You dont have javascript enabled! Please enable it! 1979.03.16 | মশিউর রহমান যাদু মিয়াঁর মৃত্যুর ৪ দিন পরে (জিয়ার আমলে) সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদন - সংগ্রামের নোটবুক

মশিউর রহমান যাদু মিয়াঁর মৃত্যুর ৪ দিন পরে (জিয়ার আমলে) সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদন
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মশিয়ুর রহমান (১৯২৪-৭৯)
চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী মশিউর রহমান ১২ ই মার্চ রাত ১১:৫৭ মিনিটে পিজি হাসপাতালের প্রাণ ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।
জনাব রহমানের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান প্রেসিডেন্ট জিয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুস সাত্তার, মন্ত্রী এস, এ বারী এটি, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী আব্দুর রহমান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এবং হাবিবুল্লাহ খান। শাহ আজিজুর রহমান মৃত্যুকালে তাঁর শয্যা পার্শেই ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মন্ত্রী পরিষদের সকল সদস্য হাজির হন হাসপাতালে। নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম এস খানসহ সামরিক ও বেসামরিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ ও হাজির হন হাসপাতালে।
সেরিব্রিয়াল হেমারেজ আক্রান্ত অবস্থায় মসিউর রহমানকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ৯ই মার্চ বিকেলে। সেদিনই রাত ৯টার দিকে তার সংজ্ঞা লোপ পায়। শেষ রাতে তার অবস্থা সংকটজনক রূপ নেয়। ১০ই মার্চ সকাল ৮ টা ১০ মিনিটে তার সংজ্ঞাহীন দেহে লাগানো হয় মেকানিক্যাল রেসপিরেটরি মেশিন।’ সেই থেকে দীর্ঘ ৬৪ ঘন্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ১২ ই মার্চ বারোটা বাজার ৩ মিনিট আগে। তার চিকিৎসার জন্য সরকার পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নিউরোসার্জন ডাক্তার জুমা, নিউরোলজিস্ট ডাক্তার ভাট্টি ও ভারতের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নিউরোসার্জন ডাক্তার ট্যাণ্ডন ও ডাক্তার এসপি ভট্টাচার্যকে ঢাকা আনান। কিন্তু সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয়।
১২ ই মার্চ ১০টা ২৫ মিনিট থেকে মুমূর্ষ সিনিয়র মন্ত্রী মশিউর রহমানের অবস্থা অত্যন্ত দ্রুত অবনতির দিকে যেতে থাকে। রাত সাড়ে দশটায় মেডিকেল বোর্ডের বুলেটিনে এ কথা জানানো হয়। মধ্যরাতের বুলেটিন দেয়ার আগে মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম আরো দুজন সদস্যসহ সাড়ে এগারোটার সময় জনাব মশিউর রহমানের কেবিনে যান। রাত এগারোটা ৭০ মিনিট থেকে তার নাড়ির স্পন্দন দ্রুত কমে আসতে আসতে মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যে চিরদিনের মতো থেমে যায়।’ তিনি আর নেই’-ডাক্তার ইসলামে কথা বলতেই জনাব রহমানের দ্বিতীয় ছেলে তার হাত চেপে ধরেন। ডাক্তার ইসলাম গম্ভীরমুখে ধীর পদক্ষেপে কেবিনের বাইরে চলে আসেন।
কান্না বিধুর কেবিনের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দ অধ্যাপক ইসলাম বলেনঃ কৃত্রিম উপায়ে আমরা তার হৃদস্পন্দন জাগিয়ে রাখছিলাম। আপ্রাণ চেষ্টা করেছি অন্তত আগামী কাল দুপুর বারোটা পর্যন্ত তাকে বাঁচিয়ে রাখতে। কিন্তু পারলাম না। ইলেকট্রিক্যাল মনিটরিং মেশিন দিয়েও পরীক্ষা করে দেখা গেছে -তার নাড়ির স্পন্দন নেই।
মশিউর রহমানের দাফন এবং শোক কর্মসূচি চূড়ান্ত করনের জন্য ১২ই মার্চ রাত দুটোয় প্রেসিডেন্ট জিয়ার সভাপতিত্বে মন্ত্রী পরিষদের এক জরুরী সভা বসে। সভায় ১৩ই মার্চ মঙ্গলবার থেকে তিন দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক পালনের এবং তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য সারাদেশে সকল অফিস আদালত ও প্রতিষ্ঠান মঙ্গলবার বন্ধ রাখা হয়। জনাব রহমানকে ১৪ই মার্চ বুধবার তেজগাঁওস্থ জাতীয় সংসদ ভবনের লাশ সমাহিত করা হবে। মন্ত্রিপরিষদের সভায় মরহুমের আত্মার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
‘জনাব মশিউর রহমান ছিলেন দেশের অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ গণতন্ত্রী।’
প্রেসিডেন্ট জিয়া ১৩ই মার্চ রাত দুটোয় দেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সিনিয়র মন্ত্রী মশিউর রহমানের মৃত্যুতে এক শোকবাণীতে একথা বলেন। তিনি বলেন, তার মৃত্যুতে দেশ, জনগণ ও পার্টির বিরাট ক্ষতি হয়েছে। দেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক যাত্রাপথ ও প্রক্রিয়ায় তার ছিল অগ্রণী ভূমিকা। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন।
সিনিয়র মন্ত্রী জনাব মশিউর রহমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়া রাত ১-২০ মিনিটে ছুটে আসেন পিজি হাসপাতালে। তাকে বড় বিষন্ন, বিমর্ষ ও গম্ভীর দেখাচ্ছিল তখন। প্রেসিডেন্ট জিয়া কেবিনের ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে জনাব মশিউর রহমানের ছেলে মেয়ে, দুই স্ত্রী, আত্মীয় স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ ও সান্ত্বনা প্রদান করেন।
হাসপাতালে প্রায় ৪০ মিনিট অবস্থানের পর প্রেসিডেন্ট জিয়া রাত সোয়া দুইটায় বঙ্গভবনে যান মন্ত্রিপরিষদের জরুরি বৈঠকে যোগদানের জন্য।
বাসস’র খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মরহুম সিনিয়র মন্ত্রী জনাব মশিউর রহমানকে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও স্বাধীনতার একজন নির্ভীক সৈনিক রূপে অভিহিত করেছেন।
প্রেসিডেন্ট জিয়া বলেন, জনাব মশিউর রহমান ছিলেন জনগণের স্বার্থ ও কল্যাণের প্রশ্নে আপসহীন। জনাব মশিউর রহমানের মৃত্যুতে সমগ্র জাতির শোকে মুহ্যমান। তার এই আকস্মিক ইন্তেকাল জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। স্বৈরাচারী সরকারের হুমকি উপেক্ষা করে জনাব মশিউর রহমান তার নীতি ও আদর্শের প্রতি অবিচল ছিলেন। হাসিমুখে তিনি কারাবরণ করেছেন কিন্তু কখনও মাথা নত করেননি। তার নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমী এবং জনগণের কল্যাণ চিন্তাই তাকে জনপ্রিয় করেছিল।
মন্ত্রিপরিষদের বিশেষ বৈঠকে মশিউর রহমানের আকস্মিক দুঃখজনক ও অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে মশিউর রহমানের ‘পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা’ প্রকাশ করা হয়।
১৩ই মার্চ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে মশিউর রহমানের শোক বই খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি ছিলেন আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তার অনুসারী বা বিরোধী যে কোন রাজনৈতিক নেতাই তার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান করতেন। মরহুম রহমানের গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় বিচিত্রার (অস্পষ্ট) তার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে। বিচিত্রার ২৯শে সেপ্টেম্বর ‘৭২ তারিখে প্রকাশিত সংখ্যায় (প্রচ্ছদকাহিনী ‘জাতীয়তাবাদী দল- যবনিকা কম্পমান’) তারেককে সাক্ষাৎকারের উদৃতি এখানে দেওয়া হলো।
‘প্রশ্নঃ- ন্যাপ ভেঙে জাতীয়তাবাদী দলের যোগদান এবং আপনার রাজনৈতিক জীবনের এই সময়কে আপনি কি বলে অভিহিত করবেন?
