You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইসলামের নামে ইসলাম বিরােধী কথা–

বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ

জামাতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান সম্প্রতি জামাতের জেলা আমীরদের এক সম্মেলনে বলেছেন, “তার দল কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক আন্দোলনই নয়, জামাত পরিপূর্ণ একটি ইসলামী আন্দোলন। জামাতে ইসলামীর আন্দোলন সর্বশক্তিমান আল্লাহর তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে পরিচালিত।”  জামাতীদের এ ধরনের উক্তি শুনলে আমাদের হাসি পায়। হাসি পায় এ জন্য যে, এতাে দিন আমরা বলে আসছিলাম, জামাত পবিত্র ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। জামাতীরা আমাদের এই অভিযােগ জোর গলায় অস্বীকার করে আসছিল। কিন্তু সেদিন জামাত নেতার মুখে ঘুরিয়ে আমাদের অভিযােগটিই অন্যভাবে প্রকাশ পেল তিনি বলেছেন, তাদের দল শুধু রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, একটি পরিপূর্ণ ইসলামী আন্দোলন’। অর্থাৎ তারা রাজনৈতিক আর ইসলামী আন্দোলন একসাথে করছেন। মানে ইসলামকে রাজনৈতিক স্বার্থে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। আব্বাস আলী খানের মুখে যা শােনা গেল, এতােদিন এ কথাটাই আমরা বলে আসছিলাম। বস্তুত জামাতীদের বিগত পাঁচ দশকেরও অধিককাল রাজনৈতিক তৎপরতায় পবিত্র ইসলামকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারে ভুরি ভুরি প্রমাণ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তারা গণস্বার্থের বিরুদ্ধে পবিত্র ইসলামকে ব্যবহার করেছে। চল্লিশের দশকে ধর্ম, বর্ণ, দল ও মত নির্বিশেষে উপমহাদেশের প্রতিটি নাগরিক যখন বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল, জামাতের স্থপতি মওলানা মওদুদী ও তার অনুসারীরা তখন ইসলামের মুখােশ পরে ভিন্ন ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। তারা একদিকে কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে গালিগালাজ করতাে, অপরদিকে বলতাে ছ’হাজার মাইল দূর থেকে এসে বৃটিশরা এদেশ শাসন করছে, তার সাথে ইসলামের কোন সংঘাত বা বিরােধ নেই। জামাতের স্থপতি মওলানা মওদুদী কংগ্রেসের সমালােচনা করে বলেছেন, “তােমাদের প্রথম আক্রমণ হলাে মুসলিম জাতীয়তার ওপর। এটা শুধু বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের প্রবঞ্চনা এবং গুটিকতক সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টের প্রচারণা বই কিছু নয়।” (সিয়াসী কাশমকাশ, দ্বিতীয় খণ্ড, ৫০ পৃষ্ঠা) | বৃটিশবিরােধী আন্দোলনের সমালােচনা করে মওদুদী বলেছেন, “অনুরূপ এই আন্দোলন আমাদের জাতীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এর সাথে শরিক হওয়ার অর্থ আমাদের জাতীয়তা ও তাহজীব-তমদ্ন নিশ্চিহ্ন করায় অংশগ্রহণ করা।” মুসলিম লীগের সমালােচনা করে মওদুদী বলেছেন, “এই জাতি প্রথম থেকে একটি জমিয়ত বা সংঘ।

