You dont have javascript enabled! Please enable it! ঠাকুর ঘরে কে  আমি কলা খাই না- বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ - সংগ্রামের নোটবুক

ঠাকুর ঘরে কে  আমি কলা খাই না

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জোহা হলের পেছনে স্বাধীনতা সংগ্রামের নির্মম সাক্ষী। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ গণকবর ও বধ্যভূমিতে রাসু ও রাজশাহী সমন্বয় কমিটি একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করে। শহীদ অধ্যাপক মীর আবদুল কাইয়ুমের স্ত্রী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনােবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপিকা মারা খানম এবার বিজয় দিবসে ফলকটি উন্মােচন করেন। অধ্যাপিকা মাস্তুরা খানম ষােল ডিসেম্বর বিকাল। চারটায় স্মৃতিফলকটি উন্মোচন করেন। সেদিনই গভীর রাতে জামাত-শিবিরের সশস্ত্র কর্মীরা স্মৃতিফলকটি ভেঙ্গে ফেলে। প্রায় সব ক’টি জাতীয় দৈনিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে পরিচিত জোহা হলের সশস্ত্র শিবির কর্মীরা সেদিনই গভীর রাতে স্মৃতিফলকটি ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। তারা নারায়ে তকীর আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে স্মৃতিফলক ভাঙ্গা শুরু করে।  মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলােতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হল পাক হানাদার বাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতাে। এ সময় হলের পেছনের বিশাল এলাকাটি হানাদার বাহিনী বধ্যভূমি ও গণকবরস্থান হিসেবে ব্যবহার করে। প্রায় চার হাজার ছাত্র, যুবক, বুদ্ধিজীবী ও কৃষক-শ্রমিককে হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর ঘাতক রাজাকার, আল বদর, আল শামসরা ধরে এনে এখানে হত্যা করে। স্বভাবতই এই স্থানের বেদনাদায়ক স্মৃতি সংরক্ষণ করা ঘাতক কিংবা তাদের উত্তরসূরিদের নিকট সহনীয় হতে পারে না। তাই সরকারি আশীর্বাদপুষ্ট সশস্ত্র শিবির কর্মীরা শহীদদের স্মৃতিফলকটি ধ্বংস করেছে। কারণ এই স্মৃতিফলক একাত্তরের ঘাতকদের ধর্ম ও মানবতাবিরােধী জঘন্য অপকর্মের নীরব সাক্ষী হয়ে যুগ যুগ দাঁড়িয়ে থাকবে। পরিবেশ। পরিস্থিতি যখন অনুকূল, তারা রাখবে কেন এই স্মৃতিফলক।  এদিকে স্মৃতিফলক ধ্বংসের পরদিন সকালেই রাজশাহীর বিভিন্ন ছাত্র, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত জামাত-শিবির কর্মীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সন্ধ্যায় ‘সাবাশ বাংলাদেশের পাদদেশে এক প্রতিবাদ সভার আয়ােজন। করে।

 সমাবেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যকে গ্রেফতারের দাবি জানান। হয়। রাতে রাজশাহী প্রেসক্লাবে আয়ােজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাকসু নেতৃবৃন্দ অভিযােগ করেন, প্রােভিসি ও একজন অধ্যাপকের প্রত্যক্ষ ইঙ্গিতে দু’জন শিবির নেতার নেতৃত্বে স্মৃতিফলকটি ভাঙ্গা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৫ জন শিক্ষক এক যুক্ত বিবৃতিতে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তারা বলেছেন, “মৌলবাদী জামাত চক্র চোরের মত এই স্মৃতিফলক ভেঙ্গে দিয়েছে।’ শহীদ লেঃ সেলিম মঞ্চের এক বৈঠকে স্মৃতিফলক ধ্বংসের ঘটনাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। জামাত-শিবির সন্ত্রাসীরা নবনির্মিত স্মৃতিফলকটি ভাঙ্গার জন্য এই সময়টি বেছে নেয়ার পেছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, এটি সদ্য নির্মিত হয়েছে। এখনাে এর তেমন প্রচার প্রসার হয়নি। দ্বিতীয়ত, ভারতের উগ্রপন্থী হিন্দু মৌলবাদী চক্র কর্তৃক ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ধ্বংসের মত ঘৃণ্য ও অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে সারা দেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। এরূপ পরিস্থিতিতে জামাত-শিবির প্রমাদ গুণেছে স্মৃতিফলকটি ভেঙ্গে ফেললে তেমন একটা সমালােচনার সম্মুখীন হতে হবে না। কিন্তু জামাত-শিবির চক্রের এই হিসাব সম্পূর্ণ ভুল। স্বাধীনতার পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেই জামাত-শিবিরের এই ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ উঠেছে। আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় পাঁচদল, সিপিবি, জাসদ, বাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাপ, জাতীয় সমন্বয় কমিটি স্মৃতিফলক ভাঙ্গার নিন্দা করেছে। এই নিন্দাবাদ গত ক’দিন থেকে অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে জামাত-শিবির আবারাে তাদের স্বাধীনতাবিরােধী চরিত্রের প্রকাশ ঘটিয়েছে।

বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপােষকতায় এদেশে ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে জামাত-শিবিরের রাজনীতির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বর্তমানে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়ে জামাত-শিবিরকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরােধী ভূমিকায় সহযােগিতা করে যাচ্ছে।” স্মৃতিফলক ভাঙ্গার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জামাত-শিবিরসহ সকল প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বান জানান। . স্মৃতিফলক ভাঙ্গার পর জামাত-শিবির দুই-তিন দিন নীরব ছিল। কিন্তু সারাদেশ থেকে এই ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় দেখে তারা বেসামাল হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় জামাত নেতারা সারাদেশের মানুষের এ অভিযােগ সম্পর্কে কোন কথা না। বললেও রাজশাহীর জামাত-শিবির বলেছে, তারা স্মৃতিফলক ভাঙ্গেনি। গত ২০ ডিসেম্বর। রাজশাহী মহানগরী জামাতের আমীর ও সেক্রেটারী সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃত্তিতে বলেছেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ জোহা হলের পেছনের গণকবরে কারা কখন। স্মৃতিফলক নির্মাণ করেছেন তা আমাদের আদৌ জানা নেই। হঠাৎ করে পানি ঘােলা। করে উত্তেজনা সৃষ্টির লক্ষ্যেই চিরাচরিত অভ্যাসবশত কথিত স্মৃতিফলক ভাঙ্গার ঘটনার ব্যাপারে জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী ছাত্র শিবিরকে দায়ী করার চেষ্টা চালানাে। হচ্ছে। কথিত স্মৃতিফলক ভাঙ্গার ঘটনার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র। শিবিরের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।” একই দিন ছাত্র শিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরও অনুরূপ একটি বিবৃতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের বক্তব্যের সার কথা হচ্ছে, স্মৃতিফলক ভাঙ্গার প্রতিবাদে তাদের অভিযুক্ত করে যেসব মিটিং-মিছিল হচ্ছে, সংবাদপত্রে যেসব বিবৃতি ছাপা হচ্ছে- সবই মিথ্যা। এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট দেশের বৃহত্তম গণকবরের স্মৃতিফলকটি পুনঃনির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু রাকসু সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। রাকসু’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাকসু এই ফলক নির্মাণ করেছিল। রাকসুই আবার তা পুনঃনির্মাণ করবে। রাকসু’র সমাজসেবা সম্পাদক ও ছাত্রঐক্য পরিষদের শীর্ষস্থানীয় নেতা করিম শিকদার স্বাক্ষরি উক্ত বিবৃতিতে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে, “বিজয় দিবসের রাতে জামাতপন্থী শিক্ষক ওমর আলী ও ইউসুফ আলীর ইঙ্গিতে বর্তমান প্রাে-ভিসি আজহারউদ্দীনের নির্দেশে সশস্ত্র শিবির কর্মীরা গণকবরের স্মৃতিফলকটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।

কর্তৃপক্ষের উচিত যারা এটি ধ্বংস করেছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দায়িত্বেই থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করা। ঘটনার দু’দিন পর দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় সিন্ডিকেট জরুরী সভা করে ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। কর্তৃপক্ষ ওই স্থানে আরেকটি স্মৃতিফলক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষয়টি হাল্কাভাবে গ্রহণ করেছে।” এই হচ্ছে উক্ত স্মৃতিফলকটি ভাঙ্গার ঘটনা সম্পর্কে বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি। রাকসুসহ সবাই বলছে, স্মৃতিফলকটি উন্মােচন করার দিবাগত রাতেই জামাত-শিবিরের সশস্ত্র কর্মীরা এটি ভেঙ্গে ফেলে। এমনকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্মৃতিফলকটি পুনঃনির্মাণ করে দেয়ার সিদ্ধান্তও ঘােষণা করেছে। যদি সেখানে স্মৃতিফলক আগে নির্মাণ না-ই হয়ে থাকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুনঃনির্মাণের সিদ্ধান্তই বা নিলেন কেন। আর যে হলের পেছনে গণকবরস্থান রয়েছে, স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে, সে হলটি ছাত্র শিবিরের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। অথচ রাজশাহীর জামাত-শিবির বলেছে, গণকবরস্থানে কারা এবং কখন স্মৃতিফলক নির্মাণ করেছে, তারা নাকি জানেই না। জামাত-শিবিরের এই বিবৃতি ঠাকুর ঘরে কে, আমি কলা খাই না’ ধরনের হয়েছে। হলের পিছনে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হলাে। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে একজন শহীদের স্ত্রী, উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপিকা স্মৃতিফলকটি উন্মোচন করলেন। কিন্তু জামাত-শিবির এসব ব্যাপার দেখলও না, শুনলও না, এমনকি জানলও না। অন্যসব তথ্য-প্রমাণ, বক্তৃতা-বিবৃতি বাদ দিলেও স্মৃতিফলক সম্পর্কে জামাত-শিবিরের বিবৃতি এবং এর ভাষাই এই অপকর্মের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে। | দেশে বর্তমানে জামাত-শিবিরের সুদিন যাচ্ছে। কারণ সরকার তাদের সহায়ক। তাই মুখে যা আসছে তাই বলছে। আর সেসব কথা বিভিন্ন সংবাদপত্রে ছাপা হচ্ছে। সরকার যদি তাদের সহায়ক না হতাে স্মৃতিফলক ভাঙার মত দুঃসাহস তারা দেখাতে

শুধু স্মৃতিফলক নয়, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কর্মকাণ্ড ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জামাত-শিবির যেসব কথাবার্তা বলছে, সেগুলাে অনেকটা ঠাট্টা-মশকরা বলা চলে। বিশেষ করে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর আসলেই তাদের মুখে এসব কথা বেশি শােনা  যায়। গত বছর বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রাক্কালে জামাত নেতা ও বদর বাহিনী প্রধান মতিউর রহমান নিজামী একটি দৈনিকে সাক্ষাৎকার দান প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবীদের নাকি আওয়ামী লীগ হত্যা করেছিল। অথচ শুধু এ দেশবাসীই নয়, সারাবিশ্ব জানে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে, একাত্তর সালে জামাতে ইসলামী আল বদর নামের কুখ্যাত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে। বদর বাহিনী। সার্বিকভাবে গোলাম আযমের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতাে। এই ঘাতক বাহিনীর প্রকাশ্য নেতাদের মধ্যে প্রধান ছিলেন জামাতের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান নিজামী। প্রাদেশিক প্রধান ছিলেন বর্তমান জামাত নেতা আলী আহসান মােঃ কামরুজ্জামান। এই বাহিনীর কাজ ছিল স্বাধীনতাকামীদের খুঁজে বের করা, হিন্দুদের বলপূর্বক মুসলমান বানানাে এবং মুক্তিযােদ্ধাদের সশস্ত্রভাবে মােকাবেলা করা। মুক্তিকামী বাঙালিদের হত্যা করা। বদর বাহিনীর নৃশংসতা মুক্তিযুদ্ধের শেষ পাঁচটি মাসে জনমনে ভয়াবহ আতংকের সৃষ্টি করে। অবরুদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও মহকুমা শহরেই এদের ক্যাম্প ছিল। এসব ক্যাম্পে ধরে আনা স্বাধীনতাকামীদের অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হতাে। মুক্তিযুদ্ধ অপ্রতিরােধ্যভাবে বিজয়মুখী হওয়ার সাথে সাথে এদের তৎপরতাও বাড়ছিল ভয়ংকরভাবে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলােতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, লেখক, সাংবাদিক এবং সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিম্নপর্যায়ের চাকরিজীবী পর্যন্ত সামান্য শিক্ষিত বাঙালি বলতেই বদর বাহিনীর শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। অন্য কথায়, রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সুপরিকল্পিতভাবে বাঙালিদের সমূলে বিনাশ করার বিজ্ঞানসম্মত হত্যাকাণ্ড ছিল বদর বাহিনীর কর্মকাণ্ডের প্রধান উদ্দেশ্য। তালীন পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক গভর্নরের উপদেষ্টা রাও ফরমান আলীর নীলনকশা অনুযায়ী বদর বাহিনী এমনকি পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা আত্মসমর্পণের দু’দিন আগেও ঢাকায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এ সময় ঢাকায় অপারেশন ইনচার্জ ছিল মঈনুদ্দিন চৌধুরী নামক দৈনিক পূর্বদেশের এক সাংবাদিক। সেও পাক হানাদার বাহিনীর সাথে আত্মসমর্পণ করে দেশত্যাগ করে। সে নাকি লন্ডনে থাকে। নাম পাল্টে মাঝে মাঝে দেশে আসে।

