বাংলাদেশে শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার মতাে অবস্থা এখনও সৃষ্টি হয়নি
নয়াদিল্লি, ৪ আগস্ট-ইসলামিক সম্মেলনের সেক্রেটারি জেনারেল শ্ৰীটুংকু আবদুল রহমান বলেন, ভারত থেকে শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থা ঠিক এই মুহূর্তে নিরাপদ এবং অনুকুল বলে তিনি মনে করেন না।
প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে আলােচনা করার পর শ্রীরহমান সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় উপরােক্ত মন্তব্য করেন। শরণার্থীদের নিরাপদে ফিরে যাওয়ার জন্য একটা নিরাপত্তা বােধের ভাব সৃষ্টিতে সাহায্য করার ব্যাপারে তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের উপস্থিতির প্রস্তাব দেন। মালয়েশিয়ার ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই প্রস্তাব সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অবশ্য কিছু বলেননি তবে তিনি একথাও বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা বলতে তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জের কথাই বলছেন না। তিনি আরও বলেন : আমি যে সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করছি, আন্তর্জাতিক সংস্থায় তারও নাম থাকতে পারে।বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যেখানে সমান তালে পাক সৈন্যরা নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে শরণার্থীরা। কেমন করে ফিরে যেতে পারেন, সাংবাদিকরা বারংবার এই প্রশ্ন করতে থাকলে শ্রীরহমান বলেন : শরণার্থীদের যেখানে বলি বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা সেখানে আমি কী করে তাদের ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব দিতে পারি? তিনি বলেন, এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি সহায়ক হতে পারে। ‘শরণার্থীদের নিরাপদে প্রত্যবর্তনের পক্ষে কোন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সম্ভবপর কি না এবং পাকিস্তান তা মেনে নেবে কি না-এই প্রশ্নের জবাবে শ্রীটুংকু বলেন : কোনটাই অসম্ভব নয়। আজকে মানুষ চাদে যাচ্ছে । ইসলামিক সম্মেলনের এক প্রতিনিধি দলের নেতা হিসাবে শ্ৰীটুংকু বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। ফিরবার পথে তার এবং তাঁর সহকর্মীদের পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী শিবিরগুলি পরিদর্শনের কথা ছিল। কিন্তু ইসলামিক সম্মেলনের প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাতে ভারত সরকার অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে শ্রীটুংকু ব্যক্তিগতভাবে সফরে এলে ভারত সরকার তাঁকে স্বাগত জানাবেন। শ্ৰীটুংকু এই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। এবং তিনি কুয়ালালামপুর অভিমুখে যাত্রা করেন।
শ্ৰীটুংকু বলেন : ভারতের এবং বাংলাদেশের শরণার্থীদের ত্রাণদানের ব্যাপারে মুসলিম দেশগুলিকে তিনি রাজি করাতে পারবেন বলে আশা করেন। তিনি বলেন শরণার্থী আসার জন্য ভারতের পরিস্থিতি গুরুতর । বর্তমান যুগে এই ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে, একথা আমরা কখনই ভাবিনি।শেখ মুজিবের আটক সম্পর্কে বা শরণার্থীদের ব্যাপারে ইসলামিক দেশগুলি কেন কোন সহানুভূতি দেখায়নি এ সম্পর্কে তিনি কোন কিছু বলতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এখন যা প্রধান দরকার তাহল দুঃখ-কষ্ট ক্লিষ্ট শরণার্থীদের কাছে কী করে ত্রাণ ও সাহায্যদানের উপকরণ পৌঁছানাে যায় এবং পরিস্থিতি যাতে আর অবনতির দিকে না যায়, তার ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, মানবিকতাবােধে আমি কাজে নেমেছি। আজ সন্ধ্যায় শ্রীটুংকুর কাবুল যাত্রার কথা আছে। স্বর্ণ সিং-টুংকু আলােচনা। শ্রীরহমান পরে বহির্বিষয়ক মন্ত্রী শ্রীস্বর্ণ সিংয়ের সঙ্গে মধ্যাহ্ ভােজে মিলিত হন এবং সেখানে তার সঙ্গে কথাবার্তা হয়। শ্রীসিং এই ভােজের আয়ােজন করেন। খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রী শ্রীফকরুদ্দিন আলি আহমেদ, বৈদেশিক দফতরের সচিব শ্রী টি এন কল এবং এখানে মালয়েশিয়া হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীও ওই ভােজসভায় উপস্থিত ছিলেন।
Reference: ৫ আগস্ট ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা