দেশবিভাগের পটভূমিতে বাঙালি জাতিসত্তা
ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটে স্থানীয় রাজনীতিকদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও সেই সূত্রে দেশবিভাগের মধ্য দিয়ে। প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র। দেশবিভাগ মূলত লীগ, কংগ্রেস ও ‘রাজ’ এই তিন শক্তির হাত দিয়ে সম্পন্ন হলেও এর পেছনে প্রধান কারণ ছিল লীগ-কংগ্রেসের দ্বন্দ্ব। চতুর ইংরেজ শাসক খুশি মনে তাতে হাত লাগিয়েছে। খুশির কারণ বিভক্ত ও পরস্পর-বৈরী দুই ভূখণ্ডে পরােক্ষ স্বার্থ রক্ষার কাজটা ভালােভাবেই চলবে। ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দল দীর্ঘকাল ধরে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে সন্দেহ নেই, করেছেন বিপ্লবীরাও। কিন্তু লড়াই-এর মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা আসেনি। আপপস্থায় ক্ষমতার হস্তান্তরই ছিল স্বাধীনতা। আর মুসলিম লীগ? সে তার জন্মলগ্ন (১৯০৬) থেকে সরকার-বিরােধিতা নয় কংগ্রেস-বিরােধিতাকেই লড়াই বিবেচনা করে এসেছে এবং ইংরেজ শাসনের সঙ্গে সহযােগিতার মাধ্যমে যথাসম্ভব পশ্চাদপদ ভারতীয় মুসলমানদের স্বার্থ পূরণের চেষ্টা করেছে। তাতে সাফল্য এসেছে, সর্বশেষ সফলতা দেশবিভাগের মাধ্যমে স্বতন্ত্র ভুবন পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অধিকার অর্জন। | দেশবিভাগের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল ভারতীয় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যেকার ঐতিহাসিক আর্থ-সামাজিক বৈষম্য। তবে এ বৈষম্য ছিল প্রধানত উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে। যেমন শিক্ষায় চাকরিতে তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভূস্বামিত্বের ক্ষেত্রে। বৈষম্য উত্তর ও পশ্চিম ভারতের তুলনায় পূর্বাঞ্চলীয় বঙ্গদেশে ছিল প্রকট। নবাবী বাংলা থেকে ব্রিটিশ বাংলা হয়েই ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশের প্রতিষ্ঠা। সূচনালগ্নে রাজধানী কলকাতাকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্য, দেওয়ানি-এজেন্সি থেকে অর্থাগমের যে রমরমা সুযােগ তৈরি হয়েছিল তা হিন্দু বণিক, ভূস্বামী ও শিক্ষিত শ্রেণীর দ্রুত বিকাশ ঘটায়। নবাগত শাসকের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াসহ অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়াটাও বাঙালি মুসলমানের জন্য ঐতিহাসিক সত্য হয়ে ওঠে। তদুপরি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কল্যাণে সৃষ্ট জমিদারি প্রথায় বিপুল হিন্দু প্রাধান্য এবং অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক দুঃস্থ মুসলমান কৃষকশ্রেণী বৈষম্যের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিল।
জমিদারি-মহাজনি ব্যবস্থার শোষণ ও নির্যাতন হয়ে ওঠে অস্বাভাবিক চরিত্রের বঙ্গদেশে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্রুত বিকশিত বৈষম্য ও ব্যবধান, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অসমতায় অরাজনীতিক রবীন্দ্রনাথের নজর পড়ে। তিনি স্বদেশ, সমাজ ও রাজনীতি প্রসঙ্গে তার একাধিক লেখায় এই অসমতার দিকে দেশের রাজনীতিবিদ ও এলিট শ্রেণীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। পরামর্শ রাখেন দুই সম্প্রদায়ের অসমতা দূর করার জন্য অগ্রসর সম্প্রদায়কে এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে সচেষ্ট হতে। কিন্তু তার পরামর্শ কারাে মনে ধরেনি । একমাত্র দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন এদিক থেকে ছিলেন ব্যতিক্রম । তাঁর অকালমৃত্যু পূর্ব অবস্থার পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়, বৈষম্য অবসানের দিকে এরপর আর এক পা এগুনাে সম্ভব হয়নি। এ অবস্থা দেশে সম্প্রদায়গত রাজনীতির পক্ষে সহায়ক হয়ে উঠেছিল, এমন কি গােটা ভারতীয় পটভূমিতেও। অবিভক্ত ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের উন্নত, অগ্রসর ও শক্তিমান শ্রেণীর (ভূস্বামী, মুৎসুদ্দি ধনিক ও শিক্ষিত মধ্যবিত্তের) প্রবল প্রতিযােগিতা অধ্যে বসবাসের চেয়ে স্বতন্ত্র ভুবনে আত্মশাসন মুসলমানের কাছে অনেক সম্ভাবনাময় মনে হয়েছে। অবশ্য এ অবস্থা শ্রেণীভেদে ভিন্ন ভিন্ন নির্বিঘে সত্য হয়ে উঠেছিল। রাজনীতি ক্ষেত্রে মুসলিম লীগ এ ঐতিহাসিক ছকটিকে সফলভাবে কাজে লাগায় এবং এতে ধর্মকে টেনে আনাও সহজ হয়ে ওঠে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল। ভূস্বামী, ধনিক, উচ্চশিক্ষিত আমলা-টেকনােক্র্যাটদের স্বার্থ, কিন্তু অবধারিত ভাবে এতে জড়িয়ে পড়ে মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত শ্রেণীর স্বার্থ । আর সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক শ্রেণীকে কাছে টানতে লীগের কর্মসূচিতে স্থান পায় স্বতন্ত্র ভুবনে সামন্তমহাজনী শােষণ অবসানের আশ্বাস । এভাবেই বিভিন্ন শ্রেণীর মুসলমান স্বতন্ত্র বসবাসের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক আকাক্সক্ষার ছকটাকে যুক্ত করেছে। ধর্মীয় স্বাতন্ত্রের প্রচার এর ভিতটাকে শক্ত করেছে। চৌকশ রাজনীতিক মােহাম্মদ আলী জিন্না ছিলেন মুসলমান ভূস্বামী, উঠতি মুৎসুদ্দি ধনিক ও উচ্চশিক্ষিত শ্রেণীর স্বার্থের প্রতিনিধি, তবু এ সম্প্রদায়গত ছকটা বুঝতে তার কষ্ট হয়নি। তার ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল প্রবল। জাতীয় কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে রাজনৈতিক কারণ ও ব্যক্তিত্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়ে সরে আসার ফলে লীগের সম্প্রদায়গত রাজনীতি তার পক্ষে একমাত্র বিকল্প রাজনীতি হয়ে ওঠে। এ রাজনীতিকে কেন্দ্র করে সর্বাধিক রাজনৈতিক শক্তি অর্জনের জন্য তিনি যে কোনাে পথে যেতে রাজি ছিলেন। তাই পাশ্চাত্য শিক্ষা-সংস্কৃতির মানুষ জিন্না ধর্মনিষ্ঠ না হয়েও (তার ধর্মবিশ্বাস নিয়েও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে) একজন ধর্মীয় নেতার মতােই ঘােষণা করেন ভারতে মুসলমান বহিরাগত।
হিন্দু ও মুসলমান দুই স্বতন্ত্র জাতি, তাদের ধর্ম, জাতিত্ব, সমাজ-সংস্কৃতি পরস্পর থেকে ভিন্ন, আর্থ-সামাজিক স্বার্থও ভিন্ন। কাজেই উভয়ের একত্র বসবাস হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের উপস্থিতিতে মুসলমান স্বার্থের অনুকূল নয় । এভাবেই জিন্নার তথাকথিত দ্বিজাতিতত্ত্ব সম্প্রদায়গত রাজনীতির ভিত শক্তিমান করে তােলে। চতুর ইংরেজ শাসক তার প্রয়ােজনে সম্প্রদায়বাদী রাজনীতিকে লালন করেছে, শক্তিমান ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে। সাম্রাজ্য স্থাপনের সময় থেকে ভাগ করা ও জয় করার সফল নীতি পরবর্তীকালে ‘ভাগ করা ও শাসন করার নীতিতে পরিণত হয় যা অবশেষে দেশবিভাগের নীতিতে শেষ ফসল তুলে নিতে চেষ্টা করে। এর তাৎক্ষণিক উদ্দেশ্য ইংরেজ-বিরােধী রাজনীতি ও শ্রেণীসংগ্রাম দমন করা। স্থায়ী উদ্দেশ্য পেছনে ফেলে যাওয়া উপনিবেশটিকে ভবিষ্যতে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ব্যবহার করা । তবে উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত জুড়ে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ বিরােধী একটি ধর্মবাদী রাষ্ট্রের করিডাের তৈরি করাও কমিউনিস্ট জুজুর ভয়ে তাড়িত সাম্রাজ্যবাদের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল যেমন উত্তর ও পশ্চিম ভারতের মুসলমান ভূস্বামী, উঠতি মুৎসুদ্দি ধনিক ও শিক্ষিত শ্রেণীর আকাঙ্ক্ষা ছিল বাধাবন্ধনহীন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যা প্রতিষ্ঠিত হিন্দু-পার্সি ধনিক ও শিক্ষিত শ্রেণীর ক্রমবর্ধমান চাপে ব্যাহত হচ্ছিল। সেক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনের উপায় হয়ে ওঠে স্বতন্ত্র স্বাধীন ভুবন । এরা সাধারণ মুসলমান শ্রেণীকে স্বতন্ত্র ভুবনের অলীক সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখিয়েছে। এদের মাধ্যমে বঙ্গীয় মুসলমান ভূস্বামী ও উচ্চশ্রেণীর মানুষ (যত অল্পই হােক) স্বতন্ত্র ভুবনের বিশ্বাসে দীক্ষিত হয়েছে। এদের প্রভাব পড়েছে পশ্চাদপদ উঠতি মধ্যশ্রেণীতে বিশেষত শিক্ষায় আগ্রহী অংশে। অন্যদিকে সংখ্যাগুরু কৃষক ও শ্রমজীবী মুসলমানদের প্রধান চিন্তা ছিল যেকোনাে পথে জমিদার-মহাজনের শােষণ-পীড়ন থেকে মুক্তি । আর ঐতিহাসিক ঘটনাক্রমে বঙ্গে জমিদার-মহাজনদের অধিকাংশই ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। এতে করে অর্থনৈতিক ভিত্তিতে ধর্মীয় বৈপরীত্য সামনে এসে যায়। মনে হতে পারে, ইতিহাস বুঝি সংঘাতের ছকটাকে শ্রেণীভিত্তির বদলে সম্প্রদায়গত ভিত্তিতে গড়ে তুলেছিল।
বাস্তবে পাকিস্তান সাম্রাজ্যবাদের এই উদ্দেশ্য চমৎকারভাবে সিদ্ধ করেছে। ইদানিং প্রকাশিত রাজ্যশাসনের তথ্যাদিও তা প্রমাণ করে। রাজনীতির ঐ ত্রিমুখী জটিলতার কারণে স্বাধীনতার নামে শাসনক্ষমতা লাভের প্রক্রিয়ায় দেশবিভাগ সম্পন্ন হয়েছিল প্রচণ্ড সম্প্রদায়গত বৈরিতা, বিদ্বেষ ও রক্তস্রোতের মধ্য দিয়ে। বৃথাই যুক্তি দাঁড় করানাে হয়েছিল যে সাম্প্রদায়িক। হানাহানি, হত্যা ও রক্তপাত বন্ধ করার জন্যই দেশবিভাগ। কথাটা সত্য হলে। সম্পদায়গত ভিত্তিতে দেশভাগ তথা যার যার স্বশাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পর আর । হানাহানি ঘটার কথা নয়। কিন্তু তা ঘটেছে এবং এখনও ঘটছে। আসলে যে হিংসা-দ্বেষ-বৈরিতার মধ্য দিয়ে দেশবিভাগ সেই ঐতিহ্য থেকে কোনাে পক্ষই। মুক্ত হতে পারেনি। সাতচল্লিশ থেকে এ পর্যন্ত দেশীয় শাসকশ্রেণীর নীতি, আচরণ এবং বক্তৃতা ও বিবৃতি থেকে তা বােঝা যায় এবং ক্ষমতার স্বার্থে এ। চেতনা জনমানসে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ও শাসকশ্রেণীরই। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। এ বৈরিতা ও সংঘাতে বরাবর জ্বালানি যােগ করেছে। আজ কোনাে রাজনীতি-সচেতন ইতিহাস পাঠক যদি প্রশ্ন করে, দেশ বিভাগের জন্য কারা দায়ী এবং এর কোনাে বিকল্প ছিল কিনা তাহলে বলতে হয়। যে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলাের (এবং নেতৃত্বেরও) জেদ ও একগুয়েমি এবং তৃতীয় শক্তি ‘রাজ’-এর কূটচাল মূৰত দেশবিভাগের জন্য দায়ী। বিশের ও তিরিশের দশকে সম্প্রদায়গত আর্থ-সামাজিক বৈষম্য দূর করার যে রাজনৈতিক। সম্ভাবনা ছিল জাতীয়তাবাদী তথাকথিত সেকুলার রাজনীতি প্রধানত সামন্তবণিক স্বার্থে (শিক্ষিতশ্রেণীর স্বার্থেও) সেদিকে হাত দেয়নি। বরং বৈষম্যকে। লালন করেছে, সুযােগ করে দিয়েছে লীগের সম্প্রদায়বাদী রাজনীতিকে। বঙ্গদেশের ক্ষেত্রে এ নীতিটা বিশেষভাবে সত্য শ্রেণীস্বার্থ সেখানে বড়াে বেশি। প্রাধান্য পেয়েছিল, আর শ্রেণীসংগ্রামের ভয়টাও ছিল । নিবার্য দেশবিভাগ তাই। অনিবার্য হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে কেবিনেট মিশন প্রস্তাব গ্রহণ, সে সম্পর্কে। নেহরুর আকস্মিক বিরূপ বক্তৃতা, জিন্নার প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস ঘােষণা ইত্যাদি। প্রসঙ্গত ঘটনা হিসাবে স্মর্তব্য। দেশবিভাগের ইতিবাচক ও নেতিবাচক ফলাফলের দিকে তাকালে এর। নেতির দিকটাই ভারি মনে হয়। সন্দেহ নেই গােটা উপমহাদেশীয় ভিত্তিতে।
বিচার করে দেখলে পাকিস্তানের শাসকশ্রেণীর তথা সামন্ত মুৎসুদ্দি ধনিক ও আমলা টেকনােক্র্যাট দের অস্বাভাবিক সমৃদ্ধি অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু। দীর্ঘকালীন বিপুল মার্কিন সাহায্যের দৌলতে দেশে যথেষ্ট শিল্পপ্রসার ঘটা সত্ত্বেও আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা ও দ্বন্দ্বগুলাে দূর হয়নি। জাতিসত্তার শশাষণ, অস্বাভাবিক সামরিক ব্যয়ের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা, বিভিন্ন গােষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত ও বিচ্ছিন্নতার প্রবণতা দেশটাকে সুস্থ থাকতে দিচ্ছে না। যে ভারতীয় মুসলমানদের স্বার্থের কথা বলে দেশবিভাগ তাদের বিরাট একটি অংশ সংখ্যালঘুত্বের বেদনা নিয়ে ভারতেই পড়ে আছে। তাদের স্বপ্ন দেখাই সার। ভারতের অবস্থাও প্রায় অনুরূপ যদিও ভারতীয় শাসন সেকুলার সংবিধান হাতে নিয়ে তাদের উচ্চ ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণীর সমৃদ্ধির যাত্রা এখনাে অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু ঐ কাগজের নিরিখে সংখ্যালঘুদের আকাক্সক্ষা পূর্ণ হবার নয়, সাম্প্রদায়িক সংঘাত সেখানে এখনাে সচল । ধর্মবর্ণ ও উচ্চ-নীচ সংঘাত দূর হবার কোনাে লক্ষণ দেখা যায় না। আসলে যে বৈরিতা-বিদ্বেষের মধ্য দিয়ে দেশবিভাগ ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের জন্ম। তার উত্তরাধিকার ও ঐতিহ্য এখনাে যথেষ্ট প্রকট। এর দায় অবশ্য শাসকগােষ্ঠীর এবং দায়ী তাদের ক্ষমতার লােভ এবং বিদ্বেষ-বৈরিতাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার। গত ষাট বছরের রাজনৈতিক আচার আচরণ ও প্রচারের ফলে স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের মানুষগুলাে একে অন্যকে শত্রু হিসাবে ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। শান্তি ও সহযােগিতার সম্ভাবনা এক্ষেত্রে দূর অস্থ। আন্তঃজাতীয় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলা থেকে শুরু করে অনুরূপ যে কোনাে বিষয়ে সাম্প্রদায়িক মানসিকতার প্রকাশ যে কোনাে মানবিক চেতনার মানুষকে বা বিদেশিকেও অবাক করে দেয়। কী আশ্চর্য এ বিদ্বেষ বিরূপতার চরিত্র যা দশকের পর দশক একই ভাবে চলেছে। পরিবর্তনের কোনাে লক্ষণ সেখানে নেই! দেশবিভাগের বিরূপ প্রভাব সম্ভবত সব চাইতে বেশি পড়েছে বাংলা ও পাঞ্জাবের ওপর। প্রত্যক্ষ প্রভাব হিসাবে দেশবিভাগের নির্ধারিত (দ্বিজাতিতাত্ত্বিক) নীতি অনুযায়ী বাংলা ও পাঞ্জাবের বিভাজনে পশ্চিমপাঞ্জাব গােটা পাকিস্তানের ঝুঁটি।
ধরে দাঁড়িয়ে যেতে পেরেছে, তবু সংঘাত ও নৈরাজ্য থেকে তার শাস্তি মেলেনি। পূর্বপাঞ্জাব আবারাে বিভাজিত হয়েছে এবং বিচ্ছিন্নতার রক্ত ও ধোঁয়ার মধ্যে। অশান্ত দিন অতিবাহিত করছে। কোথায় যে এর শেষ পরিণাম বলা কঠিন। পাঞ্জাবের সমস্যাটা ছিল অর্থনৈতিক হয়েও মূলত সম্প্রদায়গত, সেটা অখণ্ড জাতিসত্তার নয়, শিখ হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায় মিলে কখনাে এক অভিন্ন জাতিসত্তা গড়ে তােলেনি। কিন্তু দেশবিভাগের তরবারি ভূখণ্ড বিভাগের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি জাতিসত্তাকেও দ্বিখণ্ডিত করেছিল। এর জন্য দেশবিভাগের সময় বাঙালি জনগােষ্ঠীর একাংশের আত্মঘাতী পদক্ষেপ দায়ী । অবশ্য তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঐ পদক্ষেপের পক্ষে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছিল । যুক্তির চেয়ে আবেগ প্রবল হয়ে উঠেছিল। আর সেই আবেগের টানে পূর্ববঙ্গের বিপুল। সংখ্যক হিন্দুজনতার রাজনৈতিক প্রতিনিধি আইনসভার সদস্যগণ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে দাঁড়িয়ে যান। লীগ মন্ত্রীসভার শাসনে ১৬ আগস্ট সংঘটিত কলকাতা দাঙ্গার ভয়াবহতার পটভূমিতে হিন্দুমহাসভার ব্যাপক প্রচার এবং কংগ্রেসের রক্ষণশীল অংশের চাপে তারা এতই প্রভাবিত হন যে মাতৃভূমিকে দ্বিখণ্ডিত করতে তাদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা হয়নি। তারা ভুলে গিয়েছিলেন যে অবিভক্ত বঙ্গে হিন্দু-মুসলমান জনসংখ্যার আনুপাতিক পার্থক্য সামান্য। তাই অবিভক্ত স্বাধীন বঙ্গের সংসদীয় নির্বাচনে কোনাে সম্প্রদায়ের একতরফা একক জয় সম্ভব ছিল না। পরস্পর নির্ভরতায় মন্ত্রীসভা ও শাসন পরিচালিত হবে এটাই ছিল স্বাভাবিক। তদুপরি শিক্ষায় মননশীলতায় হিন্দু সম্প্রদায় অনেক এগিয়ে ছিল। বরং ভয়টা ছিল মুসলমান মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিতশ্রেণীর যে তারা প্রতিবেশি সম্প্রদায়ের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবে কিনা। তাই স্বাধীন বঙ্গের পাকিস্তানে যােগ দেবার পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন প্রায় অসম্ভব ছিলাে। এসব বিষয় হিন্দু শিক্ষিতশ্রেণী ভেবে দেখেনি। এ পরিস্থিতিতে বর্ণহিন্দু বা তাদের উচ্চ ও মধ্যশ্রেণীর মানুষ তাদের শ্রেণী স্বার্থের টানে বঙ্গবিভাগকে অনিবার্য করে তােলে।
তাদের সমর্থনে দাড়িয়ে যায় পূর্ববঙ্গের তাবৎ হিন্দু ভূস্বামী। এরা নিজ স্বার্থে হিন্দু জনসাধারণের স্বার্থ বলি দিয়েছে। এমনকি স্বধর্মাবলম্বী জনমত যাচাইয়েরও প্রয়ােজন বােধ করেনি। অবশ্য তখন অধঃস্তন বর্ণের হিন্দু জনসমাজ তাদের শিক্ষিত ও সচ্ছল শ্রেণীর বিচারবুদ্ধির ওপরই সম্পূর্ণ নির্ভর করেছে । এরা পাকিস্তান নিশ্চিত হবার পর দিব্যি ঐ অসহায় সাধারণদের পেছনে ফেলে সীমান্ত অতিক্রম করতে দ্বিধা করেনি। এদের অনুসরণ করেছে অসচ্ছল মধ্যবিত্তরাও। এরা সীমান্ত অতিক্রম করে অমানবিক জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছে। এ ভাবে সামাজিক বিন্যাস নষ্ট হওয়াতে পাকিস্তানে পড়ে থাকা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ সংখ্যালঘুত্বের অসহায়তা ও বেদনা নিয়ে জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছে। বাস্তবে তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে । ভারতে সংঘটিত দাঙ্গার অপরাধে অর্থাৎ বিনা অপরাধে অন্যায় অত্যাচারের শিকার হয়েছে। তাই সামান্যতম আশ্বাসে ভর করেও তারা দেশত্যাগ করতে দ্বিধা করেনি। কিন্তু দেশত্যাগ করেও স্বচ্ছন্দ জীবন যাপন সবার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এতে করে বাঙালি হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রদায়গত বিরূপতা। বেড়েছে বই কমেনি। কমবেশী একই অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের বেলায়ও সত্য হয়ে উঠেছে। তারাও দেশবিভাগের প্রশ্নে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারেনি। পরে এক ধরনের হীনমন্যতা ও অসহায়তাবােধ থেকে পাকিস্তানের পক্ষে নৈতিক সমর্থন জুগিয়ে গেছে। একই কারণে একাত্তরে তারা পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিল না। আর্থ-সামাজিক দিক থেকে এই সংখ্যালঘুদের অবস্থা আরাে খারাপ। আইনি সেকুলারিজম তাদের কোনাে সাহায্যে আসছে না, আসার কথাও নয়। এভাবেই বিভাজিত বাঙালি জাতিসত্তা, দুই সম্প্রদায়ের মানুষ নিজ নিজ ভুলের সঙ্গে একে অন্যের ভুলের মাশুল গুনছে দ্বিখণ্ডিত জাতিসত্তার অবস্থান দুই রাষ্ট্রেই দুর্বল হয়েছে।
