কর্নেল (অব.) শাহরিয়ারের সাক্ষাৎকার
শাহরিয়ার ; তবে এটা বলতে পারি এ বিষয়ে মিটিং অনেক জায়গায়ই হয়েছে। জিয়াউর রহমান সাহেব ১৯৭৫ সনে ডেপুটি চিফ ছিলেন, ডেপুটি চিফের অনেক ফাংশান ছিল। তাই তার সাথে আমাদের অনেক সময়ই কথা হয়েছে। দেশের ভেতর তখন হানাহানি, অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল। সে বিষয়ে তার সাথে আমাদের আলাপ হয়েছে। এই সব আলােচনা সিনিয়র অফিসারদের নিয়েই হয়। জিয়াউর রহমান সাহেবের ঐখানে শুধু নয়, জেনারেল শফিউল্লাহ সাহেব, খালেদ মােশাররফ সাহেবের সাথেও কথা হয়েছে। আপনি যে প্রশ্ন করলেন, এই সব অভূত্থানের ব্যাপারে আলাপ আলােচনা সম্পর্কে …. তা অনেকেই জানতেন। ‘অল দিস পিপলস্ নিউ এবাউট ইট।’ তারা সকলেই এ সব বিষয়ে জানতেন। এতটুকু বলতে পারি, তখন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন বিভিন্ন অফিসার জানতেন এমন কিছু হতে পারে, তবে। কিভাবে কারা কবে কি কবে তা হয়তাে সবাই জানতেন না। তবে তাদের কিছু করার ছিল না। হয়তাে ‘অলদো দে নিউ সামথিং উইল হ্যাপেন, বাট দে ক্যান নট স্টপ ইট।’ অবস্থা আয়ত্ত্বের বাইরে চলে গিয়েছিল। অনেক কিছুই ঘটতে পারতাে অনেকভাবেই। আমীর মধ্যেই হবে এমন কথা নয়—দেয়ার ওয়াজ এ হেল অফ। লট অফ ফোর্সেস আউটসাইড় দি আর্মি।’ মুক্তিবাহিনীর কাছে অস্ত্র ছিল। জাসদ একটা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এমার্জ করছিল। অনেক গােপন বাহিনীও ছিল। তাছাড়া বিভিন্ন ফোর্সের মধ্যে তিক্ততাও সৃষ্টি হয়। রক্ষীবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ছিল। তাদের সাথে সরকারের অন্যান্য বাহিনীর সম্পর্কের বিন্যাস ছিল না। বিভিন্ন মহলের লােক বিভিন্ন লয়ালিটি নিয়ে কাজ করছে। মেঘনা : আপনাদের সাথে কি রাজনৈতিক নেতাদেরও যােগাযোগ ছিল? শাহরিয়ার : পলিটিক্যাল লিয়াজো এক সেন্সে ছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনৈতিক আলাপের একটা ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, আমরা তাদের স্বাধীনতা ফোর্স হিসেবেই মনে করতাম, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর আবার আমরা বিভিন্ন ফোর্স হােলাম। তবে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আমাদের যােগাযােগ যে বন্ধ হয়েছিল, তা নয়। এই ধরনের ব্যাপার নিয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতার সাথে আলাপ হয়েছে।
যেমন তাজউদ্দিন সাহেবের সাথে আলাপ হয়েছে, কামারুজ্জামান সাহেব ও মােশতাকের সাথে আলাপ হয়েছিল তা আমার জানা। মেঘনা : আগস্ট মাসের ১০-১২ তারিখে কি সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এমন কথা অনেকেই বলেন … শাহরিয়ার : আগ টর ১২ তারিখে (৭৫ সনের) ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন কর্নেল শাফায়েত জামিল। ওনার সাথে আলাপ হয়েছিল। খালেদ মােশাররফ সাহেবের সঙ্গেও আলাপ হয়েছিল। তবে কেমন করে অপারেশন হবে তা হয়নি। তবে যে অবস্থা চলছিল তা যে বন্ধ করার দরকার সে বিষয়ে হয়েছে। মেঘনা : খালেদ মােশাররফ সাহেবের ‘সেন্টিমেন্ট’ কি ছিল? শাহরিয়ার ; তার সেন্টিমেন্ট’ ছিল—এগুলাের মধ্যে আমরা খামাখা জড়াব । আমাদের আর্মড ফোর্স এখনও (১৯৭০) দেশ চালাবার মত হয়নি। অত সেন্টিমেন্টাল হলে চলবে না। মেঘনা : ১৫ই আগস্ট ভােরের ঘটনার পর অবস্থা কিভাবে সামলান—তখন তাে সামরিক বাহিনীর হাই কমান্ডার ছিল। রক্ষীবাহিনী ছিল—তাদের কাছ থেকে প্রতিরােধ না হলেও প্রতিবাদ আসেনি? শাহরিয়ার : এ প্রশ্নটা জিয়াউর রহমান, খালেদ মােশাররফ সাহেব বেঁচে থাকলে করলেই ভালাে হত। এখনতাে তারা বেঁচে নেই। তবে তখন ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন শাফায়াত জামিল সাহেব। তিনিই একটিভ ফোর্সের কমান্ডার ছিলেন। তিনি এখনও বেঁচে আছেন। এ প্রশ্ন তাকে করলে সবচেয়ে ভাল হবে, সম্পূর্ণ উত্তর পাবেন। আর সম্ভবত তিনিই একমাত্র ব্যক্তি এখন বেঁচে আছেন যিনি এই প্রশ্নের উত্তর জানেন।
সূত্র : ফ্যাক্টস্- এন্ড ডকুমেন্টস্–বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড – অধ্যাপক আবু সাইয়িদ