You dont have javascript enabled! Please enable it!

1971.09.30 | ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ আজকের এদিনে

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভারতে পালিয়ে আসা এক বিমান বাহিনী অফিসার বলেছেন ক্যান্টনমেন্ট এর বন্দী শিবিরগুলোতে এখনও অনেক নারী পুরুষ বন্দী রয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন আর্মি সার্ভিস কোরের লেঃকঃ ইয়াসিন, লেঃকঃ জলিল, মেজর কামাল, মেজর আলতাফ, মেজর/ ক্যাপ্টেন আওলাদ। তিনি বলেন আহত লেঃ শমশের মুবিন চৌধুরীর উপর এখনও পাক বাহিনী অত্যাচার করছে। বর্তমানে তিনি প্রায় পঙ্গু।[*]

ক্যাপ্টেন মাহবুবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল কুমিল্লার দক্ষিণে পাকসেনাদের ঘাঁটির কংসতলা ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। ক্যাপ্টেন পাশার আর্টিলারি সাপোর্ট নিয়ে একদল মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আশরাফের নেতৃত্ব এ নয়নপুরে পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনীর এই আক্রমণের মুখে পাকবাহিনী নয়নপুর ছেড়ে শালদা নদী রেলওয়ে স্টেশনের মূল ঘাঁটিতে আশ্রয় নেয়। পরে এ দলের সাথে ক্যাপ্টেন গফফারের দল যোগ দেয়। একই সময়ে মেজর সালেকের বাহিনী সালদা নদী আক্রমন করে। অন্যান্য স্থান থেকে পাক বাহিনী এখানে জমায়েত হলে তাদের সাথে সালেকের বাহিনী পেরে উঠতে পারছিল না। সালেকের বাহিনীর গোলাবারুদ কমে গেলে তারা উত্তরে মন্দভাগ চলে আসে। যুদ্ধের তীব্রতা দেখে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩৩ বেলুচ পুরা ব্যাটেলিয়ন কসবা ও কুটিতে অবস্থান নেয় এবং ৩০ পাঞ্জাব নয়নপুরে অবস্থান নেয়। পাক বাহিনীর শক্তিশালী অবস্থান নেয়ায় সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ তার নতুন পরিকল্পনা সাজান। সে অনুযায়ী তিনি ক্যাপ্টেন গাফফার এর একটি কোম্পানি মোতায়েন করেন সালদা নদীর উত্তর বাকে। মেজর সালেক সালদা নদী পার হয়ে ষ্টেশনের পশ্চিমে গোডাউন এলাকায় অবস্থান নেন। ক্যাপ্টেন আশরাফ মন্দভাগ থেকে সালদা নদীর দিকে অগ্রসর হন। ক্যাপ্টেন পাশা মন্দভাগে আর্টিলারি অবস্থান নিয়ে থাকেন। সুবেদার জব্বার মর্টার সাপোর্ট নিয়ে সালদার বাকে অবস্থান নেন। খালেদ নিজেই কম্যান্ড নিয়ে অবস্থান করেন। [****]

চীনের ২২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে পাকিস্তান চীন মৈত্রী সমিতি আয়োজিত হোটেল পূর্বানীতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খ অঞ্চলের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়াজি, মন্ত্রী অং শু প্রু, অর্থমন্ত্রী আবুল কাশেম, শিল্পমন্ত্রী আখতার উদ্দিন, রাজস্ব মন্ত্রী একেএম ইউসুফ, শামসুল হক, কাইউম মুসলিম লীগ সাধারন সম্পাদক সবুর খান, জাতীয় লীগের আতাউর রহমান খান, হাইকোর্টের বিচারপতি মকসুমুল হাকিম যোগদান করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চীনের কন্সাল জেনারেল চেং ইং। মৈত্রী সমিতির সভাপতি ছিলেন মীর্জা গোলাম হাফিজ। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের কন্সাল জেনারেল চ্যাং ইং বলেছেন বলেছেন গণচীন সব সময় পাকিস্তানের ন্যায় সঙ্গত সংগ্রাম সমর্থন ও বিদেশী আক্রমনের সময় পাকিস্তানের পাশে থাকবে। তিনি পাকিস্তানের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। পাক চীন মৈত্রী সমিতির সভাপতি মীর্জা গোলাম হাফিজ তার ভাষণে বলেন পাকিস্তানের বিপদে চীনের অকুণ্ঠ সাহায্য ও সমর্থনের জন্য চীনা জনগণ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। চীন ও পাকিস্তান পরস্পরের শ্রেষ্ঠ বন্ধু তাদের এই সম্পর্ক বিশেষ কোন শক্তি এ বন্ধুত্তে ফাটল ধরাতে পারবে না। [**]