এসব অকাট্য মর্মান্তিক ঘটনাবলীও মতিউর রহমান নিজামীরা বিকৃত করার অপচেষ্টা করছেন। বলেছেন, আওয়ামী লীগাররা নাকি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। এসব কথা আবার সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলােতে যারা ঢাকায় ছিল, তারা বদর বাহিনীর তাণ্ডৰ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলবে না। সে সময় ঢাকা শহরের প্রতিটি থানার দায়িত্বে ছিল পাক হানাদার বাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার। তার অধীনে নিয়মিত বাহিনী ছাড়াও অসংখ্য রাজাকার-আলবদর ছিল। একজন সাধারণ মানুষ ঘর থেকে জীবনটা হাতে নিয়ে বের হতাে। রাস্তার মােড়ে মোড়ে চেক করা হতাে। এরূপ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগাররা কিভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করলাে। নিজামীদের এ ধরনের উক্তি পুনরাবৃত্তি করতেও আমাদের ঘৃণা করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলােতে ঢাকায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মত নিজেদের অপকর্মকে যারা আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপানাের অপচেষ্টা করে তাদের পক্ষে রাজশাহীর গণকবরস্থানের স্মৃতিফলক ভাঙ্গার দায়িত্ব অস্বীকার করাটাই তাে স্বাভাবিক। এতে বিস্মিত হওয়ার কি আছে। | অবশ্য বিস্মিত হচ্ছি আমরা অন্য একটা দিক ভেবে। জামাত-শিবির চক্র এতােদিন এ ধরনের উক্তি করার সাহস পায়নি। বিএনপি’র সাথে আঁতাতই তাদেরকে এই সাহস যুগিয়েছে। বিএনপি একদিকে মুক্তিযুদ্ধের ক্রেডিট দাবি করছে, অপরদিকে ঘাতক দালালদের যা ইচ্ছে তাই বলার অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে। বিভিন্ন দেশের অতীত ইতিহাস প্রমাণ করে, এ ধরনের দু’মুখাে নীতি কোন দেশ, জাতি, এমনকি স্বয়ং নীতিনির্ধারকদের জন্যও সুফল বয়ে আনে না। বিএনপি এই বাস্তব সত্যটি যতাে তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবে- দেশ, জাতি ও তাদের নিজেদের জন্যও ততােই মঙ্গল।

আজকের কাগজ ঃ ২৩-১২-৯২

সূত্র : বঙ্গবন্ধু ও ইসলামী মূল্যবোধ – মওলানা আবদুল আউয়াল