You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.08.15 | মুজিব হত্যার হাতিয়ার মিথ্যাচারের বাহন-৩ - মুজিব হত্যাকাণ্ড - সংগ্রামের নোটবুক

মুজিব হত্যার হাতিয়ার

মিথ্যাচারের বাহন-৩

মুজিব হত্যায় মিথ্যাচারের বাহন হিসেবে বাংলাদেশের কয়েকটি পত্র পত্রিকা দুরভিসন্ধিমূলক ভূমিকা পালন করে।

১.  ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চের কাল রাত। দৈনিক ইত্তেফাক এবং দৈনিক সংবাদ অফিস পাকবাহিনীর কামানের গােলায় ভস্মীভূত হলাে। কারণ এই দুটি দৈনিক পত্রিকা বাংলার স্বাধিকার অর্জনের স্বপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল। সেই রােষবহ্নিতে ইত্তেফাক ও সংবাদ অফিস ধ্বংস করা হয়।

১.১  কিন্তু ঘটনাটি যে ভুল সিদ্ধান্তের পরিণতি তা বুঝতে পেরে জেনারেল ইয়াহিয়া ইত্তেফাক পুণঃ প্রকাশের জন্য ১২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিলেন। তােফাজ্জল হােসেন মানিক মিয়া সাহেবের জ্যেষ্ঠ পুত্র সে টাকা গ্রহণ করে। ইংল্যান্ড-জার্মান সফর করলেন অফসেট রােটারি মেশিন ক্রয়ের উদ্দেশ্যে। মুক্তিযুদ্ধে যােগ দিলেন না।

১.২ দেশে ফিরে এসে দৈনিক পাকিস্তান মুদ্রণালয় থেকে ইত্তেফাক ছাপাতে লাগলেন। শােনা যায় দুটো পশ্চিমা দেশ বিশেষকরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড ইয়াহিয়া খানকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, এটি মার্কিনী। লাইনের পত্রিকা। আজ ফারল্যান্ডের কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এই পত্রিকাটি বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের গুরুত্বপূর্ণ মুখপত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে

১.৩ যাহােক, স্বাধীনতার পর মঈনুল হােসেন ও আনােয়ার হােসেন মঞ্জু পূর্বেকার সম্পর্কের দোহাই দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ধরলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তারা হানাদার কবলিত বাংলাদেশে ইত্তেফাক ছাপানাে বকেয়া বিজ্ঞাপন বিল আদায় করতে সমর্থ হলেন।

১.৪ শুধু তাই নয় রােটারি মেশিন আমদানির জন্য ইত্তেফাক ১৭ লক্ষ টাকার ক্যাশ লাইসেন্স লাভ করে। পাক গােয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে মঈনুল হােসেনের যােগাযােগ ছিল। পাকিস্তান গােয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক লিখিত বইতে তাঁকে তাঁর পিতার যােগ্যপুত্র হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত পরীক্ষিত নিষ্ঠাবান নেতা নূরুল ইসলাম ভাণ্ডারীকে বাদ দিয়ে ১৯৭৩ সনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনােনয়ন দিয়ে ব্যরিস্টার মঈনুল হােসেনকে সংসদ সদস্য হিসেবে পার্লামেন্টে নিয়ে এলেন। এরপর শুরু হলাে ইত্তেফাকের খেলা। ইত্তেফাক প্রকারান্তরে মুসলিম বাংলার প্রচার চালাতে থাকে এবং বঙ্গবন্ধু ও তার জাতীয় মূলনীতি বিশেষকরে সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপসমূহ বানচাল করার জন্য কৌশলে কাজ করে যেতে থাকে। খন্দকার আবদুল হামিদ আইউব আমলে মৌলিক গণতন্ত্রী, মুসলিম লীগের ও মােনায়েম খানের সমর্থক। ইয়াহিয়া জান্তাকেও সমর্থন দেয় এ কুখ্যাত কলাবরেটর। হীরুমঞ্জু মিয়ার তদবীরে বঙ্গবন্ধু তাকে ক্ষমা করে দেন। কারাগার হতে বের হয়ে মুজিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি স্পষ্টভাষী নাম নিয়ে ইত্তেফাকে লেখা শুরু করেন এবং আজাদে সাম্প্রদায়িক গরল উদগীরণ করেন “মর্দে মুমীন’ নামে।