এই সংঘের ভেতর কোন পৃথক নামে পৃথক সংঘ গঠন করা। মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে পরােক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষ নির্দশন কিংবা বিশেষ কোন নাম বা নীতি দ্বারা প্রভেদ সৃষ্টি করা এবং মুসলমানদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের মধ্যে দল-উপদলগত কোন্দল সৃষ্টি করা মূলত মুসলমানদের সুদৃঢ় করা নয়, এতে তাদের আরাে দুর্বল করে দেয়া” (পয়ান হক, ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৮)। অথচ জামাতও ইসলাম শব্দটি তাদের দলের নামের শেষে ব্যবহার করছে। সে যাই হােক, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সমালােচনার ফাকে মওদুদী বৃটিশের দালালী করে বলতেন, “ইসলামের দৃষ্টিতে ইংরেজ ও ভারতবাসী উভয়েই মানুষ। সে উভয়কেই নিজের আহ্বানে সম্বােধন করে। ইংরেজের সাথে ইসলামের এজন্য দ্বন্দ্ব নয় যে সে এক দেশের বাসিন্দা হয়ে অন্য দেশ কেন শাসন করছে। বরং এজন্য যে, সে খােদার সার্বভৌমত্ব ও আইন কানুন কেন স্বীকার করছে না।” মওদুদী বৃটিশ প্রীতিতে গদ গদ হয়ে আরাে বলেছেন, “যদি আপনার ইংরেজের সাথে শত্রুতা এই জন্য যে, সে ইংরেজ, ছ’হাজার মাইল দূর থেকে এসেছে, আপনার দেশের বাসিন্দা নয়, তা হলে আপনার এই শক্রতা ইসলামী শত্রুতা নয়- অজ্ঞতা প্রসূত শক্রতা। (সিয়াসী কাশমকাশ, ১ম খণ্ড, ৩৫ পৃষ্ঠা – মওদুদী) এভাবে সে আমলে মওদুদী ও তার অনুসারীরা পবিত্র ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরােধিতা করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ও জামাতীদের অভিন্ন ভূমিকা লক্ষ্য করা গেছে। তারা ইসলাম রক্ষার নামে মুক্তিযুদ্ধের বিরােধিতা করেছে। তারা রাজাকারআলবদর বাহিনী গঠন করে পাক-হানাদার বাহিনীকে সক্রিয় সহযােগিতা প্রদান করেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরােধিতা করে ২৩ আগস্ট গােলাম আজম লাহােরে বলেন, “পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটছে, তা ভারত ও তার চরদের যড়যন্ত্রেরই ফল। একমাত্র ইসলামের শক্তিই দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করতে পারে।” মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলােতে বাংলাদেশের বিরােধিতা করে এ ধরনের অসংখ্য বক্তৃতাবিবৃতি রয়েছে জামাতীদের। তারা যে ইসলামের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরােধিতা করেছিল, সেই ইসলামের নামেই পাকিস্তান রক্ষা ও বাংলাদুশ প্রতিষ্ঠার বিরােধিতা করে। এটাই হচ্ছে পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। এজন্যই বলছিলাম, জামাত নেতা আব্বাস আলী খানের বক্তৃতা শুনে আমাদের হাসি পায়।

মূলত জামাতী ও অন্যান্য মৌলবাদীদের সাথে আমাদের এখানে পার্থক্য। আমরা পবিত্র ধর্মের। সাথে রাজনীতিকে জড়িত করি না। আর জামাতীরা ধর্মকে শুধু রাজনীতির সাথেই জড়ায় না, তারা পবিত্র ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের বাহন হিসেবে গণ্য করে। তাদের এ ধ্যান-ধারণা সম্পূর্ণ ইসলামবিরােধী, নবী-রাসূলদের শিক্ষা ও আদর্শের পরিপন্থী।  মুসলিম লীগের সমালােচনা করে মওদুদী বলেছেন, “এই জাতি প্রথম থেকে একটি জমিয়ত বা সংঘ। এই সংঘের ভেতর কোন পৃথক নামে পৃথক সংঘ গঠন করা মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে পরােক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষ নির্দশন কিংবা বিশেষ কোন নাম বা নীতি দ্বারা প্রভেদ সৃষ্টি করা এবং মুসলমানদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের মধ্যে দল-উপদলগত কোন্দল সৃষ্টি করা মূলত মুসলমানদের সুদৃঢ় করা নয়, এতে তাদের আরাে দুর্বল করে দেয়া” (পয়ান হক, ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৮) অথচ জামাতও ইসলাম শব্দটি তাদের দলের নামের শেষে ব্যবহার করছে। সে যাই হােক, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সমালােচনার ফাকে মওদুদী বৃটিশের দালালী করে বলতেন, “ইসলামের দৃষ্টিতে ইংরেজ ও ভারতবাসী উভয়েই মানুষ। সে উভয়কেই নিজের আহ্বানে সম্বােধন করে। ইংরেজের সাথে ইসলামের এজন্য দ্বন্দ্ব নয় যে সে এক দেশের বাসিন্দা হয়ে অন্য দেশ কেন শাসন করছে। বরং এজন্য যে, সে খােদার সার্বভৌমত্ব ও আইন কানুন কেন স্বীকার করছে না।”  মওদুদী বৃটিশ প্রীতিতে গদ গদ হয়ে আরাে বলেছেন, “যদি আপনার ইংরেজের সাথে শত্রুতা এই জন্য যে, সে ইংরেজ, ছ’হাজার মাইল দূর থেকে এসেছে, আপনার। দেশের বাসিন্দা নয়, তা হলে আপনার এই শক্রতা ইসলামী শত্রুতা নয়- অজ্ঞতা প্রসূত শক্রতা। (সিয়াসী কাশমকাশ, ১ম খণ্ড, ৩৫ পৃষ্ঠা – মওদুদী)।

এভাবে সে আমলে মওদুদী ও তার অনুসারীরা পবিত্র ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরােধিতা করেছেন।  বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ও জামাতীদের অভিন্ন ভূমিকা লক্ষ্য করা গেছে। তারা ইসলাম রক্ষার নামে মুক্তিযুদ্ধের বিরােধিতা করেছে। তারা রাজাকারআলবদর বাহিনী গঠন করে পাক-হানাদার বাহিনীকে সক্রিয় সহযােগিতা প্রদান করেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরােধিতা করে ২৩ আগস্ট গােলাম আজম লাহােরে বলেন, “পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটছে, তা ভারত ও তার চরদের যড়যন্ত্রেরই ফল। একমাত্র ইসলামের শক্তিই দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করতে পারে।” মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলােতে বাংলাদেশের বিরােধিতা করে এ ধরনের অসংখ্য বক্তৃতাবিবৃতি রয়েছে জামাতীদের। তারা যে ইসলামের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরােধিতা করেছিল, সেই ইসলামের নামেই পাকিস্তান রক্ষা ও বাংলাদুশ প্রতিষ্ঠার বিরােধিতা করে। এটাই হচ্ছে পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। এজন্যই বলছিলাম, জামাত নেতা আব্বাস আলী খানের বক্তৃতা শুনে আমাদের হাসি পায়। মূলত জামাতী ও অন্যান্য মৌলবাদীদের সাথে আমাদের এখানে পার্থক্য আমরা পবিত্র ধর্মের সাথে রাজনীতিকে জড়িত করি না। আর জামাতীরা ধর্মকে শুধু রাজনীতির সাথেই জড়ায় না, তারা পবিত্র ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের বাহন হিসেবে গণ্য করে। তাদের এ ধ্যান-ধারণা সম্পূর্ণ ইসলামবিরােধী, নবী-রাসূলদের শিক্ষা ও আদর্শের পরিপন্থী। আল্লাহতায়ালা কোন নবীকেই পাওয়ার পলিটিক্স কিংবা রাজত্ব করার জন্য। দুনিয়াতে প্রেরণ করেননি। ইসলামের এবং ইসলামের নবীর উপর এটা একটা অপবাদ। এবং মিথ্যা প্রােপাগান্ডা রটানা হচ্ছে যে, তিনি দুনিয়ায় রাজত্ব করার জন্য আগমন। করেছেন। আল্লাহর নবী তাে এসেছিলেন আল্লাহর সেই সমস্ত বান্দা যারা আল্লাহ থেকে। ছিন্ন হয়ে গেছে, লাইনচ্যুত হয়েছে, পথহারা, দিশেহারা এবং বিপথগামী হয়েছেতাদেরকে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য!

