You dont have javascript enabled! Please enable it!

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের মধ্যে মৈত্রী

সহযােগিতা ও শান্তিচুক্তি

শান্তি, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবােধের একই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এক আদর্শের বাস্তব রূপায়ণের জন্য এক যােগে সংগ্রাম, রক্তদান এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বন্ধুত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করার ফলশ্রুতি হিসেবে মুক্ত, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের বিজয় অভ্যুদয় ঘটিয়ে;  সৌভ্রাতৃত্বপূর্ণ ও সম্প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক রক্ষা করতে এবং উভয় রাষ্ট্রের সীমান্তকে চিরস্থায়ী শান্তি ও বন্ধুত্বের সীমান্ত হিসেবে রূপান্তরনের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে; | নিরপেক্ষতা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযােগিতা, অপরের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান প্রদর্শনের মূলনীতিসমূহের প্রতি দৃঢ়ভাবে অস্থাশীল থেকে; শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষা দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এবং সম্ভাব্য সকল প্রকারের পারস্পরিক সহযােগিতার মাধ্যমে স্ব স্ব দেশের অগ্রগতির জন্য; উভয় দেশের মধ্যকার বর্তমান মৈত্রীপূর্ণ সম্পর্ক আরাে সম্প্রসারণ ও জোরদার করার জন্য দৃঢ়সংকল্প হয়ে; এশিয়া তথা বিশ্বের স্থায়ী শান্তির স্বার্থের এবং উভয় রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পারস্পরিক মৈত্রী ও সহযােগিতা আরাে সম্প্রসারিত করায় বিশ্বাসী হয়ে; বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদার করার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা প্রশমনে এবং উপনিবেশবাদ, বর্ণবৈষম্য ও সামন্তবাদের অবশেষসমূহ চূড়ান্তভাবে নির্মুল করার জন্য প্রয়াস চালানাের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে; আজকের বিশ্বের আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলাের সমাধান যে শুধু মাত্র সহযােগিতার মাধ্যমে সম্ভব বৈরিতা ও সংঘাতের মাধ্যমে নয়- এ ব্যাপারে কৃতনিশ্চয় হয়ে; রাষ্ট্রসংঘের সনদের নীতিমালা ও লক্ষ্যসমূহ অনুসরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা পুনরুল্লেখ করে একপক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও অন্য পক্ষে ভারতীয় সাধারণতন্ত্র বর্তমান চুক্তি স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অনুচ্ছেদ

এক : চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ স্ব স্ব দেশের জনগণ যে আদর্শের জন্য একযােগে সংগ্রাম এবং স্বার্থত্যাগ করেছেন, সেই আদর্শে অনুপাণিত হয়ে | মর্যাদার সংগে ঘােষণা করেছেন যে, উভয় দেশ এবং তথাকার জনগণের মধ্যে। দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও মৈত্রী বজায় থাকবে। একে অপরের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও | আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এবং অপরের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে। চুক্তিকারী উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষে উল্লেখিত নীতিমালার ভিত্তিতে এবং পারস্পরিক সমতা ও সম্মানজনক নীতিসমূহের ভিত্তিতে উভয় দেশের মধ্যেকার বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সুপ্রতিবেশীসুলভ সার্বিক সহযােগিতার সম্পর্কের আরাে উন্নয়ন জোরদার করবে।

দুই : জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি-সমতার নীতিতে আস্থাশীল থাকার আদর্শে পরিচালিত হয়ে চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ সর্বপ্রকারের উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যবাদের নিন্দা করছে এবং তাকে চূড়ান্তভাবে ও সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার জন্য প্রচেষ্টা চালানাের ব্যাপারে তাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা পুনরুল্লেখ করছে।

চুক্তিকারী উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ উপরােক্ত অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য অন্যান্য রাষ্ট্রের সংগে সহযােগিতা করার এবং উপনবেশবাদ ও বর্ণবৈষমবিরােধী সংগ্রামে জনগণের ন্যায়সংগত আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সমর্থন দান করবে। | তিন : বিশ্বের উত্তেজনা প্রশমন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা মজবুত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে জোটনিরপেক্ষতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির প্রতি তাদের অবস্থার পুনরুল্লেখ করছে।

চার : উভয় দেশের স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক সমস্যাবলি নিয়ে চুক্তিকারী উভয়পক্ষ সকল স্তরে বৈঠক ও মত বিনিময়ের জন্য নিয়মিত যােগাযােগ রক্ষা করবে।

পাঁচ : চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সুবিধাজনক ও সর্বাত্মক সহযােগিতা শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করে যাবে। উভয় দেশের ক্ষমতা ও পারস্পরিক সুবিধার নীতির ভিত্তিতে বাণিজ্য, পরিবহণ ও যােগাযােগের ক্ষেত্রে সহযােগিতা প্রসারিত করবে।

ছয় : বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী অববাহিকার উন্নয়ন এবং জল বিদ্যুৎ শক্তি ও সেচ ব্যবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্রে যৌথ সমীক্ষা পরিচালনা ও যৌথ কার্যক্রম গ্রহণে চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ অভিন্ন মত।

সাত : চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি খেলাধুলার ক্ষেত্রে সম্পর্কের প্রসার করবে। 

আট : দুই দেশের মধ্যকার বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনুযায়ী চুক্তিকারী উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ প্রত্যেকে মর্যাদার সঙ্গে ঘােষণা করছে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে পরিচালিত কোন সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হবে না বা অংশ নেবে অন্যর উপর আক্রমণ থেকেও নিবৃত্ত থাকবে এবং তাদের এলাকায় এমন কোন কাজ করতে দেবে না যা ত চুক্তিকারী কোন পক্ষে ক্ষতি হতে পারে বা তা কোন পক্ষের নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

নয় : কোন এক পক্ষের বিরুদ্ধে তৃতীয় পক্ষ সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হলে চুক্তিকারী প্রত্যেককে এতদুল্লেখিত তৃতীয় পক্ষকে যে কোন প্রকার সাহায্য দানে বিরত থাকবে। তাছাড়া যে কোন পক্ষ আক্রান্ত হলে অথবা আক্রান্ত হওয়ার আশংকা দেখা দিলে সেই আশংকা নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে যথাযথ সক্রিয় ব্যবস্থা নিতে উভয়পক্ষ সঙ্গে সঙ্গে আলােচনায় মিলিত হয়ে নিজেদের দেশের শক্তি এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে।  দশ : চুক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ ঘােষণা করেছে, এই চুক্তির পক্ষে অসামঞ্জস্য হতে পারে এমন গােপন বা প্রকাশ্য এক বা একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে উভয়ের কেউই কোন অঙ্গীকার করবে না।

এগারাে ; এই চুক্তি পঁচিশ বছরের মেয়াদের জন্য স্বাক্ষরিত হলাে। চুক্তিকারী উভয়পক্ষের পারস্পরিক সম্মতিতে চুক্তিমেয়াদ বাড়ানাে যেতে পারে। অত্র চুক্তি সই করার দিন থেকে কার্যকরী হবে।

বারাে : এই চুক্তি কোন একটির বা একাধিক অনুচ্ছেদের বাস্তব অর্থ করবার। সময় চুক্তিকারী উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন পক্ষদ্বয়ের মধ্যে কোন মতপার্থক্য দেখা দিলে তা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বােঝাপড়ার মনােভাবের দ্বারা শান্তিপূর্ণ আলােচনায় নিষ্পত্তি। করতে হবে। 

সূত্র : ফ্যাক্টস্- এন্ড ডকুমেন্টস্–বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড – অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2020/09/1972.03.19-শান্তিচুক্তি-india-bangladesh-treaty.pdf” title=”1972.03.19 শান্তিচুক্তি india-bangladesh treaty”]

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!