You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.07.18 | বাংলার বাণী সম্পাদকীয় | বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলে কলেরা | শেখ মণি - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলার বাণী
ঢাকাঃ ১৮ই জুলাই, বৃহস্পতিবার, ১লা শ্রাবণ, ১৩৮১

বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলে কলেরা

বন্যা উপদ্রুত এলাকায় মহামারী ক্রমশঃই ছড়িয়ে পড়ছে এবং প্রচুর মৃত্যুসংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। সেই বৈশাখ মাস থেকে বন্যা ও তার সহচর মহামারীকে নিয়ে বাংলাদেশে যে তাণ্ডব শুরু করেছিল এখনো অব্যাহত আছে এবং উত্তরোত্তর বাড়ছে। এই অবস্থা চিরাচরিত নিয়মে চলবে আর কয়েক মাস। এক একটি অঞ্চল একাধিকবার বন্যায় প্লাবিত হয় এবং মহামারীতে আক্রান্ত হয়। ফলে ওইসব অঞ্চলের জনগণের ভোগান্তি আর দুর্গতির অবধি থাকেনা।
প্রতিবেদনের সূত্রে জানা যায়, একমাত্র নোয়াখালী জেলা এ মাসেই পাঁচবার বন্যাকবলিত হয়। তারপরে শুরু হয় মহামারীর উপদ্রব। নোয়াখালীর সোনাগাজীতে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে প্রকাশ। বেসরকারি হিসাবে আরও অনেক বেশি। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও ঐ অঞ্চলের অধিবাসীরা এখন মহামারীর ক্রূর ছোবলের তলায় আতঙ্কিত জীবনযাপন করছে। সম্ভবতঃ অনেক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিশ্চিত মৃত্যুর প্রহর গুনছে।
অন্য এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ১৫ই জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজারের বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলিতে কলেরায় মারা গেছে ৬০ জন। গত সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৯ জন। অভিযোগে প্রকাশ, ও অঞ্চলে কলেরার কোন প্রতিষেধক পাওয়া যাচ্ছে না এবং রোগীদের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার কোন সুবন্দোবস্ত নেই। ফলে বন্যা ক্লিষ্ট জনগণের জীবনে যেন মরার উপর খাড়ার ঘা পড়ছে।
গত ১৩ জুলাই দৈনিক ‘বাংলার বাণী’র এক প্রতিবেদনে প্রকাশ–ফেনীতে কলেরা ও উদরাময়ে ৬০ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। সেখানে অভিযোগ যে, কলেরা প্রতিষেধক ওষুধ পর্যাপ্ত সরবরাহ করা হচ্ছে না। বিশুদ্ধ পানীয় পানির তীব্র সংকট এবং রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ওষুধ পত্রও প্রায় অমিল। ওই অঞ্চলের জনগণ বন্যার পানিই খাচ্ছে। ফলে রোগের সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে ভোলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব বাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, বগুড়া ও রংপুরের বন্যাকবলিত অঞ্চল গুলিতে বন্যা পরিস্থিতি এখনো বিপদজনক অবস্থায় আছে। বগুড়া ও সিলেটে যথাক্রমে ব্যাপক উদারাময় ও কলেরা রোগ দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় সহস্রাধিক লোক আক্রান্ত হয়েছে এবং বগুড়া থেকে তিন ব্যক্তির প্রাণহানির সংবাদ পাওয়া গেছে। বন্যাকবলিত সমগ্র অঞ্চলের প্রায় এরকম অবস্থা।
এ সমস্ত অঞ্চলে সরকারি উদ্যোগে ব্যাপক সাহায্য ও ত্রাণ সামগ্রী যাচ্ছে সে খবরও আমরা পাচ্ছি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে গণ দায়িত্বও কম নয় বলেই আমাদের ধারণা। এবং দেশের যত প্রকার কোন সমাজ কল্যাণ সংস্থা আছে অতন্ত উদ্যোগের সঙ্গে তাদের ও এ কাজে এগিয়ে আসা উচিত। কারণ ওখানে স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে শুধু ওষুধ বিতরণ করলে সমস্যার সমাধান বা রোগ সংক্রমণ বন্ধ হতে পারে না। সেখানে আনুষঙ্গিক কাজ তথা দুর্গত জনসাধারণের কাছে মহামারী প্রতিরোধকারী ব্যবস্থার পদক্ষেপ গুলো তুলে ধরতে হবে। কিভাবে পানীয় পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করা যায়, বন্যার পানি খেলে কি বিপদ হতে পারে এবং সাধারণ স্বাস্থ্য সম্বন্ধে ধারণা গুলো তাদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে। একথা তাদেরকে রোগ ও স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সচেতন করতে হবে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের দেশে অশিক্ষা জনিত অজ্ঞতার দরুন গ্রামের লোকদের মধ্যে সাধারণ স্বাস্থ্য চেতনা প্রায় অনুপস্থিত। তাদেরকে সেই জ্ঞান দিতে চেষ্টা করতে হবে। অতএব সেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে স্বেচ্ছামূলক ভাবে বিভিন্ন সূত্র থেকে আজ দুর্গত মানবতার পাশে গিয়ে দাঁড়ালে সেটাও হবে তাদের জন্য মস্ত বড় সাহায্য।
অপরদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় কলেরা ও উদরাময় রোগ প্রতিরোধক ও রোগ প্রতিষেধক ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে। পানির বেসনের পর্যাপ্ত সরবরাহ করে স্বাস্থ্য সম্বন্ধে কিছু প্রচারণা কাজেরও আবশ্যক আছে। এবং প্রয়োজনবোধে মহামারী-সংক্রান্ত বিধি-নিষেধাবলি ছবি সহকারে পোস্ট দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ বন্যা ক্লিষ্ট দুর্গত জনগণের জীবনকে মহামারী রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সবাইকে আজ ঐকান্তিক কর্মনিষ্ঠার পরিচয় দিতেই হবে। বলাবাহুল্য দেশের কল্যাণ শুধু মিছিল আর আন্দোলন করলেই হয় না–আর্ত মানবতার সেবাও সেখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই আসুন স্বতঃস্ফুর্ত দায়িত্ব পালনে আমরা সক্রিয় হয়।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন