জেনারেল রানির আত্মজীবনী
ইয়াহিয়া খানের যৌন অভিযানমূলক জীবনের সবচেয়ে আশ্চর্য আর চমৎকার আকর্ষণীয় চরিত্রটা ছিল জেনারেল রানি। একজন পাকিস্তানি ভাষ্যকারের মতে ইয়াহিয়া খানের হারেম জীবনের অন্য সব নারীরা ছিল মিটমিটে আলাে প্রদানকারী তারকার মতাে সেখানে জেনারেল রানি ছিল ইয়াহিয়া খানের সমস্ত বান্ধবীদের কমান্ডার অব ন্যাশনাল গার্ড। লাহােরে ১৯৭১ এর মে মাসের আগ পর্যন্ত আটচল্লিশ বছর বয়স্কা জেনারেল রানি সকলের কাছে একদম অপরিচিত ছিল। ভালােভাবে উর্দু বলতে পারত না, প্রায় অশিক্ষিত, মূর্খ জেনারেল রানি পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমের কলামে কোনাে জায়গা দখল করার মতাে দাবিদার কখনােই ছিল না। রানির স্বামী ছিলেন পাকিস্তানি পুলিশের জুনিয়র কর্মকর্তা। যিনি ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব শেষ করে অবসরে গিয়েছিলেন। রানি ইন্দো পাক বর্ডারের জম্মু অংশের গুজরাট শহরে বাস করত। তার দেশের ভাগ্য বিধাতা ইয়াহিয়া খানের সাথে পরিচয় হওয়ার পরই সেও কিন্তু একজন প্রভাশালী ব্যক্তিতে পাল্টে গেল। এমনকি ঐতিহাসিকদের জন্য পাকিস্তানের ক্রান্তিকালীন সময়ের অন্ধকার ইতিহাসের একজন বড় উৎসে পরিণত হলাে জেনারেল রানি। সে যাই বলত সেটাই একটা করে সাক্ষী সুদে পাল্টে যেত। তার দাবির বিরুদ্ধে ইয়াহিয়া খানের হারেমখানার অন্ধকার জীবনের কেউ। কিছুই বলার সাহস রাখত না কিংবা এর বিরােধিতা করার সাহস পেত না। একমাত্র নুরজাহান তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস দেখিয়েছিল। রানি যেভাবে সব কিছু প্রকাশ করা শুরু করেছিল সেটা আসলে এক ধরনের পাওয়ার অব ব্ল্যাকমেইল ছিল এবং এই ধরনের ভাষণ দিয়ে অনেকের মুখ বন্ধ করে দেয়া সম্ভব ছিল। রানি সর্বপ্রথম পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমের হেডলাইনে আসে গরম একটা খবর দিয়ে
লাহােরের সংবাদপত্রগুলাে তাদের পত্রিকার প্রথম পাতায় সংবাদ পরিবেশন করে যে হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের একটি অভিজাত রুমে জেনারেল রানিকে মদ্যপ অবস্থায় এবং পুলিশের সাথে অত্যন্ত রুঢ় আচরণরত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের ভাষ্যমতে আকলিমা আখতার যে জেনারেল রানি নামে পরিচিত প্রতিদিন ৩৫০ রুপি ভাড়ার বিনিময়ে হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দামি একটা রুম ভাড়া করে সেখানে দেহব্যবসা চালাচ্ছে। তার এই কাজের সাথে আছে তার কিশােরী মেয়ে ও লাহােরের হিরামন্ডি এলাকার কিছু দেহপসারিণী। হােটেলের কিছু বাসিন্দার অভিযােগের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। জেনারেল রানির গ্রেফতারের বিষয়টা আলােচনার কেন্দ্রে আসার কারণ ছিল তার সাথে একই সময় লাহােরের কয়েকজন ধনাঢ্য প্রভাবশালী ব্যবসায়ীকেও গ্রেফতার করা হয়। আরাে চমকপ্রদ অংশ ছিল তাদের সাথে সাথে একজন নেতৃত্বস্থানীয় দেহপসারিণী নীলকমল, তার মেয়ে ও সরকারের দুজন অত্যন্ত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও গ্রেফতার করা হয়। পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমকে সরকার অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কারণে সরকারের দুজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার নাম পত্রিকায় আসেনি। তবে তাদের দুজনের নাম সাংবাদিকরা ঠিক জানতে পেরেছিল। কিন্তু নাম প্রকাশ করার সাহস তারা করেনি। যে তিনজন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে দুজন চোরাকারবারির সাথে জড়িত ছিল। অন্য জন ছিল সম্পদের জাদুকর। তিনি আইয়ুব খানের সময় থেকে ব্যবসা করছিলেন। ইয়াহিয়া খানের সময় এসে আরাে লক্ষ লক্ষ রুপি উপার্জন করেছেন। এমনকি ইয়াহিয়া খানের পরবর্তী সরকারের সাথেও তার বেশ ভালাে সম্পর্ক ছিল।
আমার উৎস মতে যে দুজন সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন সিনিয়র কাস্টমস অফিসার আর অন্য জন ছিলেন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্ট এজেন্সির সুপারিনটেনডেন্ট। তবে গ্রেফতার ঘটনার চমৎকারিত্ব এখানেই শেষ হয়নি। সবচেয়ে ব্রিতকর অবস্থা ছিল গ্রেফতার হওয়া রানির দুজন সহকারী বন্ধু ছিলেন প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর ব্যক্তিগত সহকারী যাদেরকে পরবর্তীতে ছেড়ে দেয়া হয়। সেই দুজনের একজন ছিলেন প্রেসিডেন্টে ভুট্টোর ব্যক্তিগত প্রেস সহকারী তার নাম খালিদ হােসাইন। খালিদ হােসাইনকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকরা অত্যন্ত দক্ষ একজন সাংবাদিক হিসেবে চিনতেন বিশেষ করে সিমলা সম্মেলনের সময় তার ভূমিকা ছিল অভূতপূর্ব খালিদ হােসাইন পরবর্তীতে সংবাদপত্রের সাথে সম্পর্কিত বিভাগে সুইজারলেন্ডে পাকিস্তানি দূতাবাসে স্থানান্তরিত হন। জেনারেল রানির সেই প্রমােদ অনুষ্ঠানের গ্রেফতার হওয়া আরেকজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন প্রেসিডেন্টের নেভাল অ্যাডভাইজর। ঐ ঘটনার পরপরই জ্বলােক