আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ : ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণ
নয়াদিল্লি, ২৬শে মার্চ (পি, টি, আই)-আজ রাত্রে জাতির উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খা শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও পাক জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননার অভিযােগ এনেছেন। জেনারেল ইয়াহিয়া বলেছেন, শেখ মুজিবর রহমান ও তার অনুগামীরা ‘পাকিস্তানের শত্রু। তিনি বলেছেন তারা পাকিস্তানকে ভাঙতে চান। এটা একটা অপরাধ, যার শাস্তি অনিবার্য। রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগকেও রাজনৈতিক দল হিসেবে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খা বলেন, সংবাদপত্রের ওপর সেন্সর ব্যবস্থা বলবৎ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করবেন। তিনি পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করবার জন্য দেশবাসীর কাছে আবেদন জানান। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য পাক-বিরােধী ও বিচ্ছিন্নতাকামী শক্তিগুলি সম্পূর্ণরূপে দায়ী। তিনি বলেন, পাকিস্তানের সংহতি, ঐক্য ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃ প্রতিষ্ঠায় সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের কর্তব্য সম্পাদনে আদেশ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে পাক প্রেসিডেন্ট ইতিপূর্বে যে-চেষ্টা চালিয়েছিলেন, আজ তিনি তার বিস্তারিত বিবরণ দেন।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেন, তাঁর আবেদনে সাড়া না দিয়ে শেখ মুজিবর ও তাঁর অনুগামীরা ঢাকায় তাঁর উপস্থিতিতেই সরকারের কর্তৃত্বকে উপেক্ষা করেছেন। ইয়াহিয়া খাঁ বলেন, সমগ্র দেশে যে গুরুতর পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি সারা দেশে সর্বপ্রকার রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আওয়ামী লীগকেও রাজনৈতিক দল হিসেবে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হল। আমি সংবাদপত্রের ওপর কড়া সেন্সর ব্যবস্থা আরােপ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছি এবং এই সমস্ত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে খুব শীঘ্রই সামরিক আইন জারী করা হবে।’ তিনি আরাে বলেন ঃ আমি আপনাদের এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আমার প্রধান উদ্দেশ্য (অর্থাৎ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর) অপরিবর্তিত থাকবে। পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমি এবিষয়ে নতুন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবাে।’ সকল পক্ষের গ্রহণযােগ্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা মেনে নেবার জন্য যে-চেষ্টা করা হয়েছিল সেই ব্যর্থতার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শেখ মুজিবর রহমানের ওপর দোষারােপ করেন।
Reference:
২৭ মার্চ ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা