You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.28 | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references) - সংগ্রামের নোটবুক

1971.09.28 | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references)

২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ আজকের এদিনে

দুর্গা পুজার বিজয়া উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তাজউদ্দীন আহমেদ বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বানী দিয়েছেন।[ বানীটি ইমেজে পড়ুন] অপর এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকার বলেছে বাংলাদেশের জনগন সংযুক্ত বাংলা গঠন পছন্দ করে না। সংযুক্ত বাংলার পরিকল্পনা কারীদের ভারতও হয়ত পছন্দ করে না। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মজহারুল ইসলাম কোকীগড়ে দুই বাংলা একত্রীকরণ নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য নয় বলে সরকার জানিয়েছে। সরকারের মুখপাত্র বলেছেন তিনি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সরকারের নীতিবিরুদ্ধ বক্তব্য দিয়েছেন যার প্রতিবাদ সরকার করেছে। [*]
ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর বিমান ইউনিট ‘কিলো ফ্লাইট’ গঠন করা হয়। অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার বাঙালি বৈমানিক ও গ্রাউন্ড ক্রুরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভারতের বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল পি সি লাল, এয়ার মার্শাল এইচ সি দেওয়ানসহ ভারতীয় বিমানবাহিনীর বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আমেরিকায় তৈরী ১টি পুরানো ডিসি-৩ বিমান, কানাডার তৈরী ১টি অটার বিমান এবং ফ্রান্সের তৈরী ১টি এ্যালুয়েট-৩ হেলিকপ্টার দিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। ভারত সরকার অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে একটি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরিত্যক্ত রানওয়ে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। কিলো ফ্লাইটে বিমান বাহিনীর পাইলটদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন পিআইএ এবং প্লান্ট প্রটেকশন বিমান পাইলট এসে যোগ দেন। বিভিন্ন সেক্টর হতে যুদ্ধরত মোট ৫৮ জন বিমান সেনাকে এই ফ্লাইটে নিয়ে আসা হয়। এই ফ্লাইটের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয় স্কোঃ লীঃ সুলতান মাহমুদকে। [বিভিন্ন উৎস]
দিল্লির পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত চারজন বাঙালি কর্মী এ দিন বাংলাদেশের পক্ষে তাঁদের আনুগত্য প্রকাশ করেন। এই চারজন বাঙালি কর্মীকে সপরিবার এ দিন বাসে করে ইসলামাবাদে পাঠানোর সময় তাঁরা পরিবারসহ নাটকীয়ভাবে সরে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। [*]
২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি শক্তিশালী দল কায়েমপুর (সালদা নদী এলাকা) পাকসেনা ঘাঁটি আক্রমণ করে। চার ঘন্টা যুদ্ধের পর পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের চাপের মুখে টিকতে না পেরে কায়েমপুর ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে ১৫ জন পাকসেনা নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। মুক্তিবাহিনীর পক্ষে কয়েকজন বীর যোদ্ধা শহীদ ও আহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের কাছ থেকে মেশিনগান, মর্টার ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রচুর গোলাবারুদ দখল করে। পাকিস্তান সরকার সুত্রে এপিপি জানিয়েছে পাকিস্তান বাহিনী রাজশাহী সীমান্তে বিদ্রোহীদের উপর আক্রমন চালিয়ে ৬০ জন বিদ্রোহী হত্যা করেছে। চাপাই নবাবগঞ্জ সীমান্তের জঙ্গল বাড়ীতে ভারতীয় ফিল্ড গানের সহযোগিতায় বিদ্রোহীরা সেখানে ৩০০ রাউন্ড গোলাবর্ষণ করে ভিতরে প্রবেশ করে। তারা এক মাইল ভিতরে আসার পর পাক বাহিনী তাদের উপর আক্রমন চালায়। আক্রমনে টিকতে না পেরে তারা অপার চলে যায় পরে পাক বাহিনী সেখানে ৬০ জনের মৃতদেহ দেখতে পায়। এখানে একজনকে জীবিত ধরা হয়েছে। [স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র ১০ম খণ্ড]

পাকিস্তান নৌবাহিনী অনুপ্রবেশকারী ১০ জন বিদ্রোহী নৌকমান্ডোকে হত্যা করেছে এবং ৩ জনকে আটক করেছে। আটকদের একজনের নাম অনিল। তাদের কাছে লিম্পপেট মাইন পাওয়া গিয়াছে। আটকরা স্বীকারোক্তিতে বলিয়াছে তারা ভারতে ভারতীয় নৌবাহিনী দ্বারা প্রশিক্ষন প্রাপ্ত। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা উপকুলে পাকসেনাদের কোস্টাল নেভী ও বেসামরিক জাহাজ আক্রমণের জন্য তাদের দলকে পাঠানো হইয়াছিল। কিছুদিন আগে চালনায় অনুপ্রবেশকারী ফ্রগম্যানরা একটি বিদেশী খাদ্যবাহী জাহাজ এসএম লাইটেনিং ক্ষতিগ্রস্ত করিয়াছিল।[**]

পাকিস্তান সরকার জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি এম. আর. সিদ্দিকীর জাতিসংঘের অঙ্গনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্যে মহাসচিব উ‘থান্টের কাছে আবেদন জানায়। জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগাশাহী আজ জাতিসংঘ মহাসচিব উথানট বরাবর একটি পত্র দিয়াছেন। আগা শাহী বলেন এমআর সিদ্দিকি যিনি নিজেকে বাংলাদেশ দলনেতা বলে পরিচয় দিচ্ছেন তার বিরুদ্ধে গনহত্যার অভিযোগ রয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদ আহ্বায়ক ছিলেন। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাকে বহিস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকেও অনুরোধ জানান। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সিদ্দিকি এবং সহযোগীরা সাধারন পরিষদ উত্তর লাউঞ্জে পাকিস্তান বিরোধী প্রচারপত্র বিলি করেন। জনাব সিদ্দিকির বিরুদ্ধে পাকিস্তানে মামলা আছে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে এসেছেন।[**]
সোহরাওয়ারদি কন্যা আখতার সোলায়মান লন্ডনে বলেছেন যে ব্রিটেনে তার আড়াই মাস ব্যাপী সফরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নিকট রিপোর্ট পেশ করবেন। ব্রিটেনে তিনি লন্ডন সাউদাম্পটন, ওয়েলস, কনভেন্ট্রি, ব্রাডফরড, গ্লাসগো, লুটন, ম্যানচেস্টার সফর করেন এবং সেখানে শত শত পূর্ব পাকিস্তানী এবং পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে কথা বলেন। এ ছাড়া তিনি অনেক ব্রিটিশ নেতৃবর্গের সাথেও সাক্ষাৎ করেন। তার কার্যক্রমের ফলে ব্রিটেনে পাকিস্তান বিরোধী প্রচারনায় বাধা সৃষ্টি হয়েছে। [**]

গভর্নর ডা: এএম মালিক ঢাকার ৩০টি ইউনিয়ন এর প্রতিনিধিত্ব শীল নেতা ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের এক সভায় ‘পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতি ধ্বংসের প্রয়াসে লিপ্ত শত্রুদের তৎপরতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। সভায় সকল প্রাদেশিক মন্ত্রী ও গভর্নরের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন শত্রুর এজেন্টরা তাহাদের অশুভ মতলব অর্জনের জন্য জনসাধারণকে বিপথে পরিচালিত করিতে এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বানচাল করতে সম্ভাব্য সকল পন্থা অবলম্বন করছে। তিনি বলেন যদিও পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে তবুও এতে খুশী হয়ে বসে থাকলে চলবে না বরং সতর্ক থাকতে হবে। পাকিস্তান এক থাকবে না ভেঙ্গে যাবে, ঈমানের বৃহত্তম পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য তিনি জনগণের সর্বাধিক সহযোগিতা ও সক্রিয় সাহায্য কামনা করেন। ঢাকা শহরবাসীর পক্ষ থেকে শহর শান্তি কমিটি সভাপতি সিরাজ উদ্দিন গভর্নরকে ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে আশ্বাস প্রদান করে বলেন ঢাকাবাসী মুজাহিদ হিসেবে প্রস্তুত আছে। [**]

সামরিক প্রশাসকের দফতর থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জনগণকে সতর্ক করে দেয়া হয় যে, কোনক্রমেই শেখ মুজিবের বিচার সম্পর্কে কোন মন্তব্য করা যাবে না। নোটে বলা হয় জনগনের উচিত নিজেদের স্বার্থে এমন কিছু না বলা বা এমন কিছু না করা যা আদালত অবমাননা বা মামলার বিবরণীর গোপনীয়তা লঙ্ঘন বা সরকার বা আসামী পক্ষে মামলার ক্ষতি সাধন করতে পারে। [**]

প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ২৮ সেপ্টেম্বর একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান যে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগে ১১ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের নামকরা আইনজীবী একে ব্রোহীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি আইনি দল শেখ মুজিবের পক্ষে লড়ছে। অপর সদস্যরা হল গোলাম আলী মেমন, আকবর মিরন, গোলাম হোসেন। এ পর্যন্ত ২০ জনের সাক্ষী সমাপ্ত হয়েছে। [**]

এলএফও সংশোধন
লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক অর্ডার সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে এখন মন্ত্রীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। [**]
ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলনে ফজলুল কাদের চৌধুরী

পাকিস্তান কনভেনশন মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী শাহবাগে দলীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রে একটি জাতীয় সরকার গঠনের আহবান জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন তার এই ইচ্ছা প্রেসিডেন্ট সাদরে গ্রহন করবেন। এই লক্ষে তিনি সকল দলকে একটি জাতীয় কনফারেন্স ডাকার আহবান জানান।
তিনি বলেন প্রেসিডেন্ট এর উচিত কালবিলম্ব না করে শাসনতন্ত্র ঘোষণা করা। তিনি ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র সম্পর্কে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।
তিনি পরবর্তী ১০ বছর উন্নয়নের ৬০% অর্থ পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় করার সুপারিশ করেন। কেন্দ্রীয় সরকারে সমান সমান হারে কর্মকর্তা নিয়োগ ও পদায়ন করতে হবে। পূর্ব পাকিস্তানে ৫ মাস রাজধানী চালুর প্রস্তাব করেন এবং ৫ মাস সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় অফিসও ঢাকায় স্থানান্তর করতে হবে।
তার সাংবাদিক সম্মেলনের সময় কঠোর পুলিশ প্রহরা ছিল। তার পাশেই একজন মাঝবয়সী এক জনের হাতে স্টেনগান এবং কোমরে রিভলভার দেখা যায়। এই সময় তার পাশে ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক মালিক মোহাম্মদ কাসিম ও শামসুল হুদা।
তিনি বলেন যারা হিন্দুস্তানের চালে আছেন তারা ইসলামের শত্রু। সকল দেশবাসী পাকিস্তানকে ভালবাসে। ভারত যদি পাইস্তানের ১ ইঞ্চি জায়গা দখল করে তবে তারা ১১ কোটি মানুষের প্রতিরোধের সম্মুখীন হবেন। তিনি বলেন শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ যদি লেগেই যায় তবে যুদ্ধ হবে ভারতের মাটিতে। তিনি বলেন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সংযোগ সাধনের জন্য একটি করিডোর দেয়ার বিষয় নিয়েও তাদের সাথে বিরোধ এখনও আছে। [**]

কাজী কাদের
কাইউম মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সংগঠক কাজী আব্দুল কাদের করাচীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তার দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি খান আদুল কাইউম খানের পূর্ব পাকিস্তানের কোন নেতার অপসারণ অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। কাজী কাদের বলেন খান কাইউম এর আগে কনভেনশন লীগের শামশুল হুদাকে একীভুত মুসলিম লীগের প্রধান সংগঠক মনোনয়ন দিয়ে দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেন। কাদের বলেন দলের কাউন্সিল তাকে প্রধান সংগঠক পদে বসিয়েছে এবং দলের কাউন্সিল তাকে এই পদ থেকে অপসারন করতে পারে। খান কাইউমকে দলের কাউন্সিল এরুপ অধিকার দেয়নি। [**]
তথ্যমন্ত্রী ওবায়দুল্লাহ মজুমদার পলাতক জীবনের কাহিনী প্রকাশ
তথ্যমন্ত্রী ওবায়দুল্লাহ মজুমদার ভারতের ত্রিপুরায় তার দুই মাস পলাতক জীবনের কাহিনী প্রকাশ করেন। তিনি বলেন ভারতের শরণার্থী শিবিরে দারিদ্রতা ও রোগে শরণার্থীদের মৃত্যু মৃত্যুতে শরণার্থীদের মোহমুক্তি ঘটেছে এবং তারা হতাশ হয়ে পড়ছে। ভারত তাহাদের নিজের স্বার্থে তাহাদিগকে ব্যাবহার করছে। কিছু চরমপন্থী ছাড়া বাকী সকলেই দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক। ভারতের ক্ষতিকর প্রচারনা ও বিদ্বেষপূর্ণ আচরন তাদের দেশে ফিরতে বাধা দিচ্ছে। ভারত সবসময়েই শরণার্থীদের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রচার করছে। শিবিরগুলির পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর রোগে সেখানে অসংখ্য শরণার্থী মৃত্যুবরণ করছে। অল্প জায়গায় ঠাসাঠাসি করিয়া তাদের রাখা হইয়াছে। শিবির গুলোতে খাদ্য সরবরাহ অনিয়মিত। কিছু এমএনএ এবং এমপিএদের এক রুমে ২-৩ টি খাট দেয়া হয়েছে তবে অনেকেই স্থান না পেয়ে নিজেরাই থাকার ব্যাবস্থা করে নিয়েছে। কলকাতায় অবস্থানকারীদের অবস্থাও তেমন ভাল নয়। তিনি সবসময় নিজেকে পাকিস্তানী ভেবেছেন এখনও ভাবেন। পরিস্থিতির চাপেই তিনি সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে ছাত্রদের জন্য সেখানে আশ্রয় নাই। তাদের বেকার থাকা যাবে না তাই তাদের জোর করে যুদ্ধের প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। এসকল যোদ্ধারা প্রায় পাকিস্তানে প্রবেশ করে তাদের অস্র জঙ্গল ডোবায় ফেলে দেয় এবং ভারতে ফিরে জানায় তারা বেশ কিছু সফল অভিযান করে এসেছে। [**]
জামাত মুহাজির কমিটি
জামাতের মুহাজির কমিটির একটি প্রস্তিনিধিদল জামাত নেতা ও শিক্ষামন্ত্রী আব্বাস আলী খানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রদিনিধিদল প্রদেশে উর্দু ভাষীদের শিক্ষার সমস্যা গুলি তুলে ধরেন। মন্ত্রী তাদের বক্তব্য ধৈর্য সহকারে শুনেন এবং সমাধানের আশ্বাস দেন। [**]
মওলানা ইসহাক
বোমা হামলায় আহত মৌলিক গণতন্ত্রী মন্ত্রী মওলানা ইসহাক দ্রুত আরোগ্য লাভ করছেন। বর্তমানে হাসপাতালে বসেই তিনি অফিসের কাজ কর্ম সারছেন। মন্ত্রীর উপর বোমা হামলার ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয় ছেড়ে দেয়া হয় দুজনকে। [**]
নুরুল আমীন
কনভেনশন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী এবং কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রাদেশিক প্রধান খাজা খয়ের পিডিপি প্রধান নুরুল আমীনের বাসভবনে একটি জোট গঠন বিষয়ে আলোচনা করেছেন। [**]

ইন্দিরা গান্ধী
সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আজ রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় অংশ নেন। সেখানে দেয়া বক্তব্য এ সোভিয়েত প্রধান মন্ত্রী কসিগিন বলেছেন উপমহাদেশে শান্তি অক্ষুন্ন রাখার এবং সশস্র সংঘাত বন্ধে তার সরকার কাজ করে যাবে। সকালে দুই নেতার বৈঠকেও কসিগিন একই কথা বলেছেন। ভোজসভায় ইন্দিরা গান্ধী বলেন বর্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশে সশস্র সংঘাত বৃদ্ধি পাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সকালের বৈঠকে কসিগিন পদগর্নি ও ব্রেজনেভ এক সাথে তিন ঘণ্টা আলোচনা করেন। আলোচনা কালে ইন্দিরা গান্ধী শরণার্থী ফিরে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে না পারায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ইন্দিরা গান্ধী বলেন সশস্র সংঘাত বন্ধ করতে না পারলে ভারতে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে এবং এ জন্যই দ্রুত রাজনৈতিক সমাধান দরকার। প্রধানমন্ত্রীকে এ সময় সহায়তা করেন পর রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ কমিটি চেয়ারম্যান ডিপি ধর। বৈঠকে কসিগিন বলেন ৮০ লক্ষ শরণার্থী কে দেশ ত্যাগে বাধ্য করানোয় পাকিস্তান কে তার দেশ সমর্থন করতে পারে না। ৮০ লাখ লোকের ভারতে আশ্রয় গ্রহন প্রমান করে তারা বাংলাদেশে কি রকম অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। [*]
স্থপতি স্তেনলি টাইগারমেন
বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তানে ৫টি পলিটেকনিক স্থাপন প্রকল্পে কর্মরত স্থপতি স্তেনলি টাইগারমেন কলকাতায় এক সাংবাদিকদের বলেছেন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙ্গালীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে তিনি বিশ্ব ব্যাঙ্কের চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি বলেন তিনি গত এক সপ্তাহে ঢাকা অবস্থান করে পাক বাহিনীর নির্মমতা নিজ চোখে দেখে এসেছেন। তিনি বলেন তিনি আবার এদেশে কাজ করতে আসবেন যদি দেশটি স্বাধীন হয়। তিনি বলেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে খেটে খাওয়া মানুষ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের জন্য অনেক কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের অধিকার আদায়ের জনগনের সাথে তাই একাত্মতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন ঢাকায় সর্বত্র চৌকি ঘনঘন তল্লাসি কাজে তিনি এবং জনগণ অত্যন্ত বিরক্ত বোধ করতেন দেশটি বর্তমানে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন সেখানে জীবনযাত্রার বেয় বেড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন তার পদত্যাগে তার অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বটে কিন্তু বাংলাদেশের জনগনের জন্য এ কাজ করতে পেরে তিনি তৃপ্ত। তিনি বলেন তিনি ছয় বছর পূর্ব পাকিস্তানে ১৮ দফায় অবস্থান করেছিলেন। তিনি শীঘ্রই তার নিজ শহর শিকাগো ফিরে যাবেন। [*]
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিউইয়র্ক ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব খালাতবারি পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলীর প্রশ্নে পাকিস্তানকে সমর্থন করিয়া ভারত পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর আহবান জানান। তিনি জাতিসংঘ সাধারন পরিষদে বক্তৃতায় এই মন্তব্য করেন। পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এবং এর ফলে শরণার্থী সমস্যা দুইটি দেশের ইতিপূর্বের উত্তেজনাকর সম্পর্ককে আরও সঙ্কট পূর্ণ করে তুলেছে। সীমান্তের উভয় পার্শে মানবিক সমস্যাগুলি মোকাবেলায় জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সকল প্রচেষ্টার প্রতি তার দেশের সমর্থন আছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার সর্বশেষ পরিকল্পনা মোতাবেক এই সমস্যা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান এর প্রচেষ্টা নিবেন। [**]
একই দিন ইরানের শাহ প্যারিসে ফরাসী পত্রিকা লা ফিগারে এর সাথে সাক্ষাৎকারে একই বক্তব্য দেন। তিনি বলেন পাকিস্তান সমস্যার ব্যাপারে ইরান ১০০ ভাগ পাকিস্তানের পিছনে আছে। ইরান ও পাকিস্তানের জনগন একই রেস ভুক্ত এবং তিনি ও ইয়াহিয়া পারস্পরিক বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও কোনরূপ জাতিগত উন্মাদনার বশবর্তী না হইয়া ইসলামের বন্ধনে আরও অধিক ভাবে একতাবদ্ধ হইয়াছে।
ইরাকের কমিউনিস্ট পার্টি নেতা ডঃ রহিম আজানিয়া এবং বাথ পার্টি নেতা মুজিজ আল খতিব পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে এবং প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করে কলকাতায় এসে বলেছেন আন্তজার্তিক প্রতিষ্ঠান গুলোর উচিত বাংলাদেশে গনতান্ত্রিক ন্যায় পূর্ণ এবং মানবিক পরিবেশ সৃষ্টি করা। তারা ১০ দিন যাবত কলকাতায় অবস্থান করছেন। তারা বলেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি খুবই শোচনীয়। বাংলাদেশের শরণার্থীরা যাতে দেশে ফিরে যেতে পারে সে জন্য পরিবেশ গড়ে তোলা দরকার। তারা বলেন শরণার্থীদের সাথে আলাপ কালে তারা তাদের জানিয়েছে বাংলাদেশের পরিবেশ অনুকুল হলেই তারা সেখানে ফিরে যাবে। তারা বলেন তারা এটাও লক্ষ্য করেছেন বাংলাদেশ নেতারা স্বাধীনতার কমে কোন আপোষ করতে রাজী নয়। [*]
সুত্রঃ
[*] যুগান্তর, কালান্তর ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
[**] পূর্ব পাকিস্তানের সকল পত্রিকা ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

Prepared by Salah Uddin