জাতীয়তার পটভূমিতে আর্থ-সামাজিক প্রশ্নে যে সম্ভাবনা অবিভক্ত স্বাধীন বঙ্গের ছিল তা এপার ওপার কোনাে পারেই বাস্তবের মুখ দেখেনি। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি বৃহৎ ভারতীয় ইউনিয়নের প্রধান জাতিসত্তাগুলাের তুলনায় সর্বাধিক অবহেলিত, রাজ্য হিসাবেও পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান আহামরি কিছু নয়। শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয় কেন্দ্রীয় প্রশাসনে উচ্চপদমান মর্যাদা ও শিক্ষা-সংস্কৃতির দিক থেকেও তারা হিন্দি অগ্রাসনের শিকার এবং বাঙালি হিসাবে সর্বভারতীয় ভিত্তিতে অবমাননা বা হীনমন্যতাই তাদের ভবিতব্য হয়ে উঠেছে। ঠিক একই অবস্থা ছিল পাকিস্তানে বাঙালিদের, এমন কি বাঙালি মুসলমানের। পাকিস্তানি শাসকদের বিদ্রুপ, অবমাননা, উচ্চমন্যতার চাপ তাদের সহ্য করতে হয়েছে। অর্থনৈতিক শােষণ ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকেও তারা মুক্ত ছিল না। তবে তারা প্রতিবাদের পথই বেছে নিয়েছিল ভাষা ও জাতীয়তাবােধকে কেন্দ্র করে। স্বশাসনের জন্য আন্দোলন এবং অবশেষে যুদ্ধ তাদের ভবিষ্যত নির্ধারণ করেছিল। হয়তাে সেখানে সাফল্যের প্রধান কারণ ছিল দুই পাকিস্তানের বিশাল ভৌগােলিক ব্যবধান আর সঙ্গে ছিল কূটনৈতিক কারণে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাহায্য ও সমর্থন । তাই অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। তেমন সুযােগ-সুবিধা পশ্চিমবঙ্গের নেই ।
অন্যদিকে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সর্বজনীন বাঙালি জাতীয়তাকে, সেকুলার জাতিসত্তাকে ধারণ লালন করতে পারেনি। রাজনীতির কূটচালে তার পরাজয় ঘটেছে। নতুন করে বাংলাদেশে বাঙালি মুসলমানদের আত্মপরিচয়ের সমস্যা বাঙালি জাতিসত্তার সম্ভাবনাকে দুর্বল করে তুলেছে। সর্বজনীন বাঙালি জাতিরাষ্ট্র সেকুলার জাতিরাষ্ট্রের ছবিটাকে উজ্জ্বল করে তােলা দূরে থাক ক্রমাগত পিছে ঠেলে দিচ্ছে। সংখ্যালঘুদের অসহায়তা ও অনিরাপত্তাও দূর করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় খণ্ডিত জাতিসত্তার সর্বোত্তম বা আকাক্ষিত বিকাশ সম্ভব হতে পারে । পারে না সংখ্যালঘুত্বের অভিশাপ বহন করে। নিঃসন্দেহে জাতিসত্তার বিভাজনই এ জন্য দায়ী। ভারতীয় বাঙালিত্ব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি, তার জাতিসত্তাও যে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই সেকথা আগেই বলেছি। সেখানেও সংখ্যালঘুত্বের অভিশাপ বাঙালি জাতির বিকাশকে পেছনে টানছে, যেমন রাজনৈতিক ভাবে তেমনি আর্থ-সামাজিক দিক থেকে। সবচেয়ে বড়াে কথা বাঙালি জাতিসত্তা ভারতীয় জাতীয়তার চাপে তার জাতিত্বকে ক্রমশ হারাতে চলেছে যেমন রাজনৈতিক দিক থেকে তেমনি অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভাষিক বাঙালি, রবীন্দ্রনাথের বাঙালি কর্মশ পিছু হটছে আরােপিত জাতি চেতনার চাপে । সমাজবাদী গণতন্ত্রী শাসনও অভীষ্ট লক্ষ্যের অনেক দূরে থেকে যাচ্ছে, মনে হয় না আদৌ সেখানে পৌছানাে সম্ভব হবে। প্রসঙ্গত অবিভক্ত বঙ্গের শ্রেণী আন্দোলনগুলাের কথা মনে করা যায়, যা সন্দেহাতীত ভাবে দুর্বল হয়েছে, স্বাস্থ্যহীন হয়েছে, পাকিস্তানি ও ভারতীয় শাসনের প্রবল চাপে। পাকিস্তানের পূর্ববঙ্গে সে সম্ভাবনার যে মৃত্যু ঘটেছে তা আর সঞ্জীবিত হওয়ার কোনাে লক্ষণ নেই, এখনাে নেই। পশ্চিমবঙ্গ হয়তাে তার কিছুটা উদ্ধার করতে পেরেছে কিন্তু তাই বা কতটুকু! সত্যিকার অর্থে এতে আকাক্ষিত অর্জন সম্ভব হয়নি। এসবই ভূখণ্ড বিভাগের পরিণাম । দ্বিখণ্ডিত জাতিসত্তার দুর্বলতার প্রতিফলন। সমাজের নিমতম স্তরে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করতে গেলে হতাশাই প্রধান হয়ে উঠবে। মনে হয় না বাঙালি জাতিসত্তা অদূর ভবিষ্যতে শ্রেণীসংগ্রামের সম্ভাবনাকে উজ্জীবিত করতে পারবে ।
