খ্রিস্ট ধর্মযাজকদের ব্লাসফেমি ইসলামী বিরােধী আইন
স্বাধীনতা বিরােধী ও পবিত্র ইসলামের মুখােশধারী শ্রেণী খ্রিস্টানদের ব্ল্যাসেফমি আইন বাংলাদেশে প্রবর্তনের দাবি তুলেছে। জামাত নেতা মওলানা মতিউর রহমান নিজামী একটি বিল আকারে উক্ত ব্লাসফেমি আইন জাতীয় সংসদে উত্থাপনের জন্য পেশ করেছেন। জামাত বিগত অধিবেশনে যােগদান না করায় প্রস্তাবটি আলােচনার জন্য উত্থাপিত হয়নি। কিন্তু ২২ জুন বিএনপির সংসদ সদস্য মওলানা আতাউর রহমান খান একটি মনযােগ আকর্ষণী নােটিশ সম্পর্কে আলােচনা প্রসঙ্গে ধর্ম ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অবমাননার দায়ে যুক্তিসংগত ও কঠিন শাস্তি’ বিধানের সুপারিশ করেন। তিনি সন্ত্রাস দমন আইনের মত বিশেষ আইন প্রণয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে উক্ত বিশেষ মহলটি পরিকল্পিতভাবে সংসদের বাইরে মিছিল-সমাবেশ করে উক্ত আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছে। এরূপ অপতৎপরতায় বিভ্রান্ত যেকোন সাধারণ মানুষ মনে করতে পারে যে, ধর্ম ও পবিত্র কোরআন অবমাননার শাস্তি বিধানে আপত্তি করার সঙ্গত কোন কারণ থাকতে পারে না। ইসলাম বিরােধী কোন লােক ছাড়া এ ব্যাপারে কেউ আপত্তি করতে পারেন না। এসব দিক বিবেচনা করে আমরা বিষয়টি সম্পর্কে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আলােচনা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। | ব্লাসফেমি ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ ধর্ম নিন্দা বা ঈশ্বর নিন্দা। এটি খ্রিস্টানদের উদ্ভাবিত শব্দ, খ্রিস্ট ধর্মযাজকদের রচিত ও প্রবর্তিত একটি খ্রিস্টধর্মীয় আইন। উক্ত আইনে বলা হয়েছে, “এমন কোন প্রকাশনা, যাতে ঈশ্বর, যিশু খ্রিস্ট, বাইবেল অথবা অন্য কোন প্রার্থনা পুস্তক বা ধর্মগ্রন্থ যা উদ্দেশ্যপ্রণােদিতভাবে মানুষের অনুভূতিকে আহত করে অথবা চার্চের উত্তেজনা সৃষ্টি করে কিংবা চরিত্রহীনতার প্রসার ঘটায় তাই “ব্লাসফেমি”। (The Law Lexicon; P-142)
নিউ ইনসাইক্লোপেডিয়া অব ব্রিটানিকায় ব্লাসফেমি সম্পর্কে বলা হয়েছে, “সেন্ট থমাস একুইনাস ব্লাসফেমিকে পাপ’বলেছেন। ইহুদী আইনে এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান ষষ্ঠ শতাব্দীতে ব্লাসফেমির শাস্তি মৃত্যুদণ্ড সাব্যস্ত করেন। এ সময় থেকে খ্রিস্টধর্মে ব্লাসফেমি আইন চালু হয়েছে।” (The New Encyclopaedia of Britanica, Vol : P-276) | রােমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকরা চার্চের, আধিপত্য অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে ভিন্ন মতাবলম্বীদের শায়েস্তা করার জন্য এই আইন প্রবর্তন করেন। খ্রিস্টধর্ম প্রচার-প্রসারের সূচনায় রােমান রাজশক্তির পৃষ্ঠপােষকতা লাভ করে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত রােমানরা ছিল সমকালীন বিশ্বে একক পরাশক্তি। ইটালীর রােম নগরী ছিল রােমান সাম্রাজ্যের রাজধানী। এখান থেকেই খ্রিস্টধর্ম সারা ইউরােপে বিস্তার লাভ করে। প্রথম দিকে উপাসনার জন্য চার্চ ছিল না। রােমানদের পাবলিক হলগুলাে উপাসনার জন্য ব্যবহৃত হতাে। পরবর্তীতে এসব পাবলিক হলের আদলে চার্চ বা গীর্জা তৈরি শুরু হয়। নিউ টেস্টামেন্টের বর্ণিত দুই ধর্মযাজক পিটার ও পলের সাথে রােমান সম্রাটদের ঘনিষ্ঠ। সম্পর্ক ছিল। পিটার ছিলেন রােমের প্রথম বিশপ। খ্রিস্টানদের মতে, এই বিশপের নিকট মহাপ্রভু স্বর্গের চাবি দিয়ে রেখেছেন। এভাবে রােম খ্রিস্টধর্মের কেন্দ্রিকতা লাভ করে। রােমান সাম্রাজ্যের গভর্নরদের সহযােগিতায় ইউরােপের বিভিন্ন এলাকায় বিশপ নিয়ােগ হতে থাকে। সব বিশপরা ছিলেন রােমের বিশপের অধীন। সম্রাট সপ্তম গ্রেগরির আমলে রােমের বিশপকে পােপ ঘােষণা করা হয়। এভাবে রােমান চার্চের ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায়ে চার্চ শুধু ধর্মীয় সংস্থা হিসেবে না থেকে খ্রিস্টান জগতের সৈন্যবাহিনী থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। পােপের নির্দেশে শাসকও পরিবর্তন হয়ে যেতাে। প্রজারা পােপের নির্দেশে যে কোন শাসকের উপর থেকে তাদের সমর্থন বা আনুগত্য প্রত্যাহার করে নিত। চার্চের ভাষা ছিল। ল্যাটিন। এই ভাষার চর্চা ধর্মযাজকদের মধ্যে সীমিত ছিল। যাজকরা ছাড়া অন্যরা লেখাপড়া বড় একটা জানত না। ফলে শাসক বা রাজারা যাজকদেরই বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পদে নিয়ােগ করতেন। যাজকরা ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা পেয়ে প্রজাসাধারণের সাথে যথেচ্ছ ব্যবহার করতেন। তারা অপরাধ করলেও মাফ পেয়ে যেতে কিংবা নামমাত্র শাস্তি ভােগ করতে হতাে হত্যা করলেও কোন ধর্মযাজককে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতো না। অপরদিকে ধর্মযাজকরা ভূমি ও অর্থের বিনিময়ে প্রজাসাধারণের মধ্যে স্বর্গের সার্টিফিকেট বিতরণ করতেন। তাতে করে সারা ইউরােপের অর্থ সম্পদ ও ভূমি ধর্মযাজকদের কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। তারা বিলাসী জীবন যাপন করতে থাকে। পবিত্র ধর্মের নামে যাজকদের এই শােষণ ও ভােগ-বিলাসের বিরুদ্ধে সচেতন নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধে ওঠে। এই অসন্তোষকে যাজকরা ধর্মের বিরােধিতা বলে আখ্যায়িত করেন।
চর্চা তথা ধর্মযাজকদের প্রভাব প্রতিপত্তি অক্ষুণ। রাখার স্বার্থে রােমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকরা ব্লাসফেমি আইন প্রবর্তন করেন। চার্চের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই তাকে ধর্মের নিন্দাকারী ও ধর্মদ্রোহী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতাে। ধর্মযাজকদের বিরুদ্ধে এই অসন্তোষ সবচেয়ে ব্যাপক দেখা দেয় দক্ষিণ ফ্রান্সে। লিয়ােনসের পিটার ওয়ালডু ও তার অনুসারীরা এবং দক্ষিণ ফ্রান্সের আলবী শহরের অধিবাসীরা চার্চের কর্তৃত্ব অস্বীকার করে বসে। তারা ধর্মযাজকদের বিপুল অর্থ-সম্পদ অর্জন ও বিলাসী জীবৃনের বিরুদ্ধে সমালােচনামুখর হয়ে উঠেন। ল্যাটিন ভাষার বাইবেল জনগণের ভাষায় রূপান্তরিত করেন। তারা ঘােষণা করেন, ধর্মযাজকদের এ ধরনের বিলাসী জীবন যিশু খ্রিস্টের শিক্ষা ও আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ধর্মযাজকদের বিরুদ্ধে এরূপ অসন্তোষ চার্চের কর্তৃত্ব বিপন্ন করে তােলে। পােপ তৃতীয়। নিস্পাপ এই অসন্তোষ কঠোর হস্তে দমন করেন। তাঁর দমন অভিযানে দক্ষিণ ফ্রান্সে। জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে। খ্রিস্ট ধর্মযাজকদের মনগড়া ও প্রচলিত ব্যাখ্যার সাথে মতপার্থক্যের অভিযােগে যুগে যুগে এই ব্লাসফেমি খড়গের মাধ্যমে বহু মনীষী, বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারককে চরম নির্যাতন-নিপীড়ন ও লাঞ্ছনা ভােগ করতে হয়েছে। অনেককে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও আবিষ্কার করেন “পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে।” এই তত্ত্বের জন্য তাকে ৬১৬ খ্রিস্টাব্দে রােমের ধর্মযাজকদের বিচার সভার সম্মুখীন হতে হয়। নিজের ভুল স্বীকার করে জীবন ভিক্ষা পেলেও অবশিষ্ট জীবন তাকে গৃহবন্দী থাকতে হয়েছে। মার্টিন লুথার, কালভিনসহ কয়েকজন সংস্কারক ব্লাসফেমি আইনে বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন। জোহান অব আর্কসহ অনেককে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এক পর্যায়ে চার্চের এই মনগড়া আইনের বিরুদ্ধে সারা ইউরােপে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়। ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে ধর্মযাজকদের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে তারা সােচ্চার হয়ে উঠে। তারা চার্চের সকল ক্ষমতা ও সুযােগ-সুবিধা কেড়ে নেয়। বর্তমানে ইংল্যান্ডে ও অপর কোন কোন দেশে কাগজে ব্লাসফেসি আইন থাকলেও বাস্তব জীবনে তার কার্যকারিতা বড় একটা নেই। ইউরােপ তথা খ্রিষ্টজগতে ব্লাসফেমি আইনের কার্যকারিতা না থাকলেও পাকিস্তানে এই আইন প্রবর্তন করা হয়েছে। পাকিস্তানের বকধার্মিক প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক সেখানে এই কালাকানুন জারি করেন। এই আইনে একজনের মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়। বর্তমানে পাকিস্তানেই এই আইন তুলে দেয়ার জন্য দাবি উঠেছে। বেনজীরের সরকারও এই কালাকানুন তুলে দেয়ার কথা ঘােষণা করেছেন। এদিকে বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতক দালাল ও পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা এই আইন দণ্ডবিধির অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। উঠেপড়ে লেগেছে।
গত কিছুদিন থেকে ধর্ম অবমাননার শাস্তির দাবিতে হরতাল, মিছিল, বিক্ষোভ-সমাবেশ করে চলেছে। এসব ধর্মব্যবসায়ী একটি নন ইস্যুকে কেন্দ্র করে ধর্ম রক্ষার নামে সমাজে একটা অন্ধ উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। ধর্মের মর্যাদা রক্ষার ব্যাপারে কোন মুসলমানই দ্বিমত পােষণ করতে পারে না। তবে তা করতে হবে ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের ভিত্তিতে, অহিংস ও যৌক্তিক পন্থায়। অন্যথায় তা সামাজিক সম্প্রীতিই নষ্ট করবে না, ইসলামের জন্যও দুর্নাম বয়ে আনবে। আমরা আগেই বলেছি, ব্লাসফেমি ইংরেজি শব্দ। খ্রিস্ট ধর্মযাজকরা ধর্মের নামে তাদের আধিপত্য ও শােষণ-নির্যাতন অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে এই ব্লাসফেমি আইন প্রবর্তন করে। পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এ ধরনের কোন বিধান নেই। বস্তুত যারা ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ কিংবা আল্লাহতায়ালার নিন্দা করে তাদেরকে পরকালে আল্লাহ শান্তি প্রদান করবেন। ইহজগতে এই অপরাধের বিচার করার অধিকার আল্লাহতায়ালা কোন মানুষকে দেননি। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে পরিষ্কার বলা হয়েছে, “যখন তােমরা শুনবে আল্লাহর কোন আয়াতকে অস্বীকার করা হচ্ছে এবং তা নিয়ে বিদ্রুপ করা হচ্ছে। তখন তােমরা এদের সঙ্গ পরিত্যাগ কর, যতক্ষণ না তারা এই প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে ফিরে আসে। অন্যথায় তােমরাও তাদের দলে গণ্য হবে। কপট এবং সত্য প্রত্যাখ্যানকারী সবাইকে আল্লাহ জাহান্নামে একত্র করবেন।” (সূরা নিসাঃ ১৪০) পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, যারা ধর্মের নিন্দা করে কিংবা আল্লাহর আয়াত নিয়ে বিদ্রুপ করে তাদের সাথে মেলামেলা ছেড়ে দিতে হবে এবং সেটা সবসময়ের জন্য নয়, শুধু নিন্দা বা বিপকালীন সময়ের জন্য। এই সাময়িক মেলামেশা বন্ধ রাখাটাই উক্ত নিন্দাকারী ও বিদ্রুপকারীর ইহজাগতিক শাস্তি সেটাও আল্লাহই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। পরকালে তার শাস্তি হচ্ছে নরকবাস। আর জাহান্নামে পাঠানাের অধিকার ও ক্ষমতা রাখেন একমাত্র আল্লাহতায়ালা। কোন খতিব, মুফতি, শায়খুল হাদীস উপাধিধারী কোন ব্যক্তি, ইসলামের মুখােশধারী কোন রাজনৈতিক দল কিংবা সরকারকে আল্লাহতায়ালা এই অধিকার প্রদান করেননি। কোন শ্রেণীবিশেষ, রাজনৈতিক দল কিংবা সরকার যদি দেশের ধর্মপরায়ণ জনসাধারণের বিবেক কেনার কুমতলবে আল্লাহতায়ালার এই পারলৌকিক শাস্তি ঘােষণাকে ইহকালে টেনে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করে, খ্রিস্ট ধর্মযাজকদের উদ্ভাবিত ব্লাসফেমি আইনকে নিজে দেশের দণ্ডবিধির অন্তর্ভুক্ত করে, তাহলে এটা হবে ধর্মের নামে একটা ধর্মবিরােধী পদক্ষেপ। ইসলাম মানুষের চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর কখনাে হস্তক্ষেপ করে । কারণ ঈমান বা বিশ্বাস হচ্ছে মানুষের অন্তরের ব্যাপার। কোন মতাদর্শ জোর করে কারাে উপর চাপিয়ে দেয়া যায় না।
