You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.23 | ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references) - সংগ্রামের নোটবুক

1971.09.23 | ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | আজকের এদিনে (with references)

২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ আজকের এদিনে

অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ

ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ নিউইয়র্ক যাত্রার প্রাক্কালে কলকাতায় বলেছেন স্বাধীনতার কমে কোন রাজনৈতিক মীমাংসা বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। তিনি বলেন পৃথিবীর প্রগতিশীল দেশ গুলোর কাছ থেকে নৈতিক সমর্থন ও বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ে তারা জাতিসংঘে যাচ্ছেন। তিনি বলেন রাজনৈতিক মীমাংসা বলতে আমরা বুঝি রক্তপাত না ঘটিয়ে বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান। আমরা পৃথিবীর জাতিসমূহকে বুঝাতে চাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়টি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নহে যেমনটি আলজিরিয়া ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ সমস্যা।
মুক্তি বাহিনীর ২য় ব্যাচ অফিসার রিক্রুটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। এ ব্যাচের প্রশিক্ষন শুরু হবে ২৩ অক্টোবর থেকে। আগ্রহী প্রার্থীদের বয়স ২৭ এর নীচে হতে হবে এবং কমপক্ষে এসএসসি পাশ হতে হবে। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ প্রার্থীর জন্য বয়স সীমা ২৫ করা হয়েছে। আগ্রহীদের ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিকটস্থ সেক্টর কমান্ডারের কাছে আবেদন করতে হবে। [*]

জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল রওয়ানা

জাতিসংঘে বাংলাদেশের দাবীর পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষে ১৬ সদস্য প্রতিনিধিদলের ৮ জন নিউইয়র্ক যাত্রা করেছেন। এদের মধ্যে ২ জন সাবেক রাষ্ট্রদূত ৩ জন গন প্রতিনিধি আছেন। বিচারপতি সাইদ লন্ডনে তাদের সাথে একত্র হয়ে পরে নিউইয়র্ক যাবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাকি কয়েকজন সদস্য আগে থেকেই আছেন। শেষ মুহূর্তে দলে আবুল হোসেন মাহমুদ আলী অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। [*]

বিভিন্ন স্থানে গেরিলা আক্রমন

নৌ কম্যান্ডোর একটি দল ছোট ছোট নৌকা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের অফ পোর্টে শত্রু জাহাজে মাইন সেট করতে যান। লম্বা দূরত্ব কারণে তারা সফল হতে পারেননি এবং অপারেশন বাতিল করে ফেরার পথে মোহাম্মাদ হোসেইন নামে একজন কমান্ডো ডুবে মারা যান। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা উপকুলে পাকসেনাদের কোস্টাল নেভি আক্রমণের জন্য ৩ জন কমান্ডোর সমন্বয়ে একটি দলকে পাঠানো হয়। পাকসেনারা সম্পূর্ণ সজাগ ছিল ফলে ২ জন কমান্ডো ধরা পড়ে যায়। [স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্র ১০ খণ্ড]

বিভিন্ন দেশে পাকিস্তানের ভ্রাম্যমাণ দুত প্রেরণ

ভারত সরকারের প্রোপাগান্ডা মোকাবেলায় পাকিস্তান সরকার বিভিন্ন দেশে ভ্রাম্যমাণ দুত প্রেরণ করছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিভিন্ন দেশ সফরের পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে এদের পাঠানো হচ্ছে। ফ্রান্সে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত এসকে দেহলভি যাবেন আফ্রিকান দেশ সমুহে। তুরস্কে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ইফতিখার আলি মালিক যাবেন ইউরোপীয় দেশ সমুহে। মিসরে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আসলাম মালিক যাবেন ল্যাটিন আমেরিকান দেশ সমুহে। জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি মোহম্মদ খান যাবেন কিছু দেশে যার নাম প্রকাশ করা হয়নি। আজাদ কাশ্মীর এর সাবেক প্রেসিডেন্ট সরদার ইব্রাহিম খান, করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আইএইচ কোরেশী, ভারতের হায়দ্রাবাদ রাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লায়েক আলী জাতিসংঘে প্রতিনিধিদলে থেকে একই দায়িত্ব পালন করবেন। পূর্ব পাকিস্তানের ২ জন প্রখ্যাত সাংবাদিক এসজিএম বদরুদ্দিন, খোন্দকার আব্দুল হামিদ সহ পশ্চিম পাকিস্তানের একজন সাংবাদিক আজিজ বেগ একই দায়িত্ব পালন করবেন। [**]

শেখ মুজিবের মাতা সাহেরা খাতুন পিজি হাসপাতালে ভর্তি

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেখ মুজিবের মাতা সাহেরা খাতুন পিজি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে আগে থেকেই ভর্তি আছেন শেখ মুজিবের পিতা শেখ লুতফর রহমান। ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হয়ে আগে থেকেই এ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। নিয়ন্ত্রিত এ সংবাদে শেখ মুজিবের মাতাকে লুতফুন্নিসা উল্লেখ করা হয়েছে। পত্রিকা সম্পাদকগন এ ভুল জানলেও তা হুবুহু ছাপে। পরদিন কেউ কেউ সংশোধনী ছাপে। হাসপাতালে শেখ মুজিবের পিতামাতাকে দেখাশুনা এবং বড় মেয়ের কাজে ঘন ঘন চলাচল নিয়ন্ত্রন শিথিল করার জন্য বেগম মুজিব গভর্নর এ এম মালিক এর সাথে সাক্ষাৎ করে আবেদন জানান। আগে প্রতিবার বাহিরে যাওয়ার জন্য নিরাপত্তা ইউনিট প্রধান মেজর হাসান থেকে অনুমতি নেয়া হত। [**]

যশোর ও চালনা বন্দর পরিদর্শনে নিয়াজি

ইস্টার্ন কমান্ড প্রধান ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেনারেল নিয়াজি যশোর ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষন দেখেন এবং তাদের খোজ খবর নেন। স্থানীয় কমান্ডার নিয়াজিকে বিদ্রোহীদের একটি ঘাটি আক্রমনের বিশদ বিবরন দেন। কয়েকদিন আগে পাকিস্তানী সেনারা বেনাপোল ও সাতক্ষীরার মাঝে বিদ্রোহীদের উপর হামলা করে তাদের সরিয়ে দেয়। পরে তিনি সেখান থেকে চালনা বন্দর পরিদর্শন করেন। এসময় তার সাথে সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি নৌযান সমুহের স্বাভাবিক চলাচল প্রতেক্ষ করেন। তিনি নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ পরিদর্শন করেন। [**]

একত্রীকরণ ইস্যুতে কনভেনশন লীগে কোন্দল

কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রাদেশিক সভাপতি শামশুল হুদাকে বহিস্কার ইস্যুতে দলটি কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে। শামশুল হুদা বলেন ক্ষমতার লোভে ফজলুল কাদের বেসামাল হয়ে পড়েছেন। তাহার বহিস্কার অবৈধ এবং অগনতান্ত্রিক। তিনি (ফজলুল কাদের) বিবৃতি পাঠিয়ে তাকে বহিস্কার করেছেন যা তাহার ক্ষমতা বহির্ভূত। বহিস্কারের ক্ষমতা কার্যকরী সংসদের উপর। তিনি বলেন ৭০ এর নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর কাদের পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদ তা গ্রহন করেও নাই এবং পত্র প্রত্যাহারের অনুরোধও করে নাই। পরবর্তী সভায় তাহার সেই দাখিলকৃত পদত্যাগ পত্র নিয়া সিদ্ধান্ত নেয়া হইবে। ৩০ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী সংসদের ৯ জন সদস্য পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে হুদার পক্ষ নিয়েছে অপর দিকে দলের ৫ নেতা কাদেরের পক্ষ নিয়ে পত্রিকায় বিবৃতি পাঠিয়েছে।[**]

১০০ ট্রাক

জাতিসংঘের সাহায্যের ১০০ ট্রাক চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। আনরেপ কর্মসূচীতে এ যানবাহন ব্যাবহার করা হবে। আনরেপ এর পূর্ব পাকিস্তান প্রধান পল মার্ক হেনরি এবং তার অধিনে একজন পরিবহণ সমন্বয়কারী এ যানবাহন ব্যাবহার ও তদারক করবেন। [**]

কুমিল্লা পরিস্থিতি

কুমিল্লা থেকে ট্রেন যোগে বিদেশী সাংবাদিকদের নিয়ে স্থানীয় কমান্ডার ফকিরহাট পর্যন্ত ভ্রমন করেন। বিদেশী সাংবাদিকরা ট্রেনের ভিতর বসে কমান্ডার ও সৈনিকের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেন এবং কিছু বহিঃ দৃশ্য ধারন করেন। এতে দেখা যায় সড়ক সেতু ক্ষতিগ্রস্ত। টেলিফোন লাইন ধ্বংস। রেল সেতু সম্প্রতি মেরামত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বর্ণনা অনুযায়ী কুমিল্লা সবচেয়ে বিপজ্জনক জেলা যা সিমান্তের খুব কাছা কাছি এবং এখানে নিয়মিত গোলাবর্ষণ হচ্ছে। শহরের ৬০০০০ অধিবাসী নিরাপত্তার জন্য ভারত চলে গিয়েছে। যে ট্রেনটিতে তারা চড়েছিলেন তা ছিল মাঝারী অস্র দ্বারা সজ্জিত শ খানেক গোলন্দাজ সৈনিক সজ্জিত। স্থানীয় কমান্ডার বলেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক তবে সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ায় তারা স্বাভাবিক ট্রেন চলাচল করাচ্ছেন না। [**]