কথাটা যতই অপ্রিয় শােনাক অস্বীকারের উপায় নেই যে দ্বিখণ্ডিত বঙ্গভূখণ্ডে বিভাজিত বাঙালি জাতিসত্তার সর্বজনীন রূপ এখনাে যথাযথ ভাবে বিকশিত হয়ে ওঠেনি। দুই বাংলাভাষাভাষী ভূখণ্ডে দুই ভিন্ন কারণে জাতিসত্তার সুস্থ ও শক্তিমান রূপের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। একদিকে যদি শক্তিমান ভারতীয় চেতনার ছাপ জাতিচেতনার অগ্রগতি রুদ্ধ করে থাকে অন্যদিকে বাংলাদেশে পাকিস্তানি ঐতিহ্যের নিহিত প্রভাব জাতিসত্তাকে সংকীর্ণতার পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বাঙালি জাতিসত্তার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রিক বিকাশের সম্ভাবনা ছিল সবচেয়ে বেশি। সেখানে রাজনৈতিক নৈরাজ্য ও অগণতান্ত্রিকতার পিছুটান, জনস্তরে অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং আমলা-মুৎসুদ্দিদের ব্যাপক দুর্নীতি ও বিপুল সম্পদ অর্জন সে সম্ভাবনাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। রাজনৈতিক কারণে পশ্চিমবঙ্গ এ সম্ভাবনা থেকে দূরে ভিন্নতা সত্ত্বেও দুই বাংলাভাষী ভূখণ্ডের একটি সাধারণ (কমন) বৈশিষ্ট্য হল তাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লঘুত্ব ঘুচিয়ে জাতিচেতনার মূলস্রোতে একীভূত করতে না পারা এই অপারগতার কারণে জাতিসত্তার স্রোত যথেষ্ট বেগবান হতে পারছেনা । সংহতির অভাব থেকেই যাচ্ছে। অথচ উভয় দেশের রাজনীতি এদিকটায় গুরুত্ব দেওয়া দরকার মনে করছেনা। রাজনৈতিক চরিত্র বিচারে দ্বিখণ্ডিত জাতিসত্তার দুই ভূখণ্ড তাই মুসলমান বাংলা ও হিন্দুবঙ্গের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এখানেই বাঙালি জাতিসত্তা ও বাঙালি জাতিচেতনার ট্রাজেডি। এই স্ববিরােধ ও সংকীর্ণতাবােধ নিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদার মাথা উঁচু করে দাঁড়ানাে সম্ভব নয় । মর্যাদা অর্জনও সম্ভব নয় । দেশবিভাগ তথা বঙ্গবিভাগের প্রতিক্রিয়া বাংলাভাষী দুই ভূখণ্ডকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করেছে সত্য, কিন্তু তা সত্ত্বেও এদের কারাে পক্ষেই অসম্পূর্ণতা জয় করে ওঠা সম্ভব হয়নি। সম্ভব হয়নি বাঙালি জাতিসত্তার সর্বজনীন পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিত করা, যেমন সম্প্রদায়গত দিক থেকে তেমনি শ্রেণীগত দিক থেকে। তবু স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে যে স্বীকৃতি পেয়েছে, নানা সমালােচনার মধ্যেও তাতেই দুধের স্বাদ ঘােলে মেটানাে। স্বাধীন যুক্তবঙ্গের আন্তর্জাতিক অবস্থান নিঃসন্দেহে ভিন্ন হতাে যদি ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন ও স্থানীয় সাম্প্রদায়িক চেতনা বাঙালি জাতিসত্তাকে দ্বিখণ্ডিত না করতাে।
সূত্র : দেশবিভাগ-ফিরে দেখা – আহমদ রফিক