You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাবরী মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদের নামে–

বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ

ভারতের উগ্রপন্থী ও সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের পরিকল্পিত হামলায় ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ধ্বংসের মাধ্যমে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং বিশ্ব মুসলিমের ধর্মানুভূতিতে যে আঘাত পড়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে ও প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপীই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে, বিক্ষোভও প্রদর্শিত হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার ব্যাপারটিও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ভারতে এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে, ভারতের সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার মতাে একটি ধর্মবিরােধী, মানবাধিকার বিরােধী এবং জঘন্য সাম্প্রদায়িক কান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ইত্যাদি তাে অনুষ্ঠিত হচ্ছেই, বিশ্বের অন্যত্রও বহু দেশ এবং সেখানকার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এই মানবতাবিরােধী ও মধ্যযুগীয় বর্বর কাণ্ডের নিন্দায় মুখর। উগ্রপন্থী ও সাম্প্রদায়িক হিন্দুরা বাবরী মসজিদ ধ্বংস করার এবং এর বিরুদ্ধে নিন্দা, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ইত্যাদি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতে যে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ও দাঙ্গা সংঘটিত হচ্ছে, জানমালের যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশে এবং বিশ্বের অন্যত্রও প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ইত্যাদির পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে ভাঙচুর ইত্যাদি সংঘটিত হয়েছে তাও অবাঞ্ছিত, নিন্দনীয় এবং মানবাধিকার বিরােধী। আশার কথা, বাবরী মসজিদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে নিন্দায় ও প্রতিবাদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশ এবং অন্যান্য দেশও যেমন মুখর তেমনি এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে অনেক ক্ষেত্রে যে অবাঞ্ছিত ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, মানবতাবিরােধী ব্যাপার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেষ্টা করেছে, তার বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ এবং বিশ্বের আরও অনেক দেশই প্রতিবাদে মুখর। বাংলাদেশের জনগণ ইতিমধ্যেই এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিরােধ গড়ে তুলেছে। পৃথিবীর যে দেশেই এবং যেখানেই সংঘটিত হােক না কেন, যে কোন সম্প্রদায়ের ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানা, ধর্মীয় পবিত্র স্থান নষ্ট বা ধ্বংস করা শুধু ধর্মবিরােধী আর। সাম্প্রদায়িক ব্যাপারই নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবতা বিরােধী ব্যাপার বলেই গণ্য করতে হবে এবং তা রুখতেও হবে। বস্তুত উগ্র ও সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের হামলায়। ভারতের অযােধ্যায় ঐতিহাসিক ও সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বাবরী মসজিদ ধ্বংস শুধু সাম্প্রদায়িক ব্যাপারই নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারও।

আর তা মানবতাবিরােধী এবং সভ্যতাবিরােধীও। কেননা, যে কোন ধর্মবিশ্বাস লালন, পরিপােষণ, ধর্মীয় কর্তব্য। আচার অনুষ্ঠান পালন, উপাসনা এবং ধর্মীয় পবিত্র স্থান রক্ষা, মৌলিক মানবাধিকারের অন্তর্গত, জাতিসংঘ সনদেরও তা অন্তর্ভুক্ত। বাস্তব কারণেই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এবং বিশেষভাবে গণতান্ত্রিক দেশসমূহের সংবিধানেও অন্যান্য মৌলিক মানবাধিকারের সঙ্গে ধর্মীয় স্বাধীনতা, ধর্মবিশ্বাস লালন, পরিপােষণ, ধর্মচর্চা, ধর্মীয় পবিত্র স্থান রক্ষার অধিকারও স্বীকৃত। আর তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব। যে কোন মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানা, যে কোন ধর্মের ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পবিত্র স্থান নষ্ট বা ধ্বংস করা মৌলিক মানবাধিকারে বিরােধী তাে বটেই, ধর্মের আদর্শ এবং শিক্ষারও বিরােধী। এ কারণেই, বাবরী মসজিদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী এবং ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব দেশের মানুষই নিন্দায় ও প্রতিবাদ মুখর। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতে এবং মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি অন্যান্য অনেক দেশেও যাতে কারাে ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবতাবিরােধী কর্মকাণ্ডের মতাে কোন অবাঞ্ছিত ব্যাপার আর না ঘটে, সেজন্যেও সংশ্লিষ্ট সব দেশের এবং বিশ্বের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ আবেদন জানাচ্ছে। মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়া এবং ধর্মীয় পবিত্র স্থান ধ্বংস করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং মানবতাবিরােধী বলেই জাতিসংঘ মহাসচিব বুট্রোস ঘালিও ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ধ্বংসের নিন্দা করেছেন। এই ঘটনার পরবর্তী পর্যায়ে ও প্রতিক্রিয়ায় সহিংসতায় ভারত ও প্রতিবেশী দেশসমূহ শত শত লােক নিহত হওয়ারও নিন্দা করেছেন তিনি। মহাসচিব হিন্দু ও মুসলমানদের প্রতি সংযম প্রদর্শন, আলােচনার মাধ্যমে এবং সহিষ্ণুতা ও মানবতাবােধের চেতনায় নিজেদের মতবিরােধ দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের এই আবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবাহী। বস্তুত, মানবাধিকারের অন্তর্গত মৌলিক ধর্মীয় অধিকার এবং মানবতাবােধের চেতনা সমুন্নত রেখে, সংযম ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শনের মাধ্যমে এবং পারস্পরিক আলােচনার পথেই এ সমস্যা-সংকটের সমাধান করা যেতে পারে। পৃথিবীর বহু মুসলিম দেশ এবং অন্যান্য অনেক দেশও শান্তি আর সম্প্রীতির স্বার্থে বাবরী মসজিদ পুনঃনির্মাণের দাবি সােচ্চারকণ্ঠে জানিয়েছে। বাংলাদেশের সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এবং জনগণও এই দাবি তুলে ধরেছেন, ধরছেন। বস্তুত, এই কলঙ্ক মােচনের জন্য যেমন, শান্তি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার স্বার্থেও তেমনি মসজিদটি পুনঃনির্মাণ হওয়া দরকার। প্রসঙ্গত এ কথা উল্লেখ করাও আবশ্যক যে, ভারত হােক কিংবা অন্য যে কোন দেশেই হােক এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ও প্রতিবাদে ধর্মীয় পবিত্র স্থানে হামলা চালানাে, তা বিনষ্ট বা ধ্বংস করা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু কিংবা অন্য কারাে জানমাল বিপন্ন করাও হবে মানবতা বিরােধী এবং অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ।

বাংলাদেশ এবং এ দেশের জনগণ মৌলিক মানবাধিকার, গণতন্ত্র, মানবতাবাদ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আদর্শে গভীরভাবে বিশ্বাসী। এ ব্যাপারে রয়েছে বাংলাদেশের। উজ্জ্বল ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার। ভারতে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় ও প্রতিবাদে সারাদেশে সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল এবং অনেক ক্ষেত্রে কিছু হামলার। ঘটনা সংঘূটিত হওয়া সত্ত্বেও জনগণের কঠোর প্রতিরােধের মুখে তা ব্যাপকতা লাভ। করতে পারেনি। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পবিত্র স্থান ও জানমাল রক্ষায় এ দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। একশ্রেণীর দৃষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্ধ লােক স্থানে স্থানে মানবতাবিরােধী অপকর্ম চালাতে সক্ষম হলেও জনগণের ব্যাপক প্রতিরােধ তা স্তব্ধ করে দিয়েছে। বাবরী মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদের পাশাপাশি জনগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য মহল, সংস্থা, সংগঠন যে কোন মূল্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার, দুষ্কৃতকারীদের অপচেষ্টা বানচাল করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।  বাবরী মসজিদ ধ্বংসের কলঙ্কজনক ঘটনার পর থেকেই প্রতিদিন প্রকাশিত বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র, অন্যান্য পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীর পাতা উল্টালেই দেখা যাবে যে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে নিন্দা জ্ঞাপন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের খবরের পাশাপাশি শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে সরকার ও জনগণ যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে, এ সম্পর্কে দেশবাসীর প্রতি আবেদন জানিয়েছে তার খবরও রয়েছে। প্রতিটি সংবাদপত্র সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় নিবন্ধে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের কঠোর নিন্দা জ্ঞাপনের পাশাপাশি দুষ্কৃতকারী ও মানবতাবিরােধীদের রুখে দাড়ানাের এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি রক্ষার আবেদন জানিয়ে আসছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ধর্মীয় সংগঠন ও সংস্থার এবং অন্যান্য সংস্থা সংগঠনের সভাসমাবেশ ও মিছিলে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন এবং তা পুনঃনির্মাণের দাবির পাশাপাশি শান্তি-শৃংখলা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান ও আবেদন সােচ্চার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে ও হচ্ছে। ভারতের অযােধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ধ্বংসে আমাদের মনে ক্ষোভ আছে, ঘৃণা আছে। এই ঘৃণ্য ঘটনার দিন থেকে সারা বিশ্বের সাথে আমরা বাংলাদেশের মুসলমান, এমনকি এদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লােকেরা আমাদের সাথে একাত্ম হয়ে এই ঘৃণ্য ঘটনার নিন্দা করছে। আমরা একই স্থানে বাবরী মসজিদ পুনঃনির্মাণের জন্য ভারত সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছি। ভারত সরকারও মসজিদ পুনঃনির্মাণের সিদ্ধান্ত ঘােষণা করেছেন। ভারত সরকার সে দেশের উগ্র সাম্প্রদায়িক দলগুলাে নিষিদ্ধ ঘােষণা করেছেন।