পাকিস্তান সরকারের বরাত দিয়ে সকল পত্রিকা জানিয়েছে সিলেটের (হবিগঞ্জ মাধবপুর, শ্রীমঙ্গল) সীমান্তবর্তী ৫টি গ্রামে বিদ্রোহীরা ১০০০ রাউন্ড গোলাবর্ষণ করেছে। গ্রাম গুলি হল মনতলা, কমলাপুর, জয়পুর, ধর্মনগর, হরশপুর। এ গোলাবর্ষণে ১২ নারী ৮ জন শিশু সহ ২৮ জন নাগরিক নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন টেলিফোন কর্মচারী আছেন। টেলিফোন কর্মচারীরা টেলিফোন লাইন মেরামত করছিল। গোলাবর্ষণ রত বিদ্রোহীরা পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায় কিন্তু তাদের বাহিনী বিদ্রোহীদের প্রতিহত করেছে। পরে এলাকা সমুহে তল্লাশি চালিয়ে তাদের বাহিনী ৩টি হাল্কা মেশিনগান ১৪৫ বাক্স ছোট অস্রের গুলী ১০০ হেলমেট ৪০ টি মাইন ৩টি ওয়ারলেস সেট ৮৭টি হাত বোমা উদ্ধার করে। সাগরনলে রাজাকাররা একটি ব্রিজ ধ্বংস প্রতিহত করে। রাজাকারদের গুলিতে সেখানে ৩ জন বিদ্রোহী নিহত হয়। [**]

ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাহরিকে ইশতেকলাল প্রধান এয়ার মার্শাল (অব:) আসগর খান বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমএনএ ও এমপিএদের অবস্থা যাই হোক আর যেখানেই তারা থাকুন সাধারণ ক্ষমাকে সম্প্রসারিত করে তাদের সবাইকে ক্ষমা এবং স্বপদে পুনর্বহাল করা উচিত। তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন, তাদের ক্ষমতায় আসা উচিত। তার এই প্রস্তাব গ্রহন করিলে প্রদেশে মৃত্যু জনিত কারন ছাড়া উপনির্বাচনের প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন স্বেচ্ছাসেবী (রাজাকার) ও শান্তি কমিটি গুলো মফস্বলে খুব অত্যাচার করছে। তিনি বলেন পরাজিত দলের সদস্যদের মন্ত্রী করা সঠিক হয়নি। তিনি বলেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগের বহাল সদস্যদের থেকে এদের মনোনয়ন দেয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সাংসদদের সবাইকে ক্ষমা করে স্বপদে পুনর্বহাল করা উচিত। যাঁরা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, তাঁদেরই ক্ষমতায় আসা উচিত। [**]
পাকিস্তান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন দিল্লির পাকিস্তানি হাইকমিশনের চারজন বাঙালি কর্মী সপরিবারে সরকারি নির্দেশে একটি বাসযোগে পাকিস্তান প্রত্যাবর্তন হরিয়ানার কাছে একটি চেকপোস্ট থেকে ভারতীয় পুলিশ তাদের আটক করে। ঘটনাস্থলে একজন আলোকচিত্রী রাখা হয়েছিল বলে বোঝা যায় যে এটি ভারতের পূর্বপরিকল্পিত। ভারতের এ ধরনের কাজ কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী এবং তাদের মুক্তি দাবী করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানে নিয়োজিত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে ডেকে এর প্রতিবাদ জানায়। ভারত বলেছে এই চার কর্মচারী তাদের পাকিস্তানে পাঠানোর সময় তাঁরা হরিয়ানা সীমান্তে বাস থেকে নেমে পড়েন এবং পাকিস্তানি পক্ষ ত্যাগ করে পরে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আনুগত্য ঘোষণা করেন। [**]
জামাত ভারপ্রাপ্ত প্রধান মিয়া তোফায়েল আহমেদ লাহোরে বলেছেন দেশের দু অংশের পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। তিনি বলেন তিনি আজ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে দেখা করে এসব নিয়েই আলোচনা করবেন।[***]
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর অভিযোগ করেছে ভারত পূর্ব পাকিস্তানে দুর্ভিক্ষবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। মন্ত্রণালয় বলেছে ভারতের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের দরুন প্রদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের জীবন যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। মুখপাত্র বলেন ভারতের চররা চালনায় খাদ্যবাহী জাহাজ এসএস লাইটেনিং ডুবিয়ে দিয়েছে এবং গত কয়েক মাসে অনেক খাদ্যবাহী জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি বলেন এ কাজে জড়িত দুষ্কৃতিকারীদের ভারত লিম্ফেট মাইন সরবরাহ করেছে এবং তাদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে। [***]
সফররত ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এমপিদ্বয় সিলেটে সফর করেছেন। তারা শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন। তারা সেখানে কয়েকটি চা বাগান পরিদর্শন করেন। এক ব্রিটিশ চা বাগান মালিকের সাথে সাক্ষাতকালে তিনি তাদের জানান পরিস্থিতি খারাপ সত্ত্বেও চা বাগানের শ্রমিকরা কাজ করে যাচ্ছে।[***]
জামাতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তান আমীর গোলাম আজম লাহোরে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন দেশের উভয় অংশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিই খারাপ। তিনি আগামীকাল দেশের সকল সমস্যা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে আলোচনা করবেন। তিনি মনে করেন ক্রিয়াশীল রাজনিতিকদের অনেকেই দেশের অবনতিশীল পরিস্থিতি ও সঙ্কট সৃষ্টির জন্য দায়ী। তিনি বলেন তিনি সামান্য রদবদল করে ৫৬ সনের সংবিধান বহাল করার পক্ষপাতী। তিনি বলেন ৭০ এর নভেম্বরেই তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে বলে ছিলেন জাতীয় পরিষদের উপর শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ভার দেয়া ঠিক হবে না। [***]
চীনের ২২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে পাকিস্তান চীন মৈত্রী সমিতি পূর্ব পাকিস্তান শাখা আয়োজিত হোটেল পূর্বানীতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খ অঞ্চলের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়াজি, মন্ত্রী অং শু প্রু, অর্থমন্ত্রী আবুল কাশেম, শিল্পমন্ত্রী আখতার উদ্দিন, রাজস্ব মন্ত্রী একেএম ইউসুফ, শামসুল হক, কাইউম মুসলিম লীগ সাধারন সম্পাদক সবুর খান, জাতীয় লীগের আতাউর রহমান খান, হাইকোর্টের বিচারপতি মকসুমুল হাকিম যোগদান করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চীনের কন্সাল জেনারেল চেং ইং। মৈত্রী সমিতির সভাপতি ছিলেন মীর্জা গোলাম হাফিজ। অনুষ্ঠানে প্রদেশের রাজনৈতিক নেতাগন জেনারেল নিয়াজির সাথে ছোট ছোট বৈঠক ও আলোচনা করেন। [**]
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহ শিক্ষা বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রী আব্বাস আলী খান যে মন্তব্য করেছেন তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশের কয়েকজন প্রখ্যাত আলেম। তারা হলেন বগুড়ার মস্তাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মওলানা নজিবুল্লাহ, কুমিল্লার শাহতলি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মওলানা রুহুল আমীন, নোয়াখালীর রায়পুর আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মওলানা কামাল উদ্দিন খান, আহসানাবাদ আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মওলানা জহুরুল হক। [***]
করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ডঃ আশরাফ আলী আড়াই মাস সরকারী সফর শেষে করাচী ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি জানান তিনি বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশ করেননি। তিনি পাকিস্তানের পক্ষে। তিনি বলেন অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে তার সম্পর্কে প্রচারিত সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা।[ পূর্বদেশ ১ অক্টোবর ১৯৭১]
সিলেটের বালাগঞ্জে কয়েক হাজার জনতা সমাবেশে মিলিত হয়ে পাকিস্তানের সংহতি ও অখণ্ডতার পক্ষে স্লোগান দেয়। সমাবেশের আয়োজন করে বালাগঞ্জ থানা শান্তি কমিটি। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা শান্তি কমিটি আহবায়ক ও মুসলিম লীগ নেতা শহীদ আলী। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহকুমা জামাত সভাপতি হাফেজ লুতফর রহমান। সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা শান্তি কমিটি সদস্য ডাঃ আব্দুল মালিক এবং বালাগঞ্জ থানা শান্তি কমিটি আহবায়ক ফজলুর রহমান। সভায় সিলেটের জেলা প্রশাসক সৈয়দ আহমেদও বক্তব্য প্রদান করেন। [***]
সোভিয়েত ইউনিয়নে তিন দিনের সফর শেষে ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাতে দেশে ফিরেছেন। মস্কো সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সফর সঙ্গীরা ধারনা দিয়েছেন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহ্মানের মুক্তির জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানের সামরিক সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে।[*]
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর তিন দিনের সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন কালে দুই দেশ এক যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করে। ইস্তেহারে বাংলাদেশের জনগনের ইচ্ছা অধিকার এবং ন্যায় সঙ্গত স্বার্থের প্রতি যথোচিত মর্যাদা দিয়ে পূর্ব বাংলার পরিস্থিতির রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছার জন্য দুই দেশের প্রতি আহবান জানানো হয়। ইস্তেহারে বলা হয় কেবলমাত্র এই পদ্ধতির রাজনৈতিক সমাধান লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিসচিত করবে। [*]
ঘূর্ণিঝড়ে পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী শিবির সমুহ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ঝড়ে মোট আবাসের তিন ভাগের এক ভাগ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। শরণার্থীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সরকার দ্রুত তাবু এবং ছাউনি গুলো মেরামত করছে। সবচে বেশী ক্ষতি হয়েছে সল্ট লেকের শিবির এখানেই বাস করে আড়াই লাখ শরণার্থী। ঘূর্ণিঝড় মুল আঘাত হেনেছে পূর্ব পাকিস্তানের উপকুলে মুলত খুলনায়। ৫ ফুট জলোচ্ছ্বাসে খুলনা তলিয়ে গেছে। গতবছরের নভেম্বরের দুর্যোগের পর এটাই সবচে বড় ঘূর্ণিঝড়। শরণার্থীদের মধ্যে কেউ হতাহত হয়নি।[REUTER]
মাহমুদ আলী