জাতিসংঘে পাকিস্তানী দল নেতা মাহমুদ আলী

মাহমুদ আলী জাতিসংঘ সদর দপ্তরে নাইজার, জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া প্রতিনিধিদলের কাছে পূর্ব পাকিস্তানের গোলযোগের বিশদ বর্ণনা দিয়াছেন। তার দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারত যাতে হস্তক্ষেপ না করে তা ভারতকে বুঝানোর জন্য তাদের অনুরোধ করা হয়। তিনি বলেন সোভিয়েত ভারত সামরিক চুক্তির পর ভারত নিরপেক্ষ দেশের মর্যাদা হারিয়েছে ফলে জোট নিরপেক্ষ ভুক্ত দেশ গুলির উচিত ভারত হতে দূরে থাকা। [**]

আলিয়া মাদ্রাসায় চা চক্রে মতিউর রহমান নিজামী
ইসলামী ছাত্র সংঘ অল পাকিস্তান সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে দলের এক চা চক্রে বলেছেন ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী দুষ্কৃতিকারীদের সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা নির্মূল করতে দেশপ্রেমিক জনতাই যথেষ্ট। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউসুফ আলী চৌধুরী। তিনি বলেন যুদ্ধকালীন অবস্থার সাথে বর্তমান অবস্থার কোন পার্থক্য নেই। আমরা ভেতরেও বাইরেও শত্রু দ্বারা আক্রান্ত। তাই এখন কথা বলার সময় নেই কাজের সময়। বর্তমান সঙ্কটের ফলে একটা জিনিষ পরিস্কার হয়েছে যারা ইসলাম ভালবাসে তারাই পাকিস্তানকে ভালবাসে। এ কথাটি যেন আমাদের বুদ্ধিজীবীরা ভুলে না যান। ইসলামকে বাদ দিয়ে যে পাকিস্তান টিকতে পারে না এটা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপলব্দি করতে পারলেই পাকিস্তানকে চিরস্থায়ী করার সত্যিকারের পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন বিগত ২৪ বছরে সকল সরকার মাদ্রাসা শিক্ষাকে অবহেলা করেছে এখন দেখা যাচ্ছে সাধারন শিক্ষার্থীরাই পাকিস্তান ধ্বংসে সবচে বেশী ভুমিকা রাখছে। আর চরম অবহেলিত মাদ্রাসা ছাত্ররাই পাকিস্তান রক্ষায় জীবন বাজি রেখে লড়ে যাচ্ছে। [***]

পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বাংলাদেশের এবং ভারতবিরোধী প্রচারণায় বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের সরকার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। মধ্য প্রদেশের মানা শরণার্থী শিবির এবং মেঘালয়ে স্থানীয় এবং প্রশাসনের সাথে বড় ধরনের একাধিক গোলযোগও হয়েছে এতে কয়েকজন মারা যায় গ্রেফতার হয় অসংখ্য। আসামে অন্তর্ঘাত তৎপরতায় শরণার্থীদের সন্দেহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে জানা গিয়েছে কোনো কোনো বিদেশি রাষ্ট্র পাকিস্তানের হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে যে শরণার্থীদের দুর্দশার জন্য আওয়ামী লীগ ও ভারত দায়ী। বাংলাদেশ সরকার এই অপপ্রচার রোধে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিদের শরণার্থী শিবিরে পাঠিয়ে পাল্টা প্রচারণা চালাচ্ছে। [*]
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তার দেওয়া এক ভোজসভার আয়োজন করেন। ভোজসভায় জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট, সাধারণ পরিষদের সভাপতি ইন্দোনেশিয়ার আদম মালিক, সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে গ্রোমিকোসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও স্থায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ভোজসভায় সরণ সিং এর বক্তব্বে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ স্থান পায়। [*]
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আগামী সপ্তাহে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরের প্রস্তুতি তদারকিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী কমিটির চেয়ারম্যান ডি পি ধর এ দিন মস্কো গমন করেছেন। ডি পি ধর মস্কো পৌঁছেই সোভিয়েত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলাই ফিরুবিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। ডি পি ধর এর আগে মস্কোতে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। [*]
ভারতের মেঘালয়ে শরণার্থী শিবির গুলিতে কলেরায় প্রায় ৭৫০০ শরণার্থী মারা গিয়েছে। এ নিয়ে শরণার্থী শিবির গুলিতে ২য় বারের মত কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। কেবল জুন মাসেই কলেরায় মারা গেছে ৩০ হাজার শরণার্থী। তখন মেঘালয় কলেরা মুক্ত ছিল। জুন মাসে কলেরায় কেবল কৃষ্ণনগর ফিল্ড হাসপাতালেই ৫০০০ নারী ও শিশু শরণার্থীর মৃত্যু হয়। [*]
যাদুকর পিসি সরকার জুনিয়র প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ৫০০০১ টাকা দান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীযাদুকর পিসি সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন অন্যদের এভাবে এগিয়ে আসা উচিত। [*]
বিড়লা জুট কোম্পানি বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ২৫০০০ এলুমিনিয়াম তৈজসপত্র ১০০০০ কম্বল এবং একটি ক্ষুদ্র হাস্পাতাল দান করবেন বলে জানিয়েছে। তৈজসপত্র গুলি এরই মধ্যে পুনর্বাসন দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব পিএন লুথরার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব ত্রান জেলা শাসকের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। এ জন্য কোম্পানির খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। [*]
অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাই কমিশনার ডগলাস স্টারকি বনগাঁ, ২৪ পরগনা এবং গাইঘাটার কয়েকটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন প্রাক্তন রাজ্য মন্ত্রী রথিন তালুকদার। ডেপুটি হাই কমিশনার সকল শিবিরেই শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। বনগাঁর রামনগর রোডের একটি শরণার্থী শবিরে তিনি জল ভেঙ্গে যান। সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশের কয়েকজন এমপিএ এবং এমএনএ এর সাথে তিনি বৈঠক করেন। এ শিবিরে ডেপুটি হাই কমিশনারকে বাংলাদেশের তরফ থেকে স্মারক লিপি দেয়া হয়। বাংলাদেশের পরিষদ সদস্যদের মধ্যে ছিলেন আনোয়ারুল ইকবাল, সতিশ হালদার, তবিবুর রহমান সরদার, সুবোধ মিত্র ছিলেন। তাদের প্রশ্নের উত্তরে হাই কমিশনার বলেন বাংলাদেশের একটি বড় এলাকা দখল না হওয়া পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে পারছেনা। বাংলাদেশের পরিষদ সদস্য ছাড়াও সেখানে ফরোয়ার্ড ব্লকের স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। [*]
সোভিয়েত ইউনিয়ন
সোভিয়েত ইউনিয়ন বলেছে পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা নিয়ে বৃহৎ চার শক্তির আলোচনার চেয়ে তারা জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের অধিবেশনে খোলা বিতর্ককে প্রাধান্য দিবে। জাতিসংঘে সোভিয়েত প্রতিনিধি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপারে তার দেশের দৃষ্টিভঙ্গি এটাই। তারা বলেন চীন বৃহৎ শক্তি কিন্তু তারা এখনও তাদের জাতিসংঘ সদস্যপদ ফিরে পায়নি। [*]
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী এলেক্স ডগলাস হিউম হাউস অব কমন্সের বক্তৃতায় পূর্ব পাকিস্তানে বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আসন্ন নিউইয়র্ক সফরকালে তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব এবং বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে পাকিস্তানের সংকটজনক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। [*]

নিকোলাই ফিরুবিন
সোভিয়েত সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিকোলাই ফিরুবিন বলেছেন আগামী সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরে দুদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। তিনি আজ মস্কোয় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত কেএস শোভাকর [?] এর সংবর্ধনা সভা ও রাষ্ট্রীয় ভোজে বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি ইন্দিরা গান্ধীকে একজন মহান নেত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ভোজসভায় সোভিয়েত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতের দুতাবাসের সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। [*]
সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের শরণার্থীসংক্রান্ত উপকমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি সিনেটে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ৪০ কোটি ডলার বা ৩০০ কোটি ভারতীয় মুদ্রার সাহায্যের একটা বিল পেশ করেছেন। তিনি বিল টি ধামা চাপা না দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রতি অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে সিনেট সাব কমিটিতে বাংলাদেশ সমস্যা নিয়ে আরও শুনানি আরম্ভ হবে। বিলটি এখন ফুল ব্রাইটের পর রাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে যাবে সেখানে তা গৃহীত হলে মঞ্জুরি কমিটিতে যাবে তারপর তা সিনেটে শুনানি হবে। ফুল ব্রাইট বাংলাদেশের কড়া সমর্থক। তিনি বলেন বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য মার্কিন সরকার যাতে যথাযথ সাহায্য করে তার চেষ্টা তিনি করে যাচ্ছেন। [*]

[*] যুগান্তর/কালান্তর ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
[**] পূর্ব পাকিস্তানের সকল পত্রিকা ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
[***] দৈনিক সংগ্রাম ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

Prepared by Salah Uddin