গায়ের জোরে চাপিয়ে দিলে সেটা আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট সত্য বলে বিবেচিত হয় না। এ জন্যই আল্লাহতায়ালা ধর্মীয় ব্যাপারে মানবজাতিকে পুরাে স্বাধীনতা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ঘােষণা করা হয়েছে, “ধর্ম বা জীবন পদ্ধতি গ্রহণের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই।” (২ঃ২৫৬) “বল, সত্য তােমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে প্রেরিত, সুতরাং যার ইচ্ছে হয় বিশ্বাস করুক এবং যার ইচ্ছে হয় সত্য প্রত্যাখ্যান করুক।” (১৮ঃ২৯) “তােমরা আল্লাহকে ছাড়া যার ইচ্ছে ইবাদত করাে।” (৩৯১৫) এমনি করে পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে মানুষকে ধর্ম গ্রহণের স্বাধীনতা ঘােষণা করা হয়েছে। আরাে বলা হয়েছে, যারা সত্য গ্রহণ করবে তাদেরকে আল্লাহতায়ালা পরকালে পুরস্কৃত করবেন। যারা গ্রহণ করবে না, তাদেরকে তিনি শাস্তি প্রদান করবেন। কিন্তু সত্য গ্রহণ না করলে, আল্লাহকে অস্বীকার করলে, পবিত্র কোরআনের অবমাননা করলে কাউকে ইহকালে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে, এরূপ বিধান পবিত্র কোরআনের কোথাও নেই। মহানবীকে (সঃ) এক ব্যক্তি মােহাম্মদ (প্রশংসিত) না বলে মােজাম্মম (নিন্দিত) বলতাে। এ কথা শুনে মহানবী (সঃ) হেসে বললেন, “যার নাম মােহাম্মদ সে কখনাে। মােজাম্মম হতে পারে না।” মহানবী (সঃ) তাকে নিন্দাকারী মােনাফেক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সুলুলকে কোন প্রকার শাস্তি প্রদান করেননি। সে মারা গেলে তিনি (সঃ) তার জানাজা পর্যন্ত পড়িয়েছেন। এই হলাে ইসলামের উদারতা ও মহানুভবতার প্রকৃত শিক্ষা ও আদর্শ। অপরদিকে আমাদের দেশে ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণকারী জামাত নেতা নিজামী বলছেন, “খ্রিস্টানরা যদি ব্লাসফেমি আইন করতে পারে, তাহলে আমরা পারি না কেন? অতএব আমাদের দাবি বিলাতের মত বাংলাদেশেও ব্লাসফেমি আইন পাস করতে হবে।” বাহু কি চমৎকার অবদান! খ্রিস্টানরাতাে তিন খােদা দাবি করে। হযরত ঈসাকে আল্লাহর পুত্র বলে বিশ্বাস করে। তাই বলে আমাদেরকেও কি তাই করতে হবে? নিজামী কি তা করেন? এ ধরনের বন্ধুহীন উক্তি সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেই মহানবী (সঃ) বলে গেছেন, “শেষ যুগে এই উম্মতের লােকেরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের অনুসরণ করবে।” মহানবীর (সঃ) এই বাণী বর্তমানে অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হতে দেখা যাচ্ছে। যারা ইসলাম, পবিত্র কোরআন ও আল্লাহ তায়ালার নিন্দা করে, সমালােচনা করে, আমরাও তাদের ঘৃণা করি। তবে ব্লাসফেসি আইন করে তাদেরকে হত্যা করা যাবে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা যাবে, কিন্তু তাদেরকে সৎপথে আনা যাবে। তাদেরকে সৎপথে আনার জন্য পবিত্র কোরআন অনুমােদিত যুক্তিগ্রাহ্য পথ অবলম্বন করতে হবে। বস্তুত এটাই ইসলাম অনুমােদিত ধর্ম প্রচারের একমাত্র পথ। এ পথের বাইরে অন্য কোন পথ ইসলাম অনুমােদন করে না। দেশের আপামর জনসাধারণের প্রতি আমাদের অনুরােধ, আপনারা পবিত্র ধর্মের মুখােশধারী এসব মতলববাজদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবে না।
জনকণ্ঠ ও আজকের কাগজ,
সূত্র : বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ – মওলানা আবদুল আউয়াল