জাতিসংঘ সাধারন পরিষদে পাকিস্তান প্রতিনিধিদল নেতা মাহমুদ আলী বলেছেন তর্ক বিতর্ক না করে শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরে আসার ব্যবস্থা করার বাস্তব দিক গুলির দিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন এ উদ্দেশে দু দেশ তাদের প্রতিনিধিদের নিজের মত স্থানে বা নিরপেক্ষ কোন দেশে বৈঠক করতে পারে। তিনি বলেন শরণার্থীদের দুঃখ দুর্দশা মোচন করা জাতিসংঘের নৈতিক দায়িত্ব। তা ছাড়া তাদের প্রাপ্য সাহায্য যাতে অন্যত্র ব্যাবহার না হয় তাও দেখা জাতিসংঘের দায়িত্ব। তিনি বলেন ভারত পাকিস্তানকে খণ্ড বিখণ্ড করার মত একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন ভারত পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্রোহীদের সাহায্য করে আসছে। তিনি বলেন ভারত যে ৯০ লাখ শরণার্থীর কথা বলছে তা অতিরঞ্জিত। তিনি বলেন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সমাধানের জন্য আমরা ভারতকে আমন্ত্রণ জানাইনি। কিন্তু তারা এবং তাদের সমর্থক কয়েকটি দেশ তাদের রাজনৈতিক সমাধানের উপর চাপ দিচ্ছে। তিনি সীমান্তে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক নিয়োগে তার দেশের সমর্থনের কথা জানান। [**]
সরণ সিং
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরণ সিংহ ———— তিনি বলেন পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান করতে হলে পূর্ব বঙ্গের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথেই করতে হবে। মন্ত্রী সরন সিং জাতিসংঘে বলেছেন পাক ভারত বিরধের কথা প্রচার করে পাকিস্তান পূর্ব বঙ্গের ঘটনা আড়াল করতে চাচ্ছে। তিনি বলেন পূর্ব বঙ্গের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য জাতিসংঘে পাক প্রতিনিধি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এর মধ্যে মীমাংসা বৈঠক এর কথা বলেছেন। তিনি বলেন একদিকে তারা বলছে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে এবং অপরদিকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনার জন্য দু দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে আলোচনা বৈঠক চাচ্ছেন। তিনি বলেন পূর্ব বাংলা সমস্যা পাকিস্তান ভারত সমস্যা বলে পাকিস্তান প্রচারনা চালাচ্ছে। এর মানে হল পূর্ববঙ্গ থেকে নজর অন্যদিকে সরিয়ে দেয়া।
আন্দ্রে গ্রোমিকো
সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে গ্রোমিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্স ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। দু দেশ মনে করে ভারত উপমহাদেশের পরিস্থিতি বিপজ্জনক, তবে যুদ্ধ সমাধান নয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে গ্রোমিকো এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে গতকালের বৈঠকে শরণার্থী প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছিল। জানা যায়, দুই পক্ষই ভারত ও পাকিস্তানকে সংযত থাকার এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার পরামর্শ দেবে।[*]
৫০টি জোটনিরপেক্ষ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিউইয়র্কে প্রায় ৫০টি জোটনিরপেক্ষ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অনুমোদিত ইশতেহারে বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। ইশতেহারে বলা হয়, বাংলাদেশের শরণার্থীরা আন্তজার্তিক সীমা অতিক্রম করে স্রোতের মতো ভারতে প্রবেশ করায় ভারতের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়েছে। এ স্রোত এখনও অব্যাহত। ফলে শরণার্থী আগমন রোধ করার জন্য অবিলম্বে কার্যকর বেবস্থা গ্রহনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তাদের মনে আস্থার ভাব সৃষ্টি করে তাদের নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করাও প্রয়োজন। [*]
সুত্রঃ
[*] যুগান্তর, কালান্তর ১ অক্টোবর ১৯৭১
[**] পূর্ব পাকিস্তানের সকল পত্রিকা ১ অক্টোবর ১৯৭১
[***] দৈনিক সংগ্রাম ১ অক্টোবর ১৯৭১
[****] স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র ১০ম খণ্ড