং বিরাজিত পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত হতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কমান্ড গ্রহণকালে আমি যুদ্ধের পরিস্থিতি সম্পর্কে পুরােপুরিভাবে জ্ঞাত ছিলাম। তাই ডিভিশনের কমান্ডারদের কাছে নতুন করে নির্দেশ পাঠাতে আমাকে। বেগ পেতে হয়নি। প্রতিটি লড়াইয়ের আগে, লড়াই চলাকালে এবং লড়াই শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি অগ্রবর্তী এলাকা পরিদর্শন অব্যাহত রাখি। সারাক্ষণ আমাকে টেলিফোন অথবা ওয়ারলেসে ব্যস্ত থাকতে হতাে। টেলিফোনের কাজে নিয়ােজিত ছিল বাঙালিরা। তাই তা বিশ্বাসযােগ্য ছিল না। ওয়ারলেস একটি ভালাে সংযােগ কিন্তু এটা ব্যক্তিগত যােগাযােগের বিকল্প নয়। আমার পরিদর্শন টনিকের মতাে কাজ করতাে এবং সকল স্তরের সৈন্যরা অভিনন্দন জানাতাে। আমি শুধু ইউনিট অথবা ফরমেশনের সদর দপ্তরই নয়, সৈন্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য অগ্রবর্তী এলাকা পরিদর্শন করেছি। | যুদ্ধের পরিকল্পনা আমি করতাম, এ ব্যাপারে আমি ডিভিশন ও অন্যান্য ইউনিটের কমান্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করতাম। তবে সার্বিক কৌশলগত পরিকল্পনা ও টেকনিক্যাল সিদ্ধান্ত ছিল আমার।
সূত্র : দ্য বিট্রেয়াল অভ ইস্ট পাকিস্তান – লে. জে. এ. এ. কে. নিয়াজি (অনুবাদ)