উত্তরঃ-আমি বলব, শুধু আমার রাজনৈতিক জীবনে নয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবনে এ সময়টা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনায় সমৃদ্ধ! এর কারণে ধরেছে জাতীয়তাবাদী দলে ন্যাপের সংযুক্তির মধ্যে। ‘৭৭ সালের ২৭শে মার্চের ন্যাপের কাউন্সিল অধিবেশনে আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে। এরপর থেকে ন্যাপ একটা সঠিক রাস্তায় চলার চেষ্টা করেছে। সে রাস্তাটা হলো গণতন্ত্রের। আমরা লক্ষ্য করেছি, গণতন্ত্র ছাড়া অন্য কোন মতবাদই বাংলাদেশের জনগণের কাছে গণতন্ত্র যোগ্য নয়। জনগণের জন্যেই অনেক আগেই ত্যাগী দেশ প্রেমিক নেতা গণতন্ত্রের রাজনীতি ছেড়ে অস্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছিলেন। শেখ মুজিবের মতো একজন নেতা শুধু দেশবরেণ্য ছিলেন না। ১৯৭২ সালে তিনি যখন দেশে ফিরেছিলেন তখন জনগণ যেভাবে তাকে গ্রহণ করেছিল আমার মনে হয় অন্য কোন দেশের নেতা তার দেশের জনগণের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা পাননি। অথচ যেদিন তিনি গণতন্ত্রের পথ থেকে বিচ্যুত হলেন সেদিন শুধু তার রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটল না, জীবনেরও অবসান হলো। এর থেকে আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের অবস্থার পরিবর্তন চায়। তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে তাদের ঈমানের অংশ হিসেবেই যেন গ্রহণ করেছে। গণতন্ত্র থেকে দেশ বিচ্যুত হলে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো এই সিদ্ধান্ত ছিল ন্যাপের এবং আমার। আমরা দেখলাম আমাদের দেশের জনগণের যুক্তফ্রন্টের যে অভিজ্ঞতা তাতে ফ্রন্ট নিয়ে গেলে জনগণ আমাদের গ্রহণ করবে না। ফলে সংসদের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। আর এটা হলে ৩রা জুনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়েছিল তা ব্যর্থ হয়ে যাবে। দেশে পুনরায় ফিরে আসবে সেই কালো দিন গুলো। তাহলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, সকল শ্রেণীর জনগণকে শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ করা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করি তা সম্ভব হবে না। উপরিউক্ত এ সুযোগ গুলোর জন্য প্রয়োজন গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের জন্য এক দলে সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে মানুষের মনে বিশ্বাস আসবে না এবং জনগণ সঠিক সংসদ দিতে পারবে না।
যদি ধরেও নেয়া হয় যে ন্যাপ বিলুপ্ত করা হয়েছে তা হলেও রাজনৈতিক দিক দিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। গণতন্ত্রের ইতিহাসে ন্যাপের এই ত্যাগ বিফলে যাবেনা এবং আমি মনে করি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অবদান।
মশিউর রহমান ছিলেন আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান এক রাজনীতিক। আত্মবিশ্বাসের জোরেই বিচিত্রার প্রশ্নে তার জবাব-
“প্রশ্নঃ- আপনারা কি প্রেসিডেন্ট জিয়ার জনপ্রিয়তার অংশীদারিত্ব নিতে তার সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন না?
উত্তরঃ-তাঁর জনপ্রিয়তা কত তা আগে জানতাম না। ফ্রন্টের প্রার্থী হওয়ার পর তার জনপ্রিয়তা কত তা জানা গেল। তার জনপ্রিয়তা দেখে তার সঙ্গে আমরা যাইনি। গিয়েছিলাম তাকে জনপ্রিয় করবো বলে।”
মশিউর রহমান হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন তিনি বেশি দিন বাঁচবেন না। এজন্যই হয়তো বলেছিলেন ন্যাপ বিলুপ্ত আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অবদান। প্রচ্ছদ কাহিনীর এ সাক্ষাৎকার ছিল “বিচিত্রা”র সঙ্গে তার শেষ সাক্ষাৎকার। তখন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ভেঙ্গে রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আমাদের প্রশ্ন ছিল “নতুন দলের প্রেসিডেন্ট জিয়া এবং আপনি -এই দুই ব্যক্তির অবস্থান কেমন করে সম্ভব হবে?”
তার উত্তরঃ-আমার বয়স হয়েছে। ব্যক্তিত্বের ঝগড়া করার দিন আমার চলে গেছে। ব্যক্তিগত ঘটনাকে দেশের জনগণের চেয়ে বড় করে দেখার অবকাশ নেই। জীবনের এই পর্যায়ে এসে ব্যক্তিগত স্বার্থে কোন দল করার ইচ্ছেও আমার নেই। তাছাড়া আমার তো তবু কিছু পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে যদিও ঢাকা শহরে কোন বাড়ি নেই। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়ার তো তাও নেই। কাজেই তাকে বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে। এই মাসে ভবিষ্যতের পুত্র-পৌত্রদের জন্য যদি একজন নেতা তৈরী করে যেতে পারি তবে সেটাই হবে সাফল্য।”
১৪ই এপ্রিল ‘৭৮ তারিখে বিচিত্র সঙ্গে আরেক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,”প্রেসিডেন্ট দেশের সরকার প্রধান। তিনি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠারও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই শর্তগুলো পূরণ করলেই আমি প্রেসিডেন্ট জিয়ার নেতৃত্বে মেনে নেব।” তা তিনি নিয়েছিলেনও। কিন্তু ভবিষ্যতের পুত্র পৌত্রদের জন্য একজন নেতা তৈরি করে যাওয়ার সাফল্য অর্জন করতে পেরেছিলেন কিনা তা বিচার করবে ইতিহাস।
মশিউর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত যৌবনের সূচনায়। শুরু থেকেই বিভিন্ন পর্যায় মাওলানা ভাসানীর বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত থেকেছেন। রহস্যময়তা, আবেগের প্রচণ্ডতায় রাজনীতির ক্ষেত্রে তার পদচারণা। জনগণের সন্দেহের, সংশয়ের বাইরে ছিলেন না তিনি। কিন্তু সবসময়ই নিজস্ব পরিমণ্ডলে পুরুষকায় হিসেবে বিরাজ করেছেন। বিচিত্রা প্রতিবেদক বলেন,”আমি বহু রাজনৈতিক নেতার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছি। রাজনীতিগতভাবে মশিউর রহমান আমার আদর্শ নয়। কিন্তু আমি তাকে শ্রদ্ধা করি একটি কারণে-তিনি খুব কম রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একজন যিনি টেপে সাক্ষাৎকার দিয়ে অনুরোধ করতেন না কোনো বিশেষ বক্তব্যকে ইরেজ করার জন্য। ভিজিটর ব্যাখ্যাসহ সাক্ষাৎকার ছাপা হওয়ার পর অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রতিবাদ পাঠাননি।”
আমরা মশিউর রহমানের মৃত্যুতে শোকাভিভূত। মশিউর রহমান নিজেকে বলতেন গণতন্ত্রী। বলতেন, ‘বুর্জোয়া গণতন্ত্রের রাজনীতিতে আমি এরিস্টোক্র্যাট। আমি কেন পতিত শত্রুকে আঘাত করি না। আঘাত করার প্রয়োজন হলে আমি তাকে পুনরায় দাঁড় করিয়ে পরে আঘাত করি।’বাংলাদেশের রাজনীতির অভিজাত ব্যক্তিটির বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান হলো।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
মশিউর রহমান ছিলেন বামপন্থী রাজনীতি ঘেষা একজন নিষ্ঠাবান জাতীয়তাবাদী। ‘যাদু মিয়া’ নামেই তিনি ছিলেন সুপরিচিত তিনি গত ২৫ বছর যাবত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহচর জনাব মশিউর রহমান দেশের জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন। তুমি মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তিনি মওলানা ভাসানি এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
তীক্ষ্ম রাজনৈতিক বাগ্মী জনাব রহমান অতি সহজে ঘন্টার পর ঘন্টা ও শ্রোতাদের আকৃষ্ট করে রাখতে পারতেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ রসাত্মক ও ব্যঙ্গাত্মক বক্তব্যের জন্য সুপরিচিত ছিলেন।
দেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদ মশিউর রহমান ১৯২৪ সালের ৯ই জুলাই রংপুর জেলার ডিমলা থানার খগাখড়িবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাত্র ২৯ বছর বয়সে রংপুর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ওই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
তিনি ছিলেন পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৫৭ সালে এই দল গঠিত হয়। এর আগে তিনি তদানীন্তন পাকিস্তান মুসলিম লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।
১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের একজন সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন এবং পরিষদের বিরোধী দলের ডেপুটি লিডার মনোনীত হন। এমএনএ ও ডেপুটি লিডার থাকাকালে ১৯৬৩ সালে আইয়ুব সরকারের আমলে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৬৫ সালে তিনি পুনরায় এমএনএ নির্বাচিত হন। তবে ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণ আন্দোলনের সময় মাওলানা ভাসানীর আহবানে তিনি পদত্যাগ করেন। ইয়াহিয়া সরকারের সময় ১৯৭০ সালের এপ্রিল মাসে পাঞ্জাব প্রদেশের টোবাটেকসিংয়ে তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয় এবং সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
মশিউর রহমান ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে তদানীন্তন পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এবং একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালের ২৩ শে মার্চ ঢাকার পল্টন ময়দানে তিনি এক জনসভায় ঘোষণা করেন, তার দল ন্যাপ-এর একমাত্র দাবী। সে দাবি হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর সামরিক অভিযান শুরু হবার পর তিনি ভারতে চলে যান। সেখানে সাবেক ভারত সরকার তার উপর নির্যাতন চালায়। তিনি ভারত থেকে নিজ গ্রামে পালিয়ে আসলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে।
মশিউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধে এক বিরাট অবদান রাখেন। তিনি জনগণের নৈতিক মনোবল বৃদ্ধি করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে মুজিব সরকার তাকে গ্রেফতার করেন। ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রায় দেন এবং তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। ‘৭৪ এর জন্যে সে পুনরায় তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৮৫ সালের ২৪শে আগস্ট মুক্তি লাভ করেন।
মাওলানা ভাসানীর ইন্তেকালের পর মশিউর রহমান বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
তিনি মরহুম ওসমান গনি ও আলহাজ্ব এ বেগমের পুত্র। মৃত্যুকালে তিনি দুই স্ত্রী এবং পাঁচ পুত্র ও ছয় কন্যা রেখে গেছেন।
আন্তর্জাতিক
ভুট্টোঃ জীবন মৃত্যুর মাঝে
কবর একটি, কিন্তু মানুষ দু’জন – পাকিস্তানে এ প্রবচনটি সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টে ৪-৩ সিদ্ধান্তে ভুট্টোর প্রাণদণ্ডাজ্ঞা বহাল থাকার পরে এ প্রবাদ আরো বেশী চালু হয়েছে। মোটের উপর সমগ্র বিষয়ে সচেতন জনগণ এখন ভাবছেন ভুট্টোর পরিণতি নিয়ে। আসলে ভুট্টোর প্রাণটি এখন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়াউল হকের হাতে।
সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরোনোর সাত দিনের মাঝেই একটা হেনস্থা হওয়ার কথা ছিল এ ব্যাপারে। কিন্তু তা হয়নি। কারণ, ভুট্টোর প্রকৌশলীরা ইতিমধ্যে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টে ব্যাপারটি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছেন এবং অনুরোধটি গৃহীতও হয়েছে। পুনর্বিবেচনা চলছেও। চলছে বলে কিছু সময় হাতে পেয়েছেন ভুট্টোর কৌঁসুলিরা এবং অনুগামীরা। কিন্তু এতে ফল কতটা হবে?