১.৫  ইতিহাসই প্রমাণ করেছে এই ব্যক্তিটি বাঙ্গালি জাতি সত্তাকে বিভ্রান্ত করার জন্য জিয়ার আমলে বাঙালির পরিবর্তে বাংলাদেশী’ তত্ত্বের উদ্গাতা। যে তত্ত্বটি পাকিস্তানী দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর দাঁড়ানাে এবং যার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ আত্মাহুতি দিয়েছেন।

২.  মিথ্যা উদ্দেশ্যমূলক কৌশলী সংবাদ পরিবেশনার ক্ষেত্রে ইংরেজি।

সাপ্তাহিক হলিডের জুড়ি নেই। আইউব আমলে পত্রিকাটির আবির্ভাব। সােভিয়েত, ভারতের বিরুদ্ধে চীনা নীতির ধারক ও প্রচারক এবং জোর সমর্থক হিসেবে পত্রিকাটি নিজেকে হাজির করলেও এটি ছিল সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন ও পাক এলিট প্রতিক্রিয়াশীলদের স্বার্থ সংরক্ষক।

২.১  হলিডে চক্র প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সরাসরি না লিখলেও সংবাদ বিশ্লেষণ, সম্পাদকীয় মন্তব্য এবং চিঠিপত্র কলামে সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তসমূহ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর সমালােচনা করার উদ্যোগী হয়। পত্রিকাটি প্রকাশ্যত চীনের পক্ষে ওকালতি ও পাক-মার্কিনীদের সাফাই গাইতে শুরু করে এবং চরমভাবে ভারত ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিষােদগার করতে থাকে।

২.২ ১৯৭৩ সনের ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য আব্দুল কুদুস। মাখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টি আকর্ষণ প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন যে, পাকিস্তানী নাগরিক মােহাম্মদ আসলাম এখন কোথায়? এই প্রশ্নে শুরু হলাে বিতর্ক। অনুসন্ধানে দেখা গেল, জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো তার পিপলস্ পার্টি গঠন করার সময় আসলাম নামের জনৈক উর্দু ভাষী সাংবাদিকের আবির্ভাব ঘটে। যুদ্ধকালে সে বাংলাদেশেই ছিল এবং স্বভাবতই পাকবাহিনীর সাথে যােগাযােগ ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মালেক উকিল পার্লামেন্টে জানালেন যে, গােয়েন্দা রিপাের্টে দেখা গেছে। সে ছিল পাকিস্তান তথা ভুট্টোর এজেন্ট। পাকিস্তানের সাথে সকল যােগাযােগ ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সে ঢাকায় গােপনে কাজ করছিল। তার কাজ ছিল বিচ্ছিন্ন পাকিস্তানী এজেন্টদের সংগে পাকিস্তানী গুপ্তচর বাহিনীর পুনঃযােগাযােগ ঘটিয়ে দেয়া। সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সে এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ ত্যাগ করে।

২.৩ বলাবাহুল্য, এই পাকিস্তানী এজেন্টটি ছিল হলিডের নির্বাহী সম্পাদক। পার্লামেন্টে এ সব বিতর্ক উত্থাপনের দুই দিন পর ৩০শে সেপ্টেম্বর এনায়েত উল্লাহ খান নিজের সাফাই গাইতে গিয়ে মাতৃভূমির রক্ষার্থে’ সাহসিকতার লাল পােশাক পরিধানের সংকল্প প্রকাশ করে তার উপর অবিচার ও পার্লামেন্টে এহেন ননসেন্স’ থামানাের জন্য প্রধান মন্ত্রীর নিকট আবেদন করেন। এখানে উল্লেখ্য, আসলাম যে একজন পাকিস্তানী ও তার পত্রিকায় কর্মরত ছিল এনায়েত উল্লাহ খান তা অস্বীকার করেননি। ২.৪ পাকিস্তানী এই এজেন্টটি অত্যন্ত সংগােপনে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার। পরপরই এনায়েত উল্লাহ খানকে নিয়ে স্বাধীনতা বিরােধী কাজে লেগে। গেলেন।

স্বাধীনতার পরপর হলিডে লিখল ? তাহলে কি আমরা ৬ কোটি লােক। সকলেই দালাল? অর্থাৎ জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরানাের সুচতুর কৌশল এবং সাথে সাথে স্বাধীনতা বিরােধীদের রক্ষার জন্য বিকল্প জনমত গঠনের পাঁয়তারা। দালাল, রাজাকার, আলবদর, খুনী চক্র, মুসলিম লীগ ও জামাতী পাণ্ডারা যেহেতু, এই ছয় কোটির মধ্যে সে জন্য এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অর্থই ছয় কোটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সিপাহসালার অর্থমন্ত্রী তাজুদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখে লিখে। বঙ্গবন্ধু ও তাজুদ্দিনের মধ্যে ক্রমাগত বিরােধ প্রচেষ্টা সফল করে। এনায়েত উল্লাহ খান বঙ্গভবনে অবাধে যাতায়াত শুরু করে। ২.৫ ইনটেলিজেন্স রিপাের্টে জানা যায়, এনায়েত উল্লাহ খান বাংলাদেশ বিরােধী একটি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং তার গতিবিধি সন্দেহজনক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এম মনসুর আলী তাকে নিরাপত্তা আইনে। গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করেন। “এনায়েত উল্লাহ খান বন্দি হবার পর তার স্ত্রী গিয়ে শেখ মুজিবের দুয়ারে ধর্ণা দেন এবং বঙ্গবন্ধু এনায়েত উল্লাহ খানকে ক্ষমা করেন।” বঙ্গবন্ধু শুধু ক্ষমা করেই ক্ষান্ত হলেন না, তাকে প্রেসিডেন্টের তথ্য উপদেষ্টা পদে বহাল করলেন।

২.৬  সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এনায়েত উল্লাহ খান বলেছেন, “বাকশাল সৃষ্টির আগে শেখ মুজিব আমাকে এক দিন ডেকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মিডিয়া গঠন সম্পর্কিত একটি পেপার তৈরি করে দিতে বললেন। আমি সাংবাদিক শহীদুল হক ও তােয়ব খান এই তিন জন অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের আলােকে বাংলাদেশে মিডিয়া State Controlled Media-র স্ট্রাকচার ও ভূমিকা কি হওয়া উচিত এ বিষয়ে একটি পেপার তৈরি করে দিলাম। পেপারটি ছিল ফুলি একাডেমিক। সেখানে আমরা কয়েকটি দেশের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে State Controlled media-বা পরামর্শ দিয়েছিলাম; আমি বিদেশে থাকা কালেই এটি ইপ্লিমেন্ট করা হয়।৬

২.৭ ঐ উপদেষ্টার পরামর্শে তৈরি ১৯৭৫ সনের নিউজ পেপার অর্ডিনেন্স পাস হয়।”

২.৮ কিন্তু মাত্র দুই মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু নিহত হলে এনায়েত উল্লাহ খান লিখেছেনঃ তিনি দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। জীবন দিয়ে তাকে সেই মূল্য শােধ করতে হয়েছে।

৩.  বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মােশতাক আহমদ ক্ষমতায় এসে এনায়েত উল্লাহকে বাংলাদেশ টাইমসের সম্পাদক নিযুক্ত করেন এবং হলিডে প্রকাশনার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন। ওই নভেম্বর প্রতিবিপ্লবী প্রতিক্রিয়াশীল গােষ্ঠী পুনরায় ক্ষমতা দখল করলে এনায়েত উল্লাহ খান লিখলেন, “বাংলাদেশ উইনস্ ফ্রিডম” অর্থাৎ এতদিনে বাংলাদেশ স্বাধীন হলাে। তারপর শুরু হলাে হলিডে চক্রের নির্লজ্জ দালালী। স্বাধীনতা বৈরী। তৎপরতা। স্বাধীনতার স্বপক্ষে শক্তির উপর নির্লজ্জ এক অন্তহীন আক্রমণ!

৩.১ আজ প্রমাণিত হয় সি. আই. এর ব্র প্রিন্টে পরিচালিত এনায়েত উল্লাহ খান ১৯৭৭ সন ২৭শে জানুয়ারি হলিডে পত্রিকায় সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারী বিপ্লবী পরিষদ ও প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্টার। পদ্ধতির উর্ধ্বে স্থান দেবার জন্য এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। যার প্রক্রিয়া জিয়া ও এরশাদের আমলে চলেছে ও চলছে। সে জন্য জিয়া তাকে মন্ত্রী ও এরশাদ তাকে চীনের রাষ্ট্রদূত করে পুরস্কৃত করেছেন।

৩.২ এখানে উল্লেখ্য যে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এনায়েত উল্লাহ খান এ দেশেই ছিলেন এবং বন্দি হন। বঙ্গবন্ধুর সময়ও বন্দি হন। এই বন্দিদশা থেকে মুক্তির ব্যাপারে একটি বিদেশী রাষ্ট্র বার বার হস্তক্ষেপ করেছে। প্রশ্ন থেকে যায় এই বিদেশী রাষ্ট্র কোন্‌টি? ৩.৩ ভারতীয় পার্লামেন্টে উত্থাপিত এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশে সি, আই, এ, নেট ওয়ার্কে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে এনায়েত উল্লাহ খানও উল্লেখিত। [পরিশিষ্ট দেখুন)

৪.  সরকার পরিচালিত বাংলাদেশ অবজারভারের সম্পাদক ওবায়দুল হক মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে দিন-রাত লিখেছেন, বলেছেন এবং কাজ করেছেন।

৪.১  দেশ স্বাধীন হলাে। ওবায়দুল হক শেখ মুজিবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অবজারভার পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রশংসার ফিরিস্তি চলল। বই লিখেন ঃ ভয়েজ অব থান্ডার ঃ মুজিব প্রশস্তি। কবিতা লিখলেন। তা বাধিয়ে গণভবনের দেয়ালে পেরেক দিয়ে গেঁথে দিলেন। চলল এভাবেই।

৪.২ ১৯৭৫ সনের ১৫ই আগস্ট। নিহত মুজিব। লাশ তার পড়ে আছে। দাফন পর্যন্ত হয়নি। তিনি লিখলেন অবশেষে জাতি দুষ্ট চক্রের কবল মুক্ত হয়েছে।

৫.  ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সির মালিক ও প্রধান গােলাম রসুল। আইউব আমলে। আইউবের প্রিয়পাত্র, বাঙালিদের মধ্যে একজন—যারা সরকারি খরচে দেশে-বিদেশে সফর করার বহু সুযােগ পেয়েছেন। আইউব-মােনয়েমের পেয়ারা বান্দা।

দেশ স্বাধীন হলাে।

৫.১  গােলাম রসুল বঙ্গবন্ধুর পেয়ারা। দেশ-বিদেশে তার সফর সঙ্গী। অথচ গােপনে সে স্বাধীনতা বিরােধী বলে কথিত সিরাজুল হােসেন খানকে তার প্রতিষ্ঠানের সংবাদ বিশ্লেষণ তৈরি করার কাজে নিয়ােজিত করেছিল। যার ফলে বহু আন্তর্জাতিক পত্র পত্রিকায় বহু সংবাদ বিকৃত হয়ে প্রকাশিত হতাে। যেমন

৫.২ বঙ্গবন্ধু জেনেভায় … ভুট্টো-বঙ্গবন্ধুর বৈঠক সম্পর্কে একটি বিবৃতি লন্ডনের দি টাইমস পত্রিকা বিকৃত আকারে প্রকাশ করে।১০

৫.৩  এই গােলাম রসুল বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর জিয়ার খাস চামচা হয়ে বহু চমকপ্রদ পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছে।