গোমরাহী থেকে মুক্তি দিয়ে হেদায়াতের পথ দেখানাের উদ্দেশ্যে এবং আখেরাতের কামিয়াবীর জন্য। নবী করিম (সাঃ)-এর গােটা জীবন, তাঁর বক্তৃতামালা, হাদীসের ভাণ্ডার এবং কোরআন শরীফ আমাদের এই উক্ত দাবির জ্বলন্ত প্রমাণ।  মক্কায় নবী করীম (সঃ)-এর শত্রুপক্ষ অপারগ হয়ে সম্মিলিতভাবে তার পিতৃব্য আৰু তালিবের নিকট উপস্থিত হয়ে বললাে, দেখুন আপনি আমাদের সরদার, আমাদের বাসনা যে আমরা আপনার সম্মান করি। কোন প্রকারের শিষ্টাচারবিহীন কাজ আপনার সাথে হােক- আমরা চাই না। কিন্তু মুশকিল হল আপনি আপনার ভ্রাতৃপুত্র মােহাম্মদ (সঃ) কে ত্যাগ করেন না। অথচ তিনি আমাদের বাপ-দাদার ধর্মকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে ভুল বলে বর্ণনা করেন। আমরা রাগের বশীভূত হয়ে যদি তার সাথে ঝগড়াফ্যাসাদ করি এবং তাকে কষ্ট দেই তাহলে আপনার সম্পর্কেও বেআদবী করতে হয়। কারণ আপনি তাকে ত্যাগ করতে রাজি নন। তাই তাঁর সাথে আমাদের একটা সন্ধি স্থাপন করিয়ে দিন। আবু তালিব বললেন, সন্ধির ফরমূলা কিভাবে হবে? তারা বলল, তিনি যদি সম্পদ চান তাহলে স্বর্ণ-রৌপ্য-হীরা-মুক্ত এবং আটা-ময়দার স্তুপ করে দেব: অপরূপা ও সুদর্শনা নারীদেরকে তার পদতলে হাজির করে দেব এবং আজই গােটা আরব দ্বীপের বাদশারূপে তাকে ঘােষণা দিয়ে আমরা মেনে নেব। মােটকথা তিনটি বস্তুর কারণে ঝগড়া হয়ে থাকে- নারী, মাটি এবং ক্ষমতা। আমরা সব কিছুই তাকে দেব, শুধুমাত্র তার কাছ থেকে এ স্বীকৃতি পেতে হবে, তিনি যেন আমাদের বাপ-দাদার ধর্মকে মন্দ না বলেন। আমরা তাকে আর কিছু বলব না। যা ইচ্ছা তিনি করবেন। আমরা আমাদের ইচ্ছামত চলব। আবু তালিব ভাবলেন-বাদশাহী মিলছে, সম্পদের পাহাড় আসছে এবং মনের সাধ পূরণের যাবতীয় উপকরণ হাতের মুঠোয় আসছে। নিঃসন্দেহে এখন আপােষ হতে পারে। সুতরাং, দলের সকল মাতব্বরদেরকে নিয়ে তিনি মহানবী (সঃ)-এর দরবারে এসে হাজির হলেন। (কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, আবু তালিৰ খবর পাঠিয়ে নবীয়ে করীম (সঃ) কে তার কাছে আনালেন) হুজুর (সঃ) জিজ্ঞেস করলেন, চাচা এ অসময়ে যে আপনার শুভাগমনা আবু তালিব বললেন, বেটা বলব, কিন্তু তার আগে একটু দেখ না কেমন কেমন কোরায়েশ নেতা তােমার দ্বারে উপস্থিত ? মহানবী (সঃ) বললেন, বিষয় খুলে বলুন।

তিনি বললেন, এরা পার্থিব সম্পদ, অপরূপ নারী এবং গােটা আরব উপদ্বীপের রাজত্ব সব কিছু তােমাকে দিতে প্রস্তুত। শুধুমাত্র ভূমি তাদের কোন কাজে বাধা দিও না। তারা তাদের ইচ্ছামত জীবন অতিবাহিত করবে, তুমি তাতে কোন প্রকারের সমালােচনা কিংবা বাধা দিবে না। তােমার পথে তুমি চলবে, তাতেও তারা বাধা দেবে না। এ কথা শুনে মহানবী (সঃ)-এর চেহারা মােবারক রক্তবর্ণ। হয়ে গেল এবং বসা থেকে দাড়িয়ে ঘােষণা করলেন যে, খােদার কসম, হে আমার চাচা। ওরা যদি আমার এক হাতে চন্দ্র এবং অপর হাতে সূর্যও তুলে দেয় আর বলে যে আমি যেন আল্লাহর পয়গাম মানুষের কাছে না পৌছাই, তা কখনও হতে পারে না। | মহানবী (সঃ) যদি পৃথিবীতে রাজ্য শাসন এবং ক্ষমতার রাজনীতির উদ্দেশ্যই আগমন করে থাকতেন, তাহলে সেদিনই মক্কাবাসীর সাথে একটা আপােষ মীমাংসা হয়ে যেত। আরবের বাদশাহী তাে মিলেই যেত, তারপর যা হয় হত। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে অন্তত শান্তিতে দিন গুজরান করতে পারতেন। কিন্তু আসল কথা হল, বাদশাহী কিংবা রাজ্য পরিচালনার জন্য আল্লাহ-তাআলা কোন নবীকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেননি। বরং আগমনের উদ্দেশ্য হল, পথহারা মানুষকে পথের দিশা দিয়ে আল্লাহর সাথে তাদের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। আর এ মহান উদ্দেশ্য সাধনে নবী রাসূলগণ শত বিপদ-আপদ, পাথর বর্ষণ ইত্যাদি বরণ করে নিয়েছে। আজ যেভাবে ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছুসংখ্যক ক্ষমতালােভী তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রােপাগান্ডা আর গুজব রটাচ্ছে, সেটা সেই মুনাফিক এবং মক্কার কাফিরদের অনুরূপই। কিন্তু যারা সত্য ও ন্যায়ের পথে আছে তারা সর্বদাই এগুলাের মােকাবিলা করে আসছেন, আজও করছেন।  একবার হযরত জিব্রাইল (আঃ) হুজুরের খেদমতে এসে বলেন, আল্লাহ আপনার কাছে সালাম পাঠিয়ে বলেছেন, আপনার যদি ইচ্ছা হয় তা হলে ঐ যে কয়েক মাইল। বিস্তৃত উহুদ পাহাড় তার পুরােটা আপনার জন্য স্বর্ণে রূপান্তরিত করে দেয়া হবে মহানবী (সঃ) উত্তর করলেন, আমার তাতে কোন প্রয়ােজন নেই। 

এভাবে আরেক দিন হযরত জিব্রাইল (আঃ) ওহী নিয়ে এসে মহানবীকে বললেন, আল্লাহ-তাআলা জানতে চেয়েছেন আপনি বাদশাহ নবী হতে চান, না বান্দা নবীরূপে থাকতে চান। মহানবী বললেন, আমি তাে চাই আল্লাহ আমাকে একবেলা আহার করাবেন, তাতে তার শুকরিয়া আদায় করব। আর একবেলা অনাহারে রাখবেন, তাতে ধৈর্যশীল হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব। যদি রাজ্য পরিচালনা আর ক্ষমতার রাজনীতিই নবী রাসূলদের আগমনের উদ্দেশ্য হত তাহলে মহানবী (সঃ) তখন উত্তর করতেনজিব্রাইল। আল্লাহ আমাকে যে উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছেন তা অর্জনে বিলম্ব সয় না। সত্বর আমার হাতে রাষ্ট্র অর্পণ কর কিন্তু হুজুর (সঃ) উক্ত জবাব দেয়া দূরের কথা, এর প্রতি এতটুকু সম্মতি প্রকাশ করেননি। বরং হুজুর (সঃ) আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, একবেলা আহার আর একবেলা অনাহার থাকার মধ্যে। কেননা, তাতে খােদার স্মরণ হবে। সুতরাং আল্লাহর কোন নবীই দুনিয়াতে রাষ্ট্র পরিচালনা কিংবা বাদশাহী করার উদ্দেশ্যে অথবা রাজনীতি করার মানসে আগমন করেননি। এগুলাের জন্য তাে দলসমূহ গঠিত হয়, পার্টি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং দুনিয়ার নিয়মনীতি গঠিত হয়। আবার তাতে পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়। | মহানবীর (সঃ) জীবনের উপরােক্ত কয়েকটি ঘটনা দ্বারা পরিষ্কার প্রমাণিত হয় যে, যারা পবিত্র ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভের বাহন হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তারা ধর্মের নামে মহানবীর (সঃ) আদর্শ পরিপন্থী কাজ করছে। বস্তুত বিগত কয়েকদশক থেকে বিভিন্ন মুসলিম দেশে পবিত্র ইসলামের স্লোগান নিয়ে ক্ষমতালােভী একটি শ্রেণী গজিয়ে উঠেছে। তারা পবিত্র ধর্মকে সাধারণ মানুষের বিবেক কেনার হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করছে।

কথায় কথায় তারা আল্লাহ ও রাসূলের নাম উচ্চারণ করে। কিন্তু মহান শান্তির ধর্ম ইসলামের উদারতা, বিশালতা ও সহনশীলতার বিন্দুমাত্র চিহ্ন এদের কার্যকলাপে পাওয়া যায় না। তারা হচ্ছে ইসলামের মুখােশধারী দয়ামায়াহীন ফ্যাসিস্ট। বাংলাদেশে এই ফ্যাসিস্ট চক্র সম্পর্কে চরম তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলােতে জামাতে ইসলামী নামধারী এই ফ্যাসিস্ট চক্রের হিংস্র রূপ দেখেছি আমরা। ‘৭৫ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই ঘাতক ও দালালরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গত ক’বছরে বহু লােক জামাত-শিবির চক্রের হাতে প্রাণ হারিয়েছে, বহু ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীর হাত-পায়ের রগ কেটেছে এই চক্র। জামাত নেতা আব্বাস আলী খান বলেছেন, জামাতে ইসলামীর আন্দোলন নাকি সর্বশক্তিমান আল্লাহর তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে পরিচালিত।’ এই উক্তির পর যে কোন লােকের মনে প্রশ্ন জাগবে, একাত্তর সালে জামাতের স্বাধীনতা বিরােধী কর্মকাণ্ডে কি আল্লাহতায়ালা সন্তুষ্ট হয়েছিলেন? হত্যা, নারী ধর্ষণ, লুটতরাজ ও মানুষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযােগ কি আল্লাহ পছন্দ করেন। বর্তমানে জামাত-শিবির যেসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে, এসব কি ইসলাম সমর্থন করে? পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “ তােমরা ফাসাদ বা বিশৃংখলা অন্বেষণ করাে না। আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না। আর আব্বাস আলী খানরা বলেছেন, তারা আন্দোলনের নামে যা কিছু করছেন সবই আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। কি চমৎকার উক্তি। আব্বাস আলী খানদের এসব গলাবাজির মূল্যায়নের ভার আমরা এ দেশের সচেতন নাগরিকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

দৈনিক আল আমীন ঃ ৩-৩-৯৩

সূত্র : বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ – মওলানা আবদুল আউয়াল

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!