তবে ভুট্টোর কৌঁসুলিরা এবং বন্ধুরা শুধু পুনর্বিবেচনার আপেল করেই ক্ষান্ত হননি। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কয়েকটি মামলাও দায়ের করেছেন বিভিন্ন কোর্টে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রধান বিচারপতির মামলা চালানোর বৈধতা সম্পর্কিত। তাতে বলা হয়েছে, ভুট্টোর কৌঁসুলিদের বারবার প্রতিবাদ জানানো সত্ত্বেও দুজন বিচারপতির অবসর দেয়া হয়েছে। এবং এ দু’জন বিচারপতি ‘সংখ্যাগুরু প্রদেশ’ পাঞ্জাবের বাইরে।
ব্যাপারটি গুরুত্ব পাওয়ারও কারণ রয়েছে। সুপ্রিমকোর্টে লাহোর হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার ব্যাপারে বাকি সাতজন বিচারপতি (প্রধান বিচারপতিসহ) মত প্রকাশ করেননি যে তিনজন ‘বেনিফিট অব ডাউটে’ ভুট্টোর বেকসুর খালাসের পক্ষে মত দিয়েছেন তারা সবাই পাঞ্জাবের বাইরে।
অন্য আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে সিন্ধু হাইকোর্টে। এ মামলায় বর্তমান প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বৈধতা নিয়েই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এতে প্রেসিডেন্ট হকের মার্শাল ল’ এবং সংবিধান পরিবর্তন প্রভৃতি সম্পর্কে বৈধতার চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হক মার্শাল ল’র মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তন করে নিয়োগ করেছেন নতুন প্রধান বিচারপতি।
আরো একটি ব্যাপারে পাঞ্জাব এবং সিন্ধু হাইকোর্টে আবেদন জানানো হয়েছে। আবেদনটিতে বলা হয়েছে খুনের ব্যাপারে ইসলামী বিধান রয়েছে তারা যেন অবিলম্বে কার্যকর করা হয়। ইসলামী আইন অনুযায়ী রাজসাক্ষী ষড়যন্ত্রকারী বলে করা কথা নেই। আসল যে খুনি তারেই সাজা হওয়ার বিধান রয়েছে।
সব মিলিয়ে একটা কালক্ষেপণের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে এবং রায় পুনর্বিবেচনার জন্য নেয়ায় তাতে সাফল্যও এসেছে। এখন অপেক্ষা যদি একটা অঘটন ঘটে। কিন্তু তার সম্ভাবনা কতটুকু? জাতীয় ভিত্তিতে ভুট্টোর বিরুদ্ধে রায় বহাল রাখার প্রতিক্রিয়া কি? পাকিস্তান মার্শাল ল’র কঠোর নিগ্রহে বাঁধা। একমাত্র ‘আজাদ কাশ্মীর’ ছাড়া। আজাদ কাশ্মীরের যেহেতু মার্শাল ল’ শিথিল সেখানে ধর্মঘট এবং বিক্ষোপ অনবরত চলেছে এ রায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু অন্যত্র তা নেই। একটু থমথমে ভাবই বিরাজ করছে। স্মরণীয, এ সত্তেও রায় বেরুনোর আগের দিন সব রকমের কর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে এখনো পিপিপি নেতা এবং কর্মীদের ধরপাকড় চলছে।
আজাদ কাশ্মীর ছাড়া পাকিস্তানের অন্য অঞ্চলে সাধারণভাবে বিরাজ করছে তাকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের অনুসারীরারা এর ‘স্বপক্ষে জনমত রয়েছে বলে’ বলছেন। উগ্রপন্থী রং কিনা র থাকুক আর না থাকুক ভোট দেয়া হলে বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে হবে সরকারকে।
পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের (পিএনএ) প্রধান মুফতী মাহমুদ কোর্টের রায় কার্যকর করার কথা বলেছেন। ধর্মান্ধ দল জামায়াত -ই- ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে রায়টি শুধু একার নয় সর্বশক্তিমান আল্লাহরও। জমিয়ত উলামায়ে-ই- পাকিস্তানের প্রধান শাহ আহমেদ নূরানী বলেছেন, কোর্টের রায়কে অবশ্যই সম্মান দেখাতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, শুধু একজন নয় দাঙ্গা বাঁধিয়ে বেশ কয়েকশো লোকের মৃত্যু ঘটেছিল জামায়াত প্রধান মাওলানা মওদুদী। তার বিরুদ্ধেও কোর্টের রায় ছিল মৃত্যুদণ্ডের। বিভিন্ন মহলের অনুরোধেই ‘৫৮ সালে তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল আইয়ুব খান তাঁকে রেহাই দিয়েছিলেন।
একমাত্র তেহরিক-ই-ইশতেক লাল প্রধান এয়ার মার্শাল (অবসরপ্রাপ্ত) আজম খান পোষণ করেছেন ভিন্নমত। তিনি বলেছেন, ব্যাপারটি বিচারাধীন এজন্য আমি কোন মন্তব্য করব না। তবে বিভিন্ন নেতৃবর্গ বিদেশি অনুরোধ গুলোকে অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বলে চালাবার যে প্রয়াস পাচ্ছেন তা সত্যি নয়। আসলে এটি বন্ধুত্বপূর্ণ উপদেশ। বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ধরে অনুরোধ অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ এনেছেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট বেগম ওয়ালী খান।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কম নেই। একমাত্র সৌদি বাদশাহ খালেদ ছাড়া আর প্রায় সব বিখ্যাত রাষ্ট্রপ্রধানই ভুট্টোর প্রাণদণ্ড মওকুফের অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট তেমন তা আমল দিচ্ছেন না। তবে সমগ্র দায়িত্ব একার কাঁধে নিতেও রাজি নন তিনি।
সম্প্রতি তিনি বলেছেন, সকল আপিলই পিএনএ মন্ত্রীবর্গ এবং সামরিক সহযোগিতার কাছে পেশ করা হবে। সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে যৌথভাবে। তা ভুট্টোর পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে হতে পারে। প্রশাসন কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেছেন, তারা যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সক্ষম। কিন্তু পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট চৌধুরী ফজলে এলাহী পোষণ করেছেন ভিন্নমত। প্রেসিডেন্ট হকের কাছে পাঠানো সাম্প্রতিক এক চিঠিতে তিনি বলেছেন, পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বহালকৃত রায়টির বাস্তবায়িত পাকিস্তানের নয় আন্তর্জাতিকভাবেও আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।” তিনি ব্যাপারটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীলতা আনতে পারে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন। এ ব্যাপারে পাঞ্জাব ও অন্যান্য প্রদেশের বিচারকদের মানবতার কথাও উল্লেখ করেন।
আসলে পাকিস্তানের ভুট্টো জামান জীবন মরণের মাঝে অবস্থান করছেন তেমনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকও অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে দ্বিধান্বিত রয়েছেন। সুপ্রিমকোর্টে আপিল শুনানি চলাকালেই একাধিক শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছিল। এমনকি প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক রায় পেরোনোর আগেই ভুট্টোর ব্যাপারে দৃঢ়মত প্রকাশ করেছেন প্রকাশ্যে। বিচারপতিদের অবসর গ্রহণ এবং নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ কোন কিছুই তার সমালোচনার উর্ধে নয়। আসলে তিনি নিজেই প্রমাণ করেছেন ভুট্টোকে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে তিনি যেন অনেকটা অনমনীয়।
কিন্তু, সর্বশেষে গোল বেঁধেছে পুনর্বিবেচনার সময়ে। যে চারজন মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে রায় দিয়েছেন তাদের একজন নতুন মত প্রকাশ করেছেন। তবে বেকসুর খালাস নয়, তিনি বলেছেন লঘু দন্ড দেয়ার কথা। ভুট্টো নির্দেশদাতা তিনি বলেন নি। বলেনি বলে ভুট্টোর ভাগ্য এখনো প্রেসিডেন্ট হকের হাতে। সেই সঙ্গে নিজের হাতেই রয়েছে তার নিজের ভবিষ্যৎ।
Reference:
সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ১৬ মার্চ ১৯৭৯