অবসরে চলে যান সাবেক স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের কুকীর্তির তদন্ত করতে গিয়ে যখন বর্তমান সরকারের দুজন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা এইভাবে ধরা পড়েন তখন বিষয়টা সরকারের জন্য খুব ব্ৰিতকর হয়ে দাড়ায়। ফলে সরকার তড়িৎ গতিতে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে পুরাে বিষয়টাকে পাবলিকের চোখে ধুলা দিয়ে ধামা চাপা দিয়ে দেয়। পুলিশের সেই গ্রেফতারি অভিযানের পর রানিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল নাকি ছেড়ে দেয়া হয়েছিল বিষয়টা তেমনভাবে আর প্রকাশিত হয়নি। তবে পাকিস্তানের পরাজয়ের পিছনে শুধু মাত্র একজন ব্যক্তিরই লাম্পট্য দায়ী ছিল।
বরং পুরাে সিস্টেমটাই ক্রটিপূর্ণ ছিল এই বিষয়টা রাজ সাক্ষীর মতাে জেনারেল রানি সকলের কাছে প্রকাশ করেছিল। সংবাদ মাধ্যম রানির বিবৃতিগুলাে ছবিসহ প্রকাশ করার জন্য তাদের কাগজের বিশাল অংশ ছেড়ে দিল। তারা বেশ রসিয়ে চটুল আকারে গ্রেফতারের পর রানির এবং গ্রেফতারের পূর্বে রানির সাথে কিরূপ আচরণ করা হয়েছিল সেটারও বিস্তারিত বর্ণনা দিল। লাহােরের নাবায়ে ওয়াক্ত পত্রিকা এক সংবাদে বলল যে পুলিশ যখন হােটেল কন্টিনেন্টালে অভিযান চালায় সেই সময় পার্টির উগ্রতা চরমে ছিল। দামিদামি হুইস্কিগুলাে পানির প্রবাহের মতাে মেঝেতে ভাসছিল। আমদানি করা অনেক দুলর্ভ শ্যাম্পেনের বােতলও উদ্ধার করা হয়। বিখ্যাত দেহপসারিণী নীলকমল তখন মঞ্চে গান গেয়ে আর উদ্যম নৃত্য করে সবাইকে মুগ্ধ রেখেছিল। অনুষ্ঠানের মূল আয়ােজক রানি কারাে বিনােদনে যেন ঘাটতি না হয়। সেটা খুব ভালােভাবেই লক্ষ করছিল। অনুষ্ঠান বিভক্ত ছিল দুটো অংশে মঞ্চের সামনের অংশে কেবল গান নৃত্য আর হুল্লোড় চলছিল। হােটেল মঞ্চের পেছনে অত্যন্ত গােপন জায়গায় ছিল দ্বিতীয় অংশ। সেখানে খুব অল্প কয়েকজন অভিজাত মেহমানরা যৌনকর্মে ব্যস্ত ছিলেন। রানি সাত থেকে আটজন অল্পবয়স্ক সুন্দরী তরুণিকে ব্যস্ত রেখেছিল তারা যেন মেহমানদেরকে। ঠিকমত বিনােদন দিতে পারে। পুলিশ যখন অভিযান চালায় তখন তিনজন মেয়ে আর চারজন পুরুষকে অপ্রীতিকর অবস্থায় সেখানে পাওয়া যায়। তাদের কারাে শরীরেই কাপড় ছিল তারা ঠিকমত কাপড় পরার জন্য পুলিশের কাছে হাত জোর করে সময় চেয়েছিল। রানি নিজেও মদ খেয়ে এত মাতাল ছিল যে কী ঘটছিল সে কিছুই বুঝতে পারেনি। পুলিশ ভ্যানে বসে সারাক্ষণ সে একটা কথাই বলছিল, ‘নকশা বিগার গায়া’ পরিকল্পনা সব নষ্ট হয়ে গেল। পুলিশ লকআপে গিয়েও সে পরিস্থিতির বিষয়ে কোনাে কিছুই ধারণা করতে পারছিল না। সে বরং হইচই করে পুলিশদের সাথে চিৎকার করে বলছিল- এখানে অনেক গরম এয়ার কন্ডিশনের ব্যবস্থা করাে, আমার জন্য ঠান্ডা কোকা কোলা নিয়ে আসাে।
তাকে বলা হলাে পুলিশ লকআপে কোনাে এয়ার কন্ডিশনের ব্যবস্থা নেই। আর আপনার জন্য কোনাে কোকা কোলার ব্যবস্থা করা যাবে না। এই কথা শােনার পর রানি চিৎকার করে বলল, “আমি এ কথাটাই সব সময় ইয়াহিয়া খানকে বলতাম যে আপনার পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত খারাপ। মেহমানদেরকে রাখার জন্য তাদের কোনাে এয়ারকন্ডিশন নেই।’ সে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন কনস্টেবলকে একশাে রুপির একটা নােট দিয়ে কয়েক বােতল কোকা কোলা নিয়ে আসতে বলল আর বাকি টাকা নিজের জন্য রেখে দিতে বলল। সে আরাে কিছু প্রস্তাব পুলিশদেরকে দিল। তবে পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তারা তার কোনাে কথা কানে নেননি। ফলে সে রাতটা তাকে হােটেল কন্টিনেন্টাল থেকে বন্দী করে নিয়ে আসা বাকি মেয়েদের সাথেই পুলিশের থানায় কাটাতে হয়েছিল। | তারপর দিনই অবশ্য পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। জেনারেল রানি নিজের জন্য একজন ল ইয়ার ব্যবস্থা করে জামিনের ব্যবস্থা করল। একই সাথে অন্য বন্দী মেয়েগুলােরও জামিনে মুক্তির ব্যবস্থা করল। পুলিশ লকআপ থেকে বের হয়ে জেনারেল রানি দারুণ মজার একটা বিবৃতি দিল। সে বলল যে পাকিস্তানের দুর্নাম রটানাের জন্য পাকিস্তানের শত্রুরা পুলিশকে দিয়ে এই ঘৃণ্য বন্দী নাটকের ব্যবস্থা করেছে। সে আরাে অভিযােগ করল যে দেশের উচ্চ পদ দখল করা কিছু ব্যক্তি তাকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে কারণ গত সরকারের সাথে সে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে দেশের জন্য কাজ করেছিল। সংবাদিকরা যখন তাকে প্রশ্ন করল যে সরকারের সেই উচ্চপদস্থ ব্যক্তি কারা। রানি তার উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলল ইয়াহিয়া খানের। সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা কিছু কর্মকর্তা যারা সব সময় তার বিরুদ্ধে দুর্নাম। করে আসছিল। লাহােরের মাশরিক নামের পত্রিকার এক সংবাদিক বলেছেন যে সংবাদ মাধ্যম পাকিস্তানের পররাষ্ট্র বিষয়ে রানির কাছ থেকে নানা ধরনের সংবাদ শুনে বেশ ব্রিত হয়ে পড়েছিলেন। কারণ তারা রানিকে জানত একজন অশিক্ষিত নারী হিসেবে। দেশের পররাষ্ট্র বিষয়ে তার ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে রানি বলে যে ‘আমি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে ইয়াহিয়া খানকে বাধা দিয়েছিলাম।
একই সাথে আমি ইয়াহিয়া খানকে পরামর্শ দিয়েছিলাম যেন ভুট্টোকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু ইয়াহিয়া খান আমাকে বললেন যে জনাব ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রী বানানাে যাবে না। কারণ তিনি সবচেয়ে বেশি জনমত পেতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তখন আমি ইয়াহিয়া খানকে বললাম তাহলে দুজন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করুন। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে আর পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ভুট্টোকে।’ সংবাদ মাধ্যম এটা জানত যে জনাব ভুট্টো একবার বলেছিলেন যে পাকিস্তানের সংকটকালীন সময়ে তিনি জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে পাকিস্তানের সাংবিধানিক সমস্যার সমাধান করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেটা কি পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগি করে দেয়ার মাধ্যমে নাকি অন্য কোনাে উপায়ে তা নিয়ে তর্ক করার সুযােগ আছে। কিন্তু এই রকম একটা বিষয় রানির মতাে একজন মহিলার কাছ থেকে সংবাদ মাধ্যম শুনে বেশ ব্ৰিত বােধ করল। | জেনারেল রানি আরাে দাবি করে যে যারা এখন বলে যে তারা। পাকিস্তানের সংকটকালীন সময়ে পাকিস্তানের রক্ষাকর্তা ছিল তারা সবাই মিথ্যাবাদী। আমি তাদেরকে খুব ভালাে করেই চিনি। শুরু থেকেই এরা ইয়াহিয়া খানকে বােকা বানিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন ভার গ্রহণের ষড়যন্ত্র করছিল। শুধু তাই নয় এরা সবাই ইয়াহিয়া খানের মদ্যপ আর লাম্পট্য জীবনের অন্তরঙ্গ সঙ্গী ছিল। এই মানুষগুলােই ছিল শত্রুপক্ষের লােক। এরা। ইয়াহিয়া খানের প্রেসিডেন্ট হাউসে শত্রুপক্ষের সুন্দরী নারী চরদেরকে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। যারা ইয়াহিয়া খানকে আরাে লাম্পট্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই লােকগুলাে আমাকে ভয় পেত। তারা ভাবত যে আমি ইয়াহিয়া খানের চোখের ধুলা সরিয়ে দেব। ইয়াহিয়া খানকে সব কিছু বলে দেব। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র শুরু করে দিল। আমার বিরুদ্ধে চুরি, আর পতিতালয় চালানাের অভিযােগ করা হলাে। তবে মূল কথা হলাে’ জেনারেল রানি আরাে বলে, যে লােকগুলাে। ইয়াহিয়া খানের পাশে ছিল তারা কীভাবে একের পর এক ইয়াহিয়া খানকে দিয়ে উপকৃত হচ্ছিল সেটা আমি জানতাম। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এই লােকগুলাের জন্য আমার দেশের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের অনেক দুর্নাম হয়েছে একই সাথে দেশেরও অনেক দুর্নাম হচ্ছে। তাই আমি তাদের বিষয়গুলাে গােপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি কারাে নাম বলতে চাই না।
যাতে করে শত্রুপক্ষ বলতে পারে এই যে ইয়াহিয়া খানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আবার আরেকজন আসছে।’ যারা আমাকে অত্যাচার করছে আমি তাদেরকে আস্বস্ত করে বলতে পারি যে’- এই সময় রানির কণ্ঠে বেশ দেশপ্রেমের সুর ফুটে উঠল; ‘প্রথমত এই সমস্ত ব্যক্তিবর্গের অপকর্মের কোনাে ফটোগ্রাফিক কিংবা কাগজে কলমের প্রমাণ আমার কাছে নেই, আর দ্বিতীয়ত তাদের অপকর্মের বিষয়ে যতটুকু সাক্ষী সাবুদ এবং প্রমাণ আমার কাছে আছে আমি মরে গেলেও সেটা কারাে কাছে বলব না।’ জেনারেল রানির মতে কিছু লােক তাকে ভয় পেত যে সে অনেক কিছু জানে। রানি বলেন, কিন্তু আমার শরীর থেকে যদি মাথা পৃথক করে ফেলা হয়। তবুও আমি তার কিছুই বলব না। রানিকে মনে করা হতাে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সময়ের বিস্ময়কর। একটা চরিত্র। এক বছর ইয়াহিয়া খানের হারেমের পুরাে নিয়ন্ত্রণ সে করেছিল। ১৯৭২ এর শেষের দিকে খুব দামি বিলাসবহুল একটা হােটেলে রানির সাথে আমার সর্বশেষ দেখা হয়। তখন সে মাত্র নানা ধরনের মূল্যবান সামগ্রী, বিদেশি মদের বােতল চুরি আর পাচারের অভিযােগে পুলিশের বন্দিখানা থেকে লাহাের ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জামিন পেয়েছিল। এই ধরনের জিনিসপত্র চুরি করার বয়স তখন তার ছিল না কিংবা প্রয়ােজনও ছিল না। পুলিশের মতে রানি ছিল ইয়াহিয়া খানের অপকর্মের জন্য দুর্দান্ত এক প্রতিভা। পুলিশের পক্ষ থেকে যখন রানির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয় তখন আগের অপরাধের মতােই এই অপরাধের পুলিশ কেসটাও কোনাে এক রহস্যময় কারণে স্থগিত হয়ে যায়। তার দাবি একজন বিদেশি পুস্তক প্রকাশক তাকে একটা বই লিখতে অনুরােধ করেছিলেন। বইয়ের নাম আমি ও ইয়াহিয়া খান। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলাে সেই বিদেশি প্রকাশকের নাম কী সে। বলতে অস্বীকার করল। তবে নানা ধরনের উৎস থেকে জানা গেল যে সেই প্রকাশক বেশ নামী। দামি প্রকাশক এবং ইয়াহিয়া খানের ব্যক্তিগত জীবন তার উত্থান পতন নিয়ে একটি বই লেখার জন্য সেই প্রকাশক জেনারেল রানিকে বেশ মােটা অংকের টাকা দিয়েছিলেন। করাচি, রাওয়ালপিন্ডি, লাহােরের হােটেল কন্টিনেন্টালে বেশ সৌখিন আর দামি কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছিল রানির জন্য। শুধু তাই নয় খুব ভালাে একজন স্টেনােগ্রাফার ও অনুবাদককেও রানির এই কাজের জন্য নিয়ােগ দেয়া হয়েছিল। যেন রানি যা বলতে চায় তার সব কিছুই বেশ ভালােভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। আমি (গ্রন্থের লেখক) যখন একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে রানির সাথে দেখা করতে গেলাম তখন রানি আমাকে দেখে পাকিস্তানি সাংবাদিকের উপর খুব রেগে গেল।
সে বলল, এই বেজন্মা পাকিস্তানি সাংবাদিকগুলাে টাকার জন্য যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। আমি জানি না ইন্ডিয়াতে কী হচ্ছে তবে এটা জানি বেজন্মা পাকিস্তানিগুলাের চেয়েও ভয়ানক খারাপ ঐ ইন্ডিয়ানগুলাে। কিছুক্ষণ শান্ত হওয়ার পর সে এবার বলল, এতে কোনাে সন্দেহ নেই যে ইয়াহিয়া খানের সাথে আমার খুব ভালাে সম্পর্ক ছিল। তবে অর্বাচীন তরুণ আমি তােমাকে বলতে পারি সে সম্পর্ক কেবল একজন চাচার সাথে তার ভাতিজির যেমন সম্পর্ক তেমনটা ছিল। সে আমার সাথে একজন চাচা যেমন তার ভাতিজির সাথে ভালাে আচরণ করে তেমনটা করত। একজন পুরুষ হিসেবে তার দুর্বলতা কী ছিল সেটা আমি জানতাম। তার শারীরিক প্রয়ােজনের যােগান আমি দিতাম। তার রাজত্বের প্রথম দিকে তিনি আমাকে অনুমতি দিয়েছিলেন তার যত মেয়ে বান্ধবীরা প্রেসিডেন্ট হাউসে তার কাছে আসে তাদের যেন সব খোঁজখবর আমি করি। ইয়াহিয়া খানের উপর আমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। তিনি এতে সম্মত জানিয়েছিলেন। মেয়েলি বিষয় থেকে শুরু করে কোনাে বিষয় আমি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দিতাম না। এমনকি ইয়াহিয়া। খানের মদ খাওয়ার বিষয়েও আমি তাকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখতাম। সন্ধ্যার পর তার প্রিয় ব্ল্যাক ডগ থেকে তাকে অর্ধেক বােতলের বেশি খেতে দিতাম। তার উপর আমার এই প্রভাবের কথা জানতে পেরে দেশের শত্রুরা এবং তােমাদের এজেন্টরা ইয়াহিয়া খানের কানে আমার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তাই বলা। শুরু করল। এমনকি তাকে এটাও বােঝাল যে শত্রুপক্ষ আমাকে তার এখানে নিয়ােগ দিয়েছে। আমি তার ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে খাবারে তাকে বিষ প্রয়ােগ করে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছি। এই জন্য তার সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করল। তার শাসনামলের শেষ দিকে প্রায়ই তার সাথে আমার ঝগড়া হতাে। এমনকি আমি তাকে সতর্ক করেছিলাম যে ইন্ডিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া পাকিস্তানের জন্য শুভকর হবে না। বরং উচিত হবে সেই মুহূর্তে ক্ষমতা ভুট্টোর কাছে হস্তান্তর করা। তবে ইয়াহিয়া খান সেই সময় কতগুলাে দুষ্টলােক দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকার কারণে আর বিশেষ করে তার আশপাশে পাকিস্তানের সুন্দরী রানি নুরজাহানের মতাে মেয়েদের দিয়ে আবিষ্ট হওয়ায় তিনি আমার কথা কানে নিলেন না। বরং আমাকে প্রত্যাখ্যান করলেন। ইয়াহিয়া খানের অন্ধকার দিনগুলাের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সাথি ছিলেন। নুরজাহান। ইয়াহিয়া খানের শেষ দিনগুলােতে নুরজাহানের সাথে তার পরিচয় হয়েছিল। চিফ অব মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স জেনারেল উমারের এক অনুষ্ঠানে নুরজাহান প্রধান গায়িকা ছিল। সেখানে মধ্যবয়স্কা আকর্ষণীয় নুরজাহানের সাথে ইয়াহিয়া খানের পরিচয় হয়।
রানির মতে ইয়াহিয়া খান মেয়েলি বিষয়ে যথেষ্ট দ্র ছিলেন। ত্রিশ বছর বয়সের কোনাে নারীর প্রতিই তার কৌতূহল ছিল না। এমনকি সেই বয়সের কোনাে মেয়েকে ভােগ করতে তার আগ্রহ ছিল একদম কম। তবে নটি টাইপের নষ্টাভ্রষ্টা মধ্যবয়স্কা মেয়েগুলাে যারা সত্যিকার অর্থেই জানে যৌনতা কী তাদের প্রতি ইয়াহিয়া খানের আগ্রহের কমতি ছিল না। এজন্যই তার সমস্ত বান্ধবীরা ছিল মধ্য বয়স্কা। এই শ্রেণিতে নুরজাহান ছিল একদম উপযােগী একজন নারী। নুরজাহানের গানের একটা রেকর্ড শুনে মামু (ইয়াহিয়া খান) মেয়েটাকে দেখতে চাইলেন। আমি তাকে বলেছিলাম সে কোনাে কম বয়স্ক তরুণী নয় বরং সে হলাে মধ্যবয়স্কা একজন নারী যার কয়েক ডজন ডিভাের্স স্বামী আছে। তিনি আমার কথায় কান দিলেন না। বরং নুরজাহানের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য জেদ করতে শুরু করলেন। তাই আমি জেনারেল উমরের বাসায় একটা অনুষ্ঠানের আয়ােজন করলাম। সেখানে নুরজাহানকে প্রধান শিল্পী হিসেবে নিমন্ত্রণ করলাম। এজন্য তাকে নগদ পাঁচ হাজার রুপি। দিলাম। সমান টাকার অলংকারও দিলাম। সে আসল আর মুহুর্তেই প্রধান ক্ষমতাবান ব্যক্তিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলল। ইয়াহিয়া খান এই মহিলার প্রেমে পড়ে গেলেন। যার শরীরে তখন গলার স্বরটুকু আর কিছুই ছিল না। সেদিনই ইয়াহিয়া খান পাঁচ ঘণ্টা নুরজাহানের সাথে কাটালেন। তারা দুজন। জেনারেল উমরের ছােট একটা কুঠুরিতে রাত কাটালেন। শেষ রাতের দিকে সে যখন বের হয়ে আসে তখন টালমাটাল অবস্থা তার। কারাে সাথেই নুরজাহান কোনাে কথা বলল না। এর পর থেকে সে আমার প্রধান শত্রুতে পাল্টে গেল। সে আমার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের অলংকার ধার। নিয়েছিল সেগুলাে সে কখনাে ফেরত দেয়নি।’ আমরা অবশ্য পরে নুরজাহানের সাথে কথা বলেছিলাম। নুরজাহানের গল্পগুলাে যখন লিখছি তখন তার বিষয়ে অনেক খোঁজখবর করলাম। নূরজাহানের সাথে কথা বললাম। তার বিষয়ে রানি যে সব অভিযােগ করেছিল সেগুলাে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। নুরজাহান সব অস্বীকার করল। বলল তার। পেশাগত সফলতা আর সুখ্যাতির কারণে সবাই তাকে ঈর্ষা করত। নুরজাহান আরাে বলল রানি ছিল পেশাদার ব্ল্যাক মেইলার। সে সকলের বিরুদ্ধে লেগে থাকত আর ব্ল্যাক মেইল করে বেড়াত। | তবে ১৯৭৩ এর প্রথম দিকে রানি আর নুরজাহানের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটে। এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে দুজনে এক সাথে ঘােষণা করে যে তাদের মধ্যে কোনাে ঝগড়া নেই। তারা একে অপরে সত্যিকারের বােন। তাদের মধ্যে আর কোনাে ভুল বােঝাবুঝি নেই।
তবে ১৯৭৩ এর আগস্টের দিকে রানি আবার সংবাদ শিরােনাম হয়। সে। সাংবাদিকদের ডেকে এক সম্মেলনে বলে যে নুরজাহান তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তার সাথে যে সব চুক্তি হয়েছিল তার সব কয়টিই। নুরজাহান ভঙ্গ করেছে। রানি দাবি করে যে সে নিজে অত্যন্ত বড় হৃদয়ের মানুষ। সে চেয়েছিল নুরজাহানকে সাহায্য করতে। নুরজাহানের হারানাে ইমেজ ফিরিয়ে আনতে। যাতে করে নুরজাহান আবার তার ছবি বানানাের কাজে নেমে যেতে পারে। নতুন নতুন ছবির এসাইনমেন্ট যেন সে পায়। কিন্তু নুরজাহান তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে বরং তার কাছ থেকে ৫০ হাজার রুপি মূল্যমানের যে অলংকার নিয়ে গিয়েছিল সেগুলাে ফেরত দেয়নি। | অপরদিকে নুরজাহান দাবি করে যে নারী নির্জলা মিথ্যে বলছে। শুধু তাই নয় সে প্রায়ই নুরজাহানকে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। | এদিকে রানি করাচির জং পত্রিকায় দাবি করে যে ইয়াহিয়া খান ও তাকে নিয়ে যে সমস্ত রসালাে গল্প প্রচলিত আছে তার সবগুলােই মিথ্যে। এগুলাের কোনাে ভিত্তি নেই। সে ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে কখনাে কোনাে সুবিধা ভােগ করেনি। করাচির ডেইলি নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে রানি বলে যে সংবাদ পত্রগুলাে তাকে প্রতিনিয়ত ব্ৰিত করে যাচ্ছে। তাকে নিয়ে ভিত্তিহীন সব সংবাদ প্রচার করে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইয়াহিয়া খানের সাথে তার সম্পর্কের বিষয়টা নিয়ে সংবাদপত্র বাড়াবাড়ি করেছে। এছাড়া যে সমস্ত পত্রিকাগুলাে বলছে যে সে ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ সম্পদ ভােগ করেছে তার পুরােটাই মিথ্যে। রানি দাবি করেছে যে সে ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে কোনাে বাড়ি ঘর কিংবা একটা রুপিও নেয়নি। ইয়াহিয়া বরং আমার কিছু বন্ধুদেরকে সাহায্য করেছিলেন মানবিক দিক বিবেচনা করে যাদের জন্য ইয়াহিয়া খানের কাছে আমি অনুরােধ করেছিলাম।’
শুধু তাই নয় রানি আরাে দাবি করে যে আমি পবিত্র কুরআন ধরে শপথ করে বলতে পারি সেই সময় আমি যে ক্ষমতাটুকু পেয়েছিলাম তার অসদ্ব্যবহার করে আমি ব্যক্তিগত কোনাে সুবিধা গ্রহণ করিনি। আমার ছেলে এখনাে বেকার, আমার বিবাহযােগ্য কন্যার এখনাে বিয়ে হয়নি, আমার স্বামী দীর্ঘ পঁচিশ বছর চাকরি করার পর পুলিশ ইনস্পেক্টর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছে। আমি যদি চাইতাম তাহলে ইয়াহিয়া খানকে ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ রুপি। উপার্জন করতে পারতাম। আমি যাদেরকে ইয়াহিয়া খানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম সেই সমস্ত মেয়েরা এখন কোটিপতি।’ | ইয়াহিয়া খানের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে রানি বলে যে, ‘১৯৬৫ এর শুরুর দিকে ইয়াহিয়া খানের সাথে তার পরিচয় হয়। ইয়াহিয়া খান তখন চাম্ব জুরিয়ান সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার। তিনি তখন অনেক বড় সামরিক কর্মকর্তা হয়েও আমাদের ছােট বাড়িতে এসে নিমন্ত্রণ খেতে লজ্জাবােধ করতেন না। অনায়াসে আমাদের সাথে রাতের খাবার খেতেন। তার স্ত্রী সন্তানেরাও আমাদের বাড়িতে এক সাথেই আসতেন। আমার স্বামীর সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপ আলােচনা গল্প গুজব করতেন। তার সাথে ইয়াহিয়া খানের শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে রানি কান্নায় ভেঙে পড়ে। রানি বলে, ইয়াহিয়া খান তার কাছে বড় ভাই কিংবা বাবার মতাে ছিল।’ রানি প্রায়ই ইয়াহিয়া খানকে মামু বলে সম্বােধন করত। সংবাদ মাধ্যমগুলাে বলে যে রানির আসল নাম ছিল আকলিমা আক্তার, ইয়াহিয়া খান তাকে রানি উপাধি দিয়েছিল। তাই সবাই তাকে রানি নামে ডাকত।
এক সাক্ষাৎকারে রানি এই বিষয়টা পুরােপুরি অস্বীকার করে। ‘ইয়াহিয়া খানের সাথে পরিচয় হওয়ার অনেক আগে থেকেই আমার এলাকার লােকজন আমাকে রানি নামে ডাকতেন। তারা আমাকে রানি নামে ডাকত কারণ দরিদ্র লােকদের মাঝে আমি অনেক জনপ্রিয় ছিলাম। তারা যখনই আমার কাছে কোনাে সাহায্য চেয়েছে আমি যেভাবেই হােক তাদেরকে সাহায্য করেছি। ইয়াহিয়া খান শুধু মাত্র আমার নামের আগে জেনারেল উপাধি দিয়েছিলেন। আমাকে জেনারেল রানি নামে ডাকতেন পছন্দ করতেন। কারণ আমি ইয়াহিয়া খানের অনেক কাজ তার জেনারেল অফিসারদের তুলনায় দ্রুত। করতে পারতাম তবে ইয়াহিয়া খান জনসম্মুখে কিংবা তার অফিসারদের। সামনে আমাকে কখনাে জেনারেল রানি নামে ডাকতেন না। কারণ তিনি তার। অফিসারদের যাদের পদবি জেনারেল ছিল তাদেরকে অসম্মান করতে পছন্দ করতেন না। তাদের সব সময় সম্মান করতেন।’ যারা ইয়াহিয়া খানকে একজন যৌনদানব হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছিল তার প্রত্যুত্তরে রানি বলে যে এটা সত্যি কথা নারী মাংসের প্রতি ইয়াহিয়া খানের দুর্বলতা ছিল। তবে একই সাথে এটাও সত্যি যে আমাদের দেশের বড় ব্যবসায়ীরা, উচ্চপদস্থ প্রশাসকরা তাদের সুন্দরী স্ত্রী, কন্যাদেরকে দিয়ে ইয়াহিয়া খানের সে পথটাকে আরাে সহজ করে দিয়েছে। আমি দেখেছি বড় বড় কর্মকর্তারা তাদের আকর্ষণীয় স্ত্রী আর অল্পবয়সী কন্যাদেরকে নিয়ে রাতের পর রাত ইয়াহিয়া খানের বেডরুমের জন্য অপেক্ষা করছিল। যে ব্যক্তিটা ইয়াহিয়া খানকে সবচেয়ে বেশি কলুষিত করেছিল সে হলাে একজন ব্যাংকার। সে সুন্দরী তারানাকে একজন রাষ্ট্রদূতের মেয়ে হিসেবে ইয়াহিয়া খানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।’ রানি আরাে বলে যে অনেক সরকারি কর্মকর্তা অভিজাত দেহপসারিণীদেরকে নিয়ে এসে অমুকের বােন অমুকের কন্যা বলে ইয়াহিয়া খানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিত।’ নুরজাহান আর তারানার পাশাপাশি রানি ব্ল্যাক বিউটিকে খুব অপছন্দ করত। রানি তার স্মৃতি কথায় উল্লেখ করে যে, এই কালাে সুন্দরী নারীটি অত্যন্ত ভয়ানক ছিল। আমি নিশ্চিত সে শত্রুপক্ষের প্রশিক্ষিত একজন এজেন্ট ছিল।
কোনাে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই মহিলাটি ইয়াহিয়া। খানের প্রেসিডেন্ট হাউসে এসেছিল। কালাে সুন্দরী খুব ভালাে করে জানত ইয়াহিয়া খানের বয়সী একজন পুরুষ কী ধরনের যৌন কর্ম পছন্দ করতে পারে, কী ধরনের আসনে সে অভ্যস্ত। সে শুধু যৌনকর্মেই পটু ছিল না বরং একই সাথে কথা দিয়ে মুগ্ধ করার মতাে তার জাদুকরী ক্ষমতা ছিল। এই মহিলা ইয়াহিয়া খানকে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক হামলার জন্য উৎসাহী করেছিল। আবার এই মহিলাই ইয়াহিয়া খান আর ভুট্টোর সাথে মিটমাটের সময় মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। | আমি ইয়াহিয়া খানকে সব সময় বলতাম জনাব ভুট্টোর দূরদর্শিতা আর। জনপ্রিয়তার উপর আস্থা রাখতে। কিন্তু এই কালাে সুন্দরী ডাইনি সব সময় এর বিরােধিতা করত। এই কালাে সুন্দরী ইয়াহিয়া খানকে বিশ্বাস করাতে বাধ্য। করেছিল যে যুদ্ধ শেষ হলে চীন আর আমেরিকা ইয়াহিয়া খানকে সহায়তা করবে। কালাে সুন্দরী প্রায়ই সকলের সামনে দাবি করত যে পৃথিবীর সব। ক্ষমতাবান রাষ্ট্রদূতদের সাথে তার খুব ভালাে সম্পর্ক। দুঃখজনকভাবে ইয়াহিয়া খান তার সব কথা বিশ্বাস করেছিলেন। এই মহিলাটা এতই চতুর ছিল যে সে তার মেয়ে আর ছেলেকেও ইয়াহিয়া খানের পরিবারের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছিল। সে ইয়াহিয়া খান আর ইয়াহিয়া খানের ছেলে দুজনের সাথেই মধুর। সম্পর্ক বজায় রাখত।
ইয়াহিয়া খানের শেষ দিনগুলােতে যে মহিলাদের সাথে ইয়াহিয়া খানের সম্পর্ক ছিল তাদের মধ্যে কালাে সুন্দরী ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর।’ রানি তার গল্প বলতে গিয়ে বলেন যে, আমি খুব দুঃখিত এই বিষয়ে ইয়াহিয়া খানকে আমি কোনাে সাহায্য করতে পারিনি। ১৯৭১ এর জুলাই এর দিকে ইয়াহিয়া খানের সাথে আমার ভুল বুঝাবুঝি হয়। আমি এখনাে নিশ্চিত নই যে এই ঘটনার জন্য আসলে কে দায়ী ছিল। তবে আমি এটা বুঝতে পেরেছিলাম যে ইয়াহিয়া খানের কিছু জেনারেল যারা আমার ক্ষমতাকে ঈর্ষা করত তারা কয়েকজন সুন্দরীকে মনােনয়ন দিয়েছিল যেন তারা ইয়াহিয়া খানের কানে আমাকে নিয়ে সব সময় বিষােদগার করতে পারে। মিলিটারি ইন্টিলিজেন্সের ইনচার্জ জেনারেল উমর আমাকে এই বিষয়ে বলেছিলেন। আমি যখন দেখলাম যে ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে আসলে আমার নেয়ার মতাে কিছু নেই তখন ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করলাম। বিশেষ করে তার মন মেজাজ যখন খারাপ থাকত তখন তার সাথে দেখা করতাম না। তবে আমি নিশ্চিত যদি সে সময় তার কাছাকাছি থাকতাম তাহলে ঘটনাগুলাে এত খারাপভাবে ঘটত না। আমাকে বলা হয়েছিল যে কালাে সুন্দরী সেই সময় প্রতি সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া খানকে দুই বােতল করে হুইস্কি খাওয়াত। আর তার কানে সব সময় ফিসফিস করে বলত যে বিরােধী রাজনীতিবিদদের সাথে আমার খুব দহরমমহরম সম্পর্ক। তাই আমি ইয়াহিয়া খানের খাবারে বিষ মিশিয়ে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করছি। সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত ইয়াহিয়া খান এই সব কথা শুনতে শুনতে শেষ সময় এসে যখন কোনাে হুইস্কির বােতল মুখে নিতেন তখন এক চুমুক কি দুই চুমুক অন্যদের খেতে দিয়ে আগে পরীক্ষা করে নিতেন। মাঝে মাঝে কালাে সুন্দরী নিজে হুইস্কির বােতল থেকে এক চুমুক খেয়ে বলত যে এটা একটু অন্যরকম লাগছে। এটা খাওয়ানাে যাবে না।
মাঝে মাঝে কালাে সুন্দরী অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ভান করত যে বােতলে কোনাে স্লো পয়জন মেশানাে আছে। তার এই আচরণে ইয়াহিয়া আরাে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে সত্যিই কেউ তাকে বিষপানে হত্যা করার ষড়যন্ত্র চলছে।’ রানি আরাে বলে যে, আমি নিশ্চিত এই কালাে সুন্দরী বাংলা থেকে কোনাে কালাে জাদু শিখে এসেছিল। আমাদের বাবা মা দাদা দাদিরা প্রায় বলত যে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যখন কোনাে পুরুষ পূর্ব পাকিস্তানের বাংলায় যায় তখন সেখানকার মেয়েরা এই পুরুষদেরকে কালাে জাদুর প্রভাবে দিনের বেলা ছাগল আর গরু বানিয়ে দেয় আবার রাতের বেলা তাদের কাজের জন্য পুরুষগুলাে মানুষে রূপান্তরিত করে। সেই রকম একজন কালাে জাদুকর মহিলার কথা আমি মুরব্বিদের কাছে শুনেছিলাম। এখন আমি তাদের কথার প্রতিটি শব্দ বিশ্বাস করি। সেই কালাে জাদুকর মহিলা তার জাদু দিয়ে পুরুষদেরকে ছােট পােকা মাকড়ে পাল্টে ফেলত। তারপর সারাদিন তাদেরকে নিজের অন্তর্বাসে লুকিয়ে রাখত। রাতের বেলা যৌনকর্মের সময় আবার তাদেরকে মানুষে পাল্টে দিত। আমি আগে ভাবতাম এই সব কথা বার্তা সব মিথ্যে আর কল্পনাপ্রসূত। কিন্তু এখন আমি বিশ্বাস করি এটা সম্ভব। ঐ মহিলাটি কালাে সুন্দরী-তার কী এমন ছিল? কিছুই ছিল না, হাফ ডজন সন্তান জন্ম দিয়ে তার শরীরে দেখার মতাে আর কিছুই ছিল না। অথচ কী জাদু দিয়ে সে দেশের প্রধান কর্তাকে মুগ্ধ করে দিলে। আর তার শাসনের তিন মাসের মধ্যে প্রধান শাসককে শুইয়ে দিল। পাকিস্তানকে ধ্বংস করে দিল। নুরজাহানের বিষয়ে রানির বক্তব্য হলাে: নুরজাহান ছিল একটা ধাপ্পাবাজ মহিলা। ইয়াহিয়া খান নিজে আমাকে বলেছেন যে নুরজাহানের ভেতরে বাইরে আসলে কিছুই নেই। শুধু ধান্দা করতে চায়। সে আইয়ুব খানকে দিয়ে তার পড়তি ক্যারিয়ারকে আবার জাগাতে চেয়েছিল। ১৯৬৫ এর দিকে এক অনুষ্ঠানে কিছু রণসংগীত শুনিয়ে সে ইয়াহিয়া খানকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল। নুরজাহান সব সময় টাকার পেছনে ছুটত। অর্থের প্রতি তার লােভ ছিল।
ভয়াবহ। কোনাে ব্যবসায়ী তাকে হাজার রুপি দিতে চাইলেই সে ঐ ব্যবসায়ীর সাথে নাচতে নাচতে চলে যেত। আমি ইয়াহিয়া খানের সাথে তাকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। আপনারা কি জানেন প্রথম বৈঠকে সে কী। করেছিল। কয়েক লাইন গান গেয়ে সে ইয়াহিয়া খানের কোলের উপর বসেছিল আমি দীর্ঘদিন ইয়াহিয়া খানের সাথে কাজ করে একটা রুপি উপার্জন করতে পারেনি অথচ মনভুলানাে এই ডাইনি গায়িকা নুরজাহান কয়েক বার ইয়াহিয়া খানের সাথে দেখা করেই কয়েক লাখ রুপি কামিয়ে ফেলল। ইয়াহিয়া খান সরকারি খরচে বেশ কয়েকবার তাকে দেশ বিদেশ ঘুরিয়েছিলেন। সে সরকারি খরচে টোকিও গিয়েছিল। আমাকে একজন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত বলেছিল যে নুরজাহান টোকিও গিয়ে কিছুই করেনি। বরং বােকার মতাে শুধু মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে কেনাকাটা করেছে। মদ খেয়ে মাতাল। হয়ে দু তিন ঘণ্টা দেরি করে স্টেজে গিয়েছিল গান পারফর্ম করতে। ততক্ষণে অনেক মেহমান চলে গিয়েছিল। আর যারা ছিল তারা আচ্ছা করে নুরজাহানকে। গালিগালাজ করেছে। পরবর্তী গানের চুক্তিগুলাে বাতিল করে দিয়েছিল।’ আমরা পরবর্তী অধ্যায়গুলােতে নুরজাহানকে নিয়ে আরাে বিস্তারিত অনেক কিছু আলােচনা করব। তবে রানির গল্প এখনাে শেষ হয়নি। রানি ইয়াহিয়া খানের ব্যক্তিগত। স্বভাব আচার আচরণ নিয়েও অনেক কথা বলেছিল। রানি বলে, আমি ইয়াহিয়া খানকে একজন সত্যিকারের পুরুষের মতােই দেখেছিলাম। তার শক্তি সামর্থ্য ছিল দারুণ। আমি তাকে দেখেছি এক বসায় পুরাে এক বােতল হুইস্কি শেষ করে ফেললেন। তারপর রাত তিনটা পর্যন্ত নিজের বেডরুমে। বান্ধবীদেরকে নিয়ে উদ্যম রাত কাটাতেন। সকাল আটটা পর্যন্ত টানা ঘুমাতেন। ঘুম থেকে উঠে একদম ফ্রেশ। সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে নিজের। অফিসের ডেস্কে সুটেট বুটেট হয়ে বসে পড়তেন। তার চেহারায় কিংবা চোখে। মুখে কোনাে ক্লান্তির ছাপ থাকত না। মনে হতাে যেন কিছুই হয়নি। যারা বলে । যে তিনি একদম বােকা ছিলেন, যুদ্ধের কলা কৌশল কিছুই জানতেন না তারা বােকা।
তারা কিছুই জানে না। আমি তাকে খুব ভালাে করে জানি। তিনি খুব বাজে আর ননাংরা ধরনের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীরা প্রথমে । তাকে ব্যবহার করে সবরকমের খারাপ কাজ করেছে। তারপর নিজেদের কুকর্মগুলাে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ঢাকার জন্য সমস্ত দোষ ইয়াহিয়া খানের উপর চাপিয়েছে। ইয়াহিয়া খানের দোষ দিয়ে তারা নিজেদের দোষগুলাে। একদম ঢেকে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাদের সকলের। মুখােশ উন্মােচন করে দেব।’ ইয়াহিয়া খানের ভালাে গুণের শেষ ছিল না।’ রানি বলে তিনি প্রচণ্ড বন্ধু। অন্তপ্রাণ ছিলেন। যাকে তিনি বিশ্বাস করতেন তার প্রতি খুব অনুগত ছিলেন। তার মতে পদে বসে তাদের বাল্যকালের কোনাে সাধারণ বন্ধুর সাথে সাধারণ অবস্থায় দেখা করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারবে না। কিন্তু ইয়াহিয়া খান। এর ব্যতিক্রম ছিলেন তিনি নিজের সমস্ত পুরাতন বন্ধুদের সাথে খুব আন্তরিকভাবে দেখা করতেন। সে পুলিশের কনস্টেবল হােক কিংবা কোনাে অধস্তন জোয়ান। নিজের আসন ছেড়ে উঠে গিয়ে তিনি পুরাতন বন্ধুদেরকে জড়িয়ে ধরতেন। সে যেই হােক না কেন। তার ক্ষমা করে দেয়ার মতাে আশ্চর্য একটা গুণ ছিল। তিনি যদি চাইতেন তাহলে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সব সময় ভাবতেন নিশ্চয়ই ভালাে একটা পথ বের হয়ে আসবে। তখন তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সব কিছু মিটমাট করে ফেলতে পারবেন। আমি নিশ্চিত যদি ইয়াহিয়া খানের উপর সেই শয়তানি প্রভাব আর কালাে জাদুর আছর না পড়ত তাহলে পাকিস্তানকে নিয়ে। এমন মর্মন্তুদ একটা পরিণতি কিছুতেই হতাে না। ইয়াহিয়া খান কখনােই স্বৈরশাসক হতে চাননি। যদি তিনি সেটা চাইতেন তাহলে পাকিস্তানে প্রথমবারের মতাে কোনাে গণতান্ত্রিক নির্বাচন হতাে না।’ ‘আমি ইয়াহিয়া খানের পক্ষ নিয়ে কিংবা তাকে রক্ষা করার জন্য কিছু বলছি না। খােদাকে ভয় করে এমন মুসলমানদের জানা উচিত যে এমন কোনাে মানুষকে নিয়ে বদনাম করা উচিত নয় যে এখন আর তার বদনামের কোনাে উত্তর দিতে পারবেন না।
কারণ তিনি এমন জায়গায় চলে গেছেন যেখান থেকে ফিরে আসার কোনাে সুযােগ নেই। সবাই জানেন তাকে রক্ষা করার আমার কোনাে প্রয়ােজন নেই। কারণ ইয়াহিয়া খান নিজে তার শাসনের শেষ সময়গুলােতে আমার সাথে সব সময় ঝগড়া করতেন। খারাপ আচরণ করতেন আমার সাথে। তার খারাপ গুণগুলােকে আমি যেভাবে ক্ষমা করতে পারি না একইভাবে তার ভালাে গুণগুলােও আমি ভুলতে পারি না।’ রানি যা বলেছে সেগুলাে নিয়েও বিতর্ক আছে। পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমের মতে রাজনীতিবিদদের কোনাে একটা শক্তিশালী অংশ রানিকে দিয়ে এমনটা করিয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা একধরনের সংশয় তৈরি করতে চেয়েছিল। তারা জল ঘােলা করতে চেয়েছিল। এই জন্য রানির প্রাপ্তিও কম। ছিল না। ইয়াহিয়া খানের সাথে রানির সম্পর্ক নিয়ে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছিল বলেই রানি সেই সময় দারুণ আঁকজমকপূর্ণ জীবন। যাপন করতে পেরেছিল। আরাম আয়েশের জীবন যাপনের প্রতি তার দুর্বলতা। ছিল। সৌখিন আসবাবপত্র সংগ্রহ করার প্রতিও তার ঝোক ছিল। পাক আফগান সীমান্তে রানি একটা জায়গা কিনেছিল যেখানে ধনী মানুষেরা চোরাই আসবাব কেনার জন্য একত্রিত হতাে। তার ঘরে কাপড় চোপড় পােশাকের বিস্তর সগ্রহ ছিল। একবার এক সাংবাদিক হােটেল কন্টিনেন্টালে তার রুমে গিয়ে কয়েক ডজন দেশি বিদেশি জুতাে দেখে অবাক হলে রানি তাকে আশ্বস্ত করে বলল, পারফিউম আর জুতাের প্রতি আমার দুর্বলতা অনেক।’ তার এই সব সম্পদ আর বিলাসবহুল জীবনের কথা জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে যে এই সব তার পূর্বপুরুষের জায়গা জমির সম্পদ। এছাড়া এক বিদেশি প্রকাশক তার স্মৃতিকথা লেখার জন্য তাকে বেশ মােটা অংকের টাকা। আগাম দিয়েছিল। সেই অপরিচিত প্রকাশক রানিকে বিভিন্ন পত্রিকায় স্মৃতিকথা লেখার জন্যও পারিশ্রমিক দিয়েছিল। কারণ এতে করে তার আগাম বইয়ের ভালাে পাবলিসিটি হবে। তবে বেশ কয়েক বছর পার হওয়ার পরেও যখন বইটা বের হলাে না। তখন লােকজন বেশ অবাক হলাে। রানিকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে বলল যে টেকনিক্যাল কারণে বইটা প্রকাশ হতে একটু বিলম্ব হচ্ছে খুব শিগগিরই বইটা প্রকাশ হবে। তবে অনেকের মতে সেই সময়ের সরকার চাচ্ছিল না যে এই জাতীয় কোনাে বই প্রকাশিত হােক। ফলে সব কিছু থেকে বােঝা গেল যে রানির বিবৃতির শেষ কথাটা এখনও প্রকাশিত হয়নি।
সূত্র : প্রাইভেট লাইফ অফ ইয়াহিয়া খান – দেওয়ান বারীন্দ্রনাথ