একশ্রেণীর সুযোেগ সন্ধানী বাবরী মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদের আড়ালে আমাদের দেশেও কিছু অপ্রীতিকর ও দুঃখজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ধরনের আচরণ কোন বিবেকবান মানুষই সমর্থন করতে পারে না। আমাদের ধর্মও একজনের অন্যায়অপরাধের জন্য অন্যজনকে দায়ী করে না। ভারতের উগ্র হিন্দুদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের জন্য কোন অবস্থায়ই এখানকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা ইসলাম সমর্থন করে না। যারা এরূপ করবে কিংবা ইন্ধন যােগাবে তারা পবিত্র ইসলামের মহান উদারতা, বিশালতা ও পরমত সহিষ্ণুতার শত্রু। বাবরী মসজিদ পুনঃনির্মাণ ভারত সরকারের এই উদ্যোগ-আয়ােজন দেখে মুসলম বিশ্বে এ সম্পর্কিত বাদপ্রতিবাদ ও বিক্ষোভ থেমে গেছে বলা চলে। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশের বিশেষ একটি মহলের ভূমিকায়। তাদের আচার-আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারা বাবরী মসজিদ ইস্যুকে ভারত বিদ্বেষ ও সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের বিরুদ্ধে অন্য হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। গত জানুয়ারি মাসে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে উক্ত মহল অযােধ্যা যাওয়ার স্লোগান দিয়ে লংমার্চ কর্মসূচি গ্রহণ করে। | এখন আবার আসন্ন সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিঃ নরসীমা রাওয়ের আসাকে কেন্দ্র করে উক্ত মহলটি মাঠে নেমেছে। গতবারের তথাকথিত ইসলামবিরােধী লংমার্চ ছিল খেলাফত মজলিসের ব্যানারে। এবার ইতিমধ্যে বাবরী মসজিদ সংগ্রম কমিটি গঠিত হয়ে গেছে। সংগ্রাম কমিটির চেয়ারম্যান মওলানা আজিজুল হক এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঘােষণা করেছেন, ১০ এপ্রিল তারা বিমানবন্দর ঘেরাও করবেন। বাবরী মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর পুনঃস্থাপন না করা পর্যন্ত তারা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে | ঢাকার মাটিতে নামতে দিবেন না।” | সে সময় আমরা বলেছিলাম, “বাবরী মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদে এই লংমার্চ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হলেও এর লক্ষ্য আমাদের নিকট অস্পষ্ট। কারণ বাবরী মসজিদ অযােধ্যায়, ভারতে, একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে। সে দেশের সাথে আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সীমান্ত রয়েছে। মিছিলের উদ্যোক্তারা কোন যুক্তিতে এবং কিভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে অযােধ্যায় যাবেন, তা আমাদের নিকট অস্পষ্ট।”

গত রােববার অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে মওলানা আজিজুল হক বলেছেন, ‘সব কিছুই হবে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ।’ গত লংমার্চের সময়ও তিনি এরূপ মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত অহিংস ঘােষিত লংমার্চ সহিংস রূপ নেয়। পুলিশসহ বহু লােক হতাহত হয়। তাছাড়া দুই দেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সীমানা অতিক্রম করে অন্য দেশের ভেতরে তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে যাওয়ার জন্যে রওয়ানা দেয়া কি নিয়মতান্ত্রিক ব্যাপার? মওলানার নিকট নিয়মতান্ত্রিকতার সংজ্ঞাটা কি? বাবরী মসজিদ ধ্বংস করা ভারতীয় উগ্রপন্থী হিন্দুদের জঘন্য কাজ। সারা বিশ্বই এই জঘন্য কাজের নিন্দা করছে। আমরাও করছি। মওলানা সাহেব দেশের একজন অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আলেম ও ইসলাম বিশেষজ্ঞ। তিনি যেভাবে যে পদ্ধতিতে ভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য দেশের ধর্মপরায়ণ জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করেছেন ইসলাম কি তা অনুমােদন করে? | বাবরী মসজিদ পুনঃনির্মিত না হওয়া পর্যন্ত নিন্দা-প্রতিবাদ অব্যাহত থাকাটা | স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের | ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে, এই নিন্দা-প্রতিবাদ যেন কোন অবস্থায়ই নিয়ম-নীতি ছাড়িয়ে না যায়, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়। এ কথা অপ্রিয় হলেও বলতে হচ্ছে, গত কদিনে উত্তর প্রদেশের রাজ্য সরকার প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙ্গে দিয়েছেন আর সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। আদালত সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। সরকার নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে আপিল করবেন। অপরদিকে কেন্দ্রীয় সরকার বাবরী মসজিদ পুনঃনির্মাণের জন্য জমি হুকুমদখল করেছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনায় না গিয়েও বলা চলে, ভারত সরকার সব দিক সামাল দিয়ে মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কিত তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে চলেছে।

জানুয়ারি মাসে লংমার্চের সময় বহু লােক হতাহতের ঘটনা এবং তাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আয়ােজিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যােগদান করতে পারেননি। তাতে আমাদের মত গরিব দেশের বিপুল অর্থের অপচয় হয়েছে। জানুয়ারি মাসে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বানচাল হওয়ার পর গত ক’মাস লংমার্চের উদ্যোক্তারা অনেকটা নীরব ছিলেন। সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের তারিখ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে মওলানা সাহেব ও তার অনুসারীরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এই বিষয়টির প্রতি মওলানা সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সন্তোষজনক কোন জবাব দিতে পারেন নি। শােনা গিয়েছিল জানুয়ারি মাসে লংমার্চের আগ থেকে দু’জন পাকিস্তানী মওলানা ঢাকা এসে অবস্থান করছিলেন। লংমার্চের পর তারা চলে যান। কিছুদিন আগে মওলানা আজিজুল হক দেশের বাইরে যান। তিনি নাকি ওমরা পালন করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তার সাথে যাদের যােগাযােগ হয়েছে, তা আমাদের জানার কথা না। মওলানা সাহেব ও তার অনুসারীদের তৎপরতা দেখে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে, ফিলিস্তিনীরা ইসরাইলীদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে, তাদের বাপদাদার বাস্তুভিটা থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। বসনিয়া-হারজেগােভিনায় হাজার হাজার মুসলমানকে সার্বরা নিদারুণভাবে হত্যা করছে। হাজার হাজার মুসলিম নারীর উপর পাশবিক অত্যাচার চালানাে হচ্ছে। শত শত মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে। হাজার হাজার ইমামকে হত্যা করা হয়েছে।

জাতিসংঘসহ সারাবিশ্ব সার্বদের পৈশাচিকতার নিন্দায় মুখর হয়ে উঠেছে। আরাে বিস্ময়কর ব্যাপার হলাে, বসনিয়া ও হারজেগােভিনার মুসলমানরা মার খাচ্ছে কিন্তু তাদের অস্ত্রধারণ করতে দেয়া হচ্ছে না। একশ্রেণীর বিশ্ব মােড়লের কারসাজিতে জাতিসংঘের মাধ্যমে বসনীয় মুসলমানদের প্রতি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরােপ করা হয়েছে। কিন্তু মওলানা আজিজুল হক ও তার অনুসারীরা ফিলিস্তিনী ও বসনীয় মুসলমানদের প্রতি অত্যাচার, নির্যাতন ও শত শত মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদে টু শব্দটিও করছেন । এটা কোন ধরনের ধর্মনিষ্ঠতা? | আৱাে পিছনের দিক তাকালে বলতে হয়, ১৯৭১ সালে পাক হায়েনাদের অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের সময় মওলানা আজিজুল হক ও তার অনুসারীরা এ দেশেই ছিলেন। পাক হানাদার বাহিনীর সে সব বর্বরতা কি ইসলামসম্মত ছিল কি মওলানা সাহেবদের তাে এসবের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। গত ২ বছরে মওলানা সাহেব পাকিস্তানী বর্বরতার বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। এমন” বাংলাদেশ পাকিস্তানের নিকট ৫ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। গত ২২ বছরে তা । সুদে-আসলে কয়েকগুণ হয়েছে। কিন্তু মওলানা সাহেবেরা এসব পাওনা সম্পর্কে কোন। কথা বলেন না। লংমার্চ কিংবা মিছিলও করেন না। মওলানা সাহেবদের এই নীরবতার। পিছনে রহস্যটা কি? মানুষ অনেক রাজনৈতিক সচেতন হয়েছে। দেশবাসী এসব। বােঝেন। কিন্তু মওলানা সাহেবরা জনসাধারণকে এতটা’বােকা ভাবছেন কেন, আমাদের। বুঝে আসে না।

দৈনিক আল আমীন ঃ ৭-৪-৯৩

সূত্র : বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ – মওলানা আবদুল আউয়াল

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!