৬.  জেনারেল টিক্কা আর হানাদার আমলের গভর্নর ডাঃ মালেকের স্টেনােগ্রাফার রােজারিও গণভবনে বহাল থাকলেন।

৭.  দেশের আভ্যন্তরীণ ঘটনাবলী বিদেশে অতিরঞ্জিত হয়ে প্রকাশ পেতে থাকে। অভ্যন্তরীণ ছােট ঘটনাও বড় করে দেখানাে হচ্ছে। ঠিকমতাে তথ্যসমৃদ্ধ সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে না। তাহের উদ্দিন ঠাকুর তথ্য প্রতিমন্ত্রী। বললেন ঃ যােগ্য লােক দিচ্ছি। বৈদেশিক প্রচারণা জোরদার করতে হবে। তার সুপারিশে বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিভাগের মহাপরিচালক হয়ে বসলেন ঃ নাজিমুদ্দিন হাশিম। পরিচয় ঃ আইউবের ‘প্রভু নয় বন্ধু’ গ্রন্থের মূল প্রণেতা। রাওয়ালপিন্ডির পাকিস্তান কাউন্সিলের সাবেক ডাইরেক্টর।

৭.১  বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংবাদ পরিবেশনার দায়িত্বে থাকলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর এবং বৈদেশিক মন্ত্রণালয় প্রচার বিভাগের দায়িত্বে থাকলেন আইউব-মােনায়েমের প্রিয়পাত্র নাজিম উদ্দিন হাশিম। বর্তমান বাংলাদেশ ফৌজি শাসককুলের তিনি অনুগ্রহ ভাজন ব্যক্তি। বিদেশে প্রচারিত হতে থাকল বাংলার বুভুক্ষু মানুষের জন্য প্রদত্ত সাহায্যের গম রেডক্রস প্রধান গাজী গােলাম মােস্তফার গরুর খামারে গাে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গাজী গােলাম মােস্তফার না ছিল গরু, না ছিল খামার। না ছিলেন তিনি খাদ্য ব্যবসায়ী। এ রকমের অপপ্রচার চলছিল।

৭.২ সবিশেষ বিশেষণে বিশেষিত করে তাহের উদ্দিন ঠাকুর পার্লামেন্টে যে ভাষণ দান করতেন তা আমরা যারা সংসদ সদস্য ছিলাম তারা অত্যন্ত লজ্জা ও কৌতুকের সঙ্গে উপভােগ করতাম। কর্তাভজানাে এই সব। চাটুকার বেঈমানদের পাল্লায় বঙ্গবন্ধুর স্বাভাবিক কথাকে অত্যন্ত গুরুত্ব। দিয়ে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। যেমন ১৯৭৩ সনে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে এক বিয়ের আসরে বঙ্গবন্ধু আক্ষেপ করে বলেছিলেন, কবে যে বঙ্গললনা বেলী ফুলের মালা দিয়ে বিয়ে করবে! শুরু হয়ে গেল বেলী। ফুলের দাবদাহ্!

৭.৩  আবার ১৯৭৪ সনের দুর্ভিক্ষাবস্থার পর শেখ আত্মজের লক্ষ টাকার স্বর্ণমুকুট মাথায় পরে পরিণয় পর্ব! একদিকে রুগ্ন শিশুর বিবর্ণ মৃত্যুপ্রায় মূর্তি হাড়ডিসার; অন্যদিকে টেলিভিশনে আলােকোজ্জ্বল স্বর্ণমুকুট প্রদর্শনের মহড়া!

৭.৪  ইত্তেফাক দুর্গতি বাসন্তীদের খবর ছাপল, টেলিভিশন স্বর্ণমুকুট প্রদর্শনে ব্যতিব্যস্ত। আর বঙ্গবন্ধু? লিপ্সার গণ্ডিবদ্ধ পারিপার্শ্বিক চক্রে শৃঙ্খলিত মুজিবের অসহায় আত্মরােদন! 

সূত্র : ফ্যাক্টস্- এন্ড ডকুমেন্টস্–বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড – অধ্যাপক আবু